সার্চ ইঞ্জিন কি? সার্চ ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে?

বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে কোনো তথ্য খোঁজার সবচেয়ে সহজ এবং দ্রুত মাধ্যম হলো সার্চ ইঞ্জিন। তবু আমাদের অনেকেই জানেন না সার্চ ইঞ্জিন কি? কিংবা সার্চ ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে? বর্তমানে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এমন কোনো কাজ নেই যেখানে আমাদের ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হয়না। আর ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গেলে সার্চ ইঞ্জিনের গুরুত্ব অপরসীম। আপনি যখনই অনলাইনে কোনো কিছু খোজার চেষ্টা করি তখন প্রথমেই আমাদের গুগল, বিং কিংবা ইয়াহুর এর মতো কোনো সার্চ ইঞ্জিনের দ্বারস্থ হই।
তাহলে মনে প্রশ্ন আসতেই পারে , সার্চ ইঞ্জিন কি, সার্চ ইঞ্জিন কাকে বলে কিংবা সার্চ ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে? এবং কেন বর্তমানে সার্চ ইঞ্জিন আমাদের জীবনে এত গুরুত্বপূর্ণ? বর্তমানে আমরা ইন্তারনেটের যত তথ্য ব্যবহার করি, তার ৮০% ই সার্চ ইঞ্জিন থেকেই আসে। জেনে অবাক হবেন, শুধু গুগলেই প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৯০,০০০+ সার্চ হচ্ছে। আর পৃথিবীতে শুধু গুগল নয়, আরও অনেক জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন রয়েছে যেমন Bing, Yahoo, DuckDuckGo ইত্যাদি। ভাবুন তাহলে, সার্চ ইঞ্জিন ব্যাপারটা কতটা বিশাল!
আরও পড়ুনঃ টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যায় কেন?
বর্তমানে আমাদের এমন কোনো কাজ নেই যেখানে কোনো না কোনো ভাবে সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করিনা। উদাহরণ হিসেবেঃ
- বর্তমানে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা বিষয়ক যেকোন তথ্য খোঁজার জন্য সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে।
- ব্যবসায়ীরা মার্কেট রিসার্চ এবং কাস্টমার ইনসাইট পেতে সার্চ ইঞ্জিনের উপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল।
- সাধারণ মানুষ খাবারের রেসিপি থেকে শুরু করে বেড়ানোর স্থান সব কিছুই এখন আগে গুগলে সার্চ করে দেখেন।
এক কথায় বলা যায়, সার্চ ইঞ্জিন এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ হয়ে পড়েছে । একটি দিনও কল্পনা করা যায়না গুগলে কোন কিছু সার্চ করা ছাড়া। আপনি যদি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হন আর সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার না করেন তাহলে বলা যায় আপনি ইন্টারনেটে কার্যত অচল।
জ্ঞানী বাবা!’র আজকের আর্টিকেলে আমরা জানব সার্চ ইঞ্জিন কি, সার্চ ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে, বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন এর নাম কি কি থেকে শুরু করে সার্চ ইঞ্জিন সম্পর্কিত যাবতীয় সকল তথ্য। আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ার পর আপনার সার্চ ইঞ্জিন নিয়ে আর কখনোই হয়ত গুগলে সার্চ করতে হবেনা। তাহলে চলুন, মূল আলোচনায় লাফ দেয়া যাক!!!
সুচীপত্রঃ
সার্চ ইঞ্জিন কি? সার্চ ইঞ্জিন কাকে বলে?

সার্চ ইঞ্জিন কি? এই প্রশ্নের উত্তর একদম সহজভাবে দিলে বলতে হবে, “সার্চ ইঞ্জিন হচ্ছে এমন একটি সফটওয়্যার বা অনলাইন টুল, যা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কোটি কোটি ওয়েবসাইট, আর্টিকেল, ভিডিও, ছবি এবং অন্যান্য তথ্যের ভাণ্ডার থেকে আমাদের প্রয়োজনীয় তথ্যটি খুঁজে এনে দেয়।” বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিঙ্গুলোর মধ্যে রয়েছে গুগল, বিং, ইয়াহু সহ আরো অনেক সার্চ ইঞ্জিন।
আরও পড়ুনঃ পিরামিড কি? পিরামিডের ভিতরে কি আছে?
সার্চ ইঞ্জিন কত প্রকার?
সার্চ ইঞ্জিন কত প্রকার? এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কমন প্রশ্ন। সাধারণভাবে আমরা সার্চ ইঞ্জিনকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করতে পারি। সার্চ ইঞ্জিনগুলর কাজ করার পদ্ধতি এবং তথ্য খুঁজে বের করার প্রক্রিয়ার উপর ভিত্তি করেই সার্চ ইঞ্জিনকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়।
- ক্রলার বেসড সার্চ ইঞ্জিন (Crawler-Based Search Engines)
- ম্যানুয়ালি মেইন্টেইন্ড সার্চ ইঞ্জিন (Manually Maintained Search Engines)
- হাইব্রিড সার্চ ইঞ্জিন (Hybrid Search Engines)
ক্রলার বেসড সার্চ ইঞ্জিন (Crawler-Based Search Engines)
ক্রলার বেসড সার্চ ইঞ্জিনগুলিই সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিনের মধ্যে পড়ে। এই ধরনের সার্চ ইঞ্জিন ওয়েবপেজের লিংকগুলোকে খুঁজে বের করে এবং সেগুলোর মধ্যে থাকা কনটেন্ট ক্রল (স্ক্যান) করে। ক্রলার বা স্পাইডার সফটওয়্যার ব্যবহার করে ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েবপেজ ঘুরে বেড়ায় এবং নতুন তথ্য সংগ্রহ করে।
উদাহরণ:
- Google (গুগল)
- Bing (বিং)
- Yahoo (ইয়াহু)
আরও পড়ুনঃ রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ কেন শুরু হয়েছিলো?
ম্যানুয়ালি মেইন্টেইন্ড সার্চ ইঞ্জিন (Manually Maintained Search Engines)
এই ধরনের সার্চ ইঞ্জিনগুলো ব্যবহারকারীর মাধ্যমেই ওয়েবপেজের তথ্য সংগ্রহ করে এবং সেগুলোকে সুনির্দিষ্টভাবে ইনডেক্স করে রাখে। এই সকল সার্চ ইঞ্জিনে সরাসরি মানুষের সহায়তায় সার্চ ইঞ্জিন এর ডেটাবেজে তথ্য সংরক্কণ করা হয়, যা সার্চ রেজাল্টে সঠিক কনটেন্ট উপস্থাপন করতে বেশি সহায়ক। এই ধরনের সার্চ ইঞ্জিনগুলো অনেকটা ডিরেক্টরি সিস্টেমের মতো কাজ করে, যেখানে ওয়েবসাইটের মালিকদেরকেই সাইটের ডিটেইলস সাবমিট করতে হয়।
উদাহরণ:
- Yahoo Directory (যদিও এটি এখন বন্ধ হয়ে গেছে)
- DMOZ (ওপেন ডিরেক্টরি প্রজেক্ট)
হাইব্রিড সার্চ ইঞ্জিন (Hybrid Search Engines)
হাইব্রিড সার্চ ইঞ্জিনগুলি এক কথায় ক্রলার বেসড এবং ম্যানুয়ালি মেইন্টেইন্ড সার্চ ইঞ্জিনের সংমিশ্রণ। এই ধরনের সার্চ ইঞ্জিনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওয়েবসাইট ক্রল করা হয় আবার মানুষের দ্বারা সরাসরি ইনপুটও গ্রহণ করা হয়। এর ফলে এটি আরও নির্ভুল এবং প্রাসঙ্গিক ফলাফল প্রদান করতে সক্ষম হয়।
আরও পড়ুনঃ সেরা ১০টি টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায়
উদাহরণ:
- Google (গুগল) — যদিও গুগল মূলত ক্রলার বেসড, তবে এতে ম্যানুয়ালি আপডেট এবং রিভিউয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন ডিরেক্টরি এবং ওয়েবসাইট ইনফরমেশনও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
- Bing (বিং) — বিংও একইভাবে ক্রলার বেসড হলেও, ম্যানুয়াল ইনপুট এবং ইন্টিগ্রেশনও এর সার্চ অ্যালগরিদমের অংশ।
সার্চ ইঞ্জিনের জনক কে?
সার্চ ইঞ্জিনের জনক কে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের আগে সার্চ ইঞ্জিনের ইতিহাসে ফিরে যেতে হবে। সার্চ ইঞ্জিনের ধারণা প্রথম এসেছিলো ১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে কেননা তখন প্রতিনিয়ত ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ছিল ফলে একটি সার্চ ইঞ্জিন এর মতো কিছু একটার উদ্ভাবন এক প্রকার আবশ্যক হয়ে পড়ে।
সার্চ ইঞ্জিনের ইতিহাস
১৯৯০-এর দশকের শুরু থেকে ইন্টারনেটের ওয়েবপেজের সংখ্যা খুবই দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছিল, কিন্তু তখন এতো বড় ডেটাবেজ থেকে কোন তথ্য খুঁজে বের করার জন্য কোনো সিস্টেম ছিল না। তখনই কিছু উদ্যমী প্রযুক্তিবিদ সার্চ ইঞ্জিন এর মতো কোনো একটা সিস্টেম তৈরির প্রচেষ্টা শুরু করেন, যা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের যেকোনো তথ্য সহজেই খুঁজে দিতে পারবে।
প্রথম সার্চ ইঞ্জিনের নাম ও জনক
বিশ্বের সর্প্রবথম সার্চ ইঞ্জিন হলো “Archie” , যা তৈরি করা হয়েছিল ১৯৯০ সালে। এটি ছিল মূলত একটি ফাইল আর্কাইভ সার্চিং সিস্টেম। যা ইন্টারনেটের বিভিন্ন ফাইল খুঁজে দিতে পারত। তবে, এই সার্চ ইঞ্জিনটি সাধারণ মানুষের জন্যে নয়, মূলত টেকনিক্যাল ইউজারদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। Archie নামক বিশ্বে প্রথম সার্চ ইঞ্জিনের জনক ছিলেন Alan E. S. (অ্যালান ই. এস.)। পরবর্তীতে “Gopher” এবং “World Wide Web Wanderer” নামক আরো কিছু সার্চ ইঞ্জিন তৈরি করা হয়েছিল, কিন্তু এগুলো ততটা জনপ্রিয় হতে পারেনি।
আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার ভাইরাস কি? ১০ টি কম্পিউটার ভাইরাসের নাম
মডার্ন সার্চ ইঞ্জিন এবং গুগল
ব্বর্তমানে গুগল বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন। গুগল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ১৯৯৮ সালে। গুগলের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন Larry Page এবং Sergey Brin। তারা স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় PageRank অ্যালগরিদম তৈরি করেন, যা ছিল গুগল নামক সার্চ ইঞ্জিনের মূল ভিত্তি। PageRank অ্যালগরিদমটি ওয়েব পেজগুলোর মান ও প্রাসঙ্গিকতা নির্ধারণ করে ফলাফল দেখাতে পারত।
গুগল কেন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?
গুগল প্রতিষ্ঠার সময়, Pageএবং Brin উভয়ই লক্ষ্য করেছিলেন যে, ইন্টারনেটের এত বিশাল পরিমাণ তথ্যের মধ্যে প্রাসঙ্গিক এবং মানসম্মত তথ্য খুঁজে পাওয়ার জন্য দরকার একটি শক্তিশালী ও কার্যকর অ্যালগরিদমের। তাদের উদ্ভাবিত PageRank অ্যালগরিদম গুগল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ফলে গুগল ব্যবহারকারিদের কাছে আরো প্রাসঙ্গিক ও মানসম্মত তথ্য তুলে ধরতে পারত।
আধুনিক সার্চ ইঞ্জিনের বিবর্তন
গুগল প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত নানা চড়াই উতরাই পার করেছে। এখন বর্তমানের সার্চ ইঞ্জিনগুলি কেবল ওয়েব পেজ খোঁজার জন্য নয়, বরং ছবি, ভিডিও, সংবাদ, মিউজিক, এবং অন্যান্য বিভিন্ন ধরণের কন্টেন্ট খোঁজার ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হচ্ছে। গুগল ছাড়াও, বিং, ইয়াহু, ডাকডাকগো, বাইডু এবং অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনও প্রযুক্তির বিপ্লবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে।

প্রথম দিকের সার্চ ইঞ্জিন ও তাদের জনক
- Archie (১৯৯০) — আলান ই. এস.
- Lycos (১৯৯৪) — মাইকেল ডেল (Michael D. Dell)
- AltaVista (১৯৯৫) — ডেভিড ফিলিপস (David F. Phillips)
- Google (১৯৯৮) — ল্যারি পেজ এবং সের্গেই ব্রিন (Larry Page and Sergey Brin)
সার্চ ইঞ্জিন কীভাবে কাজ করে?

সার্চ ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে তা জানার আগে আমাদের প্রথমে এটি বুঝতে হবে যে সার্চ ইঞ্জিনের প্রধান কাজটা কি? সার্চ ইঞ্জিনের প্রধান কাজ হলো ওয়েব পেজগুলোকে খুঁজে বের করে তাদের মধ্যে প্রাসঙ্গিক ফলাফল গুলো দেখানো। এই কাজটা করতে সার্চ ইঞ্জিন কয়েকটি ধাপে কাজ করে। প্রধানত, কোন তথ্য খুঁজে বের করে আনতে সার্চ ইঞ্জিন তিনটি প্রধান ধাপ অনুসরণ করে:
- Crawling (ক্রলিং)
- Indexing (ইন্ডেক্সিং)
- Ranking। (র্যাংকিং)
আরও পড়ুনঃ মহাদেশ কী ? পৃথিবীতে কি ৭ টিই মহাদেশ আছে?
Crawling (ক্রলিং)
ক্রলিং হলো প্রথম ধাপ যেখানে সার্চ ইঞ্জিন তার বট (Spider বা Crawler নামে পরিচিত) ব্যবহার করে ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েব পেজের তথ্য সংগ্রহ করে। সার্চ ইঞ্জিনের বট ওয়েব পেজগুলোতে লিংক অনুসরণ করে, একটি পেজ থেকে অন্য পেজে চলে যায় এবং সেখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে নিজের ডেতা বেজে সংরক্ষণ করে।
ক্রলিং প্রক্রিয়ার কাজ:
- ওয়েব পেজের কন্টেন্ট যেমন, টেক্সট, ইমেজ, ভিডিও, লিংক এবং অন্যান্য রিসোর্স সংগ্রহ করা।
- নতুন এবং পুরনো পেজগুলো ক্রল করা।
- প্রাসঙ্গিক লিংকগুলি শনাক্ত করা এবং সেগুলির মাধ্যমে আরও পেজে চলে যাওয়া।
- লিংকগুলোর মাধ্যমে ওয়েব পেজ এবং কন্টেন্ট সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করা।
Indexing (ইন্ডেক্সিং)
ক্রলিংয়ের পর, সার্চ ইঞ্জিন যে ওয়েব পেজগুলো সংগ্রহ করে, সেই তথ্যগুলোকে Indexing
বা নিজের ডেটাবেজের সূচিপত্রে অন্তর্ভুক্ত করে। এই প্রক্রিয়াকে সহজভাবে বলা যায়, সার্চ ইঞ্জিন গুল কোন ওয়েব পেজের তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলো একটি ডাটাবেসে সাজিয়ে রাখে যেন পরবর্তী সময়ে কেউ সার্চ করলে দ্রুত এবং সহজে সেগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইন্ডেক্সিং প্রক্রিয়ায় মূল কাজগুলো হলো:
- প্রতিটি ওয়েব পেজের মূল তথ্য যেমন, টাইটেল, কন্টেন্ট, মেটা ট্যাগ, এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক ফ্যাক্টর সংগ্রহ করা।
- পেজের কিওয়ার্ড ও কনটেক্সট বুঝে একটি ডাটাবেযে সাজানো।
- ওয়েব পেজের তথ্যগুলোর প্রাসঙ্গিকতা এবং পেজের মান বিশ্লেষণ করা।
- বটটি ওয়েব পেজের বিষয়বস্তু এবং ব্যবহারকারীদের অনুসন্ধান করতে সহায়ক মেটা (কোন ওয়েবসাইট সম্পর্কে সার্চ ইঞ্জিনকে জানানোর জন্যে সংক্ষিপ্ত কিছু টেক্সট ব্যবহার করা হয়, তাকেই মেটা ইনফরমেশন বলে) ডেটা সংগ্রহ করে ইন্ডেক্সে অন্তর্ভুক্ত করে।
Ranking (র্যাংকিং)
র্যাংকিং হলো সার্চ ইঞ্জিনের কাজের শেষ ধাপ, যেখানে সেগুলো সার্চ রেজাল্ট পেজে (SERP) প্রদর্শিত হয়। সার্চ ইঞ্জিন এই ধাপে বিভিন্ন এলগরিদম ব্যবহার করে ওয়েব পেজগুলির প্রাসঙ্গিকতা, মান এবং গুণগত মান বিশ্লেষণ করে, এবং তারপর পেজগুলিকে সাজায়। ধরুণ আপনি সার্চ করেছেন “সার্চ ইঞ্জিন কি” । গুগল আপনাকে ফলাফল পেইজে জ্ঞানী বাবা!‘র এই ব্লগ পোস্টটাকে ১-১০ এর মধ্যে কোন একটা র্যাংকিং দিল আর আপনি সেটা ক্লিক করে আমাদের এই ব্লগে এসেছেন। এখানে, গুগল জ্ঞানী বাবা!‘র ওয়েবসাইটের মান, কন্টেন্টের মান, লিংক স্ট্রাকচার সব কিছু বিবেচনা করে সার্চ রেজাল্ট পেইজে একটা র্যাংকিং দিয়েছে।
র্যাংকিং এর ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর:
- On-page SEO: টাইটেল, মেটা ডিসক্রিপশন, কিওয়ার্ডের ব্যবহার, কন্টেন্টের গুণগত মান, ইত্যাদি।
- Off-page SEO: পেজের বাইরের ফ্যাক্টর, যেমন লিঙ্ক বিল্ডিং, সামাজিক শেয়ার, এবং ওয়েব সাইটটির প্রতি বিশ্বস্ততা।
- User Experience (UX): সাইটের লোডিং স্পিড, মোবাইল ফ্রেন্ডলি ডিজাইন, এবং ব্যবহারকারীর জন্য সাইটের সহজ ব্যবহার।
- Backlinks: অন্যান্য বিশ্বস্ত ওয়েবসাইটের থেকে প্রাপ্ত লিঙ্ক এবং তাদের মান।
- Freshness: নতুন এবং আপডেটেড কন্টেন্টের গুরুত্ব।
যখন কেউ একজন কিছু কিওয়ার্ড (গুগলে মানুষ যা লিখে সার্চ করে তাই কি-ওয়ার্ড) সার্চ করে, সার্চ ইঞ্জিন তখন এই সব ফ্যাক্টরগুলোকে মূল্যায়ন করে এবং তারপরে ডাটাবেজের র্যাংকিং অনুযায়ী সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক ও মানসম্মত ওয়েবপেইজ গুল দেখায়।
সার্চ ইঞ্জিন অ্যালগরিদম
সার্চ ইঞ্জিনের অ্যালগরিদম হল এক ধরণের গাণিতিক সূত্র যা মুলত সার্চ রেজাল্টে কি দেখান হবে আর কি দেখানো হবেনা তা ঠিক করে নির্ধারণ করে। গুগলের PageRank অ্যালগরিদম, Bing এর RankNet, এবং Yahoo এর Hummingbird এই সব গুলো অ্যালগরিদমই সার্চ এর ফলাফল বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই অ্যালগরিদমগুলি সার্চ রেজাল্টের প্রাসঙ্গিকতা, ওয়েব পেজের মান এবং অন্যান্য ফ্যাক্টর বিবেচনায় রেখে সার্চ রেজাল্ট তৈরি করে।
সার্চ ইঞ্জিনের অ্যালগরিদম কিভাবে কাজ করে?
- Ranking Signals: সার্চ ইঞ্জিনে পেজ র্যাংক করার জন্য বিভিন্ন Ranking signals থাকে। সেগুলোর মধ্যে কিওয়ার্ডের উপস্থিতি, সাইটের জনপ্রিয়তা, লিঙ্ক প্রোফাইল এবং অন্যান্য অ্যালগরিদম ফ্যাক্টর থাকে।
- Relevance: সার্চ ইঞ্জিন অবশ্যই সার্চ করা কিওয়ার্ডের সাথে সবচেয়ে সম্পর্কিত এবং প্রাসঙ্গিক ফলাফল প্রদর্শন করবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি “শিশুদের বই” সার্চ করেন, তবে সার্চ ইঞ্জিন আপনাকে সেরা এবং জনপ্রিয় শিশুদের বইগুলোর তালিকা দেখাবে। কখনোই নিম পাতার উপকারিতা বা এমন অন্য কোন ফলাফল দেখাবে না।
- Artificial Intelligence: গুগল এবং অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনগুলি এখন AI (Artificial Intelligence) এবং Machine Learning ব্যবহার করে সার্চ ফলাফলগুলিকে আরও স্বয়ংক্রিয়ভাবে এবং প্রাসঙ্গিকভাবে সাজাতে পারে।
সবচেয়ে জনপ্রিয় ৫টি সার্চ ইঞ্জিনের নাম
বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় ৫টি সার্চ ইঞ্জিনের নাম হলো:
- Google (গুগল)
- Bing (বিং)
- Yahoo (ইয়াহু)
- DuckDuckGo (ডাকডাকগো)
- Baidu (বাইডু, চীনে বেশি ব্যবহৃত)
গুগল (Google)

গুগল পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন। বর্তমানে গুগল একাই প্রায় ৯০% সার্চ ইঞ্জিন মার্কেট শেয়ার দখল করে রেখেছে। গুগল দ্রুততম সময়ে সবচেয়ে নির্ভুল এবং কাস্টমাইজড ফলাফল প্রদান করতে পারে।
কেন গুগল সবচেয়ে জনপ্রিয়?
- গুগলের সার্চ অ্যালগরিদম অত্যন্ত উন্নত এবং তা নিয়মিত আপডেট করা হয়, যার ফলে গুগল সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক ফলাফল দেখাতে সক্ষম।
- গুগল বিভিন্ন সেবা (যেমন, Gmail, Google Drive, Google Maps) একত্রে ব্যবহারকারীর জন্য আরও সুবিধাজনক করে তোলে। মজার ব্যপার হচ্ছে সেই সেবার সব গুলোই একদম ফ্রি!
গুগলের কিছু বিশেষ সুবিধা
- সার্চ রেজাল্টস শো করার সময় ব্যবহারকারীর লোকেশন, হালনাগাদ (আপডেট) করা তথ্য, এবং ভিউয়ার্স ইনপুটকে প্রাধান্য দেয়।
- পেইড সার্চ (Google Ads) এবং অর্গানিক র্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ফলাফল শো করে।
- গুগল লেন্স, গুগল ট্রান্সলেট, গুগল নিউজ ইত্যাদি টুলস ব্যবহারকারীদের আরও সহজে তথ্য খুঁজতে সাহায্য করে।
বিং (Bing)

বিং মাইক্রোসফটের নিজস্ব সার্চ ইঞ্জিন, যা গুগলের পর বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বাধিক ব্যবহৃত সার্চ ইঞ্জিন। বিং পিছিয়ে থাকলেও বিং এরও কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
বিং এর মৌলিক বৈশিষ্ট্যঃ
- বিং স্লাইডার, সঠিক ছবি এবং ভিডিও সার্চ ফিচার সহ আসে, যা গুগলের তুলনায় কিছুটা আলাদা।
- এটি গুগলের চেয়ে একটু বেশি ব্যবহারকারী-বান্ধব ফিচার প্রদান করে, বিশেষ করে ইয়াহু-এর সাথে এটি সংযুক্ত থাকে, যার ফলে বিভিন্ন জার্নাল বা ওয়েবসাইটের ফলাফল দেখানোর ক্ষেত্রে আরও ভিন ধরনের রেজাল্ট দেয়।
ইয়াহু (Yahoo)

যদিও বর্তমানে ইয়াহু সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে তেমন একটা ব্যবহৃত হয় না, তবে ইয়াহু এখনও কিছু কিছু অঞ্চলে জনপ্রিয়। ইয়াহু মূলত বিং এর সার্চ অ্যালগরিদম ব্যবহার করে, কিন্তু ইয়াহুর নিজস্ব ভিন্ন ইন্টারফেস ব্যবহারকারীকে অন্যান্য নিউজ এবং ইমেইল সার্ভিসগুলোর সুবিধা দিয়ে থাকে।
ইয়াহুর মৌলিক বৈশিষ্ট্য:
- ইয়াহু মূলত ইমেইল এবং নিউজের জন্য বেশি পরিচিত।
- এটি বেশিরভাগ সময় Bing এর সাইট রেজাল্টের মাধ্যমে সার্চ রেজাল্ট দেখায়।
ডাকডাকগো (DuckDuckGo)

DuckDuckGo এমন একটি সার্চ ইঞ্জিন, যা ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা রক্ষা করতে এবং ট্র্যাকিং বন্ধ করতে সবচেয়ে বেশি পরিচিত। DuckDuckGo গোপনীয়তা সংক্রান্ত ফিচারের কারণে অল্প সংখ্যক কিছু ব্যবহারকারীর মধ্যে তুমুল জনপ্রিয়।
ডাকডাকগো’র মৌলিক বৈশিষ্ট্য:
- ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা রক্ষা করে সার্চ করে, অর্থাৎ DuckDuckGo আপনার সার্চ হিস্ট্রি বা ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে না।
- এটি অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনের মতোই কাজ করে, তবে ফলাফলগুলোর মধ্যে গোপনীয়তা বজায় রেখে তথ্য প্রদান করে।
বাইডু (Baidu)

Baidu চীনের সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন। যদিও বাইডু বিশ্বব্যাপী ততটাও পরিচিত নয়, তবে চীনে এর ব্যবহার অনেক বেশি। চীনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের প্রায় ৭০% এরও বেশি বাইডু ব্যবহার করে থাকেন।
বাইডুর মৌলিক বৈশিষ্ট্য:
- বাইডু মূলত চীনের তথ্য, সংবাদ এবং ওয়েবসাইটগুলোতে ফোকাস করে।
- বাইডু চীনা ভাষায় সার্চ রেজাল্ট প্রাধান্য দেয় যেহেতু বাইডু চীন কেন্দ্রি একটি সার্চ ইঞ্জিন।
শেষ কথা
আশা করি জ্ঞানী বাব!‘র আজকের ব্লগ পোস্ট থেকে পাঠক সার্চ ইঞ্জিন কি , সার্চ ইঞ্জিন কাকে বলে, সার্চ ইঞ্জিন কত প্রকার ও কি কি সহ সার্চ ইঞ্জিন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনার একটুও কাজে লেগে থাকে , যদি এই আর্টিকেলটিকে তথ্যসমৃদ্ধ মনে হয় তাহলে অনুরোধ থাকবে প্রিয় জনদের সাথে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করুন। আর কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান মন্তব্য রেখে যেতে একদম ভুলবেন না।