পিরামিড কি? পিরামিডের ভিতরে কি আছে?

বিশ্বের প্রাচীনতম রহস্যময় স্থাপত্যগুলোর মধ্যে অন্যতম এক বিস্ময়ের নাম হলো মিশরের পিরামিড। হাজার হাজার বছর আগে মানুষ যখন প্রযুক্তিতে ছিল অনেক অনেক পিছিয়ে, তখন কীভাবে মানুষ এত বিশাল এবং গাঠনিকভাবে নিখুঁত পিরামিড তৈরি করলো?এই প্রশ্ন আজও মানুষকে ভাবায়। পৃথিবীর নানান দেশে ছট বড় অনেক পিরামিড থাকলেও মিশরের পিরামিড পুরো বিশ্বজুড়ে আলাদা ভাবে পরিচিত।
জ্ঞানী বাবা!“র আজকের এই লেখায় আমরা জানবো পিরামিড কি?, পিরামিডের ইতিহাস, পিরামিড কেন তৈরি করা হয়েছিল?, বিশ্বের কোথায় কোথায় পিরামিড অবস্থিত থেকে শুরু করে পিরামিডের ভেতরের রহস্য সবকিছুই। তাহলে চলুন, জ্ঞানী বাবা!‘র সাথে আজকে জেনে নিই হাজার বছরের অমীমাংসিত পিরামিড রহস্য!
সূচীপত্রঃ
পিরামিড কি?

একদম সহজ বাংলায় বললে, পিরামিড হলো এমন এক বিশেষ ধরণের সুপ্রাচীন স্থাপত্য যার নিচের অংশ বেশ চওড়া এবং ধীরে ধীরে উপরের দিকে সরু হয়ে গিয়ে একটি তীক্ষ্ণ শীর্ষবিন্দুতে গিয়ে শেষ হয়। পিরামিড দেখতে অনেকটা ত্রিভুজ আকৃতির পাহাড়ের মতো। পিরামিড মূলত বিভিন্ন ধরণের দুর্লভ পাথর কেটে কেটে নির্মাণ করা হয়েছিলো।
আপনি জেনে অবাক হবেন, বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত পিরামিডগুলো সব মিশরে অবস্থিত।এসকল দানবাকৃতির পিরামিডগুলো মূলত ফারাওদের কবরস্থান হিসেবেই ব্যবহৃত হতো। ভাবতে পারছেন? শুধু কবর দেয়ার জন্যে এত বড় বড় পিরামিডগুলো বানানো হয়েছিল! তবে শুধু মিশরেই নয়, পৃথিবীর আরও অনেক দেশেও পিরামিড আছে।
এক নজরে পিরামিডের কিছু বৈশিষ্ট্যঃ
- পিরামিডের চারদিকে আছে সমানুপাতিক ঢালু দেয়াল।
- উপরের দিকে তীক্ষ্ণ শিখরে গিয়ে শেষ হয় পিরামিডের চূড়া।
- পিরামিডের ভেতরে আছে অনেক গোপন কক্ষ আর করিডোর!
পিরামিড এর ইতিহাস
পিরামিডের ইতিহাস মূলত শুরু হয়েছে প্রাচীন সেই মিশর থেকে, প্রায় ৪৫০০ বছর আগে। তখনকার মিশরের রাজারা (যাদের বলা হতো ফারাও) মৃত্যুর পরও তাদের শক্তি, ক্ষমতা ও ঐশ্বর্য ধরে রাখতে চাইতেন। এজন্যই তারা তৈরি করতেন বিশালাকার পিরামিড। এই পিরামিড গুলোই হত মৃত্যুর পর ফারাওদের সমাধি!
বিশ্বের প্রথম দিককার পিরামিডের মধ্যে অন্যতম হলো “স্টেপ পিরামিড অব জোসার” যেটি কিনা খ্রিস্টপূর্ব ২৬৭০ সালের দিকে তৈরি হয়েছিল। এই পিরামিডটি নকশা করেছিলেন ইমহোটেপ নামক একজন প্রকৌশলী। পরবর্তীতে খ্রিস্টপূর্ব ২৫৬০ সালের দিকে নির্মিত হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত ও একইসাথে বৃহত্তম পিরামিড “গ্রেট পিরামিড অফ গিজা”। গ্রেট পিরামিড অফ গিজা ফারাও খুফু-এর জন্য তৈরি করা হয়েছিল।
অনেক ভাবেন পিরামিড শুধু মিশরেই ছিল। কিন্তু না, পিরামিড শুধু মিশরেই সীমাবদ্ধ ছিল না; মেক্সিকো, সুদান, চীনসহ পৃথিবীর আরও অনেক সভ্যতাও পিরামিডের মতো স্থাপত্য নির্মাণ করত। তবে মিশরীয় পিরামিডগুলোই পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি পরিচিত এবং গবেষকদের কাছে সবচেয়ে বেশি রহস্যময় হয়ে আছে!
পিরামিড কেন তৈরি করা হয়েছিল?

প্রাচীন মিশরীয়রা বিশ্বাস করত, মৃত্যু মানেই সবকিছুর শেষ নয়। বরং, তারা ধারণা করত মৃত্যুর পর একজন রাজা বা ফারাও আবারও পরকালের এক ভিন জগতে জীবিত হবেন। এই বিশ্বাস থেকেই তারা বিশাল পিরামিড তৈরি করত সমাধি হিসেবে, যেন মৃত রাজা পরবর্তী জীবনের জন্য সবকিছু প্রস্তুত অবস্থায় পান।
তবে পিরামিড কেন তৈরি করা হয়েছিল? এই প্রশ্নের উত্তর পুরোপুরি জানতে আমাদের কিছু বিষয়ে আলাদা করে নজর দিতে হবে যেমনঃ
ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক কারণঃ
পিরামিড ছিল মূলত ফারাওদের কবরস্থান। প্রাচীন মিশরীয় ধর্মমতে, ফারাওরা ছিল অনেকটা দেবতাদের মতো এবং মৃত্যুর পরও তারা দেবত্ব অর্জন করবেন। তাদের আত্মা (যাকে “কা” বলা হতো) যাতে নিরাপদে পরকালীন জীবনে যেতে পারে ও আরাম আয়েসে থাকতে পারে, এজন্য পিরামিডের ভেতরে বিভিন্ন সম্পদ, খাদ্য, অস্ত্র, অলংকার এমনকি অনেক মূল্যবান সামগ্রীও রাখা হতো।
রাজকীয় ক্ষমতা ও স্থায়িত্বের প্রতীকঃ
সেকালে পিরামিড ছিল ফারাওদের শক্তি ও প্রভাবের একটি চিহ্ন। যার যত বড় পিরামিড, তার তত বেশি সম্মান ও মর্যাদার। তাই ফারাওরা নিজেদের ক্ষমতা ও মর্যাদাকে স্থায়ীত্ব দান করতে এত বিশাল বিশাল পিরামিড তৈরি করতেন।
সামাজিক এবং রাজনৈতিক কারণঃ
বলা হয়ে থাকে, পিরামিড তৈরির সময় হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করত। এতে অনেকের কর্মসংস্থানও হতো এবং রাজাদের প্রতি সাধারণ মানুষের আনুগত্যও আরও দৃঢ় হতো। অর্থাৎ, পিরামিড তৈরি ছিল একটি সামাজিক ও রাজনৈতিক কৌশল।
অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা
আপনি জেনে অবাক হবেন, ফারাওদের দেহ এবং সম্পদ চুরি থেকে রক্ষার জন্য পিরামিডের ভেতর গোপন কক্ষ, ফাঁদ, বন্ধ দরজা এমনিকি বিভ্রান্ত করার জন্যে করিডোরও তৈরি করা হতো। এতে করে ডাকাতরা সহজে কখনোই ফারাওদের সমাধি বা সম্পদ খুঁজে পেত না।
পিরামিড কোথায় অবস্থিত?
যদিও পিরামিড বললেই আমাদের মাথায় প্রথমে মিশর এর কথা মাথায় আসে, তবে শুধু মিশ্রেই নয় পৃথিবীর বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতায়ও পিরামিডের মতো স্থাপত্য নির্মাণ করা হতো। নিচে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু দেশের কথা তুলে ধরা হলোঃ
১. মিশর
আমরা সবাই জানি বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত পিরামিডগুলো আছে উত্তর আফ্রিকার দেশ মিশরে। আলাদা করে বলতে গেলে, গিজা (Giza) শহরের নিকটবর্তী এলাকায় তিনটি প্রধান পিরামিড – খুফু, খাফরে ও মেনকাউরে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ। এই ৩টি পিরামিডকে একত্রে “Giza Pyramid Complex” বলা হয়। শুধু মিশরেই মোট ১০০টিরও বেশি পিরামিড রয়েছে। এদের মধ্যে গ্রেট পিরামিড অফ গিজা পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে অন্যতম।
২. সুদান
অনেকেই জেনে আকাশ তেকে পড়বেন যে, সুদানে মিশরের থেকেও বেশি সংখ্যক পিরামিড রয়েছে। “Meroë” নামক এলাকাতেই নুবিয়ান পিরামিড নামক শতাধিক পিরামিড আছে। সুদানের এই পিরামিডগুলো আকারে তুলনামূলকভাবে ছোট এবং খাড়া আকারের।
৩. মেক্সিকো
প্রাচীন মায়া ও অ্যাজটেক সভ্যতা
প্রাচীন মায়া ও অ্যাজটেক সভ্যতা মেক্সিকোতে পিরামিডের মতোই বিশালাকৃতির মন্দির তৈরি করেছিল। এর মধ্যে “চিচেন ইটজা (Chichen Itza)” এবং “টিওতিহুয়াকান (Teotihuacan)” এর পিরামিডগুলো ব্যাপক বিখ্যাত মেক্সিকোর পিরামিডগুলো সাধারণত ধর্মীয় আচার-উৎসব পালনের জন্য ব্যবহৃত হতো।
৪. পেরু
ইনকা সভ্যতার সময়েও পেরুতে অনেক পিরামিডের মতো মন্দির এবং সিঁড়িযুক্ত কাঠামো তৈরি করা হয়েছিল। এর মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য পিরামিড ছিল “Huaca del Sol” এবং “Huaca de la Luna”।
৫. চীন
চীনের শিয়ান (Xi’an) শহরের নিকটবর্তী এলাকায় কিছু প্রাচীন সমাধি পিরামিড রয়েছে। এগুলো মূলত চীনা সম্রাটদের কবর হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
সবচেয়ে বেশি পিরামিড কোন দেশে?

প্রাচীন পিরামিডের কথা বললেই বেশিরভাগ মানুষের মাথায় মিশরের কথা আসে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি পিরামিড কিন্তু মিশরেই নেই রয়েছে সুদানে। আমাদের অনেকেই জানেন না , সুদানে যে মিশরের থেকেও বেশি সংখ্যক পিরামিড রয়েছে।
সুদানে মোট পিরামিডের সংখ্যা
জেনে চমকে যাবেন, সুদানে ২০০টিরও বেশি পিরামিড রয়েছে। যা কিনা মিশরের মোট পিরামিডের সংখ্যার (প্রায় ১৩৮-১৪০টি) থেকেও অনেক বেশি। এই পিরামিডগুলো মূলত কুশ বা নুবিয়ান সভ্যতার বেঁচে যাওয়া অংশ, যারা মিশরীয় সভ্যতার কাছাকাছি অঞ্চলেই বসবাস করত এবং অনেকটাই মিশরীয় সংস্কৃতি অনুসরণ করত।
কোথায়এই পিরামিডগুলো?
সুদানের পিরামিডগুলো মূলত Meroë, Nuri, এবং El-Kurru নামক এলাকায় অবস্থিত। Meroë অঞ্চলটি হচ্ছে সবচেয়ে বিখ্যাত। এখানে নুবিয়ান রাজা-রাণীরা সমাধি হিসেবে পিরামিডগুলো নির্মাণ করেছিলেন।
এক নজরে সুদানের পিরামিডগুলোঃ
- সুদানের পিরামিডগুলো আকারে তুলনামূলক ছোট।
- এগুলো বেশি খাড়া এবং তীক্ষ্ণ কোণবিশিষ্ট।
- বেশিরভাগ পিরামিড বালি ও পাথরের তৈরি।
- মিশরের মতো বড় ও ভারী ভারী পাথর ব্যবহৃত হয়নি।
- অনেক পিরামিডে ধর্মীয় চিত্র ও গ্রাফিটি পাওয়া গেছে, যা নুবিয়ান সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করে।
সুদানে এত পিরামিড কেন?
কুশ রাজবংশের শাসকরা মিশরের মতোই বিশ্বাস করতেন যে মৃত্যুর পরেও তাদের জীবন আছে। সেই কারণে তারা ফারাওদের আদলে নিজেদের জন্যও সমাধি পিরামিড তৈরি করত। তবে মিশরের তুলনায় তাদের স্থাপত্যশৈলী ছিল কিছুটা ভিন্ন ও সহজ।
ফান ফ্যাক্টঃ যারা ভবিষ্যতে সুদানে বেড়াতে যাবেন তাদের জন্যে একটি তথ্য জানিয়ে রাখা ভালো। অনেক পর্যটকই জানেন না যে, সুদানের মেরো অঞ্চলে পিরামিড ভ্রমণ করতে গেলে আপনি একই সাথে শতাধিক পিরামিড দেখতে পাবেন, যেখানে মিশরে এত বেসি পিরামিড একসাথে কোথাও নেই।
সবচেয়ে বড় পিরামিডের নাম কি?
বিশ্বের সবচেয়ে বড় পিরামিড হিসেবে হলো “গ্রেট পিরামিড অফ গিজা” (Great Pyramid of Giza)। এই পিরামিডটি মিশরের গিজা প্লেটু-তে অবস্থিত। গ্রেট পিরামিড অগ গিজা, পিরামিড অফ খুফু (Pyramid of Khufu) নামেও বেশ পরিচিত। খুফু পিরামিডটি এর গঠন এবং আকারে কারণে পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে একটি বিবেচিত হয়। চলুন, সংক্ষেপে দ্য গ্রেট পিরামিড অফ গিজা বা খুফু সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই…
- উচ্চতাঃ গ্রেট পিরামিডের উচ্চতা ছিল প্রায় ১৪৮.৫ মিটার (৪৮৭ ফুট), যার আজও পর্যন্ত পাওয়া বিশ্বের সবচেয়ে বেশি উচ্চতার পিরামিড। যদিও পিরামিডটি কিছুটা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে ফলে বর্তমানে এর উচ্চতা ১৪৬.৬ মিটার (৪৮১ ফুট), তবে এই উচ্চতা এখনো অনেক পিরামিডের চেয়েই অনেক বেশি।
- প্রস্থ এবং আয়তনঃ নির্মানের পর খুফু পিরামিডের প্রস্থ ছিল প্রায় ২৩৫.৪ মিটার (৭৭১ ফুট)। পিরামিডের ভেতরে পাথরের ব্লকগুলো একে অপরের সাথে এমনভাবে মিশে গিয়েছে যে আজও এই পিরামিডটি দৃঢ়ভাবে দারিয়ে আছে স্বগর্ভে!
- পাথরের ব্লকঃ গবেষকদের মতে, খুফু পিরামিডটি নির্মাণে প্রায় ২.৩ মিলিয়ন পাথর ব্লক ব্যবহার করা হয়েছিল, প্রতিটি ব্লক প্রায় ২.৫ টন থেকে ১৫ টন ওজনের ছিল! পাথরের ব্লক গুলোকে এত সুনিপুণ করে কেটে স্থাপন করা হয়েছে যে বাইরে থেকে একটু বাতাস পর্যন্তও পাথরের ফাক দিয়ে ঢুকতে পারে না!
- নির্মানের কৌশলঃ গ্রেট পিরামিড অফ গিজা কিভাবে নির্মিত হয়েছিল তা আজও কাছে একটি রহস্যই রয়ে গেছে। অনেক ঐতিহাসিক এবং গবেষকরা মনে করেন, পিরামিডটি নির্মাণের সময় প্রাচীন মিশরের মানুষ মাটি বা খিলান পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। এই পদ্ধতিতেই খাড়াভাবে ব্লকগুলো একে একে উপর দিকে উঠানো হয়েছে। তবে আসল সত্য আমাদের এখনোও অজানা!
- নির্মাণ প্রযুক্তিঃ যদিও আধুনিক যুগে আমাদের নির্মাণ প্রযুক্তি অনেক উন্নত হয়েছে, কিন্তু আমরা আমাদের নির্মাণ প্রযুক্তি দিয়েও পিরামিড তৈরির পেছনের রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারিনি। তবুও পিরামিড বেশ কয়েক হাজার বছর ধরে পৃথিবীর সবচেয়ে উচু স্থাপনা ছিল! ভাবতে পারছেন?
পিরামিডের ভিতরে কি আছে?
.jpg)
প্রাচীন মিশরের পিরামিডগুলোর ভেতর কী ছিল, তা নিয়ে অনেক রহস্য এবং কল্পনা রয়ে গেছে আজও। এখনো সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয় গ্রেট পিরামিড অফ গিজা ও অন্যান্য বড় পিরামিডের ভিতরের কক্ষ বা সেকশনের রহস্য নিয়ে। পিরামিডগুলো মূলত ফারাওদের সমাধি, কিন্তু পিরামিডের ভিতরে বিশেষভাবে নির্মিত কক্ষ কিংবা নানা ধর্মীয় উপকরণও রাখা হতো। চলুন, এক নজরে দেখে নেয়া যাক পিরামিডের ভিতরে কী কী ছিলঃ
১. সমাধি কক্ষ (Burial Chamber)
পিরামিডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো সমাধি কক্ষ। এখানেই ফারাও মানে রাজা/রাণীকে সমাহিত করা হতো। সমাধি কক্ষটি অত্যন্ত সুরক্ষিত হত। এই সমাধি কক্ষটি নির্দিষ্ট কোনো মন্দিরের মতো তৈরি করা হত। মিশরের অনেক পিরামিডে গ্রানাইট বা পাথরের ব্লক ব্যবহার করা হতো, যেত হাজার হাজার বছর সমাধি কক্ষটি নিরাপদে থাকে।
জেনে অবাক হবেন, গ্রেট পিরামিডে ফারাও খুফু এর সমাধি কক্ষে কোনো প্রবেশ পথ ছিল না। ফারাওদের সমাধি কক্ষেগুলোতে নানান রাজকীয় অলঙ্কার, মমি এবং গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উপকরণও রাখা হতো, যাতে ফারাওরা মৃত্যুর পরেও আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী থাকতে পারেন।
২. মমি এবং মমির উপকরণ
প্রাচীন মিশরীয়রা মমি তৈরি করতে খুবই নিখুঁত ও টেকশই পদ্ধতি ব্যবহার করত। তারা মিশরের রাজাদের মৃতদেহকে শুকিয়ে এবং আরো অনেক জটিল পন্থা অবলম্বনকরে ফারাওদের মৃতদেহগুলোকে সংরক্ষণ করত। পিরামিডের ভিতরে সমাধি কক্ষে, মমির সাথে আরো অঙ্কে উপদান রাখা হত, যেমনঃ
- বিভিন্ন ধরণের ধর্মীয় মুদ্রা
- সোনা, রূপা সহ নানান মূল্যবান জিনিসপত্র
- মন্ত্রপাঠের পুস্তিকা এবং ধর্মীয় চিত্রকর্ম
- খাদ্য এবং পানীয়
৩. গোপন কক্ষ এবং সরণি
অনেক পিরামিডের ভিতরেই ছোট বোড় অনেক গোপন কক্ষ বা চেম্বার পাওয়া গেছে। গবেষণায় এমনও দেখা গেছে যে কিছু পিরামিডের ভিতরে এমন গোপন কক্ষ রয়েছে, যেগুলো ভবিষ্যতের জন্য খোলার উদ্দেশ্যে রাখা হয়েছে। এসব কক্ষে বিশেষ ধনসম্পদ বা ধর্মীয় উপকরণ থাকতে পারে, যা প্রাচীন মিশরের ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে রাখা হতো।
৫. বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা
জানলে অবাক হবেন, হাজার হাজার বছর আগে তৈরি পিরামিডের ভিতর অভ্যন্তরীণ বায়ু চলাচলের জন্যেও আলাদা ব্যবস্থা ছিল। যাতে ভিতরের কক্ষগুলোতে ফারাওদের শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা না হয়। ভাবতে পারছে, কতটা পরিকল্পিত ও সুনিপুণভাবে পিরামিডগুলো তৈরি করা হয়েছিল?
শেষ কথা
জ্ঞানী বাবা!‘র আজকের আর্টিকেলে পিরামিড কি, পিরামিড কিভাবে তৈরি হয়েছে? পিরামিড কোথায় অবস্থিত?, পিরামিডের ইতিহাস, পিরামিড কেন অইরি করা হয়েছিলো? সবচেয়ে বড় পিরামিডের নাম কি? ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর দেয়ার পাশাপশি মিরামিড সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি ,প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেল থেকে পিরামিড সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
জ্ঞানী বাবা!‘র আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে অথবা পিরামিড সম্পর্কে আরো কোন কিছু জানতে চাইলে আমাদের কমেন্ট করে জানান। আর পরিচিতদের সাথে আজকের ব্লগ পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু!!!