মহাবিশ্ব কি? মহাবিশ্ব কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে?

মহাবিশ্ব কি? মহাবিশ্ব কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে? এ নিয়ে মানুষের জানার প্রবল আগ্রহ সুদূর সেই প্রাচীনকাল থেকেই। বর্তমান আধুনিক বিশ্বে বিজ্ঞানের ব্যাপক অগ্রযাত্রার দরুন মহাবিশ্ব কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে?, কিংবা আসলেই মহাবিশ্ব কাকে বলে?, আমাদের মহাবিশ্বের বিস্তৃতি কতটুকু?, মহাবিশ্বের গঠন কি রূপ? এবং মহাবিশ্বের সৃষ্টির মূল কারণ কি? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে গিয়ে বহু বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের আবির্ভাব ঘটেছে। জ্ঞানী বাবা!’র আজকের লেখায় থাকছে এই সকল প্রশ্নেরই বিস্তর উপস্থাপনা। তো চলুন, শুরু করা যাক
সূচীপত্রঃ
মহাবিশ্ব কি? মহাবিশ্ব কাকে বলে?
একদম সাধারণভাবে বললে, আমাদের চারপাশে বিদ্যমান অজস্র গ্যালাক্সি, তারকা, গ্রহ, নক্ষত্রমণ্ডল, এবং অন্যান্য মহাজাগতিক বস্তু এই সকল কিছুকেই একত্রে মহাবিশ্ব বলে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, আমাদের আজকের এই মহাবিশ্ব আজ থেকে প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে বিগ ব্যাং নামক এক মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছিল। এই মহাবিস্ফোরণের পর থেকে আজও পর্যন্ত মহাবিশ্ব ক্রমাগত প্রসারিত হচ্ছে, এমনকি সুদূর ভবিষ্যতেও মহাবিশ্ব ক্রমাগত প্রসারিত হতেই থাকবে।
মহাবিশ্বের গাঠনিক প্রকৃতি, মহাবিশ্বের সীমারেখা এবং এর চূড়ান্ত পরিণতি সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা এখনো গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত যে—আপাত দৃষ্টিতে মহাবিশ্ব ধারণাটা খুব সাদামাটা মনে হলেও মহাবিশ্ব আমাদের কল্পনার চেয়েও অনেক বেশি বিশাল ও জটিল!
আরও পড়ুনঃ মহাদেশ কি ? পৃথিবীতে কয়টি মহাদেশ আছে ?
প্রথম দিকে মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের মানুষের প্রাথমিক ধারণা ছিল যে, মহাবিশ্ব স্থির এবং অপরিবর্তনশীল, এমনকি মহান বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের রিলেটিভিটিও সেই কথাই বলে। তবে আধুনিক বিজ্ঞান মহাবিশ্বকে ক্রমাগত বর্ধনশীল এক অসীম বিস্তৃত জগত হিসেবে চিহ্নিত করেছে। মহাবিশ্বের কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে? নিয়ে একাধিক তত্ত্ব রয়েছে, যার মধ্যে বিগ ব্যাং থিওরিটিই সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত ও সমৃদ্ধ। এই থিওরি আমাদের বলে, মহাবিশ্ব সৃষ্টির সূচনালগ্নে এক সময় সমস্ত কিছু (‘সমস্ত কিছু’ বলতে মহাবিশ্বের সকল উপাদানকে বুঝানো হচ্ছে) একটি অতি ঘন এবং উত্তপ্ত অবস্থায় একটি ছোট জায়গায় ছিল, এক পরায়ে এটি বিস্ফোরিত হয় এবং এই বিস্ফোরণের মাধ্যমেই আমদের এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়।
মহাবিশ্ব কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে? দ্য বিগ ব্যাং থিওরি
মহাবিশ্ব কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে, এই প্রশ্নের উত্তর খুজতে গিয়ে আমাদের মনে সবচেয়ে বেশি যে তত্ত্বের কথা উঠে আসে তা হল দ্য বিগ ব্যাং থিওরি। বিগ ব্যাং থিওরি অনুসারে, আজ থেকে প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন (১ বিলিয়ন= ১০০ কোটি) বছর আগে একটি বিশাল বিস্ফোরণের মাধ্যমে বর্তমান মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছিল।
বিগ ব্যাং থিওরি আমাদের বলে যে, সৃষ্টির সূচনার সময় আমাদের মহাবিশ্বের সমস্ত পদার্থ এবং শক্তি একত্রে একটি অতি ক্ষুদ্র পয়েন্টে সংকুচিত অবস্থায় ঘনীভূত ছিল, যাকে “সিঙ্গুলারিটি” বলা হয়। এর পর একদিন এই “সিঙ্গুলারিটি” হঠাৎ বিস্ফোরিত হয় এবং তা অতি দ্রুত বিস্তার লাভ করতে শুরু করে। এই বিস্ফোরণের ফলে যে পরিমাণ শক্তি এবং পদার্থ ছড়িয়ে পড়েছিল, তা থেকেই আজ মহাবিশ্বের সকল গ্যালাক্সি, নক্ষত্র, গ্রহ এবং অন্যান্য মহাজাগতিক বস্তু গঠিত হয়েছে।
বর্তমান আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে বিগ ব্যাং থিওরি মহাবিশ্বের সৃষ্টি এবং মহাবিশ্বের ক্রমশ সম্প্রসারণকে নির্ভুল ভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য আদর্শ মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা দ্য বিগ ব্যাং থিওরির প্রমাণ হিসেবে, মহাবিশ্বের ক্রমশ সম্প্রসারণের প্রক্রিয়া এবং একটি বিশেষ ধরনের রেডিও রশ্মি সিএমবিআরকে (cosmic microwave background radiation) কারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যা বিগ ব্যাং থেকেই শুরু হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।
মহাবিশ্ব কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে? সূচনার প্রথম মুহূর্ত
বিগ ব্যাং সংগঠিত হওয়ার প্রথম মুহূর্তগুলোতে মহাবিশ্ব ছিল অত্যন্ত উত্তপ্ত। মহা-সম্প্রসারণের পূর্বে মহাবিশ্ব ছিল একটি একক বিন্দু, যা আজকের দিনেও বিজ্ঞানীদের অবাক করে। তবে বিগ ব্যাং পরবর্তী কিছু মুহূর্তের মধ্যেই মহাবিশ্ব তার সম্প্রসারণ শুরু করে। প্রথম ৩ মিনিটের মধ্যেই নব্য এই মহাবিশ্বে উদ্ভব ঘটে হাইড্রোজেন এবং হিলিয়ামের মতো মৌলিক উপাদানগুলির, যা পরবর্তীতে ক্রমান্বয়ে সূর্যের মতো লক্ষ-কোটি নক্ষত্র এবং মিল্কিওয়ের মত লক্ষ-কোটি গ্যালাক্সি গঠনের প্রধান মৌলিক উপাদান হয়ে দাঁড়ায়!
আরও পড়ূনঃ রাশিয়ার আয়তন কত? রাশিয়া বাংলাদেশ থেকে কত গুণ বড়?
মহাবিশ্ব সৃষ্টির প্রথম দিকে, মহাবিশ্বের তাপমাত্রা এতটাই বেশি ছিল যে, পদার্থ এবং শক্তির মধ্যে কোনও স্থিতিশীলতা ছিল না। তবে বিগ ব্যাং এর প্রায় ৩ লাখ বছর পর, মহাবিশ্ব যথেষ্ট বিশালাকার হয়ে গেলে, মহাবিশ্ব ক্রমশ তার আপ হারিয়ে ঠাণ্ডা হতে শুরু করে, ফলে ইলেকট্রন এবং প্রোটন একত্রিত হয়ে গঠন করে মহাবিশ্বের প্রথম পরমাণু! এটি ছিল মহাবিশ্বের প্রথম “ফোটন যুগ”, যেখানে ফোটন বা আলো ধীরে ধীরে মহাবিশ্বের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।
মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ

মহাবিশ্বের সৃষ্টির প্রথম কিছু মুহূর্তে, মহাবিশ্ব ছিল অতি উত্তপ্ত ও অতি-ঘনত্ব বিশিষ্ট। কিন্তু বিগ ব্যাং এর প্রায় ৩০০,০০০ বছর পরে, যখন মহাবিশ্ব যথেষ্ট ঠাণ্ডা হতে শুরু করল, তখন অণু-পরমাণু গঠন হতে শুরু করে এবং মহাবিশ্বে আলোর (ফোটন) রাজত্ব শুরু হয়। এটি ছিল মহাবিশ্বের “Recombination Era”, যখন প্রথম অণু এবং পরমাণু গঠিত হয়েছিল। এ সময় মহাবিশ্বে শক্তির সংরক্ষণ এবং বস্তু কণার মধ্যে সম্পর্ক স্থিতিশীল হতে শুরু করে।
আরও পড়ুনঃ কত ডিগ্রি জ্বর হলে মানুষ মারা যায় জানেন কি?
বর্তমানেও মহাবিশ্ব তার সম্প্রসারণ থামায় নি! প্রতিনিয়তই বিশাল থেকে বিশালাকার হচ্ছে মহাবিশ্বের মোট আয়তন। হাবল স্পেস টেলিস্কোপ সহ অন্যান্য স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করে বর্তমানে বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের এই সম্প্রসারণ পর্যবেক্ষণ করছেন। এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, মহাবিশ্বে থাকা সবগুলো গ্যালাক্সি পরস্পর থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে, এবং এর মাধ্যমে Hubble’s Law প্রমাণিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা এই সম্প্রসারণকে “মহা-সম্প্রসারণ” বলে আখ্যায়িত করেন, যা পৃথিবী থেকে ১০০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের গ্যালাক্সি থেকেও স্পষ্টভাবে দেখা যায়!
মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ মানুষের জানার জগতে নতুন ধারণার দরজা খুলেছে, যেমন: কীভাবে মহাবিশ্ব পরিবর্তিত হচ্ছে এবং ভবিষ্যৎ মহাবিশ্বে কি কি হতে পারে। “মহাবিশ্ব কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে” এবং “মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ” এই দুটি ধারণা একে অপরের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত, এবং এটি আমাদেরকে মহাবিশ্বের বিশালতা উপলব্ধি করাতে সাহায্য করে।
মহাজাগতিক বিকিরণ (CMBR), গ্র্যাভিটেশনাল লেন্সিং এবং অন্যান্য আরও তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে, বিজ্ঞানীরা আরও গভীরভাবে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ এবং ভবিষ্যতের মহাবিশ্বের অবস্থা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। ধারণা করা হয়, মহাবিশ্বের এই ক্রমাগত সম্প্রসারণ সম্ভবত আরও কয়েক বিলিয়ন বছর চলতে থাকবে!
বিভিন্ন বিজ্ঞানী এবং তাদের মতামত
মহাবিশ্ব কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে অনেক বিজ্ঞানী তাদের নিজস্ব তত্ত্ব এবং পর্যবেক্ষণ প্রদান করেছেন। দ্য বিগ ব্যাং থিওরি, যা বর্তমানে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এবং প্রমাণিত তত্ত্ব, তার পেছনে রয়েছে অনেক বিজ্ঞানীর অবদান। তবে মহাবিশ্বের সৃষ্টি নিয়ে যুগে যুগে ভিন্ন ভিন্ন ধারণা প্রচলিত ছিল। নিচে কিছু প্রসিদ্ধ বিজ্ঞানী ও তাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কিত ধারণা তুলে ধরা হলঃ-
- আলবার্ট আইনস্টাইন – আলবার্ট আইনস্টাইন তার বিখ্যাত ‘জেনারেল থিওরি অফ রিলেটিভিটি’ তত্ত্বের মাধ্যমে মহাবিশ্বের গাণিতিক কাঠামো উপস্থাপন করেন। যদিও তিনি নিজে সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্বের ধারণা দেননি, তার সমীকরণ থেকেই বিজ্ঞানীরা পরবর্তীতে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের মডেল তৈরি করেন। তিনি প্রথমে মহাবিশ্বকে স্থির ধরে ‘কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্ট’ ধারণা যোগ করেছিলেন, যা তিনি পরে বাতিল করেন। তবে পরবর্তীতে তা আধুনিক গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।
- এডউইন হাবল – বিজ্ঞানী এডউইন হাবল মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ সম্পর্কে প্রথম উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পেশ করেন। ১৯২৯ সালে, তিনি মহাবিশ্বের দূরবর্তী গ্যালাক্সিগুলোর গতির দিকে নজর দিয়ে দেখেন যে, গ্যালাক্সিগুলো ক্রমশ আমাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, যা মহাবিশ্বের সম্প্রসারণকে সমর্থন করে। তার এই পর্যবেক্ষণ “হাবলের সূত্র” হিসেবে পরিচিত, যা মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ তত্ত্বের ভিত্তি স্থাপন করে।
- স্টিফেন হকিং – আধুনিক কালের আইনস্টাইন নামে খ্যাত স্টিফেন হকিং মহাবিশ্বের উৎপত্তি নিয়ে একটি নতুন ধারণা আসেন। তার “অ্যা ব্রিফ হিস্টোরি অফ টাইম” বইয়ে তিনি মহাবিশ্বের প্রথম মুহূর্তে কি হয়েছিল এবং বিগ ব্যাং-এর পরে কি ঘটেছিল, তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেছেন। তিনি দাবি করেন, বিগ ব্যাং এর আগে মহাবিশ্বের কোনও স্পষ্ট অবস্থান ছিল না এবং সময়েরও কোনও সুনির্দিষ্ট দিক ছিলনা।
- জর্জ ল্যাম্বার্ট – ১৯২৭ সালে, বিগ ব্যাং তত্ত্বের প্রথম ধারণা দিয়েছিলেন বেলজিয়ামের বিজ্ঞানী জর্জ ল্যাম্বার্ট। তিনিই প্রথম মহাবিশ্বের সূচনালগ্নে সৃষ্টি হওয়া স্থিতিশীল বস্তু ও শক্তির ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, যা পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা আরও সমৃদ্ধ করেন।
এসকল বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা আজ মহাবিশ্বের সৃষ্টি ও মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ নিয়ে এত কিছু জানতে পেরেছি। মহাবিশ্ব কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে? এই প্রশ্নটির উত্তর খোঁজার প্রচেষ্টায় যুগে যুগে বহু বিজ্ঞানীরা একে একে বিভিন্ন তত্ত্ব কিংবা পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করেছেন। এই তত্ত্ব কিংবা পর্যবেক্ষণগুলো কেবল মহাবিশ্বের সৃষ্টির রহস্যই উন্মোচন করেনি বরং আমাদের অস্তিত্ব এবং পৃথিবীর সৃষ্টি সম্পর্কেও নতুন ধারণার জন্ম দিয়েছে।
মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ কী?
বিগ ব্যাং থিওরির মাধ্যমে আমরা মহাবিশ্ব কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে? এটি জানতে পারলেও, বিজ্ঞানীরা আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন—মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ কি হতে পারে? বিগ ব্যাং থিওরি এবং মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ তত্ত্ব প্রমাণিত হওয়ার পর, বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ নিয়ে আরও অনেক তত্ত্ব এবং সম্ভাবনা উপস্থাপন করেছেন, যা মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমাদের ধারণা ধীরে ধীরে পালটে দিচ্ছে।
মহাবিশ্ব কি অনন্তকাল সম্প্রসারিত হতেই থাকবে?
বিগত শতাব্দীতে, বিজ্ঞানীরা “হাবল সঙ্কোচন” (Hubble Contraction) এর মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে, মহাবিশ্বের গ্যালাক্সিগুলো একে অপর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এই সম্প্রসারণ এখনও চলমান এবং ধারণা করা হচ্ছে যে, ভবিষ্যতেও মহাবিশ্ব আরও সম্প্রসারিত হতে থাকবে। মহাবিশ্ব যদি এই গতিতে সম্প্রসারিত হতে থাকে, তবে এমন একদিন আসবে যখন গ্যালাক্সিগুলো একে অপর থেকে এতটাই দূরে চলে যাবে যে,এক গ্যালাক্সি থেকে নির্গত আলো অন্য গ্যালাক্সি হতে পর্যবেক্ষণও অসম্ভব হয়ে পড়বে। ফলে মহাবিশ্ব ধীরে ধীরে “থিনিং আউট” বা শূন্যতার দিকে এগিয়ে যাবে ।
মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ- “দ্য বিগ ক্রাঞ্চ”
মহাবিশ্ব কিভাবে ধ্বংস হবে এ বিষয়ক বহুল আলোচিত একটি তত্ত্ব মহা-সঙ্কোচন বা “বিগ ক্রাঞ্চ”। এই হাইপোথিসিস অনুযায়ী, মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হতে হতে এক পর্যায়ে মহাবিশ্ব তার সম্প্রসারণ বন্ধ করে দিলে গ্যালাক্সিগুলি আবার একে অপরের দিকে আকৃষ্ট হতে শুরু করবে এবং এক সময় সমস্ত পদার্থ একত্রিত হয়ে একটি সুপার সিঙ্গুলারিটিতে পরিণত হবে। এই সময়কালকে বলা হবে”বিগ ক্রাঞ্চ”, যেখানে সমস্ত কিছু আবার একটি উচ্চ ঘনত্বের বিন্দুতে ফিরে যাবে, এবং এটি নতুন একটি বিগ ব্যাং এর শুরু হবে।
মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ- “বিগ রিপ”
মহাবিশ্বে ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত আরেকটি বিখ্যাত তত্ত্ব হল “বিগ রিপ”, যা মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ পরিণতির কথা আমাদের ভিন্ন ভাবে জানায়। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ এর গতি বৃদ্ধি পেতে পেতে এমন একটা সময় আসবে যখন মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের গতি এতটাই বেশি হয়ে যাবে যে, সকল গ্যালাক্সি, নক্ষত্র, গ্রহ এবং এমনকি অণু-পরমাণু পর্যন্ত পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এভাবে মহাবিশ্বের চূড়ান্ত পরিণতির ধারণাকেই মূলত “বিগ রিপ”।
আরও পড়ুনঃ সেরা ১৫ টি দ্রুত ওজন কমানোর উপায়…
মাল্টিভার্স বা সমান্তরাল মহাবিশ্ব!
মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ নিয়ে সবচেয়ে চমকপ্রদ ধারণাটি কিন্তু “মাল্টিভার্স” বা সমান্তরাল-বিশ্ব তত্ত্ব। সমান্তরাল মহাবিশ্ব তত্ত্ব অনুযায়ী, আমাদের মহাবিশ্বই কেবল একমাত্র মহাবিশ্ব নয়, বরং এমন আরও অসংখ্য মহাবিশ্বের মধ্যে একটি মাত্র। এক্ষেত্রে, প্রতিটি মহাবিশ্বের আলাদা আলাদা সময়কাল থাকতে পারে। কিছু কিছু তত্ত্বে বলা হয়েছে, একটি মহাবিশ্বের শেষ পরিণতিই হয়ত অন্য একটি মহাবিশ্বের সৃষ্টি আনুষ্ঠানিকতা, এবং এই প্রক্রিয়া কখনও শেষ হবার নয়!
শেষ কথা
জ্ঞানী বাবা!’র আজকের আর্টিকেলটি আপনার কেমন লেগেছে? আশা করি ভালই লেগেছে। যদি তাই হয়, আশা রাখব প্রিয় পাঠক, এই লেখাটি নিজ নিজ পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন। আর কমেন্ট করে নিজের অনুভূতি জানাতে ভুলবেন না কিন্তু!!!