কম্পিউটার ভাইরাস কি? ভয়ঙ্কর ১০ টি কম্পিউটার ভাইরাসের নাম

আজকের এই ডিজিটাল যুগে কম্পিউটার ব্যবহার করেন আর কম্পিউটার ভাইরাস কি? কিংবা কম্পিউটার ভাইরাস কি কি ক্ষতি করে তা জানেন না এমন মানুষ হয়ত খুজেও পাওয়া যাবেনা। এখনকার দিনে ইন্টারনেট এর ব্যবহার আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ, অফিসের কাজ কিংবা অনলাইন ব্যাংকিং থেকে শুরু করে শিক্ষা, বিনোদনসহ প্রায় সব খাতেই আমরা কোনো না কোনো ভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করছি। কিন্তু এই ইন্টারনেটের মাধ্যমেই যদি যদি সিস্টেমে কম্পিউটারে বা ডিজিটাল ডিভাইসে কম্পিউটার ভাইরাস প্রবেশ করে তাহলে তা আপনাকে অনেক অনেক বেশি ভোগাতে পারে। তাই কম্পিউটার ভাইরাস সম্পর্কে সবারই বেশ ভাল একটা ধারণা রাখা উচিত।
জ্ঞানী বাবা!‘র আজকের এই আর্টিকেলে আমরা কম্পিউটার ভাইরাস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো মানে, কম্পিউটার ভাইরাস কি?, কম্পিউটার ভাইরাস কি কি ক্ষতি করে? কিংবা কম্পিউটার ভাইরাস কত প্রকার? আগা-গোড়া সবকিছুই আলোচিত হবে জ্ঞানী বাবা!‘র আজকের লেখায়। তাহলে চলুন, শুরু করা যাক!!!
সূচীপত্রঃ
কম্পিউটার ভাইরাস কি?

কম্পিউটার ভাইরাস হলো এমন এক ধরণের ক্ষতিকর প্রোগ্রাম বা কোড, যা আপনার কম্পিউটারে অনুপ্রবেশ করে অটোমেটিকভাবে নিজেকে কপি করতে পারে এবং বিভিন্ন সিস্টেম বা ফাইলের ক্ষতি করে। একদম সহজ ভাষায় বললে, এটি মানুষের শরীরের ভাইরাসের মতোই; যা নিজে নিজে ছড়িয়ে পড়ে ও দেহ কিংবা কপিউটা্রকে সার্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে।
কম্পিউটার ভাইরাস সাধারণত আপনার অজান্তেই ই-মেইল অ্যাটাচমেন্ট, ক্র্যাকড সফটওয়্যার, অনিরাপদ ওয়েবসাইট বা ইউএসবি ডিভাইসের মাধ্যমে কম্পিউটারে ঢোকে। জেনে অবাক হবেন কম্পিউটার ভাইরাস একবার প্রবেশ করার পর এটি আপনার ফাইল, অপারেটিং সিস্টেম কিংবা সাধারণ কোনো সফটওয়্যারের মধ্যে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারে। আর ভাইরাসের কাজই যেহেতু ক্ষতি করা ফলে ধীরে ধীরে আপনি আপনার কম্পিউটারের গতি কমে যাওয়া, গুরুত্বপূর্ণ ফাইল হারিয়ে যাওয়া বা কারাপ্টেড হয়ে যাওয়া, কিংবা বারবার সিস্টেম কিংবা অন্যান্যা এররের সম্মুখীন হওয়ার মতো সমস্যায় পড়তে পারেন।
কম্পিউটার ভাইরাসের মূল কাজঃ
- নিজের কপি তৈরি করে অন্য ফাইল বা ডিভাইসে ছড়িয়ে পড়া।
- গুরুত্বপূর্ণ ফাইল নষ্ট বা ফাইলের এক্সটেনশন পরিবর্তন করে ফেলা।
- সিস্টেম স্লো করে ফেলা অথবা পুরোপুরি অকেজো করে দেওয়া।
- ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে হ্যাকারদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া।
কম্পিউটার ভাইরাস তৈরি করা হয় মূলত উদ্দেশ্যমূলকভাবে, যাতে ব্যবহারকারীর কম্পিউটার বা তথ্যের মারাত্বক ক্ষতি সাধন করা যায়। তবে সব ভাইরাস সমানভাবে ক্ষতিকর নয়, কিছু ভাইরাস শুধু বিরক্তিকর বার্তা দেখিয়ে ব্যবহারকারীকে শুধু বিরক্ত করেি ক্ষান্ত হয়। কিন্তু বেশিরভাগ ভাইরাসই কম্পিউটার বা সিস্টেমের জন্য বড় হুমকি হয়ে ওঠতে পারে!

কম্পিউটার ভাইরাস কত প্রকার ও কি কি?
কম্পিউটার ভাইরাস তার কাজ করার ধরণ অনুসারে মোট ৫ প্রকার। যথাঃ
১. ফাইল ইনফেক্টর ভাইরাস
এই ধরণের কম্পিউটার ভাইরাস সরাসরি কম্পিউটারের বিভিন্ন এক্সিকিউটেবল ফাইল (.exe) বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ফাইলের সাথে সংযুক্ত হয়ে লুকিয়ে থাকে। যখন ব্যবহারকারী সংক্রমিত ফাইলটি চালু করেন, তখন ভাইরাসটিও সক্রিয় হয়ে যায় এবং অন্যান্য ফাইলেও ছড়িয়ে পড়ে। উদাহরণ: CIH, Sasser
২. বুট সেক্টর ভাইরাস
বুট সেক্টর ভাইরাস মূলত কম্পিউটারের হার্ডড্রাইভ বা রিমুভেবল ড্রাইভের বুট সেক্টরে আক্রমণ করে। বুট সেক্টর ভাইরাস কম্পিউটার চালুর সাথে সাথেই সক্রিয় হয়ে সিস্টেম ফাইলকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। যার ফলে কম্পিউটার এর স্বাভাবিক বুট (কম্পিউটার চালু হওয়ার প্রকিয়াকে বুট বলে) হতে পারেনা। এর ফলে কম্পিউটারের বুট ফাইল ক্ষতিগ্রস্থ হয় বলে কখনো কখনো পুনরায় অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করা লাগতে পারে। উদাহরণ: Michelangelo, Stone
৩. মাল্টিপার্টাইট ভাইরাস
এই ধরনের ভাইরাস একাধিক পদ্ধতিতে সংক্রমিত হতে পারে, যেমনঃ একই সঙ্গে বুট সেক্টর কিংবা ফাইল ইনফেক্টর উভয় ভাইরাসের মতোি কাজ করতে পারে। মাল্টিপার্টাইট ভাইরাস খুব দ্রুত কম্পিউটারে ছড়িয়ে পড়ে এবং এই ভাইরাসটি অপসারণ করাও অনেক কঠিন হয়ে যায়। উদাহরণ: Tequila
৪. ম্যাক্রো ভাইরাস
ম্যাক্রো ভাইরাস সাধারণত মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল এবং অন্যান্য অফিস ডকুমেন্টের ম্যাক্রো কোডের মাধ্যমে ছড়ায়। ব্যবহারকারী যখন সংক্রমিত ডকুমেন্টটি খোলেন, তখন ভাইরাসটি সক্রিয় হয়ে যায় এবং অন্য ডকুমেন্টেকেও আক্রান্ত করে ফেলে। উদাহরণ: Melissa, Concept
৫. র্যানসমওয়্যার ভাইরাস
যারা কম্পিউটার ব্যবহার করেন তাদের কাছে র্যানসমওয়্যার একটি আতঙ্কের নাম! র্যানসমওয়্যার ব্যবহারকারীর ফাইলগুলোকে এনক্রিপ্ট বা লক করে ফেলে এবং মুক্তিপণ (ransom) দাবি করে। ব্যবহারকারী নির্দিষ্ট মাধ্যমে ভাইরাস নির্মাতাদের টাকা প্রদান না করা পর্যন্ত ফাইল পুনরুদ্ধার করা কখনোই (বেশিরভাগ ক্ষেত্রে) সম্ভব হয় না।উদাহরণ:
WannaCry, CryptoLocker
কম্পিউটার ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ

যদিও কম্পিউটার ভাইরাস অতি গোপনে কাজ করে। কিন্তু ভাইরাসের কাজই যেহেতু ব্যবহারকারীর ক্ষতি করা, তাই কিছু কিছু লক্ষণ দেখে আপনি সহজেই বুঝে ফেলতে পারবেন আপনার পিসি, কম্পিউটার বা ডিভাইসটি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ছে কিনা। তাহলে চলুন জেনে নিই, কম্পিউটার ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার বেশ কয়েকটি সাধারণ লক্ষণঃ
১. কম্পিউটার স্লো হয়ে যাওয়া
কম্পিউটারের পারফরম্যান্স হঠাৎ অনেক কমে গেলে বা আপনার সফটওয়্যারগুলো চালু হতে বেশি সময় নিলে বুঝবেন এটি ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ। ভাইরাস ব্যাকগ্রাউন্ডে অনেক কাজ করে প্রসেসর ও RAM ব্যবহার করে কম্পিউটারকে অনেক ধীর গতির করে দেয়।
২. অজানা অ্যাপ বা পপআপ
হঠাৎ করে আপনার কম্পিউটারে নিজে নিজেই নতুন কোনো সফটওয়্যার ইনস্টল হয়ে গেলে বা আপনার ব্রাউজারে অবাঞ্ছিত পপআপ বিজ্ঞাপন আসতে থাকলে তা ভাইরাসের আক্রমণের কারণে হতে পারে। কিছু ভাইরাস ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়াই অ্যাপ ইনস্টল করে ফেলে।
৩. ফাইল নষ্ট বা হারিয়ে যাওয়া
ভাইরাস সংক্রমণের কারণে আপনার অনেক ফাইল করাপ্টেড হয়ে যেতে পারে আবার স্তাহ্যী ভাবে ডিলিটও হয়ে যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট, ছবি, ভিডিও বা সফটওয়্যার আর খুঁজে পাওয়া যায় না। তা সাবধান!
৪. হঠাৎ কম্পিউটার রিস্টার্ট বা ক্র্যাশ হওয়া
ভাইরাস কম্পিউটারের সিস্টেম ফাইলের ক্ষতি করলে কম্পিউটার হঠাৎ বন্ধ হয়ে যেতে পারে অথবা বারবার রিস্টার্টও হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে ব্লু স্ক্রিনও (Blue Screen of Death) দেখা যায়।
৫. ইন্টারনেট অস্বাভাবিক ধীর হয়ে যাওয়া
ভাইরাস যদি ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যাকগ্রাউন্ডে আপনার ডাটা আদান-প্রদান করে, তাহলে অতিরিক্ত লোডের কারণে আপনার ইন্টারনেট স্পিড অনেক কমে যেতে পারে। এই সমস্যাটা মূলত স্পাইওয়্যার বা ম্যালওয়্যার ভাইরাসের কারণে বেশি দেখা যায়।
৬. অপ্রত্যাশিত “Error” বার্তা আসা
ভাইরাস সংক্রমিত হলে সফটওয়্যার চালানোর সময় বা উইন্ডোজ স্টার্টআপের সময় বিভিন্ন ধরণের এরর (error message) বার্তা দেখা যেতে পারে।
৭. অজানা ইমেইল বা মেসেজ পাওয়া
আপনার ইমেইল বা সামাজিক মাধ্যম থেকে যদি আপনার অজান্তেই সন্দেহজনক মেসেজ বা লিংক পেতে থাকেন, তবে এটি ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে।
কম্পিউটার ভাইরাস কি কি ক্ষতি করে?

কম্পিউটার ভাইরাস সাধারণত অনেক ধরনেরi ক্ষতি করতে সক্ষম, যা আপনার কম্পিউটার সিস্টেম, তথ্য, এবং আপনার ভার্চুয়াল নিরাপত্তার জন্য মারাত্বক বিপজ্জনক হতে পারে। আপনার কম্পিউটার ভাইরাসে আক্রান্ত হলে কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে তার কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট নিচে তুলে ধরা হলোঃ
১. গুরুত্বপূর্ণ ফাইল নষ্ট হওয়া
ভাইরাস আপনার কম্পিউটারের এক বা একাধিক ফাইলকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। অনেক ভাইরাস ফাইলের কন্টেন্ট পরিবর্তন করে দেয় কিংবা পুরোপুরি ডিলিট করে ফেলে। এতে আপনার মূল্যবান ডেটাও হারিয়ে যেতে পারে।
২. কম্পিউটার স্লো হয়ে যাওয়া
ভাইরাস সাধারণত সিস্টেমের রিসোর্স অনেক বেশি পরিমাণে ব্যবহার করে এবং তা আপনার কম্পিউটারকে স্লো বা হ্যাং করিয়ে ফেলতে পারে। কম্পিউটার হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়া ধীর গতিতে কাজ করতে ধরে নি আপনার কম্পিউটার ভাইরাসে আক্রান্ত। তাই এণ্টিভাইরাসের সাহায্যে পদক্ষেপ নিন।
৩. সিস্টেম ক্র্যাশ বা বারবার রিস্টার্ট
ভাইরাস আপনার কম্পিউটারের সিস্টেম ফাইল নষ্ট করে ফেলতে পারে । এর ফলে কম্পিউটার বারবার ক্র্যাশ হতে পারে বা হঠাৎ অপ্রত্যাশিতভাবে রিস্টার্ট হতে পারে যা আপনাকে অনেক ভোগাবে!
৪. তথ্য চুরি বা হ্যাকিং
বেশ কিছু ভাইরাস হ্যাকারদের জন্য দরজা খুলে দিয়ে আপনার ঝুকি বাড়িয়ে দেয়। এর মাধ্যমে হ্যাকাররা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য যেমন, পাসওয়ার্ড, ব্যাংকিং তথ্য বা অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি করতে পারে। এভাবে ভাইরাস সাইবার ক্রাইমের জন্যও ব্যবহার করা হয়।
৫. ম্যালওয়্যার বা স্প্যাম ছড়িয়ে দেওয়া
কিছু ভাইরাস অনেক সময় ম্যালওয়্যার বা স্প্যামকে আরও অনেক ব্যবহারকারীর কাছে ছড়িয়ে দেয়। এই ধরণের ভাইরাস স্ক্যাম বা ফিশিং আক্রমণের জন্য ব্যবহার করা হয়। যেখানে ভাইরাস অন্যদের কাছে ক্ষতিকর প্রোগ্রাম পাঠায় এবং তাদের সিস্টেমকে আক্রান্ত করে ফেলে।
৬. হার্ডওয়্যার নষ্ট হওয়া
অধিকাংশ ভাইরাসই সফটওয়্যার পর্যায়েই কাজ করে, তবে কিছু বিশেষ ধরনের ভাইরাস হার্ডওয়্যারও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এ সকল ভাইরাস কম্পিউটারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ যেমন হার্ডডিস্ক বা মেমরি চিপকে নষ্ট করে ফেলতে পারে, ফলে পুরো কম্পিউটারটি এক পর্যায়ে অকেজো হয়ে পড়তে পারে।
৭. সিস্টেমের নিরাপত্তা দুর্বল হওয়া
কম্পিউটার ভাইরাস আপনার সিস্টেমের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল করে দিতে পারে। ফলে কম্পিউটার অন্যান্য আক্রমণ বা ভাইরাসের শিকার হয়ে যাবে সহজেই। ভাইরাস সিস্টেমে অ্যাডমিনিস্ট্রেটর রাইটস পেতে পারে (জোড় করে বা কোডের মার প্যাঁচে) , যা হ্যাকারদের জন্য গেটওয়ে তৈরি করে দিতে পারে। ফলে আপনার ডিভাইস হ্যাক করা হ্যাক্রদের জন্যে হবে পানি-ভাত এর মতো!
১০ টি কম্পিউটার ভাইরাসের নাম

বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস রয়েছে, যা কম্পিউটার সিস্টেমের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। এখানে ১০টি পরিচিত কম্পিউটার ভাইরাসের নাম দেওয়া হলো, যা অতীতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে এবং ব্যবহারকারীদের ক্ষতির কারণ হয়েছে:
১. ILOVEYOU
এই ভাইরাসটি ২০০০ সালের আশেপাশে ইমেইল এর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। এই ভাইরাস একটি ওয়েবসাইট হিসেবে এসেছিল, যার বিষয় ছিল “ILOVEYOU” এবং এটি যখন ব্যবহারকারীরা খুলত, তখন ভাইরাসটি পুরো সিস্টেমে ছড়িয়ে পড়ত।
২. Mydoom
২০০৪ সালে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছিল এবং এটি স্প্যাম ইমেইল পাঠানোর মাধ্যমে নিজের অনুলিপি ছড়াত। Mydoom কম্পিউটার সিস্টেমের ক্ষতি করার পাশাপাশি, নেটওয়ার্ক সিস্টেমে বিশাল লোড সৃষ্টি করে ব্যবহারকারীর ভোগান্তি বাড়াতো।
৩. Melissa
Melissa ভাইরাস ১৯৯৯ সালে ইমেইল এর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। এটি ব্যবহারকারীর অ্যাড্রেস বুকের সমস্ত ইমেইল আইডিতে নিজের অনুলিপি পাঠিয়ে দিত, যার ফলে খুব দ্রুত ভাইরাসটি অন্য কম্পিউটারকেও আক্রান্ত করে ফেলত।
৪. Conficker
Conficker একটি ভাইরাল ভাইরাস ছিল যেটি ২০০৮ সালের দিকে প্রথম দেখা যায়। এটি কম্পিউটারের সিস্টেম ফাইলকে কারাপ্টেড করে ফেলৎ এবং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্য ডিভাইসে ছড়িয়ে পড়ে।
৫. Zeus
Zeus একটি ট্রোজান ভাইরাস যা ব্যাংকিং তথ্য চুরি করার জন্য ব্যবহার করা হতো (এখনো হতে পারে)। এটি অনলাইনে পেমেন্ট এবং ব্যাংকিং সাইটে নিরাপত্তা বলয় ভেঙ্গে ব্যবহারকারীর ব্যাংকিং ইনফো চুরি করে হ্যাকারদের কাছে পাঠিয়ে দিতে সক্ষম।
৬. Stuxnet
Stuxnet একটি সুনির্দিষ্ট ধরনের সাইবার আক্রমণ ছিল, যা ২০১০ সালে ইরানের পারমাণবিক প্রকল্পকে লক্ষ্য করে তৈরি হয়েছিল। এটি শুধুমাত্র সুনির্দিষ্ট সিস্টেমে কাজ করেছিল এবং অত্যন্ত উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করেছে।
৭. CryptoLocker
Cryptolocker ভাইরাসটি অনেকটা র্যানসমওয়্যার মতো, ভাইরাসটি নানা গুরুত্বপূর্ণ ফাইল এনক্রিপ্ট করে ফেলে এবং ফাইল ফেরত পেতে টাকা দাবি করে (এই ভাইরাসটি বানানোর উদ্দেশ্যই এটা) । ২০১৩ সালে এই ভাইরাস টি ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল।
৮. Nimda
Nimda একটি শক্তিশালী এবং দ্রুত ছড়াতে সক্ষম একটি ভাইরাস। এই ভাইরাসটি ২০০১ সালে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছিল। ভাইরাসটি ইমেইল, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ওয়েব সার্ভার এবং অন্যান্য উপায়ে সিস্টেমে প্রবেশ করে কম্পিউটারে নানান সমস্যা তৈরি করত।
৯. Slammer
Slammer ভাইরাস ২০০৩ সালে অত্যন্ত দ্রুত পুরো ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছিল। এটি একটি SQL সার্ভার ভাইরাস ছিল। মানে এই ভাইরাসটি যেকোনো সার্ভারকে উচ্চ ট্রাফিক সৃষ্টির মাধ্যমে হ্যান করিয়ে দিত ফলে ওয়েবসাইট টি আর ঠিক ঠাক ভাএ কাজ করতে পারতোনা।
১০. Trojan Horse
এই ভাইরাসটি অন্যান্য ভাইরাসের মতো সাধারণত প্রোগ্রামের মধ্যে লুকিয়েই থাকে কিন্তু ভাল প্রোগ্রাম সেজে। ভাইরাসটি নিজের উপস্থিতি গোপন রেখে ব্যবহারকারীর নানা গোপন তথ্য যেমন পাসোয়ার্ড, ব্যাংকিং ইনফো চুরি করতে সক্ষম।
কম্পিউটার ভাইরাস ও এন্টিভাইরাস এর তালিকা

একটা কথা আছে, সমস্যা থাকলে সমাধানও থাকবে। একই ব্যাপার ভাইরাসের ক্ষেত্রেও। এতক্ষণ ভাইরাস কি,? কি কি ক্ষতি করতে পারে? তা জানলাম কিন্তু এসব ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায়ও আছে! আর তা হলো এন্টিভাইরাস। ভাইরাস যেমন কম্পিউট্রে লুকিয়ে থেকে ক্ষতি করতে পারে তেমনি এন্টিভাইরাস ভাইরাসকে খুজে বের করে স্তাহ্যী ভাবে নির্মূল করতে পারে। নিচে কিছু কম্পিউটার ভাইরাসের তালিকা ও একই সাথে এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার এর তালিকা দেখে নেয়া যাকঃ
কম্পিউটার ভাইরাসের তালিকা
- ILOVEYOU
- Mydoom
- Melissa
- Conficker
- Zeus
- Stuxnet
- CryptoLocker
- Nimda
- Slammer
- Trojan Horse
এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার এর তালিকা
নিচে কিছু জনপ্রিয় এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার এর নাম তালিকা হিসেবে দেয়া হলোঃ
- Avast Avast- Avast একটি শক্তিশালী ফ্রি এন্টিভাইরাস, যা রিয়েল-টাইম প্রোটেকশন, মালওয়্যার ডিটেকশন করতে সক্ষম। আমি নিজেও এটি অনেকদিন ব্যবহার করেছি।
- Kaspersky Kaspersky- এই এন্টিভাইরাসটিও অ্যাভাস্টের মতো বেশ শক্তিশালী সুরক্ষা দিতে সক্ষম।
- Norton Norton- একটি প্রিমিয়াম এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার। এই এন্টিভাইরাস সফটওয়্যারটি মালওয়্যার, র্যানসমওয়্যার, ফিশিং অ্যাটাকসহ সাইবার আক্রমণ থেকেও সুরক্ষা দিতে পারে।
- Windows Defender- Windows Defender (এখন Windows Security) হল Windows অপারেটিং সিস্টেমের ডিফল্ট এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার। উইন্ডোজ ডিফেন্ডার ফ্রি হলেও আপডেটেড (উইন্ডোজ ১০,১১) উইন্ডোজ ভার্সন গুলোত এটি অনেক ভাল সুরক্ষা দেয়।
- Bitdefender- Bitdefender অত্যন্ত শক্তিশালী এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার। এটি সর্বশেষ আপডেটেড ডাটাবেজ (ভাইরাসের তালিকা) ব্যবহার করে ভাইরাস, স্প্যাম কিংবা ম্যালওয়্যার থেকেও বেশ ভালো সুরক্ষা প্রদান করতে পারে।
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর | FAQ (People Also Ask)
এতক্ষন আমরা কম্পিউটার ভাইরাস কি? কম্পিউটার ভাইরাস কত প্রকার অ কি কি? কিংবা কম্পিউটার ভাইরাস কি কি ক্ষতি করতে পারে এসকল বিষয়ে বিস্তারিত জেনেছি। এখন কম্পিউটার ভাইরাস সম্পর্কে সচরাচর জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্নের উত্তর জেনে নেওয়া যাক!
কম্পিউটার ভাইরাস থেকে বাঁচার উপায় কি?
কম্পিউটার ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য উপায় হিসেবে নিচের পরামর্শ গুল অনুসরণ করুনঃ:
- এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করুন: আপডেটেড এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করে ভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব।
- ওয়েবসাইট এবং ইমেইল লিংক এ সাবধানতা: অজানা বা সন্দেহজনক কোনো ইমেইল লিংক কিংবা ওয়েবসাইট থেকে দূরে থাকুন।
- সফটওয়্যার গুলো নিয়মিত আপডেট করুন: সিস্টেম এবং সফটওয়্যার আপডেট রাখলে নিরাপত্তা দুর্বলতা অনেকাংশেই কমে যায়।
- রিয়েল-টাইম সুরক্ষা চালু রাখুন: এন্টিভাইরাসের রিয়েল-টাইম সুরক্ষা চালু রাখলে ভাইরাস আক্রমণ করলেও সাথে সাথে আপনি সতর্ক বার্তা পেয়ে যাবেন এবং প্রয়োজনীয় পদেক্ষেপ নিতে পারবেন।
কম্পিউটার ভাইরাস কত প্রকার?
কাজের ধরণের উপর ভিত্তি করে ভাইরাস মোট ৫ প্রকারঃ
- ফাইল ইনফেক্টর ভাইরাস
- বুট সেক্টর ভাইরাস
- মাল্টিপার্টাইট ভাইরাস
- র্যানসমওয়্যার ভাইরাস
- ট্রোজান হর্স
শেষ কথা
আশা করি জ্ঞানী বাবা!‘র আজকের আর্টিকেল পড়ার পর পাঠকের কম্পিউটার ভাইরাস সম্পর্কে আর কোন প্রশ্ন থাকবেনা। আজকের এই ব্লগ পোস্ট এ কম্পিউটার ভাইরাস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি প্রিয় পাঠকের জ্ঞানী বাবা!’র আজকের আর্টিকেল টি ভাল লেগেছে, উপকারি মনে হয়েছে। যদি তাই হয়, অনুরোধ করব আপনার পরিচিত কিংবা প্রিয় জনদের সাথে আজকের আর্টিকেল্টি শেয়ার করে তাদেরও কম্পিউটার ভাইরাস কি? কিংবা কম্পিউটার ভাইরাস কতটা ভয়ানক হতে পারে তা জানার সুযোগ করে দিন। আর কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান মন্তব্য রেখে যেতে একদম ভুলবেন না কিন্তু!!!