সেরা ১৫ টি দ্রুত ওজন কমানোর উপায়…

বর্তমান যুগে আমাদের এই ব্যস্ত জীবনযাত্রায় ওজন বৃদ্ধি আমাদের মাঝে একটি সাধারণ সমস্যায় পরিণত হয়েছে। ওজন কমানোর উপায়, মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর উপায়, ৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায়, ওজন কমানোর উপায় ডায়েট ইত্যাদি কীওয়ার্ড লিখে আজকাল আমাদের প্রায়ই গুগলে সার্চ করতে হচ্ছে। মনে রাখা জরুরি অতিরিক্ত ওজন শুধুমাত্র আমাদের দৈহিক বা শারীরিক সৌন্দর্যই নষ্ট করে না, বরং এটি ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করে আমাদের শরীরে। তাই সুস্থ ও সুন্দর জীবনের জন্য ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি চর্চা। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং কিছু সহজ উপায় মেনে চললে আমরা সহজেই আমাদের ওজন কমার মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারব। চলুন, জ্ঞানী বাবা!’র আজকের আর্টিকেল থেকে জেনে নেই কার্যকর কিছু ওজন কমানোর উপায়!
সূচীপত্রঃ
ওজন কমানোর কিছু সহজ উপায়
১. ওজন কমাতে চাই সুষম খাদ্যাভ্যাস
অতিরিক্ত ওজন কমানোর উপায় খুজতে গেলে প্রথম এবং প্রধান উপায় হিসেব আমরা পাব হলো সুষম খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা। সুষম খাদ্যভ্যাস না মেনে শুধুমাত্র কম খাওয়ার মাধ্যমে ওজন কমানো সম্ভব নয়; বরং পরিমিত পুষ্টিকর ও সুষম খাবার খাওয়া ও কিছু আনুষাঙ্গিক ব্যায়ামই ওজন কমানোর উপায় হিসেবে বেশি কার্যকর। আপনার প্রতিদিনের খাবারে প্রয়োজন অনুসারে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন। অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার এবং প্রসেসড ফুড এড়িয়ে চলা উচিত। সুষম খাদ্যাভ্যাস মেনে চললে আপনার শুধু ওজনই কমবে না, বরং শরীরও থাকবে সুস্থ ,সতেজ ও সবল।
২. নিয়মিত ব্যায়াম করুন
ওজন কমানোর উপায় খুজছেন আর তাতে ব্যায়াম থাকবেনা তা কি করে হয়? ওজন কমানোর জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা অত্যন্ত জরুরি। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা, দৌড়ানো, সাইকেল চালানো বা যে কোনো শারীরিক ব্যায়াম আপনার অতিরিক্ত ওজন কমাতে বেশ সাহায্য করতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম অতিরিক্ত ক্যালোরি বার্ন করতে সহায়তা করে এবং শরীরের মেটাবলিজম বাড়ায়, যা দ্রুত আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করে। তবে মনে রাখবেন ব্যায়াম শুধু আপনার ওজনই কমায় না, এটি আপনার শরীরকে আরো অনেক শক্তিশালী ও সুগঠিত করে তোলে।
৩. পর্যাপ্ত পানি পান করুন
ওজন কমানোর উপায় এর মধ্যে অন্যতম সহজ উপায় হলো পর্যাপ্ত পানি পান করা। পানি শরীরের মেটাবলিজম বাড়ায় এবং আপনার ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। খাবারের আগে এক গ্লাস পানি পান করলে পেট কিছুটা ভরা অনুভূত হয়, ফলে কম খাবার খাওয়া হলেও পেট ভরে যায়। এছাড়া, পর্যাপ্ত পানি পান শরীরের বিষাক্ত টক্সিন দূর করে এবং আপনার ত্বককে উজ্জ্বল রাখে। তাই প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ গ্লাস (কারো কারো কম-বেশি হতে পারে) পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
৪. ওজন কমাতে নিয়মিত ঘুম
আমরা অনেকে ভাবি ঘুমালে আমাদের শরীরের ওজন বাড়ে কিন্তু জেনে অবাক হবেন, ওজন কমানোর ক্ষেত্রে ঘুমের গুরুত্ব অপরিসীম। পর্যাপ্ত ঘুম দেহের হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে, যা আমাদের ক্ষুধা ও পেট ভরা অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করে। অপর্যাপ্ত ঘুম ক্ষুধা বাড়ায় এবং অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি আমাদের আকর্ষণ বাড়ায়। যা অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। তাই নিজের ওজন স্বাভাবিক রাখতে প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘন্টা গভীর ও নিরবচ্ছিন্ন ঘুম নিশ্চিত করুন।
৫. চিনিযুক্ত খাবার ও পানীয় পরিহার করুন
শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে চিনিযুক্ত খাবার ও পানীয় পরিহার করা একপ্রকার আবশ্যক। চিনি আমদের শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরির যোগান দেয় এবং দেহে ফ্যাট জমাতে সাহায্য করে। কৃত্রিমভাবে তৈরী মিষ্টিজাতীয় পানীয়, কোমল-পানীয় এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার যথাসাধ্য এড়িয়ে চলুন। এগুলোর পরিবর্তে প্রাকৃতিক পানীয় যেমন লেবু পানি বা ডাবের পানি খেতে পারেন।
৬. হোল গ্রেইন খাবার খান
অতিরিক্ত ওজন কমাতে হোল গ্রেইন (পূর্ণ শস্য) খাবার গ্রহণ খুবই উপকারী একটি উপায়। হোল গ্রেইন যেমন ওটস, ব্রাউন রাইস কিংবা গমের রুটি ফাইবারে সমৃদ্ধ, যা আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এসব খাবার ধীরে হজম হয় বলে দীর্ঘ সময় পেট ভরা আছে বলে অনুভূত হয়। এছাড়া, হোল গ্রেইন খাবার আপনার দেহের ইনসুলিনের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। তাই সাদা চাল এবং ময়দার পরিবর্তে হোল গ্রেইন খাবার গ্রহণ করার চেষ্টা করুন।
৭. অল্প কিন্তু বার বার খান
অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য আপনি অল্প পরিমাণে কিন্তু বার বার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। দিনে ৩ বেলা বেশি খাওয়ার পরিবর্তে ৫-৬ বেলা অল্প পরিমাণে খাবার খাওয়া উচিত। এতে দেহের মেটাবলিজম সক্রিয় থাকে এবং অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা অনেকাংশে কমে যায়। নির্দিষ্ট বিরতি নিয়ে নিয়ে অল্প অল্প করে খাবার খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল থাকে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। তবে অবশ্যই খাওয়ার পরিমাণ এবং পুষ্টিগুণের দিকে খেয়াল রাখতে হবে, যেন কোনোভাবেই অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ না হয়।
৮. সবুজ চা (গ্রিন টি) পান করুন
আমরা অনেকেই জানি না যে সবুজ চাও ওজন কমাতে কতটা কার্যকর হতে পারে। সবুজ চা’এ ক্যাটেচিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা আপনার দেহের মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে। সবুজ চা ফ্যাট বার্ন করার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। আপনি দিনে ২-৩ কাপ সবুজ চা পান করলে আপনার অজন কমানোর লক্ষ্য অর্জনে তা ব্যাপক সাহায্য করতে পারে। তবে কোনোভাবেই সবুজ চা’এ আবার চিনি মেশাতে যাবেন না, তাহলে যেই লাউ সেই কদুই হয়ে যাবে। চিনির পরিবর্তে রুচি অনুসারে লেবু যোগ করে সবুজ চা পান করলে তা আরও উপকারী ভুমিকা রাখতে পারে।
৯. পর্যাপ্ত শাকসবজি ও ফলমূল খান
শাকসবজি ও ফলমূল ফাইবারে সমৃদ্ধ, যা আমাদের হজম প্রক্রিয়া আরো সহজ করে এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে। এগুলোতে ক্যালোরি কম কিন্তু পুষ্টি বেশি থাকে, যা অতিরিক্ত ওজন কমাতে অনেক সহায়ক। আপনার অতিরিক্ত ওজন রোধ করতে ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ব্রকলি, পালং শাক, শসা, গাজর, আপেল, কমলা ইত্যাদি শাকসবজি ও ফলমূল এর মতো খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন। বিশেষ করে, কম ক্যালোরি কিন্তু ফাইবারে সমৃদ্ধ শাকসবজি ও ফলমূল খেলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যাব। ফলে ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকবে!
১০. অতিরিক্ত স্ট্রেস বা দুশ্চিন্তা এড়িয়ে চলুন
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা আপনার ওজন বৃদ্ধির একটি বড় কারণ হতে পারে। অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে আমাদের দেহে কর্টিসল হরমোনের নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায় ফলে তা আমাদের ক্ষুধা বাড়ায় এবং উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবারের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি করে। এজন্য মানসিক চাপ কমাতে নিয়মিত প্রার্থনা, মেডিটেশন, যোগব্যায়াম কিংবা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে পারেন। প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করার মাধ্যমেও স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এছাড়া, প্রয়োজন অনুযায়ী আপনি কোনো মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শও নিতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ ১০৩ ডিগ্রি জ্বর হলে করণীয় কি? জেনে নিন বিস্তারিত…
১১. খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করুন
ওজন কমানোর জন্য খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের অযুহাতে কিংবা নেহাতই সুস্বাদু বলে আমরা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাবার খেয়ে ফেলি, যা দেহে অতিরিক্ত ক্যালোরি জমা করে এবং পরে সেতাই মেদ বা চর্বি হিসেবে অতিরিক্ত ওজন বাড়ায়। তাই প্রতিবার খাবারের পরিমাণ মেপে খাওয়া-দাওয়া করা উচিত। ছোট প্লেটে খাবার খেলে বেশি খাওয়ার প্রবণতা কমে অনেকক্ষেত্রেই কমে যায়। এছাড়া, খাওয়ার সময় ধীরে ধীরে চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন, এতে আপনার খাওয়া শেষ হতে হতেই পেট ভরে গেছে বলে মনে হবে ফলে অতিরিক্ত খাওয়া এড়াতে পারবেন সহজেই।
১২. চিনিযুক্ত পানীয়ের পরিবর্তে প্রাকৃতিক পানীয় পান করুন
অতিরিক্ত চিনিযুক্ত পানীয় যেমন সফট ড্রিঙ্ক, এনার্জি ড্রিঙ্কস কিংবা প্যাকেটজাত জুসে অনেক বেশি পরিমাণে চিনি থাকে ফলে সেগুলো গ্রহণ করলে আপনার শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি জমা হবে এবং ধীরে ধীরে আপনার ওজন বেড়ে যাবে।। এসব ক্ষতিকর পানীয় বাদ দিয়ে বিভিন্ন প্রাকৃতিক পানীয় পান করার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে বললে নারকেলের পানি, লেবু পানি অথবা ঘরে তৈরি ফলের রস আমাদের ওজন কমাতে বেশ ভালো ভূমিকা রাখতে পারে।
১৩. ওজন কমানোর জন্য সবসময় সক্রিয় থাকুন
শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে চাইলে শুধু ব্যায়াম করাই যথেষ্ট নয়; বরং সারাদিন অলস সময় না কাটিয়ে যথেষ্ট সক্রিয় থাকাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। একটানা দীর্ঘ সময় বসে থাকার ফলে শরীরে চর্বি জমে এবং ধীরে ধীরে দেহের ওজন বাড়ে। তাই অফিসের কাজ বা পড়াশোনার ফাঁকে মাঝে মাঝে উঠে হাঁটুন, সিঁড়ি ব্যবহার করুন, এবং নিজের দৈনন্দিন কাজগুলি নিজেই করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। মনে রাখবেন, সক্রিয় কর্মব্যাস্ত জীবনযাপন শুধু ওজন কমাতেই নয়, বরং শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করতেও সাহায্য করে।
১৪. সঠিক পরিমাণে প্রোটিন খান
সুষম খাদ্যতালিকার মধ্যে প্রোটিনই হজমে বেশি সময় নেয় এবং সবচেয়ে বেশিক্ষণ পেট ভরা রাখে। ওজন কমানোর জন্য প্রতিদিন সঠিক পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ করা জরুরি। ডিম, মাছ, মুরগি, ডাল, বাদাম, দই ইত্যাদি প্রোটিনের বেশ ভালো উৎস। প্রোটিন মাংসপেশি গঠন করতে সাহায্য করে এবং শরীরের চর্বি কমিয়ে মেটাবলিজম বাড়ায়। তবে অতিরিক্ত কোন কিছু ভাল নয়। অতিরিক্ত প্রোটিনও খাওয়া উচিত নয়, কারণ অতিরিক্ত প্রোটিন আপনার কিডনির উপর চাপ ফেলতে পারে। যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য নেতিবাচক হতে পারে।
১৫. ওজন কমানোর জন্য স্বাস্থ্যকর হালকা নাস্তা খান
অনেকেই ওজন কমাতে গিয়ে নিজের ওপর রীতিমত অত্যাচার শুরু করেন। অনেকে ওজন কমানোর জন্য হাল্কা নাস্তা বা স্ন্যাকস খাওয়া পর্যন্ত ছেড়ে দেন। ওজন কমানোর সময় স্ন্যাকস খাওয়ার অভ্যাস পুরোপুরি বাদ না দিয়ে বরং স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস বেছে নিতে পারেন। চিপস, চকলেট, এবং ভাজা খাবারের মতো স্ন্যাকস এর পরিবর্তে বাদাম, ফল, দই, অথবা শসা ও গাজরের মতো স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস খেতে পারেন। এগুলো পুষ্টিকর একইসাথে কম ক্যালোরিযুক্ত, যা ওজন কমাতে প্রয়জনীয়। তাছাড়া, বাড়িতে তৈরি স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস যেমন ওটস বা চিয়া পুডিং খাওয়ার অভ্যাসও গড়ে তুলতে পারেন।
ওজন কমানোর সুবিধা

আগেই বলা হয়েছে ওজন কমানো শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্যের জন্যই কেবল গুরুত্বপুর্ন নয়। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা আপনার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত ওজন শুধুমাত্র শারীরিক অস্বস্তির কারণ নয়; এর ফলে আপনার হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হাঁটুর ব্যথা, মানসিক চাপের মতো নানা স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। সহজ ওজন কমানোর উপায় অবলম্বন করলে শরীর যেমন হালকা ও কর্মক্ষম থাকে, তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটে। আসুন জেনে নিই ওজন কমানোর উল্লেখযোগ্য বেশ কিছু সুবিধা।
আরও পড়ুনঃ প্রতিদিন ১ কেজি করে দ্রুত ওজন কমানোর উপায় খুঁজছেন?
১. হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস
আমরা প্রায় সকলেই জানি যে অতিরিক্ত ওজন আমাদের হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। শরীরে প্রয়োজনের অতিরিক্ত চর্বি জমলে রক্তনালীর মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয়, যা হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের সম্ভাবনা বাড়ায়। ওজন কমালে দেহের কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমে যায়, যা হৃদপিন্ডকে সুরক্ষিত অ কর্মক্ষম রাখে। এছাড়া, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে দেহের রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। যা হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশেই কমিয়ে ফেলে।
২. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের অন্যতম কারণ। শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমলে দেহে থাকা ইনসুলিনের কার্যকারিতা হ্রাস পায়, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা প্রয়োজনের চেয়ে বেড়ে যায়। ওজন কমানোর মাধ্যমে ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি বাড়ানো সম্ভব, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ। কম কার্বোহাইড্রেট এবং কম চিনিযুক্ত খাবার গ্রহণ করলে তা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত ব্যায়ামও রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভূমিকা রাখে।
৩. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
এটাতো আমরা সবাই জানি, অতিরিক্ত ওজন উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়। শরীরে বেশি চর্বি থাকলে রক্তনালীর মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালনের জন্য বেশি চাপ প্রয়োজন হয় (যেহেতু রক্তনালীর দেয়াল গুলোতে একটা অতিরিক্ত স্তর জমা হয়), ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। ওজন কমানোর মাধ্যমে রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রায় নিয়ে আসা সম্ভব। নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাদ্যাভ্যাস, এবং পরিমিত লবণ খাওয়ার মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এভাবে হার্ট সুস্থ থাকে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকিও কম থাকে।
৪. হাড় ও লিগামেন্টের সুরক্ষা
অতিরিক্ত ওজন আমাদের হাড় এবং জয়েন্টের (লিগামেন্ট) উপর অতিরিক্ত চাপ ফেলে, বিশেষ করে হাঁটু ও মেরুদণ্ডে। ফলে অস্টিওআর্থ্রাইটিস এবং অন্যান্য জয়েন্টের ব্যথা দেখা দিতে পারে। ওজন কমানোর মাধ্যমে এই অতিরিক্ত চাপ কমে ফলে হাড় ও জয়েন্টের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকে। নিয়মিত ব্যায়াম যেমন হাঁটা, সাঁতার, এবং হালকা স্ট্রেচিং ওজন কমাতে এবং জয়েন্টের নমনীয়তা বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।
৫. শ্বাসকষ্ট ও ঘুমের মান উন্নত করতে পারে
অতিরিক্ত ওজন শ্বাস-প্রশ্বাসের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। এমনকি স্লিপ অ্যাপনিয়া, নাক ডাকা, ও শ্বাসকষ্টের ঝুঁকিও বাড়িয়ে ফেলতে পারে অতিরিক্ত ওজন। ওজন কমানোর মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা কমে আসে (যদি সমস্যা থেকে থাকে) এবং ঘুমের মান বৃদ্ধি পায় । ওজন কমানোর জন্য শুধু শারীরিক সুবিধাই পেতে পারেন মানসিক প্রশান্তিও!
৬. মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি
পাঠক জেনে অবাক হবেন, অতিরিক্ত ওজনের কারণে আপনার আত্মবিশ্বাসের অভাব, হতাশা, কিংবা উদ্বেগও দেখা দিতে পারে। শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানোর মাধ্যমে শুধু শারীরিকভাবেই নয়, মানসিকভাবেও প্রশান্তি লাভ করা যেতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরে এন্ডোরফিন নামক ‘হ্যাপি হরমোন’ নিঃসরিত হয়, যা মানসিক আমাদের চাপ কমাতে তার সাথে আমাদের মনকেও প্রফুল্ল রাখে। এছাড়া, নিজেকে সুস্থ সুঠাম দেখতে পাওয়ার ফলে আত্মবিশ্বাসও বৃদ্ধি পায় অনেকের।
৭. শক্তি ও সক্রিয়তা বৃদ্ধি
অতিরিক্ত ওজন আমাদেরকে সবসময় ক্লান্ত ও অলস করে রাখে। দৈনন্দিন কাজকর্মে অমনোযোগীতা এবং শারীরিক শক্তির অভাব দেখা দিতে পারে। ওজন কমানোর মাধ্যমে শরীর হালকা সুঠাম ও কর্মক্ষম হয়। সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়াম শরীরকে সক্রিয় রাখে এবং দৈহিক শক্তি বাড়ায়। ফলে দৈনন্দিন কাজগুলি আরও সহজ ও সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়। তাই শারীরিক শক্তি ও সামর্থ বাড়াতেও কিন্তু অতিরিক্ত ওজন কমানোর প্রয়জনীয়তা আবশ্যক।
শেষ কথা
জ্ঞানী বাবা!’র আজকের আর্টিকেল থেকে আশা করি পাঠক ওজন কমানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এই ব্লগপোস্টটি পুরোটা মনোযোগ দিয়ে পড়ে থাকলে আশা করি আপনার ওজন কমানোর উপায়, মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর উপায়, ৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায়, ওজন কমানোর উপায় ডায়েট ইত্যাদি কী=ওয়ার্ড লিখে গুগলে আর সার্চ করলে হবেনা। সবশেষে বলি, সম্মানিত পাঠকের কাছে যদি জ্ঞানী বাব!’র আজকের আর্টিকেলটি কিছূটা হলেও উপকারে এসে থাকে কিংবা একটু হলেও ভালো লেগে থাকে তাহলে জ্ঞানী বাবা!’র এই আর্টিকেলটি আপনার পরিচিতদের সাথে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করুন আর কমেন্ট করে আপনার মূল্যবান মতামত জানিয়ে আমাদের উতসাহিত করুন!!!