টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যাওয়ার লক্ষণ কী?

বর্তমান এই ব্যস্ত জীবনে শরীরের ভেতরে ঘটে যাওয়া অনেক হরমোনীয় পরিবর্তনই আমরা অনেক সময় বুঝতে পারি না। বিশেষ করে পুরুষদের ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হরমোন হলো টেস্টোস্টেরন। এই হরমোনটি শুধুমাত্র যৌনস্বাস্থ্যের জন্য নয়, বরং শক্তি, পেশি গঠন, মানসিক সুস্থতা, হাড়ের স্বাস্থ্য এমনকি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।
টেস্টোস্টেরন হরমোন যদি স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায়, তাহলে দেহ আর মনের উপর তা নানান নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কিন্তু অনেকেই এই পরিবর্তনগুলিকে বয়সজনিত বা সাধারণ ক্লান্তি বলে ভুল করেন। অথচ এগুলো হতে পারে টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যাওয়ার লক্ষণ।
জ্ঞানী বাবা!‘র আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানব টেস্টোস্টেরন হরমোন আসলে কী, টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যাওয়ার লক্ষণ, কেন এটি কমে যেতে পারে?, কী কী লক্ষণ দেখলে সচেতন হওয়া উচিত থেকে শুরু করে টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যাওয়ার লক্ষণ নিয়ে যাবতীয় বিস্তারিত। তাহলে চলুন, শুরু করা যাক!!!
সূচীপত্রঃ
টেস্টোস্টেরন হরমোন কী?

টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যাওয়ার লক্ষণ জানার আগে আমাদের জেনে নিতে হবে টেস্টোস্টেরন হরমোন আসলে কী? টেস্টোস্টেরন হলো মূলত একটি গুরুত্বপূর্ণ পুরুষ হরমোন (Male Sex Hormone), যা মূলত পুরুষের অণ্ডকোষ (testicles) থেকে নিঃসৃত হয়। নারীদের শরীরেও এটি সামান্য পরিমাণে অ্যাডরেনাল গ্রন্থি ও ডিম্বাশয় (ovaries) থেকে উৎপন্ন হয়। তবে পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হরমোনের মাত্রা অনেক বেশি থাকে।
এই হরমোনটি কৈশোরে পুরুষের শারীরিক পরিপক্বতা ঘটাতে সাহায্য করে, যেমন, গলা ভারী হওয়া, দাড়ি-গোঁফ গজানো, পেশি ও হাড় শক্ত হওয়া, এবং যৌন আকর্ষণ বৃদ্ধি পাওয়া। শুধু কৈশোর নয়, প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের শক্তি, উদ্যম, আত্মবিশ্বাস, যৌন ক্ষমতা ও পেশি রক্ষা করতেও টেস্টোস্টেরনের অবদান অনস্বীকার্য।
সাধারণত একজন পূর্ণবয়স্ক পুরুষের শরীরে প্রতিদিন গড়ে ৪ থেকে ১০ মিলিগ্রাম টেস্টোস্টেরন উৎপন্ন হয়। এই মাত্রা যদি কোনো কারণে কমে যায়, তাহলে শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে, দেখা দিতে পারে একাধিক শারীরিক ও মানসিক সমস্যা।
কেন টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যায়?
টেস্টোস্টেরন হরমোনের পরিমাণ কমে যাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা হলেও, এর পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। কখনো তা প্রাকৃতিকভাবে ঘটে, আবার কখনো আমাদের ভুল অভ্যাস থেকেও এ সমস্যা দেখা দেয়। নিচে টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যাওয়ার লক্ষণ ও টেস্টোস্টেরন হ্রাসের কিছু সম্ভাব্য কারণ তুলে ধরা হলোঃ
১. বয়স বৃদ্ধি
বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্বাভাবিকভাবেই টেস্টোস্টেরন উৎপাদন হ্রাস পেতে থাকে। সাধারণত ৩০ বছর পার হওয়ার পর থেকে প্রতি বছর প্রায় ১% হারে এই হরমোনের মাত্রা কমে।
২. অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও উদ্বেগ
দীর্ঘমেয়াদি স্ট্রেস বা মানসিক চাপ শরীরের কর্টিসল হরমোন বাড়িয়ে তোলে, যা টেস্টোস্টেরনের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে।
৩. ঘুমের ঘাটতি
প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম অত্যন্ত জরুরি। কম ঘুম হরমোন উৎপাদনকে ব্যাহত করে এবং টেস্টোস্টেরনের পরিমাণও কমিয়ে দিতে পারে।
৪. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
অতিরিক্ত চিনি, প্রসেসড ফুড, ট্রান্স ফ্যাট এবং পুষ্টিহীন খাদ্য টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে। পাশাপাশি ভিটামিন D, জিঙ্ক ও ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতিও এর কারণ হতে পারে।।
৫. অতিরিক্ত অ্যালকোহল ও ধূমপান
দীর্ঘমেয়াদে ধূমপান ও অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ শরীরের হরমোন ব্যালান্সের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সাথে সাথে টেস্টোস্টেরনের নিঃসরণকেও বাধাগ্রস্ত করে।
৬. কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
স্টেরয়েড, কেমোথেরাপি, মানসিক রোগের ওষুধ ইত্যাদি টেস্টোস্টেরনের পরিমাণে প্রভাব ফেলতে পারে।
৭. অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা
দেহে অতিরিক্ত চর্বি থাকা টেস্টোস্টেরনের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। বিশেষ করে পেটের চর্বি টেস্টোস্টেরনকে ইস্ট্রোজেনে রূপান্তরিত করে দিতে পারে।
৮. হরমোনজনিত বা জেনেটিক সমস্যা
কখনো কখনো জেনেটিক কারণে বা কোনো গ্রন্থির (যেমন: পিটুইটারি গ্ল্যান্ড) ত্রুটির ফলে শরীরে স্বাভাবিক হারে টেস্টোস্টেরন উৎপন্ন হয় না।
টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যাওয়ার লক্ষণ

টেস্টোস্টেরন হরমোনের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় কমে গেলে শরীর ও মনে একাধিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এই লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে শুরু হলেও, সময়মতো চিহ্নিত না করলে সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে। নিচে সবচেয়ে সাধারণ এবং গুরুত্বপূর্ণ টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যাওয়ার লক্ষণগুলো তুলে ধরা হলোঃ
১. যৌন ইচ্ছা বা লিবিডো কমে যাওয়া
টেস্টোস্টেরনের প্রধান কাজগুলোর মধ্যে একটি হলো যৌন আকর্ষণ ও কামেচ্ছা বজায় রাখা। এই হরমোনের মাত্রা কমে গেলে স্বাভাবিক যৌন আকর্ষণ হঠাৎ করে বা ধীরে ধীরে কমে যেতে পারে।
২. ইরেকশন বা লিঙ্গোত্থানের সমস্যা
পুরুষদের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে গেলে সঠিকভাবে ইরেকশন হওয়ায় সমস্যা দেখা দিতে পারে। কখনো কখনো এটি “ইরেকটাইল ডিসফাংশন”-এর মতো জটিল অবস্থারও জন্ম দেয়।
৩. পেশি দুর্বল হয়ে যাওয়া
টেস্টোস্টেরন হরমোন পেশি গঠনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই হরমোন কমে গেলে শরীর দুর্বল লাগে, এবং শরীরের পেশি ধীরে ধীরে সংকুচিত হতে শুরু করে।
৪. শরীরের চর্বি বেড়ে যাওয়া
হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে শরীরে ফ্যাট জমতে শুরু করে, বিশেষ করে পেটের আশেপাশে। ফলে ওজন অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে পারে।
৫. শক্তি ও উদ্যম কমে যাওয়া
সাধারণ কাজে আগ্রহ হারানো, সারাদিন ক্লান্তি অনুভব করা বা কাজের প্রতি মনোযোগ কমে যাওয়া টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যাওয়ার লক্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম।
৬. মেজাজ খারাপ থাকা বা বিষণ্ণতা
টেস্টোস্টেরন হরমোন মস্তিষ্কে ‘ফিল-গুড’ রাসায়নিকের ভারসাম্য রাখে। যখন এর মাত্রা কমে যায়, তখন মন খারাপ থাকা, হতাশা, অথবা কোনো কিছুর প্রতি আগ্রহ হারানোর মতো মানসিক পরিবর্তন দেখা যায়।
৭. ঘুমের সমস্যা
ঘন ঘন জেগে ওঠা, গভীর ঘুম না হওয়া বা অনিদ্রা এসব সমস্যা টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যাওয়ার লক্ষণও হতে পারে।
৮. স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগে ঘাটতি
টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি মনোযোগ কমিয়ে দেয় এবং অনেক সময় স্মৃতিশক্তিও দুর্বল হয়ে পড়ে।
৯. হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া
টেস্টোস্টেরন হরমোন হাড়ের ঘনত্ব রক্ষা করে। যখন এর মাত্রা কমে যায়, তখন হাড় ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। তার সাথে সাথে অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
১০. দাড়ি/গোঁফ পাতলা হয়ে যাওয়া
কারো কারো দাড়ি বা গোঁফ গজাতে দেরি হওয়া বা তা পাতলা ও দুর্বল হয়ে যাওয়াও টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যাওয়ার লক্ষণ হতে পারে।
টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যাওয়ার লক্ষণঃ কীভাবে বুঝবেন?

টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যাওয়ার উপসর্গগুলো যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি নিশ্চিতভাবে বুঝতে হলে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে পরীক্ষা ও মূল্যায়ন করতে হয়। কারণ অনেক সময় উপসর্গ অন্য রোগের সঙ্গেও মিলে যেতে পারে। তাই শুধুমাত্র লক্ষণ দেখে সিদ্ধান্ত না নিয়ে, নিচের ধাপে ধাপে পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত:
১. চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
যদি আগের অংশে উল্লেখিত টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যাওয়ার লক্ষণ গুলোর মধ্যে যদিএকাধিক লক্ষণ (যেমন যৌন ইচ্ছা হ্রাস, ক্লান্তি, মনযোগে সমস্যা) দীর্ঘ সময় ধরে দেখা দিতে থাকে, তাহলে প্রথম কাজ হলো একজন এন্ডোক্রিনোলজিস্ট বা হরমোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া।
২. রক্ত পরীক্ষা (Testosterone Blood Test)
টেস্টোস্টেরনের মাত্রা যাচাইয়ের জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায় হলো রক্ত পরীক্ষা। সাধারণত সকালে (সকাল ৭টা থেকে ১০টার মধ্যে) রক্ত নেওয়া হয়, কারণ এই সময় হরমোনের মাত্রা সর্বোচ্চ থাকে।
- Total Testosterone Level: এটিই প্রাথমিক পরীক্ষা।
- Free Testosterone Test: শরীরের সক্রিয় টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ নির্দেশ করে।
- LH (Luteinizing Hormone) Test: পিটুইটারি গ্রন্থি ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা তা বুঝতে সহায়ক।
- SHBG (Sex Hormone Binding Globulin): শরীরের হরমোন ব্যালান্স মূল্যায়নের জন্য দরকারি।
আরও পড়ুনঃ রক্তের এলার্জি দূর করার উপায় জেনে নিন
৩. অন্যান্য দরকারি পরীক্ষা
প্রয়োজনে চিকিৎসক আরও কিছু হরমোন ও স্বাস্থ্যের পরীক্ষা দিতে পারেন, যেমন
- থাইরয়েড ফাংশন টেস্ট
- ব্লাড সুগার
- ভিটামিন D বা জিঙ্ক লেভেল
- প্রোল্যাক্টিন লেভেল
৪. উপসর্গ স্কোরিং ও পর্যবেক্ষণ
অনেক চিকিৎসক রোগীর টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যাওয়ার লক্ষণ মূল্যায়নের জন্য ADAM Questionnaire বা অন্য স্কোরিং পদ্ধতি ব্যবহার করেন। এতে বিভিন্ন উপসর্গের স্কোর হিসাব করে সম্ভাব্য হরমোন ঘাটতির ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
স্বাভাবিক টেস্টোস্টেরনের রেফারেন্স রেঞ্জ:
- পূর্ণবয়স্ক পুরুষের ক্ষেত্রে মোট টেস্টোস্টেরন সাধারণত থাকে: 300 – 1000 ng/dL
- যদি এই পরিমাণ 300 ng/dL এর নিচে থাকে এবং উপসর্গও থাকে, তাহলে তা “Low Testosterone” হিসেবে গণ্য করা হয়।
টেস্টোস্টেরন স্বাভাবিক রাখতে করণীয়
টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যাওয়ার লক্ষণ তো জানলাম, এবার জেনে নেওয়া যাক কিভাবে টেস্টোস্টেরন হরমোন এর মাত্রা স্বাভাবিক রাখা যায়।
জেনে অবাক হবেন, টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যাওয়ার লক্ষণ গুলো রোধ করা এবং তা স্বাভাবিক মাত্রায় ধরে রাখা খুব একটা কঠিক কাজ নয়। যদি আমরা সচেতনভাবে কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলি, ওষুধে না গিয়ে, প্রাকৃতিক উপায়ে এই হরমোনের স্বাভাবিকতা বজায় রাখা অনেক সময়েই কার্যকর হয়ে থাকে। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ করণীয় তুলে ধরা হলোঃ
১. নিয়মিত ব্যায়াম করুন
বিশেষ করে ওজন তুলে ব্যায়াম (Strength Training) এবং HIIT (High-Intensity Interval Training) টেস্টোস্টেরন বাড়াতে প্রচন্ড সহায়ক। প্রতিদিন অন্তত ৩০–৪৫ মিনিট শরীরচর্চা শরীরকে সক্রিয় রাখে এবং হরমোন নিঃসরণে দেহকে সাহায্য করে।
২. পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন
প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা গভীর ও নিরবিচার ঘুম টেস্টোস্টেরনের স্বাভাবিক নিঃসরণ বজায় রাখতে অপরিহার্য। ঘুমের অভাব হলে শরীরে কর্টিসল বেড়ে যায়, যা টেস্টোস্টেরনকে বাধাগ্রস্ত করে।
৩. পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ
টেস্টোস্টেরন বাড়াতে নিচের খাদ্য উপাদানগুলো দৈনিক খাদ্য তালিকায় রাখার চেষ্টা করুনঃ
- জিঙ্ক: দুধ, ডিম, বাদাম, কুমড়োর বীজ
- ভিটামিন D: ডিমের কুসুম, সামুদ্রিক মাছ, রোদ
- স্বাস্থ্যকর চর্বি: অলিভ অয়েল, অ্যাভোকাডো, বাদাম
- প্রোটিন: মুরগি, মাছ, ডাল, দুধ
৪. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন
মেডিটেশন, যোগব্যায়াম, বই পড়া বা প্রকৃতির সংস্পর্শে যাওয়া, এসব মানসিক চাপ কমিয়ে শরীরের হরমোন ব্যালান্স ঠিক রাখতে সহায়তা করে।
৫. ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার
অতিরিক্ত ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে। ধূমপান এবং মদ্যপান ছাড়ুন। একেবারে না ছাড়তে পারলে ধীরে ধীরে কমিয়ে আনুন।
৬. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
অতিরিক্ত ওজন, বিশেষ করে পেটের চর্বি, টেস্টোস্টেরনকে ইস্ট্রোজেনে রূপান্তর করে। তাই সুস্থ ও স্লিম শরীর ধরে রাখাই উত্তম।
৭. সকালের রোদে হাটুন
প্রতিদিন অন্তত ১৫–২০ মিনিট রোদে থাকলে শরীরে ভিটামিন D তৈরি হয়, যা টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়াতে সহায়ক।
আরও পড়ুনঃ সেরা ১০ টি কিডনি ভালো রাখার উপায়
টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে গেলে চিকিৎসা
টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যাওয়ার লক্ষণ শনাক্ত করার পর যখন প্রাকৃতিক পদ্ধতি অনুসরণ করার পরেও শরীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কম থাকে । তাছাড়া উপসর্গগুলোও দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলতে শুরু করে, তখন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা বা সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা প্রয়োজন হয়ে পড়তে পারে। তবে এগুলো কখনোই নিজের ইচ্ছেমতো গ্রহণ করা উচিত না, কারণ হরমোন থেরাপি ভুলভাবে ব্যবহৃত হলে তা বিপজ্জনকও হয়ে উঠতে হতে পারে।
১. হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (TRT)
এটি একটি চিকিৎসা পদ্ধতি, যেখানে শরীরে কৃত্রিমভাবে টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি পূরণ করা হয়। TRT সাধারণত নিচের পদ্ধতিগুলোর মাধ্যমে দেওয়া হয়ঃ
- ইনজেকশন (Testosterone Cypionate/Enanthate): ১–২ সপ্তাহ পরপর প্রয়োগ করা হয়।
- জেল বা ক্রিম: ত্বকে ব্যবহারযোগ্য, প্রতিদিন ব্যবহার করতে হয়।
- স্কিন প্যাচ: দিনে একবার শরীরে লাগানো যায়।
- অরাল থেরাপি (খাওয়ার ওষুধ): কিছু দেশে সীমিতভাবে ব্যবহৃত হয়।
২. সাপ্লিমেন্ট ও হারবাল সাপোর্ট
যাদের হরমোন এর মাত্রা সীমার কাছাকাছি থাকে এবং গুরুতর উপসর্গও নেই, তারা কখনো কখনো সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করেও উপকৃত হতে পারেন (অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী)। যেমনঃ
- Zinc: টেস্টোস্টেরন তৈরিতে সহায়তা করে।
- Vitamin D3: বিশেষ করে যাদের ঘাটতি আছে।
- Ashwagandha: স্ট্রেস কমিয়ে হরমোন ব্যালান্সে সাহায্য করে।
- Fenugreek (মেথি): প্রাকৃতিকভাবে টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধিতে সহায়ক।
- D-Aspartic Acid: কিছু গবেষণায় কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।
৩. পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও সতর্কতা
TRT বা যেকোনো হরমোন চিকিৎসার কিছু সম্ভাব্য ঝুঁকি ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছ, তাই অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শেই চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। যে সকল সমস্যা দেখা দিতে পারেঃ
- প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়া বা অন্য কোনো সমস্যা তৈরি হওয়া
- হরমোনের অতিরিক্ততা থেকে হঠাৎ রাগ বা আবেগের ওঠানামা
- লিভার ও হৃদ্রোগের সম্ভাব্য ঝুঁকি
- শুক্রাণু উৎপাদন কমে যাওয়া
তাই এই চিকিৎসাগুলো শুধুমাত্র অভিজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে গ্রহণ করা উচিত।
শেষ কথা
জ্ঞানী বাবা!’র আজকের আর্টিকেল “টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যাওয়ার লক্ষণ কী?” এ আলোচনা করা হয়েছে টেস্টোস্টেরন হরমোন কী?, টেস্টোস্টেরন হরমোন এর কাজ কী? টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যাওয়ার লক্ষণ , প্রাকৃতিকভাবে টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায় থেকে শুরু করে টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যাওয়ার লক্ষণ সম্পর্কিত বিস্তারিত।
আশা করি পাঠক টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যাওয়ার লক্ষণ গুলো জানতে পেরেছেন। যদি আজকের এই লেখাটি পাঠকের একটুও কাজে এসে থাকে, ভাল লেগে থাকে, অনুরোধ করব, আপনার পরিবার-প্রিয়জনদের সাথে লেখাটি শেয়ার করুন। আর কমেন্টে আপনার অনুভুতি জানাতে একদম ভুলবেন না কিন্তু!