ড্রাগন ফলের ক্ষতিকর দিক কি কি? জেনে নিন

বর্তমান সময়ে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের মাঝে ফলের চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলছে। বিশেষ করে কিছু বিদেশি ফল যেমন ড্রাগন ফল, তার আকর্ষণীয় রং, স্বাদ আর স্বাস্থ্য উপকারিতার কারণে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে গেছে রীতিমত। ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর এই ফলটি অনেকেই “সুপারফুড” হিসেবেও বিবেচনা করছেন।
তবে আমাদের মনে রাখা দরকার, প্রতিটি উপকারী জিনিসেরও কিছু না কিছু ক্ষতিকর দিক থাকে, যদি তা ভুলভাবে কিংবা অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করা হয়। ঠিক তেমনি, স্বাস্থ্যকর হলেও ড্রাগন ফলেরও কিছু নেতিবাচক দিক বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে, যা অনেকেই জানেন না বা গুরুত্ব দেন না।
জ্ঞানী বাবা!‘র এই লেখায় আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো ড্রাগন ফলের ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে-কে, কেন এবং কোন পরিস্থিতিতে এই ফলটি খাওয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত তাও আলোচিত হবে প্রাসঙ্গিক ভাবে। যারা স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন, তাদের জন্য এই তথ্যগুলো জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই চলুন, শুরু করা যাক!
সূচীপত্রঃ
ড্রাগন ফল আসলে কী?

ড্রাগন ফল, যার বৈজ্ঞানিক নাম Hylocereus undatus, মূলত এক ধরনের ক্যাকটাস জাতীয় ফল। এটি “পিটায়া” নামেও পরিচিত। দেখতে উজ্জ্বল গোলাপি বা লাল রঙের, এর বাইরের অংশে আগুনের শিখার মতো আঁকাবাঁকা অংশ থাকে, ফলে এটিকে অনেক সময় ড্রাগনের মতো দেখায়। এ কারণেই একে ড্রাগন ফল বলা হয়। ভেতরের অংশটি সাদা বা লালচে হয় এবং ছোট ছোট কালো বীজে ভরা থাকে।
মূলত মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা এই ফলের আদি জন্মস্থান হলেও বর্তমানে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, ভারত এবং বাংলাদেশেও এটি চাষ করা হয়। সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর হওয়ায় এ ফলটি বিশ্বব্যাপী বেশ অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
ড্রাগন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, বি১, বি২ ও বি৩, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফাইবার। এগুলো দেহে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, হজমে সহায়তা করতে এবং ত্বক সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তবে এতসব উপকারিতার মাঝেও কিন্তু ড্রাগন ফলের ক্ষতিকর দিক আছে, যা অনেকে জানেনই না। বিশেষ করে অতিরিক্ত খাওয়া কিংবা শরীরের বিশেষ অবস্থায় (যেমন: ডায়াবেটিস, গর্ভাবস্থা, অ্যালার্জি প্রবণতা) এটি কিছু অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে।
ড্রাগন ফলের ক্ষতিকর দিক
যদিও ড্রাগন ফল একটি পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর ফল, তবে কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে এটি শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিশেষ করে যারা নানান স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন ডায়াবেটিস, অ্যালার্জি, কিডনি জটিলতা কিংবা গর্ভাবস্থার মধ্যে রয়েছেন, তাদের জন্য এই ফলটি খাওয়ার আগে কিছু বিষয় অবশ্যই জানা উচিত। নিচে ধাপে ধাপে ড্রাগন ফলের ক্ষতিকর দিক সমূহ আলোচনা করা হলোঃ
১. অতিরিক্ত খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
যেকোনো ভালো জিনিসের যেমন উপকার আছে, তেমনি অতিরিক্ত ব্যবহার করলে বিপদও ডেকে আনতে পারে। ড্রাগন ফলে রয়েছে উচ্চমাত্রার ফাইবার, যা সাধারণত হজমে সহায়তা করে। কিন্তু অতিরিক্ত ফাইবার শরীরে প্রবেশ করলে পেট ফাঁপা, গ্যাস, বুক জ্বালা বা ডায়রিয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বিশেষ করে বাচ্চা ও বৃদ্ধদের হজমক্ষমতা তুলনামূলকভাবে দুর্বল হওয়ায় তারা বেশি সমস্যায় পড়তে পারেন। তাই ড্রাগন ফল নিয়মিত খেলেও তা পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।
২. রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি
ড্রাগন ফলে প্রাকৃতিকভাবে কিছুটা চিনি থাকে, যা সাধারণত ক্ষতিকর নয়। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি একটি চিন্তার বিষয় হতে পারে। নিয়মিত এবং একইসাথে অতিরিক্ত পরিমাণে ড্রাগন ফল খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
যেহেতু অনেকেই মনে করেন ড্রাগন ফল ডায়াবেটিক ফ্রেন্ডলি, তাই অন্ধভাবে অতিরিক্ত খেতে থাকেন। কিন্তু বাস্তবে এটি সব ডায়াবেটিক রোগীর জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে। তাই ডায়াবেটিস থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ড্রাগন ফল খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত, নয়তো তা স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াতে পারে, এটিও কিন্তু ড্রাগন ফলের ক্ষতিকর দিক এর অন্যতম।
আরও পড়ুনঃ টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যায় কেন?
৩. অ্যালার্জি বা সংবেদনশীল প্রতিক্রিয়া
যদিও তুলনামূলকভাবে এটি একটি নিরাপদ ফল, তবুও কিছু মানুষের শরীরে ড্রাগন ফল খাওয়ার পর অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমনঃ
- ত্বকে চুলকানি বা ফুসকুড়ি
- ঠোঁট ফুলে যাওয়া
- গলা বা মুখে জ্বালাভাব
- শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া (খুব কম দেখা যায়)
যদি আপনি আগে কখনো ড্রাগন ফল না খেয়ে থাকেন, তাহলে প্রথমবার খুব অল্প করে খাওয়ার পর ২৪ ঘণ্টা শরীরের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করে নেয়া উচিত। অ্যালার্জির প্রবণতা থাকলে ড্রাগন ফল এড়িয়ে চলাই ভালো।
৪. গর্ভবতী মায়েদের জন্য ঝুঁকি
গর্ভাবস্থায় অনেকেই ফল খেতে অনেক উৎসাহী থাকেন, কারণ এতে অন্যান্য খাবার থেকে বহুগুণ পুষ্টি উপাদান সহজেই পাওয়া যায়। তবে গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে কিছু খাবার শরীর ঠিকমতো গ্রহণ করতে পারে না। ড্রাগন ফল অতিরিক্ত খেলে অনেক সময় বদহজম, অস্বস্তি, কিংবা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এছাড়া কিছু ক্ষেত্রে ড্রাগন ফলে থাকা কিছু উপাদান গর্ভজাত শিশুর উপর নেতিবাচক প্রভাবও ফেলতে পারে, যদিও তা খুবই বিরল। তবুও সতর্ক থাকা ভালো। গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ড্রাগন ফল না খাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
৫. কিডনি রোগীদের জন্য সমস্যা
ড্রাগন ফলে রয়েছে প্রচুর পটাশিয়াম, যা সাধারণত রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। কিন্তু কিডনি যদি সঠিকভাবে কাজ না করে, তখন শরীর অতিরিক্ত পটাশিয়াম বের করে দিতে পারে না। ফলে রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বেড়ে গিয়ে হাইপারকালেমিয়া নামক বিপজ্জনক অবস্থা তৈরি হতে পারে, যা হার্ট অ্যাটাক পর্যন্ত ঘটাতে পারে।
তাই যারা কিডনির জটিলতায় ভুগছেন বা ডায়ালাইসিসে আছেন, তাদের জন্য ড্রাগন ফলের ক্ষতিকর দিকগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় রাখতে হবে।
আরও পড়ুনঃ টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যাওয়ার লক্ষণ কী?
নকল বা কেমিক্যালযুক্ত ড্রাগন ফলের ক্ষতিকর দিক

বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ফলের চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মুনাফালোভী কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম উপায়ে ফলকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে রাসায়নিক ও নানান ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহার করছে। এই অপচর্চা থেকে থেকে ড্রাগন ফলও কিন্তু বাদ যায়নি। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ফলটিকে আরও বেশি উজ্জ্বল ও লালচে দেখানোর জন্য কৃত্রিম রঙ বা প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করা হচ্ছে। আর এ ধরনের ফল শরীরের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। ড্রাগন ফলের ক্ষতিকর দিকগুলোর মধ্যে এই কৃত্রিম সমস্যাটাও কিন্তু বিবেচনায় রাখতে হবে।
১. রাসায়নিক রঙ শরীরে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে
যেসব ড্রাগন ফলে কৃত্রিম রঙ ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর বাইরের রঙ খুবই উজ্জ্বল ও অস্বাভাবিক রকম চকচকে হয়। এসব রঙ সাধারণত খাদ্যমানের রঙ নয় এবং দীর্ঘমেয়াদে শরীরে জমে গিয়ে বিভিন্ন জটিল রোগের সৃষ্টি করতে পারে, যেমনঃ
- লিভার ও কিডনি সমস্যা
- ক্যানসারের ঝুঁকি
- হরমোনের ভারসাম্যহীনতা
- ত্বকে অ্যালার্জি বা চর্মরোগ
২. কীভাবে চিনবেন নকল বা কেমিক্যালযুক্ত ড্রাগন ফল?
সঠিক ও স্বাস্থ্যের জন্যে নিরাপদ ড্রাগন ফল বাছাই করে ড্রাগন ফল ক্রয় করা উচিত। নিচে কিছু লক্ষণ দেওয়া হলো যার মাধ্যমে আপনি নকল বা কেমিক্যালযুক্ত ড্রাগন ফল চিনে নিতে পারবেন সহজেইঃ
- অস্বাভাবিক রঙ: খুব বেশি লাল বা গোলাপি, চকচকে রঙ থাকলে সাবধান
- চামড়ার টেক্সচার: কৃত্রিমভাবে পরিপক্ব ফলের চামড়া তুলনামূলকভাবে নরম ও পচনশীল হয়
- গন্ধ: রাসায়নিক প্রয়োগে এক ধরনের কৃত্রিম গন্ধ থাকতে পারে
- দাম: বাজারমূল্যের তুলনায় যদি খুব কম দামে পাওয়া যায়, তবে সন্দেহ করা উচিত
বাজার থেকে ড্রাগন ফল কেনার সময় এসব দিক খেয়াল রাখা উচিত, নয়তো আপনি উপকার পাওয়ার বদলে শরীরে বিষ ঢুকিয়ে ভেলবেন। তাই ড্রাগন ফলের ক্ষতিকর দিক নিয়ে সচেতন থাকুন।
ড্রাগন ফলের ক্ষতিকর দিক এড়িয়ে কে কতটা খেতে পারবে?
ড্রাগন ফল পুষ্টিকর এবং অনেক স্বাস্থ্যকর একটি ফল হলেও তা সকলের জন্য একইভাবে উপকারী নাও হতে পারে। বয়স, শারীরিক অবস্থা এবং বিদ্যমান রোগভেদে প্রতিটি মানব্দেহে এর গ্রহণযোগ্যতা ভিন্ন হতে পারে। তাই এক্ষেত্রে পরিমাণ জেনে ও বুঝে খাওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ পন্থা। নিচে বিভিন্ন বয়সের মানুষের জন্যে উপযুক্ত গ্রহণমাত্রা তুলে ধরা হলোঃ
১. সাধারণ সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক
যদি কারও কোনো বড় ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা না থাকে, তবে দিনে ১টি মাঝারি সাইজের ড্রাগন ফল খাওয়া নিরাপদ এবং উপকারী। তবে তা অবশ্যই প্রধান খাবার নয়, বরং ফলমূল হিসেবে খেতে হবে।
২. ডায়াবেটিস রোগী
ড্রাগন ফলে প্রাকৃতিকভাবে কিছুটা শর্করা থাকায়, ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য সীমিত পরিমাণে খাওয়াই বাঞ্ছনীয়। দিনে সর্বোচ্চ অর্ধেকটা ড্রাগন ফল, তাও মাঝে মাঝে খাওয়া যেতে পারে।
৩. গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মা
গর্ভবতী ও স্তন্যদাঙ্কারী মায়েদের এই সময় শরীরে অনেক পরিবর্তন আসে, তাই নতুন কোনো খাবার খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তাই গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে ড্রাগন ফলের ক্ষতিকর দিকগুলো মাথায় রেখেই ড্রাগন ফলকে বিবেচনা করা উচিত।
৪. শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি
শিশুদের হজম ক্ষমতা তুলনামূলক দুর্বল, তাই একবারে বেশি খাওয়া উচিত নয়। ১-৩ টেবিল চামচ করে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত করানো যেতে পারে। বয়স্কদের ক্ষেত্রেও একইভাবে অল্প পরিমাণে, দিনে অর্ধেকটা ফলের বেশি নয় । এমনভাবে খাওয়া উচিত যেন হজমে সমস্যা না হয়। আরবেশি খেলে পেট ফাঁপা, ডায়রিয়া বা গ্যাসের সমস্যাও হতে পারে, যা ড্রাগন ফলের ক্ষতিকর দিকগুলোর মধ্যে অন্যতম।
৫. কিডনি রোগী
যেহেতু ড্রাগন ফলে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি, তাই কিডনির সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া একেবারেই খাওয়া উচিত নয়। অল্প পরিমাণে খাওয়ার ক্ষেত্রেও পটাশিয়াম লেভেল মনিটর করা আবশ্যক। অতিরিক্ত পটাশিয়াম শরীরে জমে গিয়ে হৃদরোগ বা হাইপারকালেমিয়ার ঝুঁকি বাড়ায় , যা ড্রাগন ফলের ক্ষতিকর দিক এর একটি মারাত্মক দিক।
ড্রাগন ফলের ক্ষতিকর দিক থেকে সতর্কতা ও পরামর্শ

ড্রাগন ফল নিঃসন্দেহে একটি উপকারী ও পুষ্টিকর ফল, তবে কিছু বিশেষ সতর্কতা না মানলে এর নেতিবাচক প্রভাবও শরীরে দেখা দিতে পারে। তাই ড্রাগন ফলের ক্ষতিকর দিক থেকে রক্ষা পেতে হলে নিচের সতর্কতা ও পরামর্শগুলো অবশ্যই মাথায় রাখা প্রয়োজনঃ
১. পরিমিত পরিমাণে খান
যেকোনো ফলের মতো ড্রাগন ফলও অতিরিক্ত খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে। প্রতিদিন ১টি মাঝারি আকারের ফলই যথেষ্ট। বেশি খেলেই উপকার বাড়বে, এমন ভাবা ভুল।
২. অ্যালার্জি পরীক্ষা করে নিন
যারা নতুন করে ড্রাগন ফল খেতে শুরু করছেন, তারা প্রথমে অল্প করে খেয়ে শরীরের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করুন। ত্বকে চুলকানি, গলা চুলচুলানি বা পেটের সমস্যা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে খাওয়া বন্ধ করুন।
আরও পড়ুনঃ ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম কী? ড্রাগন ফল খাওয়ার পদ্ধতি
৩. রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
ডায়াবেটিস, কিডনি জটিলতা, গ্যাস্ট্রিক, কিংবা গর্ভাবস্থায় ড্রাগন ফল খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। কারণ এই ধরণের অবস্থায় ড্রাগন ফলের ক্ষতিকর দিক শরীরে বেশি প্রভাব ফেলতে পারে।
৪. অর্গানিক ফল বাছাই করুন
বাজার থেকে ফল কেনার সময় অতি চকচকে বা অস্বাভাবিক রঙের ড্রাগন ফল এড়িয়ে চলুন। রাসায়নিকযুক্ত বা রঙ মেশানো ফল শরীরে বিষক্রিয়ার কারণ হতে পারে।
৫. শিশু ও বয়স্কদের জন্য আলাদা সচেতনতা
শিশুদের হজমক্ষমতা দুর্বল হওয়ায় অল্প পরিমাণে খাওয়াতে হবে এবং ধীরে ধীরে অভ্যস্ত করতে হবে। একইভাবে, বয়স্কদের ক্ষেত্রেও পেটের সমস্যা হলে ড্রাগন ফল কমিয়ে দিতে হবে।
৬. সঠিকভাবে সংরক্ষণ করুন
ড্রাগন ফল টাটকা অবস্থায় খাওয়াই সবচেয়ে ভালো। ফ্রিজে রাখলে ২–৩ দিনের বেশি না রাখা ভালো, কারণ এতে পুষ্টিগুণ ও স্বাদ কমে যায়। পচা বা দুর্গন্ধযুক্ত ফল একেবারেই খাওয়া উচিত নয়।
৭. খাওয়ার সঠিক সময় নির্বাচন করুন
খালি পেটে খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। দুপুর বা বিকেলের দিকে, বিশেষ করে হালকা খাবারের পর খেলে হজমে সহায়ক হয় এবং শরীরেও ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারে।
ড্রাগন ফল যতটা উপকারী, সচেতনতা না থাকলে ততটাই ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। তাই যারা নিয়মিত ড্রাগন ফল খান বা খেতে চাইছেন, তাদের উচিত এই ফলটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা ও নিজের শারীরিক অবস্থার সঙ্গে মিলিয়ে খাওয়ার পরিমাণ নির্ধারণ করা।
সঠিক তথ্য ও সচেতনতার অভাবে অনেক সময় আমরা ড্রাগন ফলের মতো স্বাস্থ্যকর ফল থেকেও ড্রাগন ফলের ক্ষতিকর দিকগুলো নিজের শরীরে নিজের অজান্তেই ডেকে আনি। তাই স্বাস্থ্য সচেতন হতে হলে শুধু উপকার নয়, অপকারিতার দিকেও নজর দিতে হবে।
উপসংহার
ড্রাগন ফল নিঃসন্দেহে একটি পুষ্টিকর, দৃষ্টিনন্দন ও স্বাস্থ্যসম্মত ফল। এতে রয়েছে ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবার, যা শরীরের জন্য উপকারী। তবে একথাও মানতেই হবে , কোনো খাবারই অতিরিক্ত খাওয়া বা ভুলভাবে গ্রহণ করলে শরীরের ক্ষতি করে।
জ্ঞানী বাবা!‘র আজকের এই লেখায় আমরা যেসব বিষয় বিশ্লেষণ করেছি, তা থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, ড্রাগন ফলের ক্ষতিকর দিক যেমন ডায়রিয়া, গ্যাস, অ্যালার্জি, ডায়াবেটিসে শর্করার তারতম্য এসব বিষয় সচেতনভাবে এড়িয়ে চলাই বাঞ্চনীয়। শুধু উপকারের কথা ভেবে যদি দৈনিক খাদ্যতালিকায় অতিরিক্ত বা যাচাই-বাছাই ছাড়া ড্রাগন ফল রাখা হয়, তাহলে তা হিতে বিপরীতও হতে পারে।
সবশেষে এতটুকুই বলব, আশা করি আমাদের আজকের এই লেখাটি আপনার ভালো লেগেছে। যদি তাই হয়ে থাকে, আজকের এই লেখাটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে , একটু হলেও উপকারে এসে থাকে তবে অনুরোধ করব, সামাজিক মাধ্যমে এই ব্লগটি শেয়ার করুন। আর কমেন্ট সেকশনে আপনার মূল্যবান মতামত রেখে যেতে একদম ভুলবেন না কিন্তু!!!