জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করবেন যেভাবে

বাংলাদেশের সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য জিপিএফ বা জেনারেল প্রোভিডেন্ট ফান্ড (General Provident Fund) একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সঞ্চয় ব্যবস্থা। চাকুরীজীবিদের মাসিক বেতন থেকে একটি নির্দিষ্ট অংশ কেটে এই ফান্ডে জমা রাখা হয়, যা চাকরি শেষে একটি বড় অংকের অর্থ হিসেবে পাওয়া যায়। অনেকেই জানেন না, তাদের এই সঞ্চয়ের পরিমাণ কত হচ্ছে বা সেটি কোথায় এবং কিভাবে দেখা যাবে। নিয়মিত জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করা না হলে অনেক সময় হিসাবের ভুল কিংবা তথ্য গড়মিল থেকে বড় ধরনের সমস্যার মুখে পড়তে হতে পারে।
বর্তমানে ডিজিটাল ব্যবস্থার মাধ্যমে ঘরে বসেই নিজের জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করা সম্ভব হয়েছে। এতে আপনার সময় বাঁচে, কাগজপত্রের ঝামেলা কমে এবং স্বচ্ছতাও নিশ্চিত হয়।
জ্ঞানী বাবা!’র আজকের এই লেখায় আমরা জানবো কীভাবে সহজে জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করবেন, কোন কোন উপায় আছে এবং কেন এটি করা জরুরি।
সূচীপত্রঃ
জিপিএফ ব্যালেন্স দেখার নিয়ম

বর্তমানে প্রযুক্তির কল্যাণে জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করার পদ্ধতি অনেকটাই সহজ হয়েছে। আপনি ঘরে বসেই অনলাইনে আপনার ব্যালেন্স দেখতে পারবেন। নিচে জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করার সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতিগুলো তুলে ধরা হলো:
ক) অনলাইনে জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করার ধাপ
বাংলাদেশের বেশিরভাগ সরকারি দপ্তরের জন্য এখন জিপিএফ সম্পর্কিত তথ্য অনলাইনে পাওয়া যায়। ব্যালেন্স চেক করতে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন:
- সরকারি ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন, যেমন: www.cafopfm.gov.bd (অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ওয়েবসাইট, একাউন্টস অফিসে নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে)।
- GPF লগইন পোর্টালে যান
- GPF অ্যাকাউন্ট নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর বা নির্দিষ্ট পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন
- লগইনের পর আপনার বর্তমান ব্যালেন্স, জমা, সুদসহ পূর্ণাঙ্গ স্টেটমেন্ট দেখতে পারবেন
- প্রয়োজনে PDF ডাউনলোড বা প্রিন্টও নিতে পারবেন
আরও পড়ুনঃ ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন
খ) হিসাব শাখা বা অফিসের মাধ্যমে (অফলাইন পদ্ধতি)
যদি আপনি অনলাইনে তথ্য না পান অথবা ওয়েবসাইটে প্রবেশে সমস্যা হয়, তাহলে সরাসরি আপনার কর্মস্থলের হিসাব শাখা (Accounts Section) বা জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে গিয়ে আপনার জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র, চাকরির তথ্য ও আবেদনপত্র প্রয়োজন হতে পারে।
গ) মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে (যদি প্রযোজ্য হয়)
কিছু সরকারি দপ্তর বর্তমানে নিজস্ব মোবাইল অ্যাপ চালু করেছে, যেখানে জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করা যায়। যদি আপনার কর্মস্থলের জন্য নির্ধারিত এমন অ্যাপ থাকে, সেটি প্লে-স্টোর থেকে ডাউনলোড করে লগইন করলেই ব্যালেন্স দেখা যাবে।
এই ছিল জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করার সহজ ও আধুনিক উপায়সমূহ। অনলাইনের সুবিধা কাজে লাগিয়ে আপনি খুব সহজেই নিজের সঞ্চয়ের হালনাগাদ অবস্থা জানতে পারবেন।
জিপিএফ ব্যালেন্স দেখার সাধারণ সমস্যা
অনলাইনে জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করার সুবিধা থাকলেও বাস্তবে অনেকেই বিভিন্ন সমস্যার মুখে পড়েন। নিচে কিছু সাধারণ সমস্যা ও তার সহজ সমাধান তুলে ধরা হলোঃ
সমস্যা ১: ওয়েবসাইট কাজ না করা
অনেক সময় সরকারি ওয়েবসাইটগুলোতে অতিরিক্ত ভিজিটরের চাপ বা সার্ভার সমস্যার কারণে পেজ লোড হতে দেরি হয় বা একেবারেই খোলে না।
সমাধানঃ
- ভিজিটের জন্য সকাল ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে চেষ্টা করুন
- প্রয়োজনে মোবাইল ব্রাউজারের বদলে কম্পিউটার ব্যবহার করুন
- ব্রাউজারের ক্যাশ/কুকি ক্লিয়ার করুন এবং আবার চেষ্টা করুন
সমস্যা ২: লগইন করতে না পারা
অনেকেই সঠিক GPF অ্যাকাউন্ট নম্বর বা পাসওয়ার্ড না জানার কারণে লগইন করতে পারেন না।
সমাধানঃ
- আপনার দপ্তরের হিসাব শাখা থেকে সঠিক জিপিএফ নম্বর সংগ্রহ করুন
- ভুল পাসওয়ার্ড দিলে কয়েকবার পর অ্যাকাউন্ট ব্লক হয়ে যেতে পারে, তাই সতর্ক থাকুন
- পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে ‘ফরগেট পাসওয়ার্ড’ অপশন ব্যবহার করুন (যদি থাকে)
আরও পড়ুনঃ টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যায় কেন?
সমস্যা ৩: ব্যালেন্স বা তথ্য আপডেট না হওয়া
অনেক সময় অনলাইনে দেখা যাচ্ছে যে জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করলে আগের তথ্যই দেখা যাচ্ছে, নতুন কিস্তির আপডেট নেই।
সমাধানঃ
- সাধারণত মাসের শেষে অথবা নির্দিষ্ট সময় পর তথ্য আপডেট হয়
- দীর্ঘদিন ধরে তথ্য আপডেট না হলে সংশ্লিষ্ট হিসাবরক্ষণ অফিসে যোগাযোগ করুন
সমস্যা ৪: মোবাইল থেকে সাইট কাজ না করা
কিছু ওয়েবসাইট মোবাইল ভার্সনে ঠিকভাবে কাজ করে না।
সমাধানঃ
- মোবাইল ব্রাউজারে ‘ডেস্কটপ সাইট’ চালু করুন
- ভালো ব্রাউজার (যেমন Chrome) ব্যবহার করুন
জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করার গুরুত্ব

নিয়মিত জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করার অভ্যাস অনেক দিক থেকে উপকারে আসে, বিশেষ করে সরকারি চাকরিজীবীদের আর্থিক সচেতনতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার জন্য। নিচে এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা তুলে ধরা হলো:
১. সঞ্চয়ের অগ্রগতি বুঝতে সাহায্য করে
প্রতি মাসে বেতন থেকে যে টাকা কাটা হচ্ছে তা কোথায় যাচ্ছে এবং কতো টাকা জমা হয়েছে, তা জানার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করা। এতে আপনি নিজের সঞ্চয়ের অগ্রগতি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পান।
২. হিসাবের ভুল বা গড়মিল ধরতে সুবিধা হয়
অনেক সময় হিসাব বিভাগ ভুলবশত ভুল এন্ট্রি দিতে পারে। নিয়মিত জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করলে আপনি সহজেই এমন ত্রুটি শনাক্ত করতে পারেন এবং সময়মতো সংশোধনের উদ্যোগ নিতে পারেন।
৩. লোন বা অগ্রিম গ্রহণের পরিকল্পনা সহজ হয়
জিপিএফ থেকে লোন বা অগ্রিম গ্রহণের আগে আপনার বর্তমান ব্যালেন্স জানা অত্যন্ত জরুরি। ব্যালেন্স জানা না থাকলে আবেদন করতে সমস্যা হতে পারে। তাই, নিয়মিত ব্যালেন্স চেক করলেই আপনি সহজেই বুঝে পারবেন কতটুকু টাকা আপনি তুলতে পারবেন।
আরও পড়ুনঃ নেটওয়ার্ক টপোলজি কি? কত প্রকার ও কি কি?
৪. অবসর/পেনশন পরিকল্পনায় সহায়ক
চাকরি শেষে পেনশন ও সঞ্চয় নির্ভর করে আপনি কর্মজীবনে কতটুকু সঞ্চয় করেছেন তার ওপর। নিয়মিত জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করলে আপনি বুঝতে পারবেন কতটুকু অর্থ জমেছে এবং ভবিষ্যতে কত জমা হতে পারে , যা অবসরের প্রস্তুতির জন্য খুবই কার্যকর।
৫. মানসিক শান্তি ও স্বচ্ছতা
নিজের অর্থ নিজের চোখে দেখলে আত্মবিশ্বাস ও মানসিক প্রশান্তি বাড়ে। জিপিএফ অ্যাকাউন্টে কত টাকা জমা আছে সেটা জানলে অনিশ্চয়তা কমে এবং আর্থিক স্বচ্ছতাও বজায় থাকে।
গুরুত্বপূর্ণ লিংকসমূহ
অনলাইনে জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করার সময় অনেকেই সঠিক ওয়েবসাইট বা সহায়তার অভাবে সমস্যায় পড়েন। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ লিংক, যোগাযোগ মাধ্যম ও সহায়তা তথ্য দেওয়া হলো, যা আপনার জিপিএফ সংক্রান্ত কার্যক্রম সহজ করবে:
সরকারি ওয়েবসাইটসমূহ
- অর্থ বিভাগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট
https://www.cafopfm.gov.bd
👉 এখান থেকে আপনি জিপিএফ ব্যালেন্স চেক-সহ অন্যান্য অ্যাকাউন্টিং তথ্য জানতে পারবেন। - অর্থ মন্ত্রণালয় – অর্থ বিভাগ
https://mof.gov.bd
👉 এখানে জিপিএফ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন, নীতিমালা ও আপডেট পাওয়া যায়। - জেলা হিসাবরক্ষণ অফিস (CGDF)
https://www.cgdf.gov.bd
👉 নির্দিষ্ট জেলা হিসাব অফিসের সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য এখানে পাওয়া যায়।
যোগাযোগ/হেল্পলাইন
- অ্যাকাউন্ট অফিস সহায়তা ডেস্ক (CAFOPFM)
📞 ফোন: +880-2-9513840
📧 ইমেইল: [email protected]
🕘 সময়: রবি–বৃহস্পতি (সকাল ৯টা – বিকাল ৫টা) - স্থানীয় হিসাব অফিস বা আপনার নিজ দপ্তরের হিসাব শাখা
👉 প্রয়োজনে সরাসরি গিয়ে সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।
জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করা নিয়ম (টিউটোরিয়াল)
এতক্ষণের আলোচনা শেষেও যাদের জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করা ব্যাপারটি কঠিন মনে হচ্ছে, তাদের জন্যে নিচে একটি ভিডিও টিউটোরিয়াল তুলে ধরা হলো। টিউটোরিয়াল অনুসরণ করে আপনি সহজেই আপনার জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করে নিতে পারবেন।
শেষ কথা
পরিশেষে এতটুকুই বলব, আশা করি জ্ঞানী বাবা!‘র জিপিএফ ব্যলেন্স চেক সংক্রান্ত আজকের এই লেখাটি আপনার ভালো লেগেছে। যদি তাই হয়ে থাকে, আজকের এই লেখাটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে , একটু হলেও উপকারে এসে থাকে তবে অনুরোধ করব, সামাজিক মাধ্যমে এই ব্লগটি শেয়ার করুন। আর কমেন্ট সেকশনে আপনার মূল্যবান মতামত রেখে যেতে একদম ভুলবেন না কিন্তু!!!