মহাদেশ কি ? পৃথিবীতে মহাদেশ কয়টি ও কি কি ?

মহাদেশ কি, মহাদেশ কাকে বলে কিংবা পৃথিবীতে কয়টি মহাদেশ আছে?, পৃথিবী নিয়ে জানাশোনা আছে এমন প্রায় সকল মানুষের মনেই এই প্রশ্নগুলো আসা খুবই স্বাভাবিক, আপনিও হয়ত “পৃথিবীতে কয়টি মহাদেশ আছে?” কিংবা “মহাদেশ কয়টি ও কি কি” এই কী-ওয়ার্ড লিখে সার্চ করেছেন বলেই এখন জ্ঞানী বাবা!’র এই আর্টিকেলটি পড়ছেন। মহাদেশ কি? মহাদেশ কাকে বলে? মহাদেশ কয়টি ও কী কী ? এই সকল প্রশ্নের উত্তর সহ সকল মহাদেশের আয়তন ,মহাদেশগুলোর স্বাধীন দেশের সংখ্যা, মহাদেশগুলোর মোট জনসংখ্যা ইত্যাদি সকল তথ্যের বিস্তারিত আলোচনাই থাকছে জ্ঞানী বাবা!’র এই আর্টিকেলটিতে। তো চলুন, শুরু করা যাক!
সূচীপত্রঃ
মহাদেশ কি? মহাদেশ কাকে বলে?
একদম সহজ কথায়, মহাদেশ হচ্ছে পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের এমন কতগুলো বৃহৎ ভূখণ্ড, যা ভৌগোলিকভাবে স্বতন্ত্র এবং বিশাল জলভাগ দ্বারা পরিবেষ্টিত। মহাদেশই পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের সবচেয়ে বড় ভৌগোলিক একক। সাধারণত, মহাদেশগুলোর মধ্যে সরাসরি সংযোগ খুব কম ক্ষেত্রেই থাকে বা বেশিরভাগ সময় একেবারেই থাকে না, কেননা প্রায় প্রতিটি মহাদেশের মাঝেই আছে কোনো না কোনো মহাসাগর বা বড় জলারাশি।
আরও পড়ুনঃ রাশিয়ার আয়তন কত? রাশিয়া বাংলাদেশ থেকে কত গুণ বড়?
ভূতাত্ত্বিকদের ধারণা, মহাদেশ গঠনের প্রধান কারণ মূলত টেকটনিক প্লেট । আপনি হয়ত জানেন, আমাদের পৃথিবীর ভূত্বক ছোট বড় অনেকগুলো টেকটোনিক প্লেট দ্বারা গঠিত, যেগুলো মিলিত হয়ে এক পর্যায়ে এত বড় বড় ভূখণ্ড তৈরি করেছে। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে এই টেকটোনিক প্লেটগুলো নানা বিধ কারণে একে অপরের থেকে দূরে সরে গেছে, ফলে বর্তমান পৃথিবীর মহাদেশগুলো সৃষ্টি হয়েছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, অতীতে কোনো এক সময় পৃথিবীর সমস্ত ভূভাগ একত্রে একটি মাত্র মহাদেশ ছিল, যার নাম ছিল প্যানজিয়া (Pangaea)। পরবর্তীতে সময়ের পরিক্রমায় পৃথিবীর টেকটনিক প্লেট গুলো পরস্পর থেকে পৃথক হয়ে এই প্যানজিয়া নামক বিশাল মহাদেশটি ভাগ হয়েই বর্তমানের সাতটি মহাদেশে পরিণত হয়েছে।
পৃথিবীর মহাদেশগুলোর সাধারণ বৈশিষ্ট্য
বিশাল ভৌগোলিক এলাকা – মহাদেশগুলোর আয়তন সাধারণত অনেক বিশাল হয়ে থাকে, যেমন আয়তনের বিচারে এশিয়া পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মহাদেশ।
- ভিন্ন জলবায়ু ও পরিবেশ – পৃথিবীর প্রতিটি মহাদেশেরই রয়েছে নিজস্ব জলবায়ুর ভিন্নতা। যেমন, অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ সারা বছর বরফে আচ্ছাদিত থাকে আবার আফ্রিকা মহাদেশের জলবায়ু তুলনামূলক উষ্ণমণ্ডলীয়।
- অবস্থানগত স্বতন্ত্রতা – প্রতিটি মহাদেশই একে অপরের থেকে সুবিশাল মহাসাগর বা কোনো সমুদ্র দ্বারা ভৌগোলিকভাবে পৃথক অবস্থায় আছে।
- ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য – প্রতিটি মহাদেশেরই আছে নিজস্ব ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস, জনবসতি এবং তাদের নিজস্ব জীববৈচিত্র্য।
- স্বাধীন ভূপদার্থিক গঠন – প্রতিটি মহাদেশই এক বা একাধিক পৃথক টেকটোনিক প্লেটের অংশ।
পৃথিবীতে মহাদেশ কয়টি ও কি কি?
আধুনিককালে, মহাদেশের বিভাজন সম্পর্কিত সবচেয়ে জনপ্রিয় মতবাদ অনুসারে পৃথিবীতে মহাদেশ আছে মোট ৭টি, যথাক্রমেঃ-
- এশিয়া (Asia)
- ইউরোপ (Europe)
- আফ্রিকা (Africa)
- উত্তর আমেরিকা (North America)
- দক্ষিণ আমেরিকা (South America)
- অ্যান্টার্কটিকা (Antarctica)
- অস্ট্রেলিয়া (Australia)
পৃথিবীর মহাদেশগুলো নিয়ে ভিন্ন কিছু মতবাদ
বিজ্ঞানীদের মধ্যে কেউ কেউ আবার সাতটি মহাদেশের পরিবর্তে ছয়টি বা পাঁচটি মহাদেশের কথা বলেন। যেমন:
- ইউরেশিয়া (Eurasia) – কোনো কোনো বিজ্ঞানী ইউরোপ ও এশিয়াকে একত্রে একটি মহাদেশ বিবেচনা করেন, কারণ তাদের মতে ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে প্রকৃতপক্ষে কোনো ভৌগোলিক ব্যবধান নেই।
- আমেরিকা (America) – আবার কেউ কেউ আরো একটু সরেস। তারা উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকাকে পৃথক দুটি মহাদেশ না ধরে একত্রে একটি মহাদেশ হিসেবে গণ্য করতে বেশি পছন্দ করেন।
- অস্ট্রালাসিয়া (Australasia) – কিছু বিজ্ঞানী আবার অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের কিছু দ্বীপপুঞ্জকে একত্রে ধরে পুরোটিকে একটি মহাদেশ অস্ট্রালাসিয়া বলেন।
মহাদেশগুলোর আয়তন ও জনসংখ্যা
মহাদেশ | আয়তন (বর্গ কি.মি.) | জনসংখ্যা (প্রায়) | মোট দেশ | মোট ভূখণ্ডের |
এশিয়া | ৪৪,৫৭৯,০০০ | ৪.৭ বিলিয়ন | ৪৯ | ২৯.৪% |
আফ্রিকা | ৩০,৩৭০,০০০ | ১.৩ বিলিয়ন | ৫৪ | ২০.৩% |
উত্তর আমেরিকা | ২৪,৭০৯,০০০ | ৫৭৯ মিলিয়ন | ২৩ | ১৬.৫% |
দক্ষিণ আমেরিকা | ১৭,৮৪০,০০০ | ৪৩০ মিলিয়ন | ১২ | ১১.৮% |
ইউরোপ | ১০,১৮০,০০০ | ৭৪৭ মিলিয়ন | ৪৪ | ৬.৮% |
অস্ট্রেলিয়া | ৮,৬০০,০০০ | ২৬ মিলিয়ন | ১ | ৫.৭% |
অ্যান্টার্কটিকা | ১৪,০০০,০০০ | নেই | নেই | ৯.৩% |
পৃথিবির মহাদেশগুলোর প্রত্যেকটির আয়তন ও জনসংখ্যা একে অপরের চেয়ে ভিন্ন। যেমন, এশিয়া পৃথিবীর বৃহত্তম মহাদেশ, যেখানে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬০% মানুষ বসবাস করে। অন্যদিকে, অ্যান্টার্কটিকা সবচেয়ে ছোট ও জনবসতিহীন মহাদেশ। নিচে পৃথিবীর মহাদেশগুলোর আয়তন, মোট জনসংখ্যা, মোট দেশ সংখ্যা ইত্যাদি তথ্য সংবলিত একটি ছক উপস্থাপন করা হলোঃ
এশিয়া (Asia)
আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় “পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মহাদেশ কোনটি?”আপনি হয়ত অনেকটা চোখ বন্ধ করেই উত্তর দেবেন “এশিয়া!”। কিন্তু আপনি জেনে হয়ত অবাক হবেন যে, এশিয়া কেবল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মহাদেশই নয়, জনসংখ্যার দিক থেকে এমনকি জনসংখ্যার ঘনত্বের দিক থেকেও এশিয়াই প্রথম। এশিয়া মহাদেশের আয়তন প্রায় ৪৪.৫৮ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, যা পৃথিবীর পুরো মোট ভূমির এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি! এই এশিয়া মহাদেশেই পুরো বিশ্বের প্রায় ৬০% জনসংখ্যা বসবাস করে, সখ্যায় যা প্রায় ৪.৭৫ বিলিয়ন মানুষ!
এশিয়ার ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য
মহাদেশ হিসেবে এশিয়া অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় একটি মহাদেশ। এশিয়া মহাদেশেই রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট (৮,৮৪৯ মিটার), বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম মরুভূমি গোবি, এবং বিশ্বের সর্ববৃহৎ নদী আমাজনের পরেই ২য় সর্ববৃহৎ নদী ইয়াংজি (Yangtze) । এশিয়া মহাদেশের জলবায়ুও অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় – এশিয়ার উত্তরের সাইবেরিয়া সারাবছরই থাকে বরফাচ্ছাদিত,আর মধ্য এশিয়াইয় আছে অনেকগুলো শুষ্ক মরুভূমির দেশ, আবার দক্ষিণ এশিয়াতে উষ্ণ ও ক্রান্তীয় অঞ্চল যথেষ্ট চোখে পড়ে!
এশিয়ার দেশ সংখ্যা ও জনসংখ্যা
এশিয়া মহাদেশে মোট ৪৯টি স্বীকৃত দেশ রয়েছে। এদেরর মধ্যে চীন ও ভারত বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল দেশ, যেখানে উভয় দেশেই ১.৪ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ বাস করে। অন্যান্য বড় দেশগুলোর মধ্যে আছে রাশিয়া (আংশিকভাবে ইউরোপেও পড়ে), ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, জাপান, এবং উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া ইত্যাদি
এশিয়ার সংস্কৃতি ও ভাষা
এশিয়া মহাদেশই বিশ্বের সর্বাধিক ভাষা ও সংস্কৃতি লালনকারী মহাদেশ। এশিয়া মহাদেশে ২,৩০০ এর অধিক ভিন্ন ভিন্ন ভাষা প্রচলিত আছে, এর মধ্যে চীনা (মান্দারিন), হিন্দি, বাংলা, আরবি, এবং রুশ উল্লেখযোগ্য। ধর্মীয় দিক থেকেও এশিয়া মহাদেশই সেরা। এশিয়ায় ইসলাম, সনাতন, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, এবং কনফুসিয়ানিজমের ধর্মের প্রবর্তনস্থান।
বিশ্ব অর্থনীতিতে এশিয়া
এশিয়া মহাদেশই বিশ্বের অন্যতম প্রধান শক্তিশালী অর্থনৈতিক কেন্দ্র। চীন ও জাপান যথাক্রমে বিশ্বের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ, ভারত অতিদ্রুত বর্ধনশীল একটি বৃহৎ বাজার বাজার অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্য, বিশ্বের বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী অঞ্চল। আবার দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুর উন্নত প্রযুক্তি ও ব্যবসার কেন্দ্র হিসেবে সুপরিচিত।
আরও পড়ুনঃ সেরা ১৫ টি দ্রুত ওজন কমানোর উপায় জেনে নিন…
এক কথায়, এশিয়া মহাদেশ কেবল আয়তন ও জনসংখ্যার দিক থেকেই সর্ববৃহৎ মহাদেশ নয়, সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকেও বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মহাদেশ এশিয়া। এশিয়া মহাদেশে অতিদ্রুত বর্ধমান বাজার ক্রমশ বিশ্ব অর্থনীতির কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠছে, যা ভবিষ্যতে আরও ত্বরাণ্বিত হবে।
ইউরোপ (Europe)
ছোট মহাদেশ হিসেবে ইউরোপ পৃথিবীর দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম মহাদেশ। ইউরোপ মহাদেশের আয়তন প্রায় ১০.১৮ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার। ইউরোপ মহাদেশ বর্তমান বিশ্বে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত। প্রাচীনকাল থেকেই ইউরোপ ছিল গ্রীক ও রোমান সভ্যতার কেন্দ্রবিন্দ্ ফল স্বরুপ, আধুনিক বিশ্বে গণতন্ত্র, শিল্প, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে।
ইউরোপের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য
ইউরোপ মহাদেশের পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর, উত্তরে আর্কটিক মহাসাগর, দক্ষিণে ভূমধ্যসাগর, এবং পূর্বে এশিয়া মহাদেশ অবস্থিত। ইউরোপ ও এশিয়ার সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত উরাল পর্বতমালা, যা ইউরোপ মহাদেশকে ভৌগোলিকভাবে এশিয়া মহাদেশ থেকে আলাদা করেছে। ইউরোপ মহাদেশের উল্লেখযোগ্য ভৌগোলিক লীলাভূমির মধ্যে রয়েছে আল্পস পর্বতমালা, রাইন ও দানিউব নদী, ইত্যাদি।
ইউরোপের দেশ সংখ্যা ও জনসংখ্যা
বর্তমানে ইউরোপ মহাদেশে মোট ৪৪টি স্বাধীন দেশ রয়েছে, যার মধ্যে রাশিয়া (পশ্চিম অংশ), ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ইতালি, এবং স্পেন অন্যতম। বর্তমানে ইউরোপ মহাদেশের মোট জনসংখ্যা ৭৫০ মিলিয়নের বেশি। বিশ্বের বৃহত্তম দেশ রাশিয়া এর অধিকাংশই এশিয়াতে হলেও, একটি বড় অংশ ইউরোপে অবস্থিত।
ইউরোপের সংস্কৃতি ও ভাষা
প্রাচীনকাল থেকেই ইউরোপ মহাদেশ তার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের জন্য বিখ্যাত। এই ইউরোপ মহাদেশেই ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা যেমন ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান, স্প্যানিশ, রুশ এবং ইতালিয়ান সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। ইউরোপ মহাদেশ থেকেই শুরু হয়েছিল রেনেসাঁ বা পুনর্জাগরণ (Renaissance), শিল্পবিপ্লব (Industrial Revolution), এবং আধুনিক গণতন্ত্রের মতো ধারনণা যা বিশ্বের ইতিহাসের গতিপথ উল্লেখযগ্যভাবে পরিবর্তিত করেছে।
বিশ্ব অর্থনীতিতে ইউরোপ
এটাতো আমরা সবাই জানি মহাদেশ হিসেবে ইউরোপ এখনো বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী অর্থনৈতিক অঞ্চল। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU) এখনও বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনৈতিক সংস্থা, যেখানে সকল সদস্য রাষ্ট্রের সম্মিলিত জিডিপি অনেক বিশাল। জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য ইউরোপ মহাদেশের শীর্ষ অর্থনৈতিক শক্তি। যদিও বর্তমান বিশ্ব মোড়ল যুক্তরাষ্ট্র তবুও এখনও বিশ্বে শিল্প, কৃষি, প্রযুক্তি ও ব্যাংকিং খাতে ইউরোপের প্রভাব অনস্বীকার্য।

আফ্রিকা (Africa)
আফ্রিকা মহাদেশ, আয়তনের দিক থেকে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাদেশ। আফ্রিকা মহাদেশের আয়তন প্রায় ৩০.৩৭ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা প্রায় ১.৪ বিলিয়ন। জেনে অবাক হবেন,বর্তমানে আফ্রিকার বেশিরভাগ দেশ ৩য় বিশ্বের দেশ হলেও আফ্রিকা মহাদেশেই পৃথিবীর প্রথম মানব সভ্যতা বিকশিত হয়েছিলো। বর্তমানে আফ্রিকা মহাদেশ তার অঢেল প্রাকৃতিক সম্পদ, বৈচিত্র্যময় পরিবেশ, এবং অনন্য সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের জন্য বিখ্যাত।
আফ্রিকার ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য
আমরা সবাই জানি, আফ্রিকা মহাদেশের উত্তরে রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম মরুভূমি সাহারা। সাহারা মরুভূমিই আফ্রিকা মহাদেশটিকে উত্তর ও সাব-সাহারান অংশে বিভক্ত করেছে। আফ্রিকা মহাদেশের পূর্ব দিকে আছে গ্রেট রিফট ভ্যালি আর আফ্রিকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কিলিমান্জারো পর্বত (৫,৮৯৫ মিটার) । আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণে আবার আছে কালাহারি মরুভূমি, আর পশ্চিমে রয়েছে বিশাল বনভূমি আর ছোট বড়ো অসংখ্য নদ-নদী। আফ্রিকা মহাদেশের দীর্ঘতম নাইল (৬,৬৫০ কিমি) নদী, যা বিশ্বেরও দীর্ঘতম নদী।
আফ্রিকার দেশ সংখ্যা ও জনসংখ্যা
সভ্যতার আদিভূমি আফ্রিকায় বর্তমানে মোট ৫৪টি স্বীকৃত দেশ রয়েছে। আফ্রিকাতেই বিশ্বের অন্যান্য সকল মহাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক দেশ রয়েছে। আপনি জেনে অবাক হবেন, আফ্রিকা মহাদেশেই জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সবচাইতে বেশি। আফ্রিকা মহাদেশের বৃহত্তম দেশ আলজেরিয়া। অন্যদিকে জনসংখ্যার বিচারে আফ্রিকা মহাদেশের বৃহত্তম দেশ নাইজেরিয়া (প্রায় ২২৩ মিলিয়ন)!
আফ্রিকার সংস্কৃতি ও ভাষা
জেনে অবাক হবেন, শুধু আফ্রিকা মহাদেশে প্রায় ২,০০০ ভাষা প্রচলিত আছে, যার মধ্যে আরবি, সোয়াহিলি, হাউসা, ইগবো, আমহারিক, ও ইয়োরুবা অন্যতম প্রষিদ্ধ ভাষা। আফ্রিকা মহাদেশটিত্তে আছে বহু সংস্কৃতি, ধর্ম এবং জাতিগোষ্ঠীর মানুষের বসবাস। প্রধান ধর্মগুলোর মধ্যে আছে ইসলাম, খ্রিস্টধর্ম, এবং প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী নানা আফ্রিকান ধর্ম!
বিশ্ব অর্থনীতিতে আফ্রিকা
সুপ্রাচীনকাল থেকেই আফ্রিকা মহাদেশ প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। এমনকি বর্তমান বিশ্বেও আফ্রিকা মহাদেশই স্বর্ণ, হীরা বা তেলের মতো খনিজ সম্পদের অন্যতম প্রধান উৎস। বিশেষ করে নাইজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও কঙ্গো এসব খনিজ সম্পদের পরিমাণ ব্যাপক। তবে দূর্নীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং দুর্বল অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কারণে আফ্রিকা উন্নয়নের ক্ষেত্রে এখনো অনেক পিছিয়ে আছে। তাদের অঢেল সম্পদের প্রাচুর্য চুরি করেই আজ বিশ্ব মোড়ল হয়েছে আজকের ইউরোপ-আমেরিকা!
আফ্রিকা মহাদেশ ছিল বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন মানব বসতির কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু বর্তমানে আফ্রিকা মহাদেশ অনেক বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, তবে আশা করা যায় যদি আফ্রিকা মহাদেশের সবগুলো দেশ সম্মিলিতভাবে আফ্রিকা মহাদেশের অঢেল প্রাকৃতিক সম্পদ আর জনসংখ্যাকে শক্তিতে পরিনত করতে পারে,তাহলে ভবিষ্যতে আফ্রিকা মহাদেশই একটি বিশ্বশক্তিতে পরিণত হবে।
উত্তর আমেরিকা (North America)
আয়তনের দিক থেকে উত্তর আমেরিকা মহাদেশ পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মহাদেশ। উত্তর আমেরিকা মহাদেশের আয়তন প্রায় ২৪.৭১ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার। উত্তর আমেরিকা মহাদেশপৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত। জেনে অবাক হবেন, উত্তর আমেরিকাকে ঘিরে আছে বড় বড় চারটি মহাসাগর। পূর্বে আটলান্টিক মহাসাগর, পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগর, উত্তরে আর্কটিক মহাসাগর, এবং দক্ষিণে ক্যারিবীয় সাগর দ্বারা উত্তর আমেরিকা পরিবেষ্টিত আছে। এমন বিরল ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে জলবায়ু, বনাঞ্চল, মরুভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদের অনেক বৈচিত্র্য চোখে পড়ে।
উত্তর আমেরিকার ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য
মহাদেশ হিসেব উত্তর আমেরিকার ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ু অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। পশ্চিমে রকি পর্বতমালা, যা কানাডা থেকে শুরু হয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো পর্যন্ত বিস্তৃত। উত্তর আমেরিকা মহাদেশের কেন্দ্রস্থলে আছে গ্রেট প্লেইন্স , যা কৃষি কাজের জন্য ব্যাপক উপযোগী। আবার মিসিসিপি, মিসৌরি ও সেন্ট লরেন্স এর মতো নদী কৃষিভূমিকে আরও উর্বর করতে প্রধান ভূমিকা রেখেছে। অন্যদিকে উত্তর আমেরিকার দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে মোহাভে ও সোনোরান মরুভূমির শুষ্ক জলবায়ুর প্রভাব দেখা যায়। আর পশ্চিম কানাডার বরফাচ্ছাদিত শীতল বনাঞ্চল তো আছেই। সবমিলিয়ে, এমন বৈচিত্র্যময় ভূপ্রকৃতির কারণে উত্তর আমেরিকা পরিবেশগতভাবে বেশ সমৃদ্ধ একটি মহাদেশ।
উত্তর আমেরিকার দেশ সংখ্যা ও জনসংখ্যা
উত্তর আমেরিকায় মোট ২৩টি স্বাধীন ও স্বীকৃত দেশ রয়েছে, এদের মধ্যে প্রধান দেশগুলো হল যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং মেক্সিকো। উত্তর আমেরিকা মহাদেশটির মোট জনসংখ্যা প্রায় ৫৭৯ মিলিয়ন (প্রায় ৬০ কোটি), যার মধ্যে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই বাস করে প্রায় ৩৩ কোটি মানুষ। উত্তর আমেরিকা মহাদেশের আরেকটি দেশ কানাডা যদিও জনসংখ্যায় তুলনামূলকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে কম, তবে আয়তনে কানাডা কিন্তু বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ! তাছাড়া কানাড প্রাকৃতিক সম্পদে বেশ সমৃদ্ধ একটি দেশ। যুক্তরাষ্ট্র আর কানাডার পরে মেক্সিকো ল্যাটিন আমেরিকার অন্যতম প্রধান দেশ, যেখানে প্রায় ১৩ কোটি মানুষ বাস করে।
আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার ভাইরাস কি? ভয়ঙ্কর ১০ টি কম্পিউটার ভাইরাসের নাম
উত্তর আমেরিকার সংস্কৃতি ও ভাষা
উত্তর আমেরিকা মহাশের মানুষ সংস্কৃতিগতভাবে অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় ও সমৃদ্ধ। উত্তর আমেরিকার সংস্কৃতি মূলত ইউরোপীয়, আদিবাসী, আফ্রিকান ও এশীয় সংস্কৃতির একটি মিশ্রণ। মহাদেশটির সংস্কৃতির মূল বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে এতে বসবাস করা বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্য, ভাষা এবং ধর্মের সংমিশ্রণ। উত্তর আমেরিকার মানুষের প্রধান ভাষাগুলোর মধ্যে ইংরেজি, স্প্যানিশ এবং ফ্রেঞ্চ উল্লেখযোগ্য। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা মূলত ইউরোপীয় সংস্কৃতির দ্বারা অনেক বেশি প্রভাবিত ফলে তাদের মধ্যে ঘুরে ফিরে বৃটিশদেরই ছাপ পাওয়া যায়। তবে মেক্সিকো ও ক্যারিবীয় অঞ্চল-এ স্প্যানিশ, আফ্রিকান এবং স্থানীয় আদিবাসী সংস্কৃতির মিশ্রণ দেখা যায়।
বিশ্ব অর্থনীতিতে উত্তর আমেরিকা
উত্তর আমেরিকা মহাদেশের অর্থনীতি বিশ্বে অন্যতম শক্তিশালী এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মূলত মহাদেশটির প্রধান অর্থনৈতিক শক্তিই হলো যুক্তরাষ্ট্র, যেটি বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। যুক্তরাষ্ট্র প্রযুক্তি, শিল্প, ব্যাংকিং এবং বিনোদন খাতে পুরো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের পরে আছে কানাডা। কানাডা খনিজ, তেল, বনজ সম্পদ এবং কৃষি ক্ষেত্রে বেশ সমৃদ্ধ। আবার মেক্সিকো উৎপাদনশিল্প ও কৃষিতে অনেক শক্তিশালী, বিশেষ করে গাড়ি উৎপাদন, কৃষি ও পর্যটন খাতে ম্যাক্সিকোর জুড়ি মেলা ভার। মেক্সিকোর অর্থনীতি ক্রমশ আরো বড় হচ্ছে, ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও উৎপাদনশিল্পে মেক্সিকোর অবস্থান দিন দিন আরো শক্তিশালী হচ্ছে।
দক্ষিণ আমেরিকা (South America)
দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ আয়তনে পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম মহাদেশ, যার আয়তন প্রায় ১৭.৮৪ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার। দক্ষিণ আমেরিকা পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগর, পূর্বে আটলান্টিক মহাসাগর এবং উত্তরে ক্যারিবীয় সাগর দ্বারা ঘিরে আছে। দক্ষিণ আমেরিকার ভৌগোলিক অবস্থান বেশ বৈচিত্র্যময়। এতাতো আমরা অনেকেই জানি, দক্ষিণ আমেরিকাতেই পৃথিবীর বৃহত্তম রেইনফরেস্ট অ্যামাজন অবস্থিত। যা পরিবেশগত দিক থেকে পৃথিবির জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, এই দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশেই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জলপ্রপাত, ইগুয়াজু জলপ্রপাত অবস্থিত। অ্যামাজন নদী, যা কিনা পুরো বিশ্বের বৃহত্তম নদী , সেতাও কিন্তু দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশেই অবস্থিত!
দক্ষিণ আমেরিকার ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য
দক্ষিণ আমেরিকার ভূপ্রকৃতি অন্যান্য সকল মহাদেশের মতোই অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ। দক্ষিণ আমেরিকায় রয়েছে বিশাল বনভূমি, পর্বতমালা, মরুভূমি ও নদীর অপার সমাহার। এই মহাদেশেই সবচেয়ে বেশি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অভূতপূর্ব এক সমাহার দেখা যায়। অ্যামাজন রেইনফরেস্ট, পৃথিবীর বৃহত্তম রেইনফরেস্ট, প্রায় ৫.৫ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত এবং চমকপ্রদ বিষয় এটা যে, কেবল অ্যাামাজন রেইনফরেস্ট একাই বিশ্বের মোট অক্সিজেনের ২০% উৎপাদন করে! আব্র পর্বতের কথায় আসলে, দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিমাংশে অবস্থিত অ্যান্ডিস পর্বতমালা পৃথিবীর দীর্ঘতম পর্বতমালা, যা প্রায় ৭,০০০ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত! অ্যামাজন নদী, বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী, পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি পানিন প্রবাহিত হয় এই অ্যামাজন নদী দিয়েই। চিলিতে অবস্থিত অটাকামা মরুভূমি, , যা বিশ্বের সবচেয়ে শুষ্ক মরুভূমিগুলোর মধ্যে একটি। এভাবেই দক্ষিণ আমেরিকার এই সকল প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলি মহাদেশটিকে অনন্য ও আলাদা করে উল্লেখযোগ্য করেছে।
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ সংখ্যা ও জনসংখ্যা
দক্ষিণ আমেরিকায় মোট ১২টি স্বীকৃত দেশ রয়েছে। বর্তমানে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশটির মোট জনসংখ্যা প্রায় ৪৩ কোটি। দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে ব্রাজিল সবচেয়ে জনবহুল দেশ। ব্রাজিলে মোট প্রায় ২১ কোটি মানুষ বসবাস করে। তাছাড়া ব্রাজিলই দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম দেশ একই সাথে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম জনবহুল দেশ। এরপরের সাথনে থাকা আর্জেন্টিনায় প্রায় ৪.৫ কোটি মানুষ বসবাস করে। দক্ষিণ আমেরিকার অন্যান্য বড় দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া, পেরু, ভেনেজুয়েলা ও চিলি।
দক্ষিণ আমেরিকার সংস্কৃতি ও ভাষা
দক্ষিণ আমেরিকার সংস্কৃতি মূলত স্প্যানিশ ও পর্তুগিজ উপনিবেশিক ঐতিহ্যের প্রভাবে গড়ে উঠেছে, তবে এখানে কিছু আদিবাসী, আফ্রিকান এবং ইউরোপীয় সংস্কৃতির মিশ্রণও লক্ষ করা যায়। আমেরিকার প্রধান ভাষাগুলোর মধ্যে স্প্যানিশ ও পর্তুগিজ সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। ব্রাজিলে পর্তুগিজ ভাষা ব্যবহৃত হলেও, অন্য দেশগুলোতে মানুষ স্প্যানিশ ভাষাতেই কথা বল। দক্ষিণ আমেরিকার সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সঙ্গীত ও নৃত্যের প্রভাব যেমন সাম্বা, ট্যাঙ্গো, সালসা ও কুম্বিয়া ইত্যাদি বিশেষভাবে চোখে পড়ে, ।
বিশ্ব অর্থনীতিতে দক্ষিণ আমেরিকা
দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর অর্থনীতি প্রধানত কৃষি, খনিজ সম্পদ এবং পর্যটনের উপর নির্ভরশীল। ব্রাজিল বিশ্বের নবম বৃহত্তম অর্থনীতি সমৃদ্ধ দেশ। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনা গবাদিপশু এবং কৃষিপণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে অন্যতম শীর্ষ স্থানে আছে। তাছাড়া ভেনেজুয়েলা ও ইকুয়েডর তেল উৎপাদনে শীর্ষ স্থানীয় দেশ, যেহেতু ভেনেজুয়েলার পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ তেল সমৃদ্ধ দেশ। অন্যদিকে পৃথিবীর সবচেয়ে সরু দেশ চিলি বিশ্বের বৃহত্তম তামা রপ্তানিকারক দেশ!
অ্যান্টার্কটিকা (Antarctica)
পৃথিবীর সবচেয়ে নির্জন মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকা পৃথিবীর সবচেয়ে শীতল এবং শুষ্ক মহাদেশও বটে! যা দক্ষিণ মেরুর চারপাশে সুবিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের আয়তন প্রায় ১৪ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার, যা অ্যান্টার্কটিকাকে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম মহাদেশে পরিণত করেছে। জেনে অবাক হবেন, অ্যান্টার্কটিকায় কোনো স্থায়ী বসবাস নেই, তবে বু আগ থেকেই এখানে বিজ্ঞানীরা অ্যান্টার্কটিকার পরিবেশ ও জলবায়ু সম্পর্কিত নানা ধরনের গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা পরিচালনা করে চলেছেন। অ্যান্টার্কটিকার তাপমাত্রা প্রায় সব সময়ই শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকে এবং বৃষ্টিপাত তো হয় না বললেই চলে, ফলে সময়ের সাথে সাথে অ্যান্টার্কটিকা পৃথিবীর সবচেয়ে শুষ্ক অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটিতে পরিণত হয়েছে ।
অ্যান্টার্কটিকার ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য
অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে ঠান্ডা অঞ্চল। সাধারণত অ্যান্টার্কটিকাইয় শীতকালে তাপমাত্রা -৬০°C থেকে -৮০°C পর্যন্ত নেমে যেতে পারে। আর গ্রীষ্মকালে্র গড় তাপমাত্রা থাকে -২০°C থেকে -৩০°C এর মধ্যে। অ্যান্টার্কটিকাইয় সবচেয়ে কম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ভোস্টক স্টেশনে, যা ছিল -৮৯.২°C এবং এটিই এখনো পর্যন্ত পাওয়া পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। অ্যান্টার্কটিকার জলবায়ু আরও ভয়ানক! অ্যান্টার্কটিকাত একবার রাত হলে তা থাকবে প্রায় ৬ মাস ধরে। আর দিন থাকলে তা হবে ৬ মাসের জন্যে!
অ্যান্টার্কটিকায় জীবন ধারন যেকোন প্রাণীর জন্যেই অনেক কঠিন, তবে রহস্যজনকভাবে এখানেও কিছু বিশেষ প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদ দেখতে পাওয়া যায়। অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের আশপাশে থাকা সমুদ্র অঞ্চলে পেঙ্গুইন, সিল, তিমি ও বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক পাখি দেখা যায়। এম্পেরর পেঙ্গুইন (Emperor Penguin) হলো অ্যান্টার্কটিকার সবচেয়ে বড় পেঙ্গুইনের প্রজাতি। ক্রিল (Krill) নামক এক ধরণের ছোট সামুদ্রিক প্রাণী দেখা যায়, যা বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণী খ্যাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। অ্যান্টার্কটিকায় কিছু শৈবাল ও ব্যাকটেরিয়াও পাওয়া যায়, যেগুলো অ্যান্টার্কটিকার আবহাওয়ার মতো প্রতিকূল আবহাওয়াতেও বেঁচে থাকতে পারে!
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে চলমান গবেষণা
অ্যান্টার্কটিকা বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভৌগলিক গবেষণা কেন্দ্র, যেখানে বিভিন্ন দেশ তাদের বৈজ্ঞানিক গবেষণা স্টেশন স্থাপন করেছে। আন্তর্জাতিক অ্যান্টার্কটিকা চুক্তি (Antarctic Treaty, ১৯৫৯) অনুসারে, এই মহাদেশকে স্বাভাবিক গবেষণা ও সংরক্ষণের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। এখানে বসবাস করা গবেষকরা জলবায়ু পরিবর্তন, মহাকাশবিদ্যা, বাস্তুসংস্থান ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করেন।
অ্যান্টার্কটিকা পৃথিবীর অন্যতম রহস্যময় ও গুরুত্বপূর্ণ মহাদেশ। যদিও বর্তমানে এটি বসবাসের অনুপযোগী, তবে গবেষণা ও পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য এটি অপরিহার্য। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বোঝার জন্য অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশকে পর্যবেক্ষণ করা গুরুত্বপূর্ণ, কেননা অ্যান্টার্কটিকাইয় থাকা বরফ গলার ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে বিশ্বের উপকূলবর্তী অনেক দেশের জন্যে হুমকির ন্যায়!
অস্ট্রেলিয়া (Australia)
পৃথিবীর সাতটি মহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে ছোট মহাদেশ অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়াই পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেটি কিনা একটি মহাদেশের পুরো এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের আয়তন ৮.৫৬ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার, এবং জনসংখ্যা প্রায় ৪৩ মিলিয়ন। অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত। অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ পৃথিবীর মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায়, এখানকার জীববৈচিত্র্য বাকি পৃথিবীর অন্যান্য অংশের চেয়ে অনেকটাই আলাদা।
অস্ট্রেলিয়ার ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য
ভৌগোলিকভাবে অস্ট্রেলিয়া আসলে একটি বিশাল দ্বীপ, যার চারপাশে ঘিরে আছে প্রশান্ত মহাসাগর এবং ভারত মহাসাগর। অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে অবস্থিত গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রবাল প্রাচীর, যা ধারণ করছে সমুদ্রের নিচের বিশাল জীববৈচিত্র্য। অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের বাকি অংশে আছে অস্ট্রেলিয়ান বুশ ও বালানো নদী যা দেশটির বা মহাদেশটির জলবায়ু ও পরিবেশের বৈচিত্র্যের প্রতিনিধিত্ব করে।
অস্ট্রেলিয়ার দেশ সংখ্যা ও জনসংখ্যা
ইতিমধ্যেই বলা হয়েছে, অস্ট্রেলিয়া শুধুমাত্র একটি মহাদেশই নয়, এটি একটি দেশও। ক্যানবেরা দেশটির রাজধানী হলেও সিডনি, মেলবোর্ন এবং ব্রিসবেন অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম শহর। অস্ট্রেলিয়ার জনসংখ্যা পৃথিবীর অন্যান্য অনেক ছোট দেশের তুলনায় অনেক কম হলেও, পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত দেশগুলোর মধ্যে একটি অস্ট্রেলিয়া। দীর্ঘকাল ইংরেজ উপনিবেশিক শাসনের কারণে এবং প্রাচীন আদিবাসীদের গণহারে নির্মূল করার ফলে অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের বা দেশের অধিকাংশ মানুষ বর্তমানে ইংরেজি ভাষায় কথা বলেন।
অস্ট্রেলিয়ার সংস্কৃতি ও ভাষা
অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য যতটুকু আছে তার অনেকটাই গঠিত হয়েছে মূলত ইংরেজ উপনিবেশিক শাসনের কারণে, তবে অ্যাবোরিজিনদের (অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসী) সংস্কৃতিরও কিছু কিছু নমুনা চোখে পড়তেলেও পড়তে পারে।
বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্ট্রেলিয়া
বর্তমান অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতি অনেকটা শিল্প, কৃষি ও সেবা খাত নির্ভর। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের সবচেয়ে বেশি খনিজ রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। খনিজ সম্পদের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া মূলত সারা বিশ্বে তেল, লোহা ও আকরিক রপ্তানি করে থাকে। কেননা অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ লোহা আকরিক উৎপাদনকারী দেশ!
অস্ট্রেলিয়া যেটি কিনা একই সাথে একটি মহাদেশ এবং দেশ, বর্তমানে শিক্ষা, প্রযুক্তি, কৃষি এবং খনিজ সম্পদ প্রায় সবকিছুতেই নিদারুনভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া দেশটির নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং উন্নত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা অস্ত্রেলিয়াকে বিশ্বব্যাপী অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান করে তুলেছে।
আরও পড়ুনঃ কত ডিগ্রি জ্বর হলে মানুষ মারা যায়?
শেষ কথা
জ্ঞানী বাবা!’র আজকের আরটিকেলে মহাদেশ কী, পৃথিবীতে কয়টি মহাদেশ আছে?, মহাদেশ কয়টি ও কি কি?, কোন মহাদেশে কয়টি দেশ আছে? এই সকল প্রশ্নের উত্তর সহ মহাদেশ বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি প্রিয় পাঠকদের জ্ঞানী বাবা!’র এই আর্টিকেলটি একটু হলেও কাজে আসবে, একটু হলেও উপকারে আসবে।
মহাদেশ সম্পর্কিত জ্ঞানী বাবা!’র আজকের আর্টিকেলতটি যদি আপনার ভালো লেগেই থাকে তাহলে অনুগ্রহ করে আপনার বন্দু বান্ধবদের সাথে এই ব্লগটি শেয়ার করুন। আর কমেন্ট করে নিজের মন্তব্য জানাতে ভুলবেন না কিন্তু!!!