সেরা ১০টি টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায়

আমাদের শরীরের সুস্থতা ও স্বাভাবিক কর্মক্ষমতার পেছনে রয়েছে একাধিক হরমোনের যৌথ ভূমিকা। এদের মধ্যে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হরমোন হলো টেস্টোস্টেরন। টেস্টোস্টেরন সাধারণত পুরুষদের ক্ষেত্রে অধিকমাত্রায় উৎপন্ন হয়, তবে নারীদের শরীরেও অল্প পরিমাণে থাকে। টেস্টোস্টেরন মূলত যৌন স্বাস্থ্য, পেশিশক্তি, হাড়ের ঘনত্ব, মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামগ্রিক শক্তি-সামর্থ্য বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বর্তমানে নানা কারণে, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, মানসিক চাপ, অতিরিক্ত বসে থাকা বা অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের কারণে অনেকেই অল্প বয়সেই টেস্টোস্টেরনের ঘাটতিতে ভুগছেন। এর ফলে দেখা অনেকেরই দেখা দিচ্ছে যৌন দুর্বলতা, ক্লান্তি, মানসিক অবসাদ, পেশিশক্তি হ্রাসসহ নানান সমস্যা।
জ্ঞানী বাবা!‘র আজকের এই লেখায় আমরা আলোচনা করবো, টেস্টোস্টেরন কি? টেস্টোস্টেরন হরমোন এর কাজ কি? টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যাওয়ার কারণ , প্রাকৃতিক ভাবে টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায় থেকে শুরু করে টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কিত যাবতীয় সব কিছু। তাহলে চলুন, শুরু করা যাক!!!
সূচীপত্রঃ
টেস্টোস্টেরন হরমোন এর কাজ কী?
টেস্টোস্টেরন একটি প্রাকৃতিক স্টেরয়েড হরমোন, যা মূলত পুরুষদের টেস্টিস (testes) এবং নারীদের অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ড থেকে ক্ষরিত হয়। এটি অ্যানাবলিক-অ্যান্ড্রোজেনিক স্টেরয়েড হরমোন শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। সহজভাবে বললে, এটি এমন একটি হরমোন যা শরীরের ভিতরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ পরিচালনা করে, বিশেষ করে যৌন ক্ষমতা, শারীরিক শক্তি, এবং পুরুষসুলভ বৈশিষ্ট্য বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
টেস্টোস্টেরন হরমোন এর প্রধান কাজ কী কী?
পুরুষদের ক্ষেত্রেঃ
- যৌন ক্ষমতা, স্পার্ম উৎপাদন ও যৌন আকাঙ্ক্ষা বাড়ায়
- পেশিশক্তি ও পেশির ঘনত্ব বৃদ্ধি করে
- হাড়কে মজবুত করে তোলে
- মুখে-শরীরে লোম (দাড়ি-গোঁফ) গজাতে সাহায্য করে
- কণ্ঠস্বর ভারী ও গভীর করে
- আত্মবিশ্বাস ও মানসিক উদ্দীপনা বৃদ্ধি করে
তাছাড়া নারীদের শরীরেও অল্প পরিমাণে টেস্টোস্টেরন থাকে, যা তাদের হাড়ের গঠন, মেজাজ, এবং যৌন আকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।
আরও পড়ুনঃ রক্তের এলার্জি দূর করার উপায় জেনে নিন
টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যাওয়ার কারণ
আমাদের বয়স যত বাড়ে, শরীরে প্রাকৃতিকভাবে টেস্টোস্টেরনের উৎপাদন ধীরে ধীরে কমে যেতে থাকে। সাধারণত ৩০ বছর বয়সের পর থেকে প্রতি বছর ১-২% হারে হরমোনটির লেভেল কমতে থাকে।
তবে শুধু বয়স নয়, আরও অনেক কারণ এই হরমোনের ঘাটতির জন্য দায়ী হতে পারে, যেমনঃ
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা
- অনিয়মিত ঘুম ও বিশ্রামের অভাব
- স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন
- অপর্যাপ্ত পুষ্টি ও ভিটামিনের ঘাটতি
- অ্যালকোহল ও ধূমপানের অভ্যাস
- অতিরিক্ত বসে থাকা ও অলস জীবনযাপন
টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যাওয়ার লক্ষণ

টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা শরীরে স্বাভাবিকের চেয়ে কমে গেলে তা নীরবে আমাদের শরীর ও মানসিক স্বাস্থ্যে নানা ধরনের পরিবর্তন ঘটাতে শুরু করে। অনেক সময় আমরা এসব পরিবর্তনকে অন্য কোনো শারীরিক দুর্বলতা বা মানসিক অবসাদের অংশ হিসেবে দেখি, অথচ মূল কারণ হতে পারে টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি।
নিচে টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যাওয়ার কিছু সাধারণ ও লক্ষণীয় উপসর্গ তুলে ধরা হলোঃ
১. ক্রমাগত ক্লান্তি ও দুর্বলতা
যতই বিশ্রাম নিন না কেন, সব সময় শরীরে অজানা এক ক্লান্তি ও অবসাদ কাজ করবে। দৈনন্দিন কাজে উৎসাহ কমে যাবে।
২. যৌন আগ্রহ ও কর্মক্ষমতা হ্রাস
টেস্টোস্টেরন মূলত যৌন হরমোন হওয়ায় এর ঘাটতি হলে যৌন ইচ্ছা (libido) কমে যায়। অনেক সময় ইরেকশনজনিত সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
৩. পেশিশক্তি ও গঠন হ্রাস
যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তারাও টেস্টোস্টেরন কমে গেলে লক্ষ্য করবেন যে পেশির ঘনত্ব কমে যাচ্ছে এবং আগের মতো শক্তি পাচ্ছেন না।
৪. শরীরে মেদ জমা
বিশেষ করে পেটের চারপাশে চর্বি জমতে শুরু করে। হরমোন ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে বিপাকক্রিয়া (metabolism) ধীর হয়ে যায়।
৫. মানসিক অবসাদ ও আত্মবিশ্বাস হ্রাস
টেস্টোস্টেরনের ঘাটতির সঙ্গে ডিপ্রেশন, মনমরা ভাব, উদ্বেগ ও আত্মবিশ্বাসের অভাব সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। অনেক সময় সহজ কাজেও ভয় লাগে।
৬. ঘুমের সমস্যা
ঘুম আসতে দেরি হওয়া বা মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে যাওয়া—এই ধরনের ঘুমজনিত সমস্যাও হরমোনের ভারসাম্যহীনতার লক্ষণ হতে পারে।
৭. মনোযোগে ঘাটতি
কাজে ফোকাস রাখতে সমস্যা হয়, কথা বা যেকোনো তথ্য ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে।
৮. হাড় ক্ষয় ও হাড়ের ব্যথা
দীর্ঘমেয়াদি টেস্টোস্টেরন ঘাটতি হাড়ের ঘনত্ব কমিয়ে অস্টিওপোরোসিস এর ঝুঁকি বাড়ায়।
কেন প্রাকৃতিকভাবে টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধি করা উচিত?
যখন শরীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে যায়, তখন অনেকে সহজ সমাধান হিসেবে ওষুধ, ইনজেকশন কিংবা কৃত্রিম হরমোন থেরাপির (Testosterone Replacement Therapy – TRT) কথা ভাবেন। যদিও কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে এসব পদ্ধতি প্রয়োজন হতে পারে, তবে সাধারণ বা মাঝারি ঘাটতির ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক উপায়েই হরমোনের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা অধিক নিরাপদ, কার্যকর ও টেকসই।
চলুন দেখে নেই কেন প্রাকৃতিক উপায়ই আপনার জন্য শ্রেয়ঃ
১. কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই
কৃত্রিম টেস্টোস্টেরন গ্রহণ করলে শরীরের প্রাকৃতিক হরমোন উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে ভবিষ্যতে আপনার শরীর বাইরের উৎস ছাড়া টেস্টোস্টেরন তৈরি করতে পারবে না। প্রাকৃতিক উপায় যেমন খাদ্য, ব্যায়াম, ঘুম ইত্যাদি অনুসরণ করলে শরীর নিজের নিয়মে টেস্টোস্টেরন হরমোন উৎপাদন করে, ফলে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে না।
২. শরীরের সামগ্রিক সুস্থতা বৃদ্ধি পায়
প্রাকৃতিক উপায় মানে শুধু টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধিই নয়, এর পাশাপাশি আপনি পাবেনঃ
- ভালো ঘুম
- সহজতর পরিপাকক্রিয়া
- মানসিক স্থিতি
- রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদি আরো অনেক স্বাস্থ্য সুবিধা
৩. খরচবিহীন বা অনেক সাশ্র্যী
চিকিৎসা বা সাপ্লিমেন্ট পদ্ধতির তুলনায় প্রাকৃতিক উপায় তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী। শুধু কিছু খাদ্য পরিবর্তন, সময়মতো ঘুম এবং শরীরচর্চাই যথেষ্ট।
৪. দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর
ওষুধ বা ইনজেকশন গ্রহণে সাময়িক উন্নতি দেখা যায়, কিন্তু তা স্থায়ী হয় না। আবার বন্ধ করলে হরমোন লেভেল দ্রুত কমে যায়। কিন্তু প্রাকৃতিক টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায় অবলম্বন করলে দীর্ঘমেয়াদে শরীরকে স্থায়ীভাবে সঠিক ভারসাম্যে রাখতে সাহায্য করে।
৫. কৃত্রিম টেস্টোস্টেরনের ঝুঁকি
অনিয়ন্ত্রিতভাবে টেস্টোস্টেরন সাপ্লিমেন্ট বা ইনজেকশন গ্রহণ করলে হতে পারেঃ
- শরীরের নিজস্ব হরমোন উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়া
- হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি
- লিভার সমস্যায় আক্রান্ত হওয়া
- পুরুষত্বহীনতা বা বন্ধ্যাত্ব
- মেজাজের চরম ওঠানামা (mood swings)
এই কারণেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরনের TRT বা স্টেরয়েড থেরাপি একেবারেই গ্রহণ করা উচিত নয়।
টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায় কি?

টেস্টোস্টেরন হরমোনের ঘাটতি একটি সাধারণ সমস্যা হলেও, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম এবং জীবনযাপনের মাধ্যমে একে স্বাভাবিক পর্যায়ে আনা সম্ভব সহজেই। নিচে এমন ১০টি বিজ্ঞানসম্মত ও প্রাকৃতিকভাবে টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায় তুলে ধরা হলোঃ
১. ভারোত্তোলন বা শক্তি-নির্ভর ব্যায়াম করুন
সাধারণ হাঁটাহাঁটির চেয়ে ওজন তুলে ব্যায়াম (resistance training) বা স্কোয়াট, ডেডলিফট, বেঞ্চ প্রেস ইত্যাদি ব্যায়াম টেস্টোস্টেরনের নিঃসরণ অনেক বেশি বাড়িয়ে দেয়।
প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ৩ দিন জিম বা ঘরে শরীরচর্চার রুটিন তৈরি করুন। তাই টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায় হিসেবে ভারোত্তোলনকে অগ্রাধিকার দিন!
২. পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন
প্রতিদিন অন্তত ৭–৮ ঘণ্টা নিরবিচ্ছিন্ন গভীর ঘুম হরমোন ভারসাম্য রক্ষায় অপরিহার্য। গবেষণায় দেখা গেছে, ৫ ঘণ্টার কম ঘুম টেস্টোস্টেরন ১৫% পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে।
৩. স্বাস্থ্যকর চর্বি (Healthy Fat) গ্রহণ করুন
টেস্টোস্টেরন একটি ফ্যাট-নির্ভর হরমোন। তাই খাদ্য তালিকায় আভোকাডো, অলিভ অয়েল, ডিমের কুসুম, বাদাম, ঘি ইত্যাদি স্বাস্থ্যকর ফ্যাট যুক্ত রাখুন। তার সাথে সাথে ট্রান্স ফ্যাট ও ভাজাপোড়া একদম এড়িয়ে চলুন।
৪. মানসিক চাপ কমান
ক্রনিক স্ট্রেস বা মানসিক চাপে কর্টিসল হরমোন বেড়ে যায়, যা টেস্টোস্টেরন হ্রাসের অন্যতম কারণ। মেডিটেশন, হাঁটাহাঁটি, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, কিংবা প্রিয় কোনো কাজ করুন। এটি আপনার চিন্তা কমাতে সাহায্য করে।
৫. উচ্চ প্রোটিন ও সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন
টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধি কপ্রতে হলে প্রতিদিনের খাদ্যে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাটের সঠিক অনুপাত থাকা জরুরি। যেমনঃ
- ডিম
- মাছ
- মুরগি
- শাকসবজি
- ডাল/বাদাম
৬. পর্যাপ্ত সূর্যালোক ও ভিটামিন D নিশ্চিত করুন
ভিটামিন D’ হলো একটি প্রাকৃতিক টেস্টোস্টেরন বুস্টার। প্রতিদিন ১৫–২০ মিনিট রোদে হাঁটা বা দাঁড়ানো টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায় হিসেবে দারুণ কাজ করতে পারে।
আরও পড়ুনঃ চর্ম এলার্জি দূর করার উপায় কি? এলার্জির কারণ ও প্রতিকার
৭. অ্যালকোহল ও ধূমপান বর্জন করুন
ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবনে শরীরের হরমোন প্রোডাকশন সিস্টেম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। এগুলো লিভারের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়, যা টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমায়। তাই টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায় হিসেবে অ্যালকোহল ও ধূমপান বর্জন করুন।
৮. দস্তা (Zinc) ও ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণ করুন
দস্তা (Zinc) ও ম্যাগনেসিয়ামএই দুইটি মিনারেল টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায় হিসেবে দারুণ কাজ করে।
- দস্তার উৎস: ঝিনুক, মাংস, কুমড়ার বীজ ইত্যাদি
- ম্যাগনেসিয়ামের উৎস: বাদাম, ডাল, গোটা শস্য ইত্যাদি
৯. অতিরিক্ত ওজন কমান
মেদবহুল দেহে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ে, যা টেস্টোস্টেরন উৎপাদনকে বাধাগ্রস্ত করে। তাসুষম খাদ্য ও ব্যায়ামের মাধ্যমে BMI নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
১০. পর্যাপ্ত পানি পান করুন
শরীর ডিহাইড্রেটেড হলে কোষে অক্সিজেন সরবরাহ কমে এবং হরমোন নিঃসরণ কমে যায়। প্রতিদিন অন্তত ২.৫–৩ লিটার পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
যে খাবার গুলো এড়িয়ে চলতে হবে
শুধু উপকারী খাবার খেলে হবে না, সাথে সাথে কিছু নির্দিষ্ট খাবার পরিহার করাও জরুরি। কারণ এইসব খাবার টেস্টোস্টেরন হরমোনের প্রাকৃতিক উৎপাদনকে ব্যাহত করে এবং হরমোন ভারসাম্যে বিঘ্ন ঘটায়।
নিচে এমন ৮টি খাবার বা উপাদান তুলে ধরা হলো, যেগুলো দীর্ঘমেয়াদে গ্রহণ করলে টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি তৈরি করতে পারেঃ
১. ট্রান্স ফ্যাট (Trans Fat)
প্যাকেটজাত স্ন্যাকস, বেকারি আইটেম (কেক, বিস্কুট), ফাস্ট ফুড—এসব খাবারে থাকা ট্রান্স ফ্যাট
➡️ টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে
➡️ ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ায়
➡️ হৃদরোগের ঝুঁকি তৈরি করে
২. অতিরিক্ত চিনি ও মিষ্টি
চিনি ইনসুলিন লেভেল বাড়িয়ে দিয়ে শরীরের হরমোন ব্যালান্স নষ্ট করে। বিকল্প হিসেব প্রাকৃতিক চিনি যেমন খেজুর, মধু, ফলের চিনি সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করুন।
৩. সফট ড্রিংক ও চিনি-যুক্ত পানীয়
কোল্ড ড্রিংকে থাকা উচ্চ মাত্রার ফ্রুক্টোজ ও চিনির কারণে
➡️ শরীরে ফ্যাট জমে
➡️ লিভারের উপর চাপ পড়ে
➡️ টেস্টোস্টেরন উৎপাদন ব্যাহত হয়
বিকল্প হিসেব লেবুপানি, ডাবের পানি বা নিজের বানানো ফলের রস পান করুন।
৪. সাদা চাল ও ময়দা (Refined Carbs)
সাদা চাল, পাউরুটি, ময়দা, পাস্তা ইত্যাদি রিফাইনড কার্বস, যা
➡️ রক্তে গ্লুকোজ দ্রুত বাড়িয়ে দেয়
➡️ হরমোন ভারসাম্য নষ্ট করে
➡️ ইনফ্লেমেশন ও মোটা হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়
বিকল্প হিসেব ব্রাউন রাইস, ওটস ব্যবহার করতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ সেরা ১০ টি কিডনি ভালো রাখার উপায়
৫. উচ্চ ইস্ট্রোজেনযুক্ত খাবার
সয়া দুধ, টোফু ইত্যাদি কিছু সয়া পণ্যে ফাইটোইস্ট্রোজেন থাকে, যা
➡️ শরীরে নারী হরমোন ইস্ট্রোজেনের মতো আচরণ করে
➡️ টেস্টোস্টেরনের প্রভাব কমিয়ে দেয়
বিকল্প হিসেবে সয়া জাতীয় খাবার প্রয়োজন অনুযায়ী খেতে হবে, অতিরিক্ত নয় আবার।
৬. অ্যালকোহল
নিয়মিত বা অতিরিক্ত অ্যালকোহল আপনার-
➡️ লিভার ড্যামেজ করে
➡️ টেস্টোস্টেরন উৎপাদন বন্ধ করে দিতে পারে
➡️ শুক্রাণুর গুণগত মানও কমিয়ে দিতে পারে
তাই টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায় হিসেবে অ্যালকোহলকে না বলুন।
৭. অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার
ক্যানজাত খাবার, ফ্রোজেন খাবার, ইনস্ট্যান্ট নুডলস ইত্যাদি-
➡️ অতিরিক্ত সোডিয়াম, প্রিজারভেটিভ ও কেমিক্যালে ভরপুর
➡️ হরমোনাল ভারসাম্য নষ্ট করে
৮. প্লাস্টিকে রাখা খাবার বা পানীয়
প্লাস্টিক বোতল বা পাত্রে রাখা খাবারে বিসফেনল-এ (BPA) নামক রাসায়নিক থাকে, যা
➡️ শরীরের এন্ডোক্রাইন সিস্টেমে বিঘ্ন ঘটায়
➡️ টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে
দৈনন্দিন রুটিনে টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায়
প্রাকৃতিক উপায়ে টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায় হিসেবে শুধুমাত্র খাবার বা ব্যায়ামই নয়, একটি সুসংগঠিত দৈনন্দিন রুটিনও খুব গুরুত্বপূর্ণ। নিচে এমনই একটি ব্যবহারযোগ্য দৈনন্দিন রুটিন দেওয়া হলো, যা অনুসরণ করলে ধীরে ধীরে আপনার শরীরে টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ স্বাভাবিক আসবে।
সকাল (৬:০০–৯:০০)
🔹 ভোরে ঘুম থেকে উঠুন:
সকালে ওঠা বডি ক্লকের সঙ্গে মিল রেখে হরমোন নিঃসরণ বাড়ায়।
🔹 ২০ মিনিট হালকা ব্যায়াম/স্ট্রেচিং/জগিং করুন:
রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, মস্তিষ্ক সতেজ হয়।
🔹 ১৫–২০ মিনিট রোদে হাঁটুন:
সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন D উৎপন্ন হয়, যা টেস্টোস্টেরনের জন্য অনেক দরকারি।
🔹 প্রোটিনসমৃদ্ধ নাস্তা করুন:
ডিম, ওটস, বাদাম, ফল এসব সকালের নাস্তায় রাখুন।
দুপুর (১২:০০–২:০০)
🔹 সুষম খাবার দিয়ে পরিমাণমতো লাঞ্চ করুন:
প্লেটের অর্ধেক সবজি, এক চতুর্থাংশ প্রোটিন, এক চতুর্থাংশ কার্ব (শর্করা) রাখুন।
🔹 দুপুরে একটু বিশ্রাম নিন (Power Nap – ১৫-২০ মিনিট):
এটি কর্টিসল কমিয়ে মন ও শরীর চাঙ্গা রাখে।
বিকেল (৪:০০–৬:০০)
🔹 ভারোত্তোলন ও শরীরচর্চা (Resistance Training):
সপ্তাহে অন্তত ৩–৪ দিন ভারী ব্যায়াম করুন, স্কোয়াট, পুশআপ, ডেডলিফট ইত্যাদি।
🔹 ব্যায়ামের পর পর্যাপ্ত পানি ও প্রোটিনসমৃদ্ধ স্ন্যাকস খান:
যেমন: ডিম, বাদাম, ছোলা, দই ইত্যাদি।
রাত (৮:০০–১০:৩০)
🔹 হালকা ও স্বাস্থ্যকর রাতের খাবার খান:
অতিরিক্ত তেল, ভাজাপোড়া, চিনি পরিহার করুন।
🔹 স্ক্রিন টাইম কমান:
রাত ৯টার পর মোবাইল, টিভি এড়িয়ে চলুন, এটি ঘুমের হরমোন মেলাটোনিনকে সক্রিয় হতে সাহায্য করে।
🔹 রিলাক্সিং রুটিন গড়ে তুলুন:
মেডিটেশন, হালকা মিউজিক বা বই পড়ার মাধ্যমে মানসিক চাপ কমান।
ঘুম (রাত ১০:৩০–১১:০০ এর মধ্যে)
🔹 নিরবিচ্ছিন্ন ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম:
ঘুম হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়, যখন শরীর টেস্টোস্টেরন ও অন্যান্য হরমোন তৈরি করে।
কিছু বোনাস টিপস
- খাবারে পরিমিত লবণ ব্যবহার করুন
- বিকেলের পর ক্যাফেইন (চা/কফি) এড়িয়ে চলুন
- ঘুমানোর আগে মোবাইল ফ্লাইট মোডে রাখুন
- মানসিক ও শারীরিক বিশ্রামের জন্য সপ্তাহে অন্তত ১ দিন রেস্ট ডে রাখুন
কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন?
টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায় হিসেব উপরের বর্ণিত বিষয়গুলো মেনে চললেই স্বাভাবিকভাবে টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধি করা সম্ভব। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে উপরে বর্ণিত টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায় গুলো কাজ নাও করতে পারে। এমন ক্ষেত্রে একমাত্র টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায় যত দ্রুত সম্ভব একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া। নিচে এমন কিছু লক্ষণ ও পরিস্থিতি তুলে ধরা হলোঃ
১. দীর্ঘমেয়াদী যৌন দুর্বলতা
যদি আপনি কয়েক মাস ধরে যৌন আগ্রহ কমে যাওয়া, লিঙ্গে উত্তেজনা না আসা বা ইরেকশন ধরে রাখতে সমস্যা অনুভব করেন, তবে এটি টেস্টোস্টেরন ঘাটতিরএকটি বড় লক্ষণ হতে পারে। তাই এসব ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন।
২. অতিরিক্ত ক্লান্তি ও এনার্জি হ্রাস
ঘুম ভালো হওয়া সত্ত্বেও সারাদিন ক্লান্ত লাগা, কাজকর্মে মন না বসা, এসব হতে পারে হরমোন ভারসাম্যহীনতার কারণে।
৩. মনোযোগের অভাব ও মুডের ওঠানামা
টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি থাকলে মানসিক অবসাদ, অতিরিক্ত চিন্তা, হতাশা কিংবা রাগের প্রবণতা হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে।
৪. পেশী ক্ষয় ও শরীরের গঠন বদলে যাওয়া
যদি নিয়মিত ব্যায়ামের পরেও পেশী না বাড়ে বা উল্টোভাবে কমতে থাকে, শরীর নরম ও দুর্বল হয়ে পড়ে, তবে তা হরমোনজনিত কারণেই হতে পারে।
৫. হঠাৎ ওজন বৃদ্ধি বা স্থূলতা
খাদ্যাভ্যাস ঠিক থাকলেও শরীর যদি অস্বাভাবিকভাবে মোটা হতে শুরু করে, বিশেষ করে পেটের চারপাশে, তাহলে টেস্টোস্টেরনের ঘাটতিই হতে পারে এর মূল কারণ।
৬. আগে থেকে হরমোন এর রোগ থাকলে
যেমনঃ
- থাইরয়েড সমস্যা
- অণ্ডকোষে আঘাত বা সার্জারি
- দীর্ঘদিন স্টেরয়েড ওষুধ সেবন
সমস্যা কাকে দেখাবেন?
টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায় গুলো যথাযথভাবে পালন করার পরেও যদি আপনার উপরে বর্ণিত সমস্যা গুলো দেখা দেয় তাহলে আপনি চাইলে একজন ভালো এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট (হরমোন বিশেষজ্ঞ) অথবা অ্যান্ড্রোলজিস্ট (পুরুষ হরমোন ও যৌনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ)-এর কাছে যেতে পারেন।
চিকিৎসকগণ সাধারণত নিচের কয়েকটি পরীক্ষার মাধ্যমে সমস্যার গভীরতা নির্ণয় করেনঃ
- রক্তে টেস্টোস্টেরন লেভেল মাপা (Total & Free Testosterone)
- LH, FSH ও অন্যান্য হরমোন টেস্ট
- প্রস্টেট ও অণ্ডকোষ পরীক্ষা (যদি প্রয়োজন হয়)
শেষ কথা
জ্ঞানী বাবা!’র আজকের আর্টিকেল “সেরা ১০টি টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায়” এ আলোচনা করা হয়েছে টেস্টোস্টেরন হরমোন কী?, টেস্টোস্টেরন হরমোন এর কাজ কী? টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায় , প্রাকৃতিকভাবে টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায়, কেনো কৃত্রিম টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায় অবলম্বন করা উচিত নয়? যাবতীয় টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায় অবলম্বন করেও আশানুরুপ ফল না পেলে করণীয় থেকে শুরু করে টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কিত বিস্তারিত।
আশা করি পাঠক সেরা ১০টি টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায় জানতে পেরেছেন। যদি আজকের এই লেখাটি পাঠকের কাজে এসে থাকে, ভাল লেগে থাকে, অনুরোধ করব, আপনার পরিবার-প্রিয়জনদের সাথে লেখাটি শেয়ার করুন। আর কমেন্টে আপনার অনুভুতি জানাতে একদম ভুলবেন না।