ব্যাকটেরিয়া কী? ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কী?

সময় লাগবেঃ 9 min

একটা কথা আছে না? প্রকৃতির প্রতিটি উপাদান আমাদের পরিবেশে কিছু না কিছু অবদান রাখে, তেমনি অতিক্ষুদ্র এককোষী জীব ব্যাকটেরিয়াও আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সাধারণত “ব্যাকটেরিয়া” শব্দটি শুনলেই আমাদের মনে ভয় বা কোনো ভয়ানক রোগের আশঙ্কা জেগে উঠে। তবে বাস্তবতা হলো, এই জীবাণুগুলো শুধু রোগই সৃষ্টি করে না, বরং জেনে অবাক হবেন ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা ও আছে!

আধুনিক বিজ্ঞানের কল্যাণে আমরা এখন জানি, ব্যাকটেরিয়া শুধু মানুষের শরীর এ রোগই সৃষ্টি করেনা, মাটি, খাদ্য এবং পরিবেশে নানা ধরনের কাজেও সহায়তা করে এই ব্যাকটেরিয়া । আবার কিছু ব্যাকটেরিয়া মারাত্মক রোগের কারণও হতে পারে। তাই ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা- দুটো দিকই আমাদের সমানভাবে জেনে রাখা উচিত।

এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন, জ্ঞানী বাবা!’র আজকের এই লেখায় আমরা জানার চেষ্টা করব আসলে ব্যাকটেরিয়া কী, ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কী? ব্যাকটেরিয়া কত প্রকার ও কী কী?, ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কী আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলে? কিংবা ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কীভাবেই বা আমাদের উপকারে বা অপকারে এসে ক্ষতির কারণ হয়। তাহলে চলুন, আলোচনা শুরু করা যাক!!!

সূচীপত্র দেখুন

ব্যাকটেরিয়া কী?

ব্যাকটেরিয়া কী? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আমাদের একটু জীববিজ্ঞানের পাতা উলটে আসতে হবে। একদম সোজা বাংলায় বললে, ব্যাকটেরিয়া হলো এক ধরনের অতিক্ষুদ্র এককোষী জীব, যেগুলো চোখে দেখা যায় না কিন্তু চারপাশের পরিবেশে, এমনকি মানুষের শরীরেও বিপুল পরিমাণে বিদ্যমান। এরা প্রোক্যারিওটিক কোষবিশিষ্ট হয় থাকে, অর্থাৎ এদের কোষে সুসংগঠিত কোনো নিউক্লিয়াস থাকে না। জেনে অবাক হবেন ব্যাকটেরিয়া পৃথিবীর প্রাচীনতম জীবগুলোর একটি এবং বিভিন্ন পরিবেশে বেঁচে থাকার অবিশ্বাস্য রকুমের সক্ষমতা রাখে এরা।

প্রকৃতিতে ব্যাকটেরিয়ার বিভিন্ন প্রকারভেদ দেখা যায়, এদের মধ্যে কিছু কিছু উপকারী, আবার কিছু ক্ষতিকরও আছে। তারা মাটিতে, পানিতে, বাতাসে, খাবারে এবং এমনকি মানবদেহের ভেতরেও বসবাস করতে পারে। ব্যাকটেরিয়ার গঠন সাধারণত খুব সহজ: একটি কোষ, একটি কোষপ্রাচীর, সাইটোপ্লাজম, এবং কিছু সাধারণ জিনগত উপাদান নিয়ে গঠিত।

অতিক্ষুদ্র এই ব্যাকটেরিয়া কিন্তু নানান আকারে পাওয়া যেতে পারে, যেমন গোলাকার (কক্কাস), দণ্ডাকার (বেসিলাস), এবং সর্পিলাকার (স্পাইরিলাম)। কিছু ব্যাকটেরিয়া নিজের খাবার নিজে তৈরি করতে পারে (অটোট্রফিক), আবার কিছু অন্য জীবের উপরও নির্ভর করে (হেটারোট্রফিক)। এই অদ্ভুদ বৈচিত্র্যই ব্যাকটেরিয়াকে জীবজগতে স্বতন্ত্র স্থান করে দিয়েছে।

আরও পড়ুনঃ সেরা ১০ টি কিডনি ভালো রাখার উপায়

ব্যাকটেরিয়া কত প্রকার ও কি কি?

ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

ব্যাকটেরিয়া কত প্রকার ও কি কি? এই প্রশ্নের উত্তরটা জানা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আলাদা আলাদা ব্যাকটেরিয়ার কাজ ও প্রভাবও আলাদা হয়ে থাকে। ব্যাকটেরিয়াকে বিভিন্ন ভিত্তিতে বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়, যেমন গঠন, বাসস্থান, শ্বাস-প্রক্রিয়া এবং কার্যকারিতা অনুসারে আলাদা ধরণে ব্যাকটেরিয়া হতে পারে। নিচে ব্যাকটেরিয়ার প্রধান প্রকারভেদগুলো তুলে ধরা হলোঃ

১. আকারের ভিত্তিতে ব্যাকটেরিয়ার প্রকারভেদ:

  • কক্কাস (Coccus): এরা গোলাকার আকৃতির ব্যাকটেরিয়া। যেমন, Streptococcus
  • বেসিলাস (Bacillus): দণ্ডাকৃতি বা লম্বা আকারের ব্যাকটেরিয়া। যেমন, Bacillus anthracis
  • স্পাইরিলাম (Spirillum): সর্পিল বা পাকানো আকৃতির ব্যাকটেরিয়া। যেমন, Spirillum minus

২. অক্সিজেন নির্ভরতার ভিত্তিতে প্রকারভেদঃ

  • অ্যারোবিক ব্যাকটেরিয়া (Aerobic): এদের বেঁচে থাকতে অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। যেমন, Mycobacterium tuberculosis
  • অ্যানঅ্যারোবিক ব্যাকটেরিয়া (Anaerobic): এরা অক্সিজেন ছাড়াই বেঁচে থাকতে পারে। যেমন, Clostridium botulinum

৩. বাসস্থানের ভিত্তিতে প্রকারভেদঃ

  • মাটিতে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া: উদাহরণ, Rhizobium, যা নাইট্রোজেন ফিক্স করে।
  • মানবদেহে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া: যেমন, গাট ব্যাকটেরিয়া (Lactobacillus)।
  • চরম পরিবেশে টিকে থাকা ব্যাকটেরিয়া (Extremophiles): গরম ঝর্ণা, বরফ বা অতিমারী পরিবেশেও থাকে।

৪. কাজের ভিত্তিতে প্রকারভেদঃ

  • উপকারী ব্যাকটেরিয়া: হজমে সহায়তা, খাদ্য উৎপাদন, পরিবেশ পরিষ্কারক ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত হয়। যেমন – Lactobacillus
  • ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া: রোগ সৃষ্টি করে ও পরিবেশের ক্ষতি করে। যেমন – Salmonella, Vibrio cholerae

৫. কোষপ্রাচীরের গঠনের ভিত্তিতে প্রকারভেদঃ

  • গ্রাম-পজিটিভ ব্যাকটেরিয়া: এদের কোষপ্রাচীর মোটা হয় এবং রঙ ধরে রাখে। যেমন – Staphylococcus aureus
  • গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া: পাতলা কোষপ্রাচীরবিশিষ্ট, রঙ ঠিকমতো ধরে না। যেমন – Escherichia coli

আরও পড়ুনঃ সেরা ৯টি ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা

ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা

সাধারণভাবে ব্যাকটেরিয়াকে ক্ষতিকর জীবাণু হিসেবে ধরা হলেও, বাস্তবতা কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রকৃতপক্ষে, আমাদের পরিবেশ, দেহ এবং খাদ্য ব্যবস্থায় ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা অপরসীম। কিছু ব্যাকটেরিয়া আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য উপাদান হিসেবে কাজ করে, যেগুলোর অনুপস্থিতি হলে আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাও ব্যাহত হতে পারে। নিচে গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা তুলে ধরা হলোঃ

১. হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা

মানবদেহের অন্ত্রে থাকা গাট ব্যাকটেরিয়া (যেমন: Lactobacillus) হজমে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এরা খাদ্য ভেঙে সহজপাচ্য করে তোলে এবং ভিটামিন বি ও কে উৎপাদনে সাহায্য করে। এই ব্যাকটেরিয়া পাচনতন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়।

২. দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনে

দই, চিজ, বাটার মিল্কসহ বিভিন্ন দুগ্ধজাত খাদ্য প্রস্তুতে ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা অপরিসীম। যেমন: Lactobacillus bulgaricus এবং Streptococcus thermophilus ব্যাকটেরিয়া দুধকে দইয়ে রূপান্তর করে। এরা খাদ্যকে শুধু সুস্বাদুই করে না, বরং স্বাস্থ্যকরও করে তোলে।

৩. মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি

মাটির ভেতর থাকা Rhizobium প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া গাছের শিকড়ে গাঠ তৈরি করে এবং বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেন মাটিতে রূপান্তর করে। এতে গাছ প্রাকৃতিকভাবে নাইট্রোজেন পায় এবং রাসায়নিক সার ব্যবহার কমে যায়।

৪. ওষুধ ও অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদনে

ব্যাকটেরিয়া থেকে তৈরি হয় বহু গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ, বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক। যেমন: Streptomyces নামক ব্যাকটেরিয়া থেকে স্ট্রেপ্টোমাইসিন, Penicillium ছত্রাক থেকে পেনিসিলিন তৈরি হয়, যা বহু সংক্রমণ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়।

৫. শিল্পক্ষেত্রে প্রয়োগ

ব্যাকটেরিয়া বিভিন্ন শিল্পে যেমন, কাগজ প্রস্তুত, চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বায়োগ্যাস উৎপাদনে ব্যবহার হয়। Clostridium acetobutylicum নামক ব্যাকটেরিয়া শিল্পে বুটানল এবং অ্যাসিটোন উৎপাদনে সহায়তা করে।

আরও পড়ুনঃ দুধ খাওয়ার উপকারিতা কি কি? জেনে নিন বিস্তারিত

ব্যাকটেরিয়ার অপকারিতা

ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

যদিও ব্যাকটেরিয়া পরিবেশে এক অপরিহার্য অবদান রাখে, তবে কিছু ব্যাকটেরিয়া মানুষের শরীর, খাদ্য, পরিবেশ ও শিল্পক্ষেত্রে নানা ধরনের ক্ষতির কারণও হয়ে দাঁড়ায়। এই ক্ষতিকর দিকগুলোই প্রধানত ব্যাকটেরিয়ার অপকারিতা। নিচে ব্যাকটেরিয়ার অপকারিতা সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলোঃ

১. রোগ সৃষ্টি করে

সবচেয়ে পরিচিত ব্যাকটেরিয়ার অপকারিতা হলো মানুষের শরীরে বিভিন্ন সংক্রামক রোগ সৃষ্টি করা। যেমন:

  • Mycobacterium tuberculosis → যক্ষ্মা (টিবি)
  • Salmonella typhi → টাইফয়েড জ্বর
  • Vibrio cholerae → কলেরা
  • Clostridium tetani → ধনুষ্টংকার (টিটেনাস)

২. খাদ্য নষ্ট ও বিষক্রিয়া

কিছু ব্যাকটেরিয়া খাদ্যের ওপর আক্রমণ করে এবং তা পচিয়ে ফেলে। Clostridium botulinum নামক ব্যাকটেরিয়া টক্সিন তৈরি করে যা ফুড পয়জনিংয়ের অন্যতম কারণ। এর ফলে বমি, পেট ব্যথা, ডায়রিয়া, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

৩. শিল্পক্ষেত্রে ক্ষতি

চামড়া, কাগজ এবং টেক্সটাইল শিল্পে ব্যাকটেরিয়ার অপকারিতা বেশ ভালোভাবেই চোখে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, কাঠ ও চামড়াজাত দ্রব্যে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে পচন ধরে, যা আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়।

৪. উদ্ভিদ ও প্রাণির রোগ

ব্যাকটেরিয়া উদ্ভিদ দেহে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করতে পারে, যেমন Xanthomonas campestris → গাছের পাতা হলুদ করে ফেলে বা শুকিয়ে দেয়। একইভাবে পশুদের মধ্যেও সংক্রমণ ঘটিয়ে উৎপাদনশীলতা হ্রাস করে।

৫. পরিবেশ দূষণে ভূমিকা

কিছু ব্যাকটেরিয়া পানিতে দূষিত পদার্থ তৈরি করে যেমন, সালফার উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়া পানির গন্ধ ও স্বাদ নষ্ট করে দেয়। ময়লা জমানো স্থানে ব্যাকটেরিয়ার অতিরিক্ত বংশবৃদ্ধি হলে গ্যাস ও বিষাক্ত পদার্থ তৈরি হয়ে পরিবেশে দূষণ ঘটে। ব্যাকটেরিয়ার অপকারিতার মধ্যে এটি অন্যতম মারাত্বক দিক গুলোর একটি।

ব্যাকটেরিয়ার অপকারিতা প্রতিরোধে করণীয়

ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা যেমন আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা পাওয়াও কিন্তু অত্যন্ত জরুরি। স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে এবং রোগের বিস্তার রোধে আমাদের অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। তাই ব্যাকটেরিয়ার অপকারিতা প্রতিরোধে করণীয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক নিচে আলোচনা করা হলোঃ

১. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা

ব্যক্তিগত ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ পরিষ্কার রাখা ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায়। হাত ধোয়া, পোশাক ও বিছানার চাদর নিয়মিত পরিষ্কার করা, রান্নাঘর ও টয়লেট জীবাণুমুক্ত রাখা খুবই জরুরি।

২. নিরাপদ খাদ্যাভ্যাস

দুধ, মাংস, মাছ ও সবজি ভালোভাবে ধুয়ে এবং সঠিক তাপমাত্রায় রান্না করে খাওয়া উচিত। রাস্তার পাশের খোলা খাবার এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।

৩. বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার

পানির মাধ্যমে অনেক ধরনের ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করতে পারে। তাই ফুটানো বা ফিল্টার করা পানি পান করা উচিত। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে আরও বেশি সতর্কতা জরুরি।

৪. টিকা গ্রহণ

কিছু ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে বিশেষ টিকা রয়েছে, যেমন: টিটেনাস, টিবি (বিসিজি), টাইফয়েড ইত্যাদি। সময়মতো এই টিকাগুলো গ্রহণ করলে ভয়াবহ রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়।

৫. স্বাস্থ্য সচেতনতা ও জনশিক্ষা

ব্যক্তি মাত্রই ব্যাকটেরিয়া বিষয়ে সচেতন হলে ধীরে ধীরে সমাজব্যাপী ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ কমে যাবে। তাই স্কুল, পরিবার ও গণমাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ক প্রচারণা চালানো যেতে পারে।

আরও পড়ুনঃ রক্তের এলার্জি দূর করার উপায় জেনে নিন

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা

আপনি জেন হয়ত অবাক হবেন, আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতিতেও ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার এক বিশাল ভূমিকা পালন করে আসছে। গবেষকরা ব্যাকটেরিয়ার জিনগত গঠন, প্রজনন প্রক্রিয়া এবং কার্যকারিতা বিশ্লেষণ করে তা বিভিন্ন শিল্প, চিকিৎসা ও পরিবেশগত সমস্যার সমাধানে ব্যবহার করছেন। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহার তুলে ধরা হলোঃ

১. বায়োটেকনোলজিতে ব্যাকটেরিয়া

জিন প্রকৌশলে ব্যাকটেরিয়াকে একটি মৌলিক হাতিয়ার বলা যেতে পারে। Escherichia coli ব্যাকটেরিয়াকে জিন ক্লোনিং এবং ইনসুলিনসহ বিভিন্ন ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। এরা সহজে ল্যাবে বৃদ্ধি পায় এবং জেনেটিক কোড পরিবর্তন করা সম্ভব হয় বলে বিজ্ঞানীরা এগুলোকে গবেষণার প্রধান মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেন।

২. বর্জ্য শোধনে (Waste Treatment)

ব্যাকটেরিয়া পরিবেশ সংরক্ষণেও অনন্য ভূমিকা রাখে। মলমূত্র ও বর্জ্য পদার্থের শোধন কেন্দ্রে কিছু বিশেষ ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করে জৈব পদার্থকে ভেঙে পরিবেশবান্ধব করে তোলা হয়। PseudomonasBacillus subtilis এই কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

৩. জীবজ্বালানি উৎপাদনে

কিছু ব্যাকটেরিয়া জৈবপদার্থ ভেঙে মিথেন গ্যাস বা বায়োগ্যাস তৈরি করতে পারে, যা নবায়নযোগ্য জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গ্রামীণ অঞ্চলে এই প্রযুক্তি বেশ ভালো রকম জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

৪. কৃষিক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার

কৃষিতে ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার দিন দিন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। উদাহরণঃ

  • Rhizobium → নাইট্রোজেন ফিক্স করে গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
  • Bacillus thuringiensis (Bt) → প্রাকৃতিক কীটনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

এই ব্যাকটেরিয়া রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের বিকল্প হিসেবে কাজ করে, যা পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্যও অনেক নিরাপদ।

৫. চিকিৎসা ও ভ্যাকসিন উৎপাদনে

ব্যাকটেরিয়া থেকেই অনেক ভ্যাকসিন তৈরি হয়। যেমন: টাইফয়েড, কলেরা এবং টিটেনাস টিকার উপাদান মূলত ব্যাকটেরিয়া নির্ভর। এছাড়া ব্যাকটেরিয়া ভিত্তিক থেরাপি (Probiotic Therapy) চিকিৎসাক্ষেত্রে আমাদের মাঝে নতুন সম্ভাবনা হিসেবে দেখা দিচ্ছে।

উপসংহার

জ্ঞানী বাবা!’র আজকের আর্টিকেলে আমরা জানলাম, ব্যাকটেরিয়া কী?, ব্যাকটেরিয়া কত প্রকার ও কি কি?, ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কী?, আমাদের জীবনে ব্যাক্তেরিয়ার অবদানই বা কি? থেকে শুরু করে ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে যাবতীয় প্রায় সকল কিছু। আশা করি পাঠক বেশ ভালো করেই জানতে পেরেছেন ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।

সবশেষে, আশা করি জ্ঞানী বাবা!‘র আজকের আর্টিকেলটি আপনার ভাল লেগেছে। কিছুটা হলেও উপকার হয়েছে পাঠকের। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে অনুরোধ থাকবে এই ব্লগ পোস্টটি প্রিয় জনদের সাথে শেয়ার করুন। আর কমেন্ট সেকশনে নিজের মূল্যবান মন্তব্য রেখে যেতে ভুলবেন না কিন্তু! আজকের মতো এখানেই শেষ করছি, দেখা হচ্ছে পরবর্তী কোনো এক লেখায়!

এই আর্টিকেলটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন!

Leave a Comment