কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি? কত প্রকার ও কি কি? (2025)

বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তির অভাবনীয় অগ্রগতি আমাদের জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রেi ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। ঘরে বসে অনলাইনে কেনাকাটা, স্কুল-কলেজের ভার্চুয়াল ক্লাস, ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ, কিংবা বন্ধুদের সাথে দূর থেকেi যোগাযোগ, এসব কিছুই আজ সম্ভব হয়েছে ইন্টারনেট ও কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। তবে প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি?
জ্ঞানী বাবা!‘র আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানবো কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কিভাবে কাজ করে, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি কাজে ব্যবহৃত হয়, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি ও কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কত প্রকার, আমাদের জীবনে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কিভাবে অবদান রেখে চলেছে থেকে শুরু করে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি? এই বিষয়ক বিস্তারিত আলোচনা। তাহলে চলুন, শুরু করা যাক!
সূচীপত্রঃ
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি?

কম্পিউটার নেটওয়ার্ক হলো এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে একাধিক কম্পিউটার বা ডিভাইস একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে, যাতে কম্পিউটারগুলো একে অপরের সঙ্গে তথ্য, ডেটা, ফাইল, সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার (যেমন: প্রিন্টার) ইত্যাদি শেয়ার করতে পারে।
সহজভাবে বললে, যখন দুই বা ততোধিক কম্পিউটার তারের মাধ্যমে কিংবা বেতার সিগনালের মাধ্যমে একে অপরের সাথে যুক্ত হয় এবং নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে, তখনই তাকে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বলে।
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কিভাবে কাজ করে?
একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্কে প্রতিটি ডিভাইসকে বলা হয় নোড (Node)। এই নোডগুলো একে অপরের সাথে সংযুক্ত থাকে কোনো একটি Transmission Medium (যেমন: তার, ফাইবার অপটিক, বা ওয়াই-ফাই সিগনাল) ব্যবহার করে। নোডগুলো তথ্য আদান-প্রদানের সময় নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম বা প্রোটোকল অনুসরণ করে থাকে। সবচেয়ে প্রচলিত প্রোটোকল হলো TCP/IP।
ধরা যাক, আপনি আপনার ল্যাপটপ থেকে একটি প্রিন্ট কমান্ড দিলেন। যদি সেই প্রিন্টার একই নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকে, তাহলে আপনার ল্যাপটপ সেই তথ্য প্রিন্টারে পাঠিয়ে দেবে, এবং প্রিন্টার কাজ শুরু করে দেবে। পুরো প্রক্রিয়াটি এতটাই দ্রুত ঘটে যে, আমরা তা টেরই পাই না।
ব্যবহারিক উদাহরণ:
- অনেক অফিসে একাধিক কম্পিউটার একসাথে একটি প্রিন্টার ব্যবহার করা হয়
- ইন্টারনেটে ভিডিও দেখা বা ফাইল ডাউনলোড করা
- অনলাইনে গেম খেলা যেখানে একাধিক খেলোয়াড় যুক্ত থাকে
- স্কুল বা কলেজে কম্পিউটার ল্যাবের সকল পিসি একটি সার্ভারের সাথে সংযুক্ত
কম্পিউটার নেটওয়ার্কের ইতিহাস
কম্পিউটার নেটওয়ার্কের ধারণা যতটা আধুনিক মনে হয় ততটাও আধুনিক নয়, এর শিকড় কিন্তু বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়েই গেঁথে আছে। মানুষের মধ্যে যোগাযোগের সহজ উপায় খোঁজার তাগিদ থেকেই কম্পিউটার নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির সূচনা ঘটে। নিচে সংক্ষেপে কম্পিউটার নেটওয়ার্কের বিকাশের প্রধান ধাপগুলো তুলে ধরা হলো:
১৯৫০-এর দশক
প্রথম দিকে কম্পিউটারগুলো ছিল অনেক বড় আকারের। তখনকার দিনে তথ্য আদান-প্রদান হতো ম্যানুয়ালি, পাঞ্চ কার্ড বা ফ্লপি ডিস্কের মাধ্যমে। এক কম্পিউটার থেকে অন্যটিতে ডেটা নিতে বেশ অনেক সময় লেগে যেত।
আরও পড়ুনঃ গ্রাফিক্স ডিজাইন কি? গ্রাফিক্স ডিজাইন কিভাবে শিখবেন?
ARPANET – প্রথম কম্পিউতার নেটওয়ার্ক (১৯৬৯)
৬০ এর দশকে আমেরিকার প্রতিরক্ষা দপ্তরের গবেষণা সংস্থা DARPA একটি প্রকল্প গ্রহণ করে, যার নাম ছিল ARPANET। এটিই ছিল প্রথম সফল প্যাকেট-সুইচড কম্পিউটার নেটওয়ার্ক এবং আজকের আধুনিক ইন্টারনেটের প্রথম পূর্বসূরি। পরবর্তীতে ১৯৬৯ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত হয়। জেনে অবাক হবেন, এটাই ছিল ইতিহাসের প্রথম কার্যকর নেটওয়ার্ক।
ইমেইলের আবির্ভাব (১৯৭১)
Ray Tomlinson নামের একজন প্রকৌশলী ARPANET ব্যবহার করে বিশ্বের প্রথম ইমেইল পাঠান। এর মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থায় রীতিমত বিপ্লব ঘটে যায়।
TCP/IP প্রোটোকলের উদ্ভব (১৯৮৩)
আজ আমরা যে ইন্টারনেট ব্যবহার করি, তার মুল ভিত্তি হলো TCP/IP প্রোটোকল। ১৯৮৩ সালে ARPANET-এ এই প্রোটোকল চালু হয়, যা বিভিন্ন কম্পিউটার সিস্টেমকে একই নেটওয়ার্কে একত্রে কাজ করতে সাহায্য করত।
ইন্টারনেট ও ওয়েবের বিস্তার (১৯৯০-এর দশক)
- ১৯৯০ সালে ARPANET বন্ধ হয়ে যায়, এবং তার পরিবর্তে শুরু হয় ইন্টারনেট।
- ১৯৯১ সালে World Wide Web (WWW) এর আবির্ভাব ঘটে, যা আমাদের বর্তমান ব্রাউজিং এর দুনিয়ার সূচনা করে।
- এরপর ধীরে ধীরে বিশ্বের প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে পড়ে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক।
কম্পিউটার নেটওয়ার্কের উপাদান সমূহ

একটি কার্যকর ও সুসংগঠিত কম্পিউটার নেটওয়ার্ক গঠনের জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের প্রয়োজন হয়। এই উপাদানগুলো একসাথে কাজ করে তথ্য আদান-প্রদান, ডেটা শেয়ারিং এবং সংযোগ স্থাপন নিশ্চিত করে। নিচে কম্পিউটার নেটওয়ার্কের প্রধান উপাদানগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
হোস্ট বা ডিভাইস (Host/Node)
নেটওয়ার্কে যুক্ত প্রত্যেকটি কম্পিউটার, ল্যাপটপ, প্রিন্টার, মোবাইল, বা সার্ভারকে একটি নোড বা হোস্ট বলা হয়। এই ডিভাইসগুলো তথ্য গ্রহণ করে, প্রক্রিয়া করে এবং প্রয়োজনে অন্য নোডের কাছে পাঠায়। উদাহরণঃ
- ডেস্কটপ কম্পিউটার
- স্মার্টফোন
- নেটওয়ার্ক প্রিন্টার
- ফাইল সার্ভার
আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার ভাইরাস কি? ভয়ঙ্কর ১০ টি কম্পিউটার ভাইরাসের নাম
ট্রান্সমিশন মিডিয়া
নেটওয়ার্কের মধ্যে তথ্য পাঠানোর জন্য যে মাধ্যম ব্যবহার করা হয়, তাকে বলা হয় ট্রান্সমিশন মিডিয়া। এটি দুইভাবে হতে পারেঃ
তারযুক্ত (Wired):
- Coaxial Cable
- Twisted Pair Cable (যেমন Ethernet)
- Fiber Optic Cable
বেতার (Wireless):
- Wi-Fi
- Bluetooth
- Infrared
- Cellular Network (4G/5G)
নেটওয়ার্ক ডিভাইস
এই ডিভাইসগুলো সাধারণত তথ্য সঠিকভাবে এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে পাঠানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
🔹 রাউটার (Router)
ইন্টারনেট সংযোগ ভাগ করে দেয় এবং একাধিক নেটওয়ার্কের মধ্যে তথ্য পাঠায়।
🔹 সুইচ (Switch)
একই নেটওয়ার্কের মধ্যে একাধিক ডিভাইসকে সংযুক্ত করে ও নির্দিষ্ট ঠিকানায় তথ্য পাঠায়।
🔹 হাব (Hub)
তথ্য একসাথে অনেক ডিভাইসে পাঠাতে হাব নামক এই ডিভাইস ব্যবহৃত হয়।
🔹 মোডেম (Modem)
ডিজিটাল ডেটাকে এনালগ সিগনালে রূপান্তর করে, ফলে ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন সম্ভব হয়।
নেটওয়ার্ক প্রোটোকল
এক কথায়, নেটওয়ার্কের মধ্যে ডেটা আদান-প্রদানের নিয়মকানুনকে বলা হয় প্রোটোকল। এটি ঠিক করে কিভাবে ডেটা পাঠানো, গ্রহণ ও প্রক্রিয়াজাত হবে।
সবচেয়ে প্রচলিত প্রোটোকলঃ
- TCP/IP (Transmission Control Protocol/Internet Protocol)
- HTTP/HTTPS (ওয়েব ব্রাউজিংয়ের জন্য)
- FTP (ফাইল আদান-প্রদানের জন্য)
- SMTP/POP3 (ইমেইলের জন্য)
কম্পিউটার নেটওয়ার্কের প্রকারভেদ
কম্পিউটার নেটওয়ার্ককে বিভিন্ন দিক থেকে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়, তবে সবচেয়ে প্রচলিত শ্রেণিবিন্যাস হলো এলাকার পরিসর অনুযায়ী। এই ভিত্তিতে কম্পিউটার নেটওয়ার্ককে মূলত চারটি ভাগে ভাগ করা হয়:
LAN (Local Area Network)
LAN হলো এমন একটি ছোট পরিসরের নেটওয়ার্ক যেখানে কয়েকটি কম্পিউটার ও ডিভাইস একত্রে সংযুক্ত থাকে, সাধারণত একটি বিল্ডিং বা একটি নির্দিষ্ট এলাকা জুড়েi এই নেটওয়ার্ক দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য:
- সীমিত পরিসর (অফিস, স্কুল, বাসা)
- উচ্চ গতির সংযোগ
- খরচ কম
- সাধারণত একটি বা দুটি রাউটার/সুইচ ব্যবহৃত হয়
উদাহরণ:
- একটি স্কুলের কম্পিউটার ল্যাব
- একটি অফিসের সমস্ত ডেস্কটপ একসাথে যুক্ত থাকা
MAN (Metropolitan Area Network)
MAN হলো একটি শহর বা অনেক বড় অঞ্চলের মধ্যে গঠিত নেটওয়ার্ক, যা একাধিক LAN-কে সংযুক্ত করে। এটি তুলনামূলকভাবে বৃহৎ পরিসরের এবং সরকারি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে বেশি ব্যবহৃত হয়।
বৈশিষ্ট্যঃ
- একটি শহর বা বৃহৎ ক্যাম্পাস জুড়ে বিস্তৃত
- উচ্চ ব্যান্ডউইথ এবং দ্রুত সংযোগ
- কিছুটা ব্যয়বহুল
উদাহরণঃ
- একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিল্ডিংয়ের কম্পিউটার এক নেটওয়ার্কে যুক্ত
- চট্টগ্রাম শহরের সব ব্যাংক শাখা একটি MAN-এর আওতায়
WAN (Wide Area Network)
WAN হলো অনেক বিস্তৃত অঞ্চলের নেটওয়ার্ক যা দেশব্যাপী বা আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন LAN ও MAN-কে সংযুক্ত করে। এটি মূলত ইন্টারনেটের মূল ভিত্তি।
বৈশিষ্ট্যঃ
- সবচেয়ে বড় পরিসরের নেটওয়ার্ক
- স্যাটেলাইট, সাবমেরিন কেবল ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়
- গতি তুলনামূলকভাবে ধীর হতে পারে, তবে অনেক বেশি ডেটা হ্যান্ডেল করতে সক্ষম
উদাহরণঃ
- ইন্টারনেট নিজেই একটি বিশাল WAN
- একটি বহুজাতিক কোম্পানির বিভিন্ন দেশের অফিসগুলোর নেটওয়ার্ক
PAN (Personal Area Network)
PAN হলো মূলত একক কোনো ব্যক্তির চারপাশে গঠিত ছোট একটি নেটওয়ার্ক, সাধারণত ১০ মিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এতে মোবাইল, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, ব্লুটুথ হেডফোন ইত্যাদি একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে।
বৈশিষ্ট্যঃ
- ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য
- কম দূরত্বে কাজ করে
- সাধারণত ব্লুটুথ বা Wi-Fi Direct ব্যবহার করে
উদাহরণঃ
- একজন ব্যবহারকারীর ল্যাপটপ থেকে মোবাইলে ফাইল পাঠানো
- মোবাইল ফোন ব্লুটুথ স্পিকারের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া
তারযুক্ত ও তারবিহীন কম্পিউটার নেটওয়ার্ক

কম্পিউটার নেটওয়ার্ক গঠনের ক্ষেত্রে সংযোগের মাধ্যম অনুযায়ী নেটওয়ার্ককে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা হয়:
- তারযুক্ত নেটওয়ার্ক (Wired Network)
- বেতার নেটওয়ার্ক (Wireless Network)
এই দুই ধরনের নেটওয়ার্কের মধ্যেই কিছু মৌলিক পার্থক্য, সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে। নিচে তা বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছেঃ
তারযুক্ত নেটওয়ার্ক (Wired Network)
এই ধরনের নেটওয়ার্কে ডিভাইসগুলো একে অপরের সঙ্গে ক্যাবল বা তারের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে। তথ্য আদান-প্রদানে সরাসরি ফিজিক্যাল কনেকশন ব্যবহৃত হয়।
ব্যবহৃত প্রযুক্তিঃ
- Ethernet Cable (Cat5, Cat6)
- Fiber Optic Cable
- Coaxial Cable
বৈশিষ্ট্যঃ
- উচ্চ গতি ও স্থিতিশীলতা
- নিরাপত্তা বেশি (ফিজিক্যাল এক্সেস না থাকলে হ্যাক করা কঠিন)
- ডেটা ট্রান্সফারে কম জ্যাম বা বাধা
অসুবিধাঃ
- তার টানা এবং কনফিগার করা ঝামেলাপূর্ণ
- চলাফেরা সীমিত, স্থায়ী সংযোগ প্রয়োজন
- বড় জায়গায় ব্যবস্থাপনা ব্যয়বহুল হতে পারে
ব্যবহারের ক্ষেত্রঃ
- অফিস
- বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাব
- ব্যাঙ্ক বা সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠানে
বেতার নেটওয়ার্ক (Wireless Network)
এই ধরনের নেটওয়ার্কে তথ্য আদান-প্রদানে কোনো তার ব্যবহৃত হয় না। সংযোগ তৈরি হয় বেতার সিগনাল বা রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে।
ব্যবহৃত প্রযুক্তিঃ
- Wi-Fi
- Bluetooth
- Infrared
- Cellular Network (4G/5G)
বৈশিষ্ট্যঃ
- স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা সহজ
- মোবাইল ডিভাইসে উপযুক্ত
- ব্যবহারকারীরা সহজেই কানেক্টেড থেকেও চলাফেরা করতে পারে
অসুবিধাঃ
- সিগনাল দুর্বল হলে সংযোগ সমস্যা হয়
- নিরাপত্তা ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি (হ্যাকিং বা ইন্টারসেপ্টিং)
- পরিবেশগত বাধায় (দেয়াল, ইলেকট্রিক ডিভাইস) গতি কমতে পারে
ব্যবহারের ক্ষেত্রঃ
- বাসা-বাড়ি
- রেস্টুরেন্ট, শপিং মল
- স্মার্টফোন বা ল্যাপটপ সংযোগ
তারযুক্ত বনাম বেতার নেটওয়ার্ক
দিক | তারযুক্ত নেটওয়ার্ক | বেতার নেটওয়ার্ক |
---|---|---|
গতি ও স্থায়িত্ব | বেশি | কম (পরিবেশনির্ভর) |
স্থাপন খরচ ও জটিলতা | বেশি | কম |
নিরাপত্তা | তুলনামূলক বেশি | তুলনামূলক কম |
চলাফেরার সুবিধা | সীমিত | বেশি |
কম্পিউটার নেটওয়ার্কের ব্যবহার
আজকের যুগে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ছাড়া আধুনিক জীবন কল্পনাই করা যায় না। ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং সরকারের বিভিন্ন স্তরে এর ব্যবহার এক প্রকার আবশ্যক হয়ে পড়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কোথায় কোথায় কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কিভাবে আমরা ব্যবহার করে থাকিঃ
১. শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যবহার
- অনলাইন ক্লাস, ডিজিটাল বোর্ড, ওভারহেড প্রজেক্টর সবই কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
- শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে অনলাইন রিসোর্স, ভিডিও লেকচার, এবং গবেষণা সামগ্রী সহজেই পেতে পারে।
- বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান LAN/Wi-Fi ব্যবহার করে অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে।
২. অফিস ও ব্যবসায়িক কাজে
- বড় কোম্পানি থেকে ছোট ব্যবসা—সবখানেই ফাইল শেয়ারিং, ইমেইল, ভিডিও মিটিং, ক্লাউড সার্ভিসে নেটওয়ার্ক দরকার পড়ে।
- একই অফিসের বিভিন্ন বিভাগ LAN এর মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে, এবং একাধিক অফিস WAN বা VPN-এর মাধ্যমে যুক্ত থাকে।
৩. বাসাবাড়িতে ব্যবহার
- Wi-Fi রাউটার ব্যবহার করে পরিবারের প্রতিটি সদস্য সহজেই ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে।
- স্মার্ট টিভি, স্মার্টফোন, ল্যাপটপ—সব একসাথে একটি হোম নেটওয়ার্কে সংযুক্ত থাকে।
- অনলাইন গেম, স্ট্রিমিং (যেমন Netflix, YouTube), ক্লাউড স্টোরেজ—সবই সম্ভব হয় কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে।
৪. স্বাস্থ্যসেবা খাতে
- হাসপাতালগুলো অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে রোগীর তথ্য শেয়ার করে।
- টেলিমেডিসিন, অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট ও রিপোর্ট ডেলিভারি সবই নেটওয়ার্কনির্ভর।
- ডাক্তাররা বিভিন্ন ডিভাইসে রোগীর রিয়েল-টাইম রিপোর্ট দেখতে পারেন।
৫. ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ
- Facebook, WhatsApp, Instagram, X (Twitter)—সবই কম্পিউটার নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভরশীল।
- প্রতিদিন আমরা ইমেইল, ভিডিও কল, অনলাইন মেসেজিং করি, যা সম্ভব হয় শুধু নেটওয়ার্ক থাকার জন্য।
৬. ব্যাংকিং ও ই-কমার্স
- অনলাইন ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, বিকাশ-নগদ—সবই কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সুবিধা।
- Amazon, Daraz, Evaly-এর মতো ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন হয় নেটওয়ার্কের মাধ্যমে।
৭. নিরাপত্তা ও নজরদারি (Surveillance)
- আধুনিক সিসিটিভি ক্যামেরা ও নিরাপত্তা সিস্টেমগুলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে রিয়েল-টাইম ভিডিও ট্রান্সমিট করে।
- বড় অফিস বা বাড়িতে মালিক মোবাইলেই সরাসরি ক্যামেরা দেখতে পান।
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্যবহারের সুবিধা
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক আমাদের জনজীবনে এক বিপ্লব এনে দিয়েছে। কম্পিউটার নেটওয়ার্ক আমাদের তথ্য আদান-প্রদান থেকে শুরু করে নানা কাজকে দ্রুত, সাশ্রয়ী এবং সহজ করে তুলেছে। নিচে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্যবহারের প্রধান সুবিধাগুলো আলোচনা করা হলোঃ
১. তথ্য ভাগাভাগি (Data Sharing)
নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে সহজেই ফাইল, ডকুমেন্ট, ছবি বা ভিডিও পাঠানো যায়। এটি সময় বাঁচায় এবং কাজের গতি অনেক গুণ বাড়ায়।
উদাহরণঃ
একজন শিক্ষক একই নোট একসাথে ৫০ জন শিক্ষার্থীর কাছে পাঠাতে পারেন।
২. রিসোর্স ভাগাভাগি (Resource Sharing)
একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে একাধিক ব্যবহারকারী একই প্রিন্টার, স্ক্যানার, হার্ডড্রাইভ বা ইন্টারনেট কানেকশন ব্যবহার করতে পারে।
উদাহরণঃ
কোনো অফিসের ২০ জন কর্মী একটি মাত্র প্রিন্টার ব্যবহার করছে।
৩. দ্রুত যোগাযোগের সুযোগ
নেটওয়ার্ক ইমেইল, ভিডিও কল, ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং-এর মাধ্যমে দ্রুত যোগাযোগ নিশ্চিত করে। এতে কাজের গতি বাড়ে এবং দূরত্ব কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায় না আগের মতো।
উদাহরণ:
বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বসে একজন কর্মী Google Meet-এর মাধ্যমে মিটিং করতে পারছেন।
৪. কেন্দ্রীভূত তথ্য সংরক্ষণ
নেটওয়ার্কে ডেটা সার্ভারে সংরক্ষণ করে রাখা যায়, যাতে প্রত্যেকে প্রয়োজনমতো অ্যাক্সেস করতে পারে। এতে তথ্য হারানোর ঝুঁকি কমে।
উদাহরণ:
একটি ব্যাংকে সার্ভারে গ্রাহকের সব তথ্য সংরক্ষিত থাকে।
৫. কোঅপারেটিভ কাজ বা টিমওয়ার্ক
নেটওয়ার্কের মাধ্যমে একই প্রজেক্টে একাধিক ব্যক্তি একসাথে কাজ করতে পারে। তারা একই ডকুমেন্ট সম্পাদনা করতে পারে বা প্রগ্রেস শেয়ার করতে পারে।
উদাহরণঃ
Google Docs বা Microsoft Teams-এর মাধ্যমে দলগত কাজ সম্পন্ন করা।
৬. অর্থ ও সময় সাশ্রয়
একটি প্রিন্টার বা ইন্টারনেট সংযোগ বহুজন ব্যবহার করতে পারায় আলাদা আলাদা ডিভাইস কেনার প্রয়োজন হয় না, ফলে খরচ কমে যায়। তদুপরি, দ্রুত যোগাযোগ ও ফাইল শেয়ারিংয়ের কারণে সময়ও বাঁচে।
৭. ইন্টারনেট অ্যাক্সেস ও বৈশ্বিক সংযোগ
নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আমরা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারি, যার ফলে আমরা বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের সঙ্গে যুক্ত হতে পারি এবং অসংখ্য তথ্যভান্ডারে প্রবেশ করতে পারি এক নিমেষেই।
আরও পড়ুনঃ পিরামিড কি? পিরামিডের ভিতরে কি আছে?
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্যবহারের অসুবিধা
যদিও কম্পিউটার নেটওয়ার্ক আমাদের জীবনে অনেক সুবিধা নিয়ে এসেছে, তবুও এর কিছু অসুবিধা ও সীমাবদ্ধতাও রয়েছে, যা জেনে রাখা প্রয়োজন। নিচে প্রধান কয়েকটি অসুবিধা আলোচনা করা হলোঃ
১. নিরাপত্তা ঝুঁকি (Security Risks)
নেটওয়ার্কে সংযুক্ত থাকা মানে তথ্য হারানোর, চুরি হওয়ার বা হ্যাকিংয়ের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। যদি যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকে, তবে ডেটা লিক, ম্যালওয়্যার আক্রমণ বা ফিশিংয়ের শিকার হতে পারে।
উদাহরণঃ
একটি ব্যাংকের নেটওয়ার্ক হ্যাক হলে গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়ে যেতে পারে।
২. নেটওয়ার্ক ডাউন হওয়া (Network Downtime)
কখনো কখনো নেটওয়ার্কের হার্ডওয়্যার বা সফটওয়্যারের ত্রুটির কারণে নেটওয়ার্ক ডাউন হয়ে যেতে পারে, যা কাজকে বাধাগ্রস্ত করে।
উদাহরণঃ
অনেক সময় ইন্টারনেট ডাউন হয়ে যাওয়ার কারণে অফিসের কর্মীরা অনলাইনে কাজ করতে পারেন না।
৩. দূরত্বগত সীমাবদ্ধতা
বিশেষ করে তারযুক্ত নেটওয়ার্কে, ক্যাবলের দৈর্ঘ্য ও সিগন্যাল দুর্বলতার কারণে দূরত্বের সীমাবদ্ধতা থাকে। তাছাড়া দূরবর্তী জায়গায় নেটওয়ার্ক বাড়ানো কঠিন হয়।
৪. স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ
নেটওয়ার্ক স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণে বড় পরিমাণ অর্থ ও সময় ব্যয় হয়। বিশেষ করে বড় আকারের নেটওয়ার্কে উন্নত হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার প্রয়োজন হয়।
৫. ডাটা ট্রাফিক জ্যাম (Network Congestion)
একাধিক ব্যবহারকারী একই সময়ে নেটওয়ার্ক ব্যবহার করলে তথ্যের গতি ধীর হয়ে যেতে পারে এবং জ্যাম সৃষ্টি হতে পারে।
৬. প্রাইভেসি সমস্যা
নেটওয়ার্কে তথ্য আদান-প্রদানে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, বিশেষ করে বেতার নেটওয়ার্কে।
শেষ কথা
জ্ঞানী বাবা!‘র আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কত প্রকার, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কিভাবে কাজ করে থেকে শুরু করা করে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সম্পর্কে যাবতীয় সব কিছু। আশা করি আজকের এই লেখা পড়ে পাঠক কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি? এই পরশ্নের উত্তর পাওয়ার পাশাপাশি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এও আশা করছি জ্ঞানী বাবা!‘র আজকের লেখাটি আপনার ভালো লেগেছে। যদি ভালো লেগেই থাকে, তাহলে অনুরোধ করব আপনার পরিচিত-প্রিয়জনদের সাথে এই ব্লগ পোস্টটি শেয়ার করুন, আর কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান মন্তব্য রেখে যেতে ভুলবেন না কিন্তু!!!