দুধ খাওয়ার উপকারিতা কি কি? জেনে নিন বিস্তারিত

প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় তো আমরা সবাই পুষ্টিকর উপাদানই রাখার চেষ্টা করি, কিন্তু এদুধের ব্যপারটা কিছুটা আলাদা। যুগ যুগ ধরে দুধ খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে চিকিৎসক, পুষ্টিবিদ ও স্বাস্থ্যসচেতন মানুষদের কাছে আলোচিত হয়ে আসছে।
একদিকে দুধ যেমন হাড় ও দাঁত মজবুত করে, তেমনি এটি হজমে সাহায্য করে, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এমনকি ত্বকের সৌন্দর্যও রক্ষা করে। তবে দুধ কেবল উপকারীই নয়, কখন, কীভাবে এবং কী ধরণের দুধ খাওয়া উচিত , সে বিষয়গুলো ভাল করে জানা না থাকলে উপকারের বদলে অপকারও হতে পারে। বিশেষ করে সকালে অথবা রাতে দুধ খাওয়ার সময়, বা গরম দুধ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই তেমন কিছু জানিনা।
জ্ঞানী বাবা!‘র আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানবো দুধ খাওয়ার উপকারিতা কী কী, রাতে ও সকালে দুধ খাওয়ার উপকারিতা, গরুর দুধের উপকারিতা ও অপকারিত্ ঘন দুধ ও গরম দুধ খাওয়ার সঠিক উপাইয়, দুধ খাওয়ার উপযুক্ত সময় কখন? থেকে শুরু করে দুধ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত। তাহলে চলুন, শুরু করা যাক!!!
সূচীপত্রঃ
দুধ খাওয়ার উপকারিতা

দুধ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি কম-বেশি, কিন্তু দুধের প্রকৃত পুষ্টিগুণ ও দীর্ঘমেয়াদী উপকারিতা সম্পর্কে জ্ঞান আমাদের অনেকেরই অনেক কম। মুলত দুধ একটি পূর্ণাঙ্গ খাবার হিসেবেই বিবেচিত হয় কারণ এতে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি১২, ফসফরাস, পটাশিয়ামসহ নানা ধরনের খনিজ উপাদান থাকে। এই সমস্ত উপাদান শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমকে সক্রিয় রাখতে সহায়তা করে। নিচে সার্বিকভাবে দুধ খাওয়ার উপকারিতাগুলো তুলে ধরা হলো:
১. হাড় ও দাঁত মজবুত করে
দুধের অন্যতম প্রধান উপাদান হলো ক্যালসিয়াম, যা হাড় ও দাঁতের গঠন এবং দৃঢ়তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিয়মিত দুধ খেলে অস্টিওপোরোসিস বা হাড় ভাঙার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়, বিশেষ করে বয়স্কদের জন্য দুধ বেশি উপকারি হতে পারে (যদি হজমে সমস্যা না হয়)।
২. মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে
দুধে থাকা ভিটামিন বি১২ ও অন্যান্য নিউরোট্রান্সমিটার উপাদান মস্তিষ্কের স্নায়ু সচল রাখতে সহায়তা করে। শিশুদের মানসিক বিকাশ ও বয়স্কদের স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতে দুধ অনেক কার্যকর।
আরও পড়ুনঃ রক্তের এলার্জি দূর করার উপায় জেনে নিন
৩. পেশি গঠনে সহায়ক
প্রোটিন হচ্ছে পেশি গঠনের প্রধান উপাদান। দুধে উপস্থিত উচ্চমানের প্রোটিন শরীরের ক্ষয় পূরণ করে এবং শরীর গঠনে সহায়তা করে। যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ প্রাকৃতিক প্রোটিন সোর্স।
৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
দুধে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন (A, D, B12) ও নানান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় রাখে। ফলে সাধারণ সর্দি-জ্বর থেকে শুরু করে ভাইরাল ইনফেকশন পর্যন্ত অনেক কিছু প্রতিরোধে সহায়তা করে।
৫. হজমে সহায়ক
দুধে থাকা ল্যাকটোজ ও এনজাইম পাচনক্রিয়াকে সহজতর করে। তবে ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স থাকলে পরিমিত দুধ গ্রহণ অথবা ল্যাকটোজ-ফ্রি দুধ বেছে নেওয়া উচিত।
৬. ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে
দুধে থাকা ভিটামিন A, D এবং প্রোটিন ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দুধ ভেতর থেকে ত্বককে হাইড্রেট করে এবং চুলের গোড়া শক্ত করে।
৭. স্নায়ুতন্ত্র শান্ত রাখে
দুধে থাকা ম্যাগনেসিয়াম ও ট্রিপটোফ্যান মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত দুধ খেলে ঘুম ভালো হয় এবং মনের উদ্বেগ কমে যায়।
রাতে দুধ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

অনেকেই ভাবেন, দিন শেষে দুধ খাওয়া ঠিক কি না, কিংবা ঘুমানোর আগে দুধ খেলে ওজন বেড়ে যাবে কি না। বাস্তবে, রাতে দুধ খাওয়ার উপকারিতা বৈজ্ঞানিকভাবেই প্রমাণিত , যদি আপনি তা পরিমিত পরিমাণে এবং সঠিকভাবে গ্রহণ করেন।
নিচে রাতে দুধ খাওয়ার উপকারিতা তুলে ধরা হলো:
১. ঘুমের মান উন্নত করে
রাতে গরম দুধ খেলে ঘুম ভালো হয়। এর কারণ দুধে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড ট্রিপটোফ্যান, যা আমাদের মস্তিষ্কে সেরোটোনিন ও মেলাটোনিন নামক হরমোন তৈরিতে সাহায্য করে , এগুলো আবার ঘুম আনতে সাহায্য করে। তাই ঘুমের আগে এক গ্লাস গরম দুধ নিঃসন্দেহে একটি প্রাকৃতিক ঘুমের ওষুধ হতে পারে।
২. মানসিক চাপ কমায়
দিন শেষে রাতে আমাদের প্রায় সকলেরই মানসিক চাপ, ক্লান্তি বা উদ্বেগের প্রবণতা বেশি থাকে। রাতে দুধ খেল তা স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করে ও মনকে শিথিল করে, ফলে স্ট্রেস কমে এবং এটি ঘুমেও সাহায্য করে।
৩. পেশি পুনরুদ্ধারে সহায়ক
পুরো দিনের ব্যস্ততা ও শরীরচর্চার পর রাতে দুধ খাওয়া শরীরের ক্ষয় হওয়া কোষ ও পেশি পুনর্গঠনে সাহায্য করে। এতে থাকা প্রোটিন এবং ক্যালসিয়াম পেশিকে শক্তিশালী করে।
৪. হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে
দুধে থাকা এনজাইম পাচনতন্ত্রে বেশ ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। রাতের খাবার হজমে সহায়তা করে এবং গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটির সমস্যা কমায়।
৫. রাতের ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে
অনেকেই গভীর রাতে অতিরিক্ত ক্ষুধার কারণে অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে ফেলেন। কিন্তু রাতে এক গ্লাস দুধ খেলে পেট ভরা থাকে, ফলে বারবার খাওয়ার প্রবণতা কমে এবং ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
একবাক্যে, রাতে দুধ খাওয়ার উপকারিতা শুধু ঘুমের ক্ষেত্রেই নয় , বরং পুরো শরীরের সুস্থতার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এটি একটি সহজ, সস্তা এবং প্রাকৃতিক পদ্ধতি যা আপনাকে ভালো ঘুম ও সুস্থ জীবনের পথে নিয়ে যেতে পারে। তাই বিশেষ কোন সমস্যা না থাকলে প্রতিদিন রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস দুধ পান করতেই পারেন।
রাতে দুধ খাওয়ার অপকারিতা
১. হজমে সমস্যা
কারো কারো জন্য রাতে দুধ খাওয়া হজমের সমস্যা, গ্যাস বা অস্বস্তির কারণ হতে পারে। বিশেষ করে যাদের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স আছে, তাদের ক্ষেত্রে এটি ডায়রিয়া বা পেট ফাঁপার কারণ হতে পারে।
২. ওজন বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি
রাতে উচ্চ ক্যালোরি ও পূর্ণচর্বিযুক্ত দুধ খাওয়া অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে, যদি তা নিয়মিত ও অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হয়।
৩. ঘুমে ব্যাঘাত
অনেক সময় দুধ পান করে যদি সঙ্গে চিনি বা অন্য খাবার খাওয়া হয়, তবে রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, যা ঘুমের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
কিছু পরামর্শঃ
- দুধ গরম করে খেলে হজম সহজ হয় এবং ঘুম ভালো হয়।
- রাতে চিনি না মিশিয়ে খাওয়া স্বাস্থ্যকর।
- যাদের পেট সমস্যা আছে, তারা চিকিৎসকের পরামর্শে দুধ খাওয়ার সময় ঠিক করুন।
সকালে দুধ খাওয়ার উপকারিতা

সকালের শুরুটাই যদি হয় পুষ্টিকর ও শক্তিদায়ক কোন খাবার দিয়ে, তাহলে সারাদিনের কর্মক্ষমতা বেড়ে যেতে পারে কয়েকগুণ। আর এই শক্তির অন্যতম উৎস হতে পারে এক গ্লাস দুধ। অনেক পুষ্টিবিদের মতে, সকালে দুধ খাওয়ার উপকারিতা শুধু শরীর নয়, মনের জন্যও উপকারী। ঘুম থেকে উঠে শরীর যখন প্রাকৃতিকভাবে ডিটক্স প্রক্রিয়ায় থাকে, তখন দুধ খাওয়া শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করে।
নিচে সকালে দুধ খাওয়ার উপকারিতাগুলো তুলে ধরা হলোঃ
১. সারাদিনের শক্তির জোগান দেয়
সকালে এক গ্লাস দুধ খেলে এতে থাকা প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট শরীরকে দীর্ঘ সময় ধরে শক্তি সরবরাহ করে। যারা সকালের নাশতা ভুলে যান বা ব্যস্ততার কারণে হালকা কিছু খেয়ে বের হন, তাদের জন্য দুধ হতে পারে একটি আদর্শ বিকল্প।
২. ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখে
দুধে উপস্থিত প্রোটিন ও ফ্যাট পেট ভরা রাখে, ফলে অকারণে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
৩. মনোযোগ বৃদ্ধি করে
ভিটামিন বি১২ ও অন্যান্য নিউট্রিয়েন্টস মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। সকালে দুধ খেলে মনোযোগ বাড়ে ও মানসিক ক্লান্তি দূর হয়, বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও অফিসগামীদের জন্য এটি অত্যন্ত উপকারী হতে পারে।
৪. রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
প্রতিদিন সকালে দুধ খাওয়ার অভ্যাস শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। এতে থাকা ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য খনিজ উপাদান শরীরকে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
৫. হজমশক্তি উন্নত করে
খালি পেটে দুধ খেলে অনেক সময় হজমে সমস্যা হতে পারে, কিন্তু হালকা নাশতার পর দুধ খাওয়ার অভ্যাস পাচনতন্ত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখে (যদি বিশেষ কোন সমস্যা না থাকে) । এটি কোষ্ঠকাঠিন্য ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
আরু পড়ুনঃ নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন
রাতে ঘুমানোর আগে গরম দুধ খাওয়ার উপকারিতা
এই যুগে, সারাদিনের ক্লান্তি, মানসিক চাপ আর দুশ্চিন্তার ভিড়ে রাতে শান্তিপূর্ণ ঘুম অনেকের কাছেই যেন এক স্বপ্নের মতো হয়ে গেছে! তবে প্রাকৃতিক কিছু অভ্যাস এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হলো রাতে ঘুমানোর আগে গরম দুধ খাওয়ার অভ্যাস। এই অভ্যাস শুধু ঘুমেই সাহায্য করে না, বরং শরীর ও মনের ওপর অনেক ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। যেমনঃ
১. ঘুম আনতে সাহায্য করে
গরম দুধে রয়েছে ট্রিপটোফ্যান নামক একটি অ্যামিনো অ্যাসিড, যা মস্তিষ্কে সেরোটোনিন ও মেলাটোনিন হরমোন তৈরি করে , যা ঘুম আসতে দেহকে সহায়তা করে। বিশেষ করে যারা ইনসোমনিয়া বা ঘুমের সমস্যা ভোগেন, তাদের জন্য এটি একটি প্রাকৃতিক ঘুমের ট্যাবলেট।
২. মানসিক চাপ কমায়
গরম দুধের হাল্কা উষ্ণতা এবং এতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম স্নায়ুকে শিথিল করে। এটি উদ্বেগ ও স্ট্রেস কমিয়ে দেয় এবং মানসিক প্রশান্তি আনতে সাহায্য করে।
৩. পেশি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে
দিন শেষে শরীরের ক্লান্ত পেশিগুলোর পুনর্গঠনে গরম দুধ অত্যন্ত উপকারী। এতে থাকা প্রোটিন, বিশেষ করে ক্যাসেইন, ধীরে ধীরে হজম হয় এবং রাতভর শরীরকে পুষ্টি যোগায়।
৪. হজমে সহায়ক
রাতের খাবার হজমে গরম দুধ সহায়তা করে। রাতে দুধ খেলে তা অ্যাসিডিটির ঝুঁকি কমায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন দুধের সঙ্গে বেশি তেল-মসলাযুক্ত খাবার না থাকে।
৫. দাঁত ও হাড়ের জন্য উপকারী
ঘুমানোর আগে দুধ খেলে শরীর সারারাত ক্যালসিয়াম গ্রহণ করে, যা দাঁত ও হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক। বয়স্কদের ক্ষেত্রে এটি বিশেষভাবে উপকারী।
যেভাবে পান করতে পারেনঃ
- গরম দুধে এক চিমটি হলুদ বা সামান্য মধু মিশিয়ে খেলে অতিরিক্ত উপকার পাওয়া যায়।
- দুধ যেন অতিরিক্ত গরম না হয়, উষ্ণ রাখাই যথেষ্ট।
- যাদের দুধ হজমে সমস্যা হয় (ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স), তারা ল্যাকটোজ-ফ্রি দুধ ব্যবহার করতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন
ঘন দুধ খাওয়ার উপকারিতা
দুধ সবসময়ই পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ, তবে যখন সেটি ঘন বা ফোল-ক্রিম দুধ হয়, তখন তার পুষ্টিগুণ আরও অনেক বেড়ে যায়। ঘন দুধ খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি, বিশেষ করে যদি তা পরিমিতভাবে গ্রহণ করা হয়।
নিচে উল্লেখযোগ্য ঘন দুধ খাওয়ার উপকারিতাগুলো তুলে ধরা হলোঃ
১. অতিরিক্ত পুষ্টির উৎস
ঘন দুধ সাধারণত পূর্ণচর্বিযুক্ত (full-fat) দুধ হিসেবে বিবেচিত হয়। এতে চর্বি, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, ডি, ই এবং কে-এর পরিমাণ বেশি থাকে। যারা অপুষ্টি বা দুর্বলতাজনিত সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য ঘন দুধ হতে পারে আদর্শ পুষ্টির উৎস।
২. ওজন ও মাংসপেশি বাড়াতে সহায়ক
যারা ওজন বাড়াতে চান, তাদের জন্য ঘন দুধ খাওয়া অত্যন্ত কার্যকর একটি খাবার হতে পারে। এতে ক্যালরি ও প্রোটিনের পরিমাণ বেশি থাকায় শরীরে চর্বি ও পেশি বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করে। বিশেষ করে শরীরচর্চাকারীরা একে ওজন বাড়ানোর ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করে থাকেন।
৩. হাড় ও দাঁতের জন্য উপকারী
যেহেতু ঘন দুধে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ সাধারণ দুধের তুলনায় বেশি, তাই এটি হাড় ও দাঁতের গঠনে বিশেষ সহায়ক। শিশু, বৃদ্ধ এবং নারীদের জন্য এটি দারুণ উপকারী।
৪. মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য উন্নত করে
ঘন দুধে থাকা ভালো ফ্যাট ও ভিটামিন বি১২ মস্তিষ্কের কোষ গঠনে সহায়তা করে এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। ছাত্র-ছাত্রী ও প্রবীণদের জন্য এটি একটি কার্যকর ব্রেইনফুড হতে পারে।
৫. রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
ঘন দুধে থাকা ভিটামিন এ ও ডি শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। এটি ঠান্ডা, সর্দি, দুর্বলতা ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে
কিছু সতর্কতাঃ
- যাদের কোলেস্টেরল বা ওবেসিটির সমস্যা আছে, তারা ঘন দুধ এড়িয়ে চলুন বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে গ্রহণ করুন।
- অতিরিক্ত পরিমাণে ঘন দুধ খাওয়া হজমের সমস্যা বা গ্যাস সৃষ্টি করতে পারে।
গরুর দুধ খাওয়ার উপকারিতা

প্রাচীনকাল থেকেই গরুর দুধ মানুষের খাদ্য তালিকার অন্যতম পুষ্টিকর উপাদান হিসেবেই পরিচিত। আমাদের দেশে ঘরে ঘরে এই দুধ ব্যবহৃত হয় চা, দই, ক্ষীর, গরম দুধ কিংবা সরাসরি পান করার জন্য। স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞদের মতে, গরুর দুধ খাওয়ার উপকারিতা অনেক এবং এটি প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখলে শরীর-মন দুটোই উপকৃত হয়।
নিচে গরুর দুধ খাওয়ার উপকারিতাগুলো তুলে ধরা হলোঃ
১. হাড় ও দাঁত মজবুত করে
গরুর দুধ ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন ডি-তে ভরপুর। এই উপাদানগুলো হাড় ও দাঁতের গঠন ও শক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ, সবার জন্য গরুর ধুধ উপকারী
২. প্রোটিনের চমৎকার উৎস
গরুর দুধে থাকা হাই কোয়ালিটি প্রোটিন শরীরের কোষ পুনর্গঠন, পেশি বৃদ্ধি এবং রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যারা শারীরিক পরিশ্রম করেন বা শরীরচর্চা করেন, তাদের জন্য গরুর দুধ একটি আদর্শ খাবার।
৩. মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়ক
গরুর দুধে থাকা ভিটামিন বি১২, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও ভালো ফ্যাট মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রকে সুস্থ রাখে এবং শিশুদের মেধা ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে।
৪. হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা
পরিমিতভাবে গরুর দুধ খাওয়া হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে, বিশেষ করে যখন তা ফ্যাট কমানো (skimmed) দুধ হয়। এতে থাকা পটাসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৫. চোখের জন্য উপকারী
গরুর দুধে থাকা ভিটামিন এ চোখের রেটিনা সুস্থ রাখতে সহায়ক এবং রাতকানা বা দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হওয়ার ঝুঁকি কমায়।
৬. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
গরুর দুধে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ই ও জিঙ্ক শরীরে ফ্রি র্যাডিকেল গঠনে বাধা দেয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে।
কিছু পরামর্শঃ
- খাঁটি ও বিশুদ্ধ গরুর দুধ নির্বাচন করা জরুরি। ভেজাল দুধে উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি হতে পারে।
- যারা ল্যাকটোজ ইনটলারেন্ট, তারা গরুর দুধ পান করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- ওজন কমাতে চাইলে লো-ফ্যাট গরুর দুধ গ্রহণ করুন।
এক কথায় বললে, গরুর দুধ খাওয়ার উপকারিতা অনেক এবং এটি একটি সুপারফুড হিসেবেই ধরা যায়। তবে প্রতিটি মানবেদেহই আলাদা, তাই নিজের চাহিদা ও শারীরিক অবস্থান অনুযায়ী এর পরিমাণ নির্ধারণ করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
শেষ কথা
জ্ঞানী বাবা!‘র আজকের লেখায় আমরা জানলাম, দুধ খাওয়ার উপকারিতা, গরম দুধ খাওয়ার উপকারিতা, সকালে দুধ খাওয়ার উপকারিতা, গরুর দুধ খাওয়ার উপকারিতা, রাতে গরম দুধ খাওয়ার উপকারিতা, ঘন দুধ খাওয়ার উপকারিতা থেকে শূরু করে দুধ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত। আশা করি প্রিয় পাঠক জানতে পেরেছেন, দুধ খাওয়ার উপকারিতা আসলে কতটা বেশি!
সবশেষ এ আশা করব, পাঠক জ্ঞানী বাবা!‘র আজকের লেখাটি আপনার ভালো লেগেছে, যদি ভাল লেগেই থাকে তাহলে এই ব্বলগ পোস্টটি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করার অনুরোধ রইল। আর আপনার মূল্যবান মতামত আমাদের জানাতে একদম ভুলবেন না কিন্তু!