কে ছিলেন এডলফ হিটলার? তিনি কিভাবেই বা মারা গেলেন?

এডলফ হিটলার, নামটি চরম বিতর্ক আর রহস্যে ঘেরা এক অজানা অধ্যায় হিসেবে আজও ইতিহাসের পাতায় রয়ে গেছে। তিনি ছিলেন জার্মানির সাবেক রাষ্ট্রনায়ক এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মূল নাট্যকারদের মধ্যোকার একজন। তাঁর উত্থান, শাসন ও পতনের প্রতিটি ধাপ আজও গবেষকদের কাছে আলোচনার বিষয়। সাধারণ মানুষদের মধ্যেও এই মানুষটার প্রতি বেশ আগ্রহ রয়েছে এখনও। আজ আপনিও হয়ত গুগলে সার্চ করেছেন, হিটলার কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?, তিনি কোন দেশের অধিবাসী ছিলেন, কিংবা হিটলার কোন ধর্মের অনুসারী ছিলেন? এজন্যই হয়ত গুগল বট আপনাকে আমাদের সাইটে নিয়ে এসেছে।
এতক্ষণে বুঝে গেছেন নিশ্চয়ই, জ্ঞানী বাবা!‘র আজকের এই লেখায় আমরা জানবো এডলফ হিটলারের সেনাবাহিনীর নাম, তাঁর উপাধি, রাজনৈতিক আদর্শ, এবং সবশেষে হিটলার কিভাবে মারা গেছেন থেকে শুরু করে মোটাদাগে উল্লেখযোগ্য সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। তাহলে চলুন, শুরু করা যাক!!!
সূচীপত্রঃ
কে ছিলেন এই এডলফ হিটলার?

হিটলার, যার পুরো নাম আডলফ হিটলার (Adolf Hitler), ছিলেন বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে সমালোচিত এবং ভয়ংকর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের একজন। তিনি জার্মানির রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে ১৯৩৪ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ এক একনায়কতন্ত্র কায়েম করেন এবং তখনও তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে নাৎসি পার্টির (Nazi Party) প্রধান ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় এবং বিশ্বজুড়ে তৈরি হয় সর্বকালের সবচেয়ে ভয়ংকর এক অস্থির পরিস্থিতি।
হিটলার শুধু একজন রাজনীতিবিদই ছিলেন না, তিনি ছিলেন অনেক ভয়ংকর একটি মতাদর্শেরও প্রবর্তক। জীবদ্দশায় হিটলার “আর্য জাতি” কে শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন এবং তার জের ধরেই তিনি লাখ লাখ ইহুদি, প্রতিবন্ধী ও সংখ্যালঘুদের হত্যা করেন। তাঁর এই ধ্বংসাত্মক নেতৃত্ব বিশ্ব ইতিহাসে “নাৎসিবাদ” ও গণহত্যার এক নির্মম প্রতীক হয়ে আছে আজও।
আরও পড়ুনঃ ব্রিটেনের রাজতন্ত্র টিকে থাকার কারণ কী?
এডলফ হিটলার কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
হিটলার কোথায় জন্মগ্রহণ করেন? এই প্রশ্নের উত্তর জানলে তাঁর জীবনের প্রাথমিক ধাপগুলো বোঝা সহজ হবে আমাদের জন্যে। আডলফ হিটলার ১৮৮৯ সালের ২০শে এপ্রিল অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরির ব্রাউনাউ আম ইন (Braunau am Inn) নামক একটি ছোট শহরে জন্মগ্রহণ করেন। এ অঞ্চলটি বর্তমানে অস্ট্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত। এডলফ হিটলার একটি নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। হিটলারের তাঁর বাবা ছিলেন স্বল্প বেতনের একজন সরকারি কর্মচারী এবং মা ছিলেন গৃহিণী।
অনেক জেনে অবাক হবেন, শৈশব থেকেই হিটলার ছিলেন অত্যন্ত আত্মমগ্ন ও স্বভাবগতভাবে কর্তৃত্বপরায়ণ একজন মানুষ। ছবি আঁকায় ছিল তার প্রবল আগ্রহ। পরবর্তীতে তিনি ভিয়েনা শহরে আর্ট স্কুলে ভর্তি হতে বেশ উৎসাহিত হয়েছিলেন এবং বেশ কয়েকবার চেষ্টাও করেছেন। যদিও বারবার চেষ্টা করেও তিনি আর্ট স্কুলে কোনোদিন ভর্তি হতে পারেননি।
ইতিহাসবেত্তাদের মতে হিটলারের শৈশব ও কৈশোরের অভিজ্ঞতাই তাঁর মানসিক গঠন এবং ভবিষ্যতের রাজনৈতিক চেতনায় গভীর প্রভাব ফেলেছিল। অস্ট্রিয়াতেই তাঁর জীবনের প্রথম দিকের শিক্ষা ও বেড়ে ওঠা হলেও, পরবর্তী সময়ে তিনি নাগরিকত্ব পরিবর্তন করে জার্মানির নাগরিক হন এবং এর আরও পরে পুরোদমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর রেংক সমূহ জেনে নিন
এডলফ হিটলার কোন দেশের অধিবাসী ছিলেন?

অনেকেই জানতে চান, এডলফ হিটলার কোন দেশের অধিবাসী ছিলেন? যদিও তিনি ইতিহাসে জার্মানির রাষ্ট্রনায়ক হিসেবেই ব্যাপক পরিচিত, আসলে তিনি জন্মগ্রহণ করে ছিলেন কিন্তু অস্ট্রিয়ায়, যা তখন অস্ট্রো-হাঙ্গেরি সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। তাই জন্মসূত্রে বললে তিনি ছিলেন অস্ট্রিয়ান নাগরিক।
তবে রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য তিনি পরে অস্ট্রিয়ান নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করেন এবং বদলে জার্মান নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন ১৯৩২ সালের দিকে। কারণ তিনি মূলত জার্মানির রাজনীতিতে প্রবেশ করতে চেয়েছিলেন এবং নির্বাচনে অংশ নিতে নাগরিকত্ব অপরিহার্য ছিল।
এই পরিবর্তনের মাধ্যমে তিনি তাঁর রাজনৈতিক স্বপ্নপূরণের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যান এবং শেষ পর্যন্ত জার্মানির চ্যান্সেলর ও পরবর্তীতে “ফুহরার” (Führer) বা একনায়ক শাসক হিসেবে বিশ্বের সামনে নিজেকে আত্নপ্রকাশ করেন।
এডলফ হিটলার কোন ধর্মের অনুসারী ছিলেন?
অনেকের মনেই একটা প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক, লাখ লাখ মানুষকে নির্বিচারে মেরে দেলা এডলফ হিটলার কোন ধর্মের অনুসারী ছিলেন? নির্ভরযোগ্য ইতিহাস অনুযায়ী, আডলফ হিটলার জন্মসূত্রে ছিলেন একজন রোমান ক্যাথলিক খ্রিষ্টান। তাঁর পরিবার তাই স্বাভাবিকভাবেই ধর্মীয় প্রথা মেনে চলত এবং ছোটবেলায় হিটলার গির্জায়ও যেতেন এবং ছেলেবেলায় খ্রিষ্টান ধর্মীয় শিক্ষাও গ্রহণ করেছেন।
তবে পরবর্তী জীবনে, বিশেষ করে রাজনৈতিক ক্ষমতায় আসার পর, হিটলারের ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে নানা বিতর্কের সৃষ্টি হয়। অনেক ইতিহাস গবেষক মনে করেন, হিটলার ধর্মকে কেবল রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবেই ব্যবহার করতেন এবং পুরো জীবন জুড়ে তাই করে গেছেন। তাঁর ব্যক্তিগত লেখালেখি এবং বক্তব্যে দেখা যায় যে, তিনি ধর্মীয় সহানুভূতির চেয়ে নাৎসি মতাদর্শকেই অনেক বেশি অগ্রাধিকার দিয়েছেন। এমনকি তাঁর শাসনামলেও খ্রিষ্টান ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরও বেশ অনেক সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছিলো।
পুরতো জীবনে তিনি প্রকাশ্যে ধর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান কখনোও না নিলেও, কেবল ইহুদি ধর্মের বিরুদ্ধে তাঁর চরম ঘৃণা ও গণহত্যামূলক নীতি হলোকাস্ট-এর মাধ্যমে পুরো বিশ্ব মানবতার কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পদবী তালিকা জেনে নিন
হিটলারের উপাধি কি ছিল?
হিটলারের উপাধি কি ছিল? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আগে তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় এবং তার প্রাপ্ত ক্ষমতার ধরন সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে। এডলফ হিটলার ছিলেন জার্মানির নাৎসি পার্টির (Nazi Party) নেতা এবং পরবর্তীতে তিনি নিজেকে “ফুহরার” (Führer) নামে ঘোষিত করেন, যার অর্থ “নেতা” বা “অধিনায়ক”। এই উপাধি তিনি ১৯৩৪ সালে নিজেই গ্রহণ করেন। তিনি রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের ক্ষমতা একত্র করে জার্মানির সর্বময় শাসক হন এবং তখনই এই পদবী গ্রহণ করেন।
হিটলারের রাজনৈতিক আদর্শ ছিল মূলত একনায়কতন্ত্র এবং জাতিগত শ্রেষ্ঠত্ববাদ, যেখানে জার্মান জাতিকে “শ্রেষ্ঠ জাতি” হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই ছিল তাঁর মূল লক্ষ্য। তাঁর নেতৃত্বে গঠিত হয় একটি একদলীয় শাসনব্যবস্থা, যেখানে বিরোধী মত বা সমালোচনার কোনো সুযোগই ছিল না।
ক্ষেপাটে এই নেতার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কৌশল ছিল, প্রচারণা ও প্রোপাগান্ডা ব্যবস্থাকে রাষ্ট্রীয় অস্ত্রে পরিণত করা। হিটলারের নেতৃত্বে নাৎসি পার্টি জার্মান জনগণের ওপর বিশাল প্রভাব বিস্তার করে, এবং তিনিই পরবর্তিতে হয়ে ঊঠেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম প্রধান উস্কানিদাতা।
এডলফ হিটলারের সেনাবাহিনীর নাম
হিটলারের সেনাবাহিনীর নাম ছিল “ওয়েহরমাখট” (Wehrmacht), যা ছিল নাৎসি জার্মানির মূল সামরিক বাহিনীর নাম। এই বাহিনী তিনটি প্রধান শাখায় বিভক্ত ছিল: হেইর (Heer – স্থল বাহিনী), লুফটওয়াফে (Luftwaffe – বিমান বাহিনী) এবং ক্রিগ্সমারিনে (Kriegsmarine – নৌ বাহিনী)। ১৯৩৫ সালে হিটলারের নেতৃত্বে জার্মানির পুনঃসশস্ত্রীকরণের মাধ্যমে এই সুবিশাল সেনাবাহিনী গঠন করা হয়।
তবে ওয়েহরমাখট ছাড়াও হিটলারের অধীনে কাজ করত আরেকটি দুর্ধর্ষ বাহিনী—এসএস (SS – Schutzstaffel)। এটি ছিল একটি আধা-সামরিক বাহিনী, যা হিটলারের আদর্শ অনুসারে নির্মমভাবে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন করতে ব্যাপক ব্যবহৃত হতো। গেস্টাপো (Gestapo) ছিল এসএস-এর গোয়েন্দা বিভাগ, যা ইহুদি নিধনসহ নানা ভয়ংকর কর্মকাণ্ডে সরাসরিভাবে জড়িত ছিল।
এই সব বাহিনীই নাৎসি জার্মানির ভয়ংকর সামরিক শক্তির মূর্ত প্রতীক ছিল। এই বাহিনীর শক্তি ব্যবহার করেই নাৎসি জার্মানি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইউরোপ জুড়ে একের পর এক দেশ দখল করে নিয়েছিলো। হিনাৎসি জার্মানির এই সেনাবাহিনী ছিল বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম সংগঠিত একইসাথে নিষ্ঠুর বাহিনীগুলোরও একটি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের ভূমিকা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এডলফ হিটলারের ভূমিকাই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ধ্বংসাত্মক। তাঁর নেতৃত্বেই ১৯৩৯ সালের ১লা সেপ্টেম্বর পোল্যান্ড আক্রমণের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়, যা পরবর্তীতে সমগ্র বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি চেয়েছিলেন জার্মান জাতিকে বিশ্বের সর্ব প্রধান শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে, যার জন্য তিনি “লেবেনসরাউম” (Lebensraum) বা “জীবনধারণের স্থান” বাড়ানোর তত্ত্ব দেন।
নাৎসি জার্মানির সেনাবাহিনী, অর্থাৎ ওয়েহরমাখট ও এসএস, একের পর এক ইউরোপীয় দেশ দখল করে নেয়। পোল্যান্ড, ফ্রান্স, নরওয়ে, নেদারল্যান্ডসসহ আরও অনেক দেশ পর পর নাৎসি জার্মানির কাছে আত্নসমর্পন করে। এই আক্রমণাত্মক নীতির মাধ্যমে তিনি অতি দ্রুতই ইউরোপে আধিপত্য বিস্তার করেন।
তবে তার সবচেয়ে কুখ্যাত ও সবচেয়ে বেশি সমালোচিত কাজ ছিল নির্বিচারে ব্যাপক ইহুদি গণহত্যা (হলোকাস্ট)। তাঁর আদেশে ৬০ লক্ষেরও বেশি ইহুদি নারী, পুরুষ ও শিশু নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয় কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে। এই হত্যাযজ্ঞ ছিল মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বর অধ্যায়।
তার এই উপাধি “ফুহরার” শুধু একটি উপাধি নয়, পুরো বিশ্ব জুড়ে এক নিরঙ্কুশ নিষ্ঠুর শাসনের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাঁর দমননীতি, আগ্রাসন ও জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের নীতিই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ।
আরও পড়ুনঃ রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ কেন শুরু হয়েছিলো?
এডলফ হিটলার কিভাবে মারা গেছেন?

হিটলার কিভাবে মারা গেছেন, এই প্রশ্ন ঘিরে ইতিহাসে বহু বিতর্ক ও জল্পনা-কল্পনা রয়ে গেছে এখনো। তবে অধিকাংশ প্রমাণিত ঐতিহাসিক সূত্র অনুযায়ী, আডলফ হিটলার ১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল জার্মানির বার্লিন শহরের একটি সুরক্ষিত বাঙ্কারে আত্মহত্যা করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে যখন মিত্রবাহিনী (Allied Forces) জার্মানির রাজধানী ঘিরে ফেলে এবং নাৎসি বাহিনী নিশ্চিত পরাজয়ের মুখোমুখি হয়, তখন তিনি আত্মসমর্পণ না করে আত্মহননের পথ বেছে নেন।
তাঁর মৃত্যুর সময়, মারা যাওয়ার কিছু ঘন্টা (২৪ ঘন্টারও কম) পূর্বে তিনি তাঁর দীর্ঘদিনের প্রেমিকা ইভা ব্রাউন-কে বিয়ে করেন এবং তাঁরা পরবর্তী ২৪ ঘন্টা পেরোনোর আগেই একইসাথে আত্মহত্যা করেন। তিনি সায়ানাইড খেয়ে ও মাথায় (কপালের ডা অংশে) গুলি করে আত্মহত্যা করেন। মৃত্যুর পর, তাঁর লাশ পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ ছিল, যাতে তার দেহটুকুও শত্রুর হাতে না পড়ে।
যদিও কিছু বিতর্কিত তত্ত্ব এই মানুষটার মৃত্যুকে ঘিরে ভিন্ন কিছু দাবি করে (যেমন তিনি পালিয়ে গিয়েছিলেন দক্ষিণ আমেরিকায় কিংবা আর্জেন্টিনায়), তবে এগুলোর কোনও গ্রহণযোগ্য প্রমাণ নেই এবং অধিকাংশ গবেষক বার্লিনে আত্মহত্যাই তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলে মেনে নেন।
ইতিহাসে অবস্থান ও পর্যালোচনা
হিটলার বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম এক বিতর্কিত ও কুখ্যাত ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন জার্মানির রাষ্ট্রনায়ক, যিনি ক্ষমতার আসনে থেকে গোটা ইউরোপজুড়ে বিশাল ধ্বংসযজ্ঞ ও যুদ্ধের আগুন ছড়িয়ে দেন নিজ হাতে। ইতিহাসে হিটলারের নাম যুক্ত হয়ে আছে নাৎসি শাসন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, এবং হলোকাস্ট-এর মতো নিকৃষ্ট শব্দ গুলোর সঙ্গে, যা মানবজাতির জন্য এক ভয়াবহ, বিভিষিকাময় অধ্যায়।
তাঁর নেতৃত্বে সংঘটিত গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ মানবাধিকারের সবচেয়ে বড় লঙ্ঘনগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে গণ্য হয়। বর্তমানে অনেক দেশ ও সমাজ তাঁকে সবচেয়ে সমালোইত ব্যক্তিত্ব হিসেবে দাড় করিয়েছে। ইউরোপের অনেক দেশে আপনি তার নামটা পর্যন্ত ইতিবাচিকভাবে নিতে পারবেন না! তবে ইতিহাসবিদরা মনে করেন, হিটলারের ক্ষমতায় উত্থান ও পতনের পেছনে ছিল ঐ সময়ের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জটিলতা, যা তাকে অনেকটা সহজেই ক্ষমতার শিখরে নিয়ে আসে।
হিটলার কোন দেশের রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন এবং কিভাবে তাঁর শাসনব্যবস্থা গোটা বিশ্বকে অন্ধকারে তোলেছিল, এসব বিষয়ে গভীর বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা আজও গবেষণার বিষয়। ইতিহাস থেকে আমরা শিখেছি যে একনায়কতন্ত্র ও উগ্রজাতীয়তাবাদ কতোটা বেশি ধ্বংসাত্মক হতে পারে।
হিটলার ছিলেন ইতিহাসের এক অতুলনীয় বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব, যিনি জার্মানির রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করে বিশ্বকে এক ভয়াবহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও হলোকাস্ট-এর সম্মুখীন করেন। তাঁর জীবন ও কার্যকলাপ থেকে আমরা শিখতে পারি, কিভাবে এক ব্যক্তির একনায়কতন্ত্র ও উগ্রজাতীয়তাবাদ সমগ্র মানবজীবনের উপর কতটা গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
যদিও হিটলার কোথায় জন্মগ্রহণ করেন এবং তিনি কোন দেশের অধিবাসী ছিলেন, তার পেছনের ইতিহাস আমাদের দেখায়, শুধু ব্যক্তির নয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর উপাধি ‘ফুহরার’ ছিল ক্ষমতার শিখরে পৌঁছানোর প্রতীক, আর তাঁর নেতৃত্বে গঠিত ওয়েহরমাখট ও এসএস বাহিনী ভয়ংকর ঐতিহাসিক অধ্যায় সৃষ্টি করে।
আমাদের উচিত ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে এমন দৃষ্টিভঙ্গি এড়িয়ে চলা, যা হিংসা, বর্ণবাদের মাধ্যমে সমাজ বিভাজনের কারণ হয়। ইতিহাসের এই অধ্যায় আমাদের সতর্ক করে দেয়, যে একনায়কতন্ত্রের পথ কখনো মানবতার পথ হতে পারে না।
শেষ কথা
জ্ঞানী বাবা!‘র আজকের এই লেখায় আমরা জানলামহিটলার কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?, তিনি কোন দেশের অধিবাসী ছিলেন, কিংবা হিটলার কোন ধর্মের অনুসারী ছিলেন? শুরু করে হিটলার সম্পর্কিত বিস্তারিত। আশা করি পাঠক ইতিহাসের অন্যতম বিতর্কিত, সমালোচিত ও ঘৃণিত ব্যক্তি এডলফ হিটলার সম্পর্কে পরিষ্কার একটি ধারণা পেয়েছেন।
পরিশেষে এতটুকুই বলব, আশা করি আমাদের আজকের এই লেখাটি আপনার ভালো লেগেছে। যদি তাই হয়ে থাকে, আজকের এই লেখাটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে , একটু হলেও উপকারে এসে থাকে তবে অনুরোধ করব, সামাজিক মাধ্যমে এই ব্লগটি শেয়ার করুন। আর কমেন্ট সেকশনে আপনার মূল্যবান মতামত রেখে যেতে একদম ভুলবেন না কিন্তু!!!
বেশ ভালো উপস্থাপন !