আজকাল আমরা সোশ্যাল মিডিয়া খুললে প্রায়ই দেখি , কেউ সকালে পানি ভিজিয়ে চিয়া সিড খাচ্ছেন, কেউ আবার ওজন কমানোর রুটিনে “চিয়া ড্রিংক” যোগ করছে্ন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আসলে এই চিয়া সিড কী? এটা কি সত্যিই কি এতটা উপকারী?, উপকারি হলে চিয়া সিড এর উপকারিতা কতটুকু?
চিয়া সিড (Chia Seeds) মূলত Salvia hispanica নামের এক ধরনের উদ্ভিদের বীজ, যার উৎপত্তি মুলত মেক্সিকো ও সেন্ট্রাল আমেরিকায়। অতীতে একসময় মায়া ও অ্যাজটেক জাতির মানুষ এটিকে “এনার্জি বীজ” বলে চিনত, কারণ ছোট্ট হলেও এই দানাগুলোর মধ্যে লুকিয়ে আছে প্রচুর পুষ্টি ও শক্তি।
বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বে এখন “চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা” নিয়ে আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। কেউ বলছে, এটি ওজন কমাতে জাদুর মতো কাজ করে, আবার কেউ বলছে অতিরিক্ত খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে। তাই চিয়া সিড খাওয়ার আগে এর ভালো-মন্দ দুটো দিকই জানা জরুরি আমাদের।
বুঝতেই পারছেন প্রিয় পাঠক, জ্ঞানী বাবা!’র আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানব, চিয়া সিড কী?, চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা, চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ, চিয়া সিড খাওয়ার সঠিক নিয়ম থকে শুরু আপনার প্রয়োজন হতে পারে এমন সকল তথ্য। তাহলে শুরু করা যাক???
সূচীপত্রঃ
চিয়া সিড ও এর পুষ্টিগুণ

আগেই বলা হয়েছে চিয়া সিড (Chia Seeds) মূলত Salvia hispanica নামের এক ধরনের উদ্ভিদের বীজ, যার উৎপত্তি মুলত মেক্সিকো ও সেন্ট্রাল আমেরিকায়। তাই এই অংশে আমরা চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ নিয়ে জানবো। চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা বুঝতে হলে আমাদের আগে জানতে হবে, এই ছোট্ট বীজের ভেতরে আসলে আছেটা কী? আকারে ক্ষুদ্র হলেও, চিয়া সিড রীতিমত পুষ্টির ভান্ডার। অনেকেই বলে “সুপারফুড”, কারণ খুব অল্প পরিমাণ চিয়া সিডই শরীরে প্রচুর উপকারী উপাদান সরবরাহ করতে সক্ষম।
মাত্র ২৮ গ্রাম (২ টেবিল চামচ) চিয়া সিডে নিচের পুষ্টিগুণগুলো পাওয়া যায়ঃ
| পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ | উপকারিতা |
|---|---|---|
| ক্যালরি | প্রায় ১৩৭ ক্যালরি | শরীরের শক্তি যোগায় |
| ফাইবার | ১১ গ্রাম | হজমে সহায়তা করে ও পেট ভরা রাখে |
| প্রোটিন | ৪ গ্রাম | পেশী গঠন ও ক্ষয়পূরণে সাহায্য করে |
| ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড | ৫ গ্রাম | হার্ট ও মস্তিষ্কের জন্য ভালো |
| ক্যালসিয়াম | দৈনিক চাহিদার ১৮% | হাড় ও দাঁতের জন্য উপকারী |
| ম্যাগনেশিয়াম | দৈনিক চাহিদার ৩০% | রক্তচাপ ও স্নায়ুতন্ত্র নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে |
| আয়রন | দৈনিক চাহিদার ১২% | রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে |
| জিঙ্ক | সামান্য পরিমাণ | ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে |
| অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট | প্রচুর | কোষের ক্ষতি রোধ করে ও ত্বক সুরক্ষা দেয় |
চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা বিশ্লেষণ করতে গেলে দেখা যায়, এর পুষ্টিগুণই মূলত এটাকে এত জনপ্রিয় করে তুলেছে। চিয়া সিড নিয়মিত পরিমাণ মতো খেলে এটি শরীরের শক্তি, হজম, ত্বক, চুলসহ প্রায় সবকিছুতেই ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
আরও পড়ুনঃ ড্রাগন ফল খাওয়ার নিয়ম কী? ড্রাগন ফল খাওয়ার পদ্ধতি
চিয়া সিড এর উপকারিতা

চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই আসে এর অসাধারণ স্বাস্থ্য উপকারিতা। নিচে এর প্রধান কিছু উপকারিতা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলোঃ
১. ওজন কমাতে সাহায্য করে
চিয়া সিডে আছে প্রচুর ফাইবার ও প্রোটিন, যা খুব দ্রুত পেট ভরিয়ে দেয় এবং ক্ষুধা কমায়। ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। পানিতে ভিজিয়ে খেলে চিয়া সিডঅনেকটা জেলির মতো হয়ে যায়, যা পাকস্থলীতে ফুলে জায়গা বেশ জায়গা নিয়ে নেয় এবং দীর্ঘক্ষণ পেত ভরা রাখে।
২. হজমে সহায়তা করে
উচ্চ ফাইবারসমৃদ্ধ হওয়ায় চিয়া সিড হজম প্রক্রিয়া বেশ সহজ করে। এটি অন্ত্রের বর্জ্য চলাচলকে সক্রিয় রাখে, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমে। নিয়মিত পরিমাণ মতো খেলে পেটের গ্যাস ও অ্যাসিডিটির সমস্যাও অনেকটা হ্রাস পেতে পারে।
৩. হার্টের স্বাস্থ্যে উপকারী
চিয়া সিডে আছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়ায়। এতে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।
৪. রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে
চিয়া সিড ধীরে ধীরে হজম হয়, যার ফলে খাবারের পর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যায় না। এতে থাকা ফাইবার রক্তে শর্করার ভারসাম্য রক্ষা করে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে বেশ উপকারী হতে পারে।
৫. ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী
চিয়া সিডে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ওমেগা-৩ ও জিঙ্ক ত্বককে ভেতর থেকে পুষ্টি দেয়, ফ্রি র্যাডিকেল দূর করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল রাখে। একই সঙ্গে এটি চুলের গোড়া শক্ত করে, চুল পড়া কমায় এবং স্কাল্পের রক্ত চলাচলও উন্নত করে।
৬. শক্তি ও স্ট্যামিনা বাড়ায়
শোনা যায়, মায়া ও অ্যাজটেক যোদ্ধারা নাকি যুদ্ধের আগে চিয়া সিড খেত শক্তি বাড়ানোর জন্য! এমনকি তা কাজও করত। কারণ এতে আছে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাটের সুষম মিশ্রণ। যারা নিয়মিত ব্যায়াম বা দৌড়ঝাঁপ করেন, তাদের জন্য চিয়া সিড হতে পারে দারুণ একটি প্রাকৃতিক এনার্জি সোর্স।
৭. মস্তিষ্কের জন্য উপকারী
চিয়া সিডে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়, স্মৃতিশক্তি উন্নত করে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত পরিমাণ মতো খেলে মনোযোগ ও ফোকাস বাড়তে দেখা যায়।
সব মিলিয়ে, চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা বিচার করলে দেখা যায়, সঠিক পরিমাণে খাওয়া হলে এর উপকারিতাই বেশি। চিয়া সিড ওজন কমানো থেকে শুরু করে হার্ট, ত্বক, চুল ও মস্তিষ্ক, সব কিছুতেই ইতিবাচক প্রভাবই ফেলে।
আরও পড়ুনঃ আপনার প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত?
চিয়া সিড এর অপকারিতা

কোনো খাবারের যেমন উপকারিতা থাকে, তেমনি কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও থাকতে পারে। চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে কথা বলতে গেলে, এর ক্ষতিকর দিকগুলো জানাও কিন্তু সমান জরুরি। কারণ ভুলভাবে বা অতিরিক্ত খেলে এই “সুপারফুড”–ই আবার শরীরের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। নিচে চিয়া সিডের সম্ভাব্য অপকারিতাগুলো (মূলত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া) তুলে ধরা হলোঃ
১. পেট ফাঁপা ও গ্যাসের সমস্যা
চিয়া সিডে প্রচুর ফাইবার থাকে। পরিমাণের অতিরিক্ত ফাইবার খেলে হজমে সমস্যা, পেট ফাঁপা, গ্যাস, এমনকি পেট ব্যথাও হতে পারে। বিশেষ করে যারা আগে থেকেই হজমের সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য অতিরিক্ত চিয়া সিড খাওয়া একদইম ঠিক নয়।
২. অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া হতে পারে
অনেকের শরীরে চিয়া সিড খাওয়ার পর অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন দেখা দিতে পারে। যেমন চুলকানি, ত্বকে ফুসকুড়ি, বমি ভাব, এমনকি শ্বাসকষ্টও হতে পারে। কারো শরীর প্রথমবার চিয়া সিডে অ্যালার্জি দেখালে, সঙ্গে সঙ্গে খাওয়া বন্ধ করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৩. রক্ত পাতলা করার প্রভাব
চিয়া সিডে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রক্তকে হালকা পাতলা করে দেয়। ফলে যাদের রক্ত পাতলা করার ওষুধ (blood thinner) চলমান, তাদের জন্য চিয়া সিড বিপজ্জনক হতে পারে। এতে রক্তক্ষরণ বা ক্ষত শুকাতে বেশ দেড়িও হতে পারে।
৪. ডায়াবেটিক ও প্রেসার রোগীদের সতর্কতা
চিয়া সিড রক্তে সুগার ও প্রেসার কমানোর ক্ষমতা রাখে। কিন্তু যারা ইতিমধ্যে এসব সমস্যার ওষুধ খাচ্ছেন, তাদের ক্ষেত্রে এই প্রভাব ওষুধের সঙ্গে মিলে রক্তচাপ বা গ্লুকোজের মাত্রা খুব নিচে নামিয়ে ফেলতে পারে। তাই নিয়মিত খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াই ভালো।
৫. কাঁচা বা ভুলভাবে খেলে শ্বাসরোধের ঝুঁকি
চিয়া সিড পানির সংস্পর্শে এসে দ্রুত ফুলে যায়। যদি শুকনা অবস্থায় খাওয়া হয়, তাহলে গলায় আটকে গিয়ে চোকিং (choking hazard) হতে পারে। তাই সবসময় পানি বা দুধে ভিজিয়ে খাওয়াই নিরাপদ।
৬. অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ
চিয়া সিড ক্যালরিতে খুব বেশি না হলেও, অতিরিক্ত খেলে ওজন কমার বদলে বাড়তেও পারে। কিছু ক্ষেত্রে এটি হরমোনের ভারসাম্যেও প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই আছে, কিন্তু অপকারিতা সাধারণত দেখা যায় তখনই যখন কেউ নিয়ম না মেনে বা অতি পরিমাণে খায়। তাই প্রতিদিন ১ থেকে ২ টেবিল চামচের বেশি না খাওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ।
আরও পড়ুনঃ ড্রাগন ফলের ক্ষতিকর দিক কি কি? জেনে নিন
চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম

চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা পুরোপুরি নির্ভর করে আপনি কিভাবে এবং কতটুকু পরিমাণে এটি খাচ্ছেন তার ওপর। অনেকে না জেনে শুকনো চিয়া সিড খেয়ে ফেলেন, যা একদমই ঠিক না! কারণ চিয়া সিড পানির সংস্পর্শে এসে ফুলে জেলির মতো হয়ে যায়, আর শুকনো অবস্থায় খেলে সেটা গলায় আটকে বিপদও ঘটাতে পারে। তাই সঠিকভাবে খাওয়ার নিয়ম জানা খুবই জরুরি।
১. দৈনিক কতটুকু খাওয়া উচিত
চিয়া সিডের আদর্শ পরিমাণ হলো দিনে ১ থেকে ২ টেবিল চামচ (প্রায় ২৫–৩০ গ্রাম)। এই পরিমাণে খেলে আপনি পর্যাপ্ত ফাইবার, ওমেগা-৩ এবং প্রোটিন পাবেন কিন্তু কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকিও থাকবে না।
২. পানিতে ভিজিয়ে খাওয়া
চিয়া সিড সবসময় পানি বা দুধে ভিজিয়ে খাওয়া উচিত। এজন্য ১ টেবিল চামচ চিয়া সিড এক গ্লাস পানিতে দিয়ে ২০–৩০ মিনিট রেখে দিন। এটা ফুলে জেলির মতো হয়ে গেলে পান করবেন। চাইলে লেবুর রস বা মধুও যোগ করতে পারেন স্বাদ বাড়ানোর জন্য।
৩. কখন খাওয়া ভালো?
চিয়া সিড খাওয়ার নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই, তবে সবচেয়ে কার্যকর হলো সকালে খালি পেটে বা ব্রেকফাস্টের সঙ্গে খাওয়া। এতে দিনভর দেহে শক্তি থাকবে ও হজমেও সহায়তা করবে। রাতে ঘুমানোর আগে খেলে ওজন কমানো ও হজমে সাহায্য করে, তবে বেশি দেরি করে খাওয়া আবার অনুচিত ।
৪. খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায়
চিয়া সিড খাওয়ার আরও অনেক মজার মজার উপায় হতে পারে যেমনঃ
- স্মুদিতে মিশিয়ে
- দই বা ওটসে ছিটিয়ে
- ফলের সালাদে যোগ করে
- চিয়া পুডিং বানিয়ে
- লেবুর পানিতে মিশিয়ে চিয়া ড্রিংক হিসেবে
অর্থাৎ, চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা অনেকাংশেই নির্ভর করে খাওয়ার নিয়মের ওপর। সঠিক পরিমাণে ও সঠিকভাবে খেলে এটি শরীরের জন্য দারুণ উপকারী, কিন্তু ভুলভাবে খেলে হজম সমস্যা থেকে শুরু করে বেশ গুরুতর বিপদও ঘটতে পারে।
চিয়া সিড ওজন কমাতে কিভাবে সাহায্য করে?
অতিরিক্ত ওজন আজকাল অনেকেরই মাথা ব্যাথার কারণ, কেউ জিম করছে, কেউ ডায়েট করছে, আবার কেউ “চিয়া সিড ড্রিংক” খেয়ে ওজন কমানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, চিয়া সিড কি সত্যিই ওজন কমাতে সাহায্য করে? নাকি সব ট্রেন্ড আর ধাপ্পাবাজি? এক বাক্যে বললে- হ্যাঁ, করে! তবে তা নির্ভর করে আপনি কতটা নিয়ম মেনে খাচ্ছেন তার ওপর। চলুন দেখে নেয়া যাক, চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা বিবেচনায় রেখে এটি কীভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করে?
১. ফাইবার ক্ষুধা কমায়
চিয়া সিডে আছে প্রচুর ডায়েটারি ফাইবার (প্রতি ২৮ গ্রামে প্রায় ১১ গ্রাম)। এই ফাইবার পানির সংস্পর্শে এসে জেলির মতো ফুলে যায় এবং পাকস্থলীতে জায়গা নেয়। ফলে আপনি অনেকক্ষণ পর্যন্ত পেট ভরা অনুভব করবেন, খাবার কম খাবেন ফলে ক্যালরি গ্রহণও কমে যায়, যা ওজন কমাতে সরাসরি সাহায্য করে।
২. প্রোটিন মেটাবলিজম বাড়ায়
প্রোটিন শুধু পেশী গঠনের জন্যই নয়, ওজন কমানোর জন্যও খুব জরুরি। চিয়া সিডে থাকা উচ্চ মানের উদ্ভিজ্জ প্রোটিন শরীরে মেটাবলিজম বাড়িয়ে দেয়, ফলে শরীর দ্রুত ক্যালরি বার্ন করে। প্রোটিন ক্ষুধা দমন করতেও সাহায্য করে, তাই অপ্রয়োজনীয় স্ন্যাকস খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়।
৩. রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রনে রাখে
যখন রক্তে শর্করা হঠাৎ বেড়ে যায়, তখন শরীরে ইনসুলিন নিঃসৃত হয় এবং ফ্যাট জমা শুরু করে। চিয়া সিড এই শর্করার ওঠানামা নিয়ন্ত্রণ করে, ফলে ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় থাকে এবং ফ্যাট স্টোরেজ কমে যায়। এভাবে এটি ফ্যাট বার্ন প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে।
৪. চিয়া সিড ডিটক্স ড্রিংক
অনেকেই সকালে এক গ্লাস পানিতে ১ টেবিল চামচ চিয়া সিড ভিজিয়ে খেতে পছন্দ করেন। এটা শুধু পেটই ভরিয়ে রাখে না, বরং শরীরের টক্সিন দূর করে, হজম ভালো করে এবং ওজন কমাতেও সহায়তা করে। চাইলে এতে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে “চিয়া ডিটক্স ড্রিংক” বানিয়েও পান করা যায়।
সব মিলিয়ে বলা যায় , চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা বুঝে সঠিকভাবে খেলে এটি ওজন কমানোর দুর্দান্ত একটি সহায়ক খাদ্য হতে পারে। তবে এটাকে “ম্যাজিক ফুড” না ভেবে, একটি ভারসাম্যপূর্ণ ডায়েটের অংশ হিসেবেই খাওয়াই সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি।
আরও পড়ুনঃ সেরা ৯টি ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা
যারা চিয়া সিড খাবেন না

যদি আমরা চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত জানতে চাই, তবে এও জানতে হবে, সব মানুষের জন্য কিন্তু চিয়া সিড উপযুক্ত নয়। কিছু ক্ষেত্রে চিয়া সিড খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণও হতে পারে। নিচে সেগুলো উল্লেখ করলামঃ
১. শিশু ও ছোট বাচ্চা
শিশুরা যদি শুকনো চিয়া সিড খায়, তাহলে তা গলায় আটকে শ্বাসরোধের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাই শিশুদের জন্য চিয়া সিড ভিজিয়ে বা পেস্ট আকারে দেওয়া নিরাপদ।
২. গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারী
গর্ভাবস্থায় বা স্তন্যদানকালে অতিরিক্ত ফাইবার গ্রহণ হজমে সমস্যা কিংবা পেটে অতিরিক্ত গ্যাস তৈরি করতে পারে। তাই খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৩. বিশেষ ওষুধ গ্রহণকারীরা
চিয়া সিডে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রক্ত পাতলা করার সক্ষমতা রাখে। যাদের blood thinner চলমান, তারা নিয়মিত চিয়া সিড খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।
৪. হজম সমস্যা আছে যাদের
যারা কোষ্ঠকাঠিন্য, IBS বা অন্যান্য হজমের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য চিয়া সিড অতিরিক্ত খাওয়া সমস্যা বাড়াতে পারে।
৫. অ্যালার্জির ঝুঁকি আছে যাদের
যদি আগে থেকে কোনো বাদামজাত খাবারে অ্যালার্জি দেখা দেয়, তাহলে চিয়া সিড খাওয়ার আগে সতর্ক হওয়া উচি, প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নেয়া উচিত।
উপসংহার
চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই আছে, তবে সঠিকভাবে খেলে এর উপকারিতাই বেশি।চ এই ছোট্ট বীজ চিয়া সিডে আছে প্রচুর ফাইবার, প্রোটিন, ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, হজমে সহায়তা করে, ত্বক ও চুলেরো প্রাণ ফিরিয়ে আনতে পারে , এক কথায় একটি পূর্ণাঙ্গ সুপারফুড।
তবে ভুলভাবে বা অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে পারে, যেমন পেট ফাঁপা, গ্যাস, অ্যালার্জি, রক্ত পাতলা হওয়া বা হজমের সমস্যা। এজন্য প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণে (১–২ টেবিল চামচ) এবং ভিজিয়ে খাওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর উপায়।
আরও পড়ুনঃ কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা জেনে নিন
জ্ঞানী বাবা!’র আজকের আর্টিকেলে আমরা জানলাম, চিয়া সিড কী?, চিয়া সিডের পুষ্টগুণ, চিয়া সিড এর উপকারিতা,চিয়া সিড এর অপকারিতা, চিয়া সিড খাওয়ার সঠিক নিয়ম, চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা থেকে শুরু করে চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কিত যাবতীয় প্রায় সকল কিছু। আশা করি প্রিয় পাঠক চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা যথাযথ তথ্যই পেয়েছেন আজকের এই লেখা থেকে!
সবশেষে, আশা করি জ্ঞানী বাবা!‘র আজকের আর্টিকেলটি আপনার ভাল লেগেছে। কিছুটা হলেও উপকার হয়েছে পাঠকের। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে অনুরোধ থাকবে এই ব্লগ পোস্টটি প্রিয় জনদের সাথে শেয়ার করুন। আর কমেন্ট সেকশনে নিজের মূল্যবান মন্তব্য রেখে যেতে ভুলবেন না কিন্তু! আজকের মতো এখানেই শেষ করছি, দেখা হচ্ছে পরবর্তী কোনো এক লেখায়!