অনলাইন জন্ম নিবন্ধন যাচাই করবেন যেভাবে

সময় লাগবেঃ 7 min

বর্তমান এই ডিজিটাল যুগে নাগরিক সেবাগুলো ক্রমেই সহজ ও হাতের নাগালে চলে এসেছে। এর একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হলো অনলাইন জন্ম নিবন্ধন যাচাই প্রক্রিয়া। জন্ম নিবন্ধন শুধু একটি শিশু জন্মের নথিই নয়, এটি একটি নাগরিকের সরকারি পরিচয়ের প্রথম ধাপ। শিক্ষা, চিকিৎসা, পাসপোর্ট, ভোটার আইডি সহ প্রায় সব ধরনের সরকারি ও বেসরকারি সেবার ক্ষেত্রে আমাদের জন্ম সনদের প্রয়োজন পড়ে।

তবে অনেক সময় দেখা যায়, জন্ম সনদে ভুল তথ্য থাকে কিংবা যাচাই করার দরকার হয় কোনো তথ্য সত্যতা নিশ্চিত করার জন্য। আগে এসব যাচাই করতে হলে স্থানীয় পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদে যেতে হতো, যা সময়সাপেক্ষ ও ঝামেলাপূর্ণ ছিল। এখন আপনি চাইলে ঘরে বসেই নিজের বা সন্তানদের জন্ম নিবন্ধন অনলাইন যাচাই করে নিতে পারেন কয়েকটি সহজ ধাপেই।

বুঝতেই পারছেন জ্ঞানী বাবা!’র আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানবো কীভাবে আপনি নিজেই খুব সহজেই অনলাইন জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে পারবেন। তাহলে চলুন, শুরু করা যাক!

সূচীপত্র দেখুন

সূচীপত্রঃ

অনলাইন জন্ম নিবন্ধন যাচাই আসলে কী?

অনলাইন জন্ম নিবন্ধন যাচাই হলো এমন একটি ডিজিটাল প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে বাংলাদেশের নাগরিকরা তাদের জন্ম সনদের তথ্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে যাচাই করতে পারেন। এই প্রক্রিয়ায় ব্যবহারকারী একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে গিয়ে জন্ম নিবন্ধনের নম্বর ও জন্ম তারিখ প্রদান করে যাচাই করতে পারেন যে তার সনদটি সরকারিভাবে রেকর্ডকৃত কিংবা সঠিক কি না।

আরও পড়ুনঃ জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করবেন যেভাবে

আগে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে গেলে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনে যেতে হতো। এখন সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে এই কাজটি সহজেই অনলাইনে করা যাচ্ছে। এর ফলে আপনি ঘরে বসেই আপনার অথবা আপনার সন্তানের জন্ম নিবন্ধনের সত্যতা যাচাই করতে পারবেন সহজ কয়েকটি ধাপে।

অনলাইন জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার ধাপসমূহ

অনলাইন জন্ম নিবন্ধন যাচাই

অনলাইন জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে মাত্র কয়েকটি সহজ ধাপ অনুসরণ করলেই হবে। নিচে বিস্তারিতভাবে প্রতিটি ধাপ ব্যাখ্যা করা হলোঃ

ধাপ ১: সরকারি ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন

প্রথমেই আপনাকে বাংলাদেশ সরকারের নির্ধারিত জন্ম নিবন্ধন যাচাইয়ের ওয়েবসাইটে যেতে হবে। এই ওয়েবসাইটের ঠিকানা হলোঃ
🔗 https://everify.bdris.gov.bd

এই লিংকে ক্লিক করলে আপনি সরাসরি অনলাইন জন্ম নিবন্ধন যাচাই এর পেজে চলে যাবেন। এটি একটি নিরাপদ ও সরকারি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে তথ্য গোপনীয়তা সুরক্ষিত থাকে।

ধাপ ২: জন্ম নিবন্ধন নম্বর (১৭ ডিজিট) লিখুন

ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর একটি ঘর আসবে যেখানে আপনাকে ১৭ সংখ্যার জন্ম নিবন্ধন নম্বরটি লিখতে হবে। এই নম্বরটি আপনার জন্ম সনদে সাধারণত ইংরেজিতে লেখা থাকে এবং এটি ইউনিক নম্বর। যদি আপনার হাতে সনদ না থাকে, তবে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা থেকে নম্বর সংগ্রহ করতে পারেন।

ধাপ ৩: জন্ম তারিখ নির্বাচন করুন

এরপর জন্ম তারিখ নির্বাচন করতে হবে। ওয়েবসাইটে একটি ক্যালেন্ডার অপশন থাকবে, সেখান থেকে আপনি সঠিক তারিখটি বেছে নিতে পারবেন। জন্ম তারিখ অবশ্যই সেই অনুযায়ী দিতে হবে যেটি আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদে লেখা রয়েছে।

ধাপ ৪: “যাচাই করুন” বাটনে ক্লিক করুন

উপরের তথ্যগুলো ঠিকঠাক দেওয়ার পর নিচে থাকা “যাচাই করুন” বা “Verify” বাটনে ক্লিক করুন। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আপনি আপনার জন্ম নিবন্ধন সংক্রান্ত তথ্য দেখতে পাবেন, যেমনঃ

  • নাম
  • পিতার নাম
  • মাতার নাম
  • জন্ম তারিখ
  • জন্মস্থান
  • নিবন্ধন অবস্থান

এইভাবে আপনি সহজেই নিশ্চিত হতে পারবেন যে আপনার অনলাইন জন্ম নিবন্ধন যাচাই সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে কি না।

আরও পড়ুনঃ সার্চ ইঞ্জিন কি? সার্চ ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে?

যদি তথ্য না মেলে বা ভুল আসে?

অনেক সময় অনলাইন জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার সময় দেখা যায়, সঠিক নম্বর ও জন্মতারিখ দেওয়ার পরও কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না, বা প্রদর্শিত তথ্যগুলোর মধ্যে ভুল রয়েছে। ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। এই সমস্যাগুলো খবই সাধারণ এবং সহজেই সমাধানযোগ্য।

সাধারণত যে কারণে তথ্য না মিলতে পারেঃ

  • ভুল জন্ম নিবন্ধন নম্বর (১টি সংখ্যাও ভুল হলে তথ্য মিলবে না)
  • ভুল জন্মতারিখ নির্বাচন
  • এখনও তথ্য ডাটাবেজে আপলোড না হওয়া (নতুন নিবন্ধন হলে সময় লাগতে পারে)
  • সার্ভার বা ওয়েবসাইট ত্রুটি থাকলে

ভুলল তথ্য পাওয়া গেলে কি করবেন?

যদি আপনি অনলাইন জন্ম নিবন্ধন যাচাই করে দেখেন যে নাম, পিতার নাম, মাতার নাম বা জন্মতারিখের মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভুল এসেছে, তাহলে নিচের পদক্ষেপগুলো নিতে পারেন:

  1. স্থানীয় জন্ম নিবন্ধন অফিসে যোগাযোগ করুনঃ আপনার ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন অফিসে গিয়ে ভুল সংশোধনের আবেদন করতে হবে।
  2. জন্ম নিবন্ধন সংশোধনের জন্য অনলাইনে আবেদন করুনঃ বাংলাদেশ সরকারের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সিস্টেমের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়েও আপনি সংশোধনের আবেদন করতে পারেন।
    🔗 ওয়েবসাইট: https://bdris.gov.bd
  3. প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সঙ্গে রাখুনঃ সংশোধনের সময় মূল জন্ম সনদ, পিতামাতার আইডি কার্ড ও অন্যান্য প্রমাণপত্র সঙ্গে রাখা ভালো।

তথ্য না পাওয়া গেলে করণীয়:

  • আপনার নিবন্ধনটি হয়তো এখনো অনলাইনে যুক্ত হয়নি
  • সংশ্লিষ্ট অফিসে গিয়ে নিশ্চিত হন, ওয়েবসাইটে তথ্য সংযোজন করা হয়েছে কি না
  • প্রয়োজনে নতুন করে আবেদন করতে হতে পারে

এভাবে এই ধাপগুলো অনুসরণ করলেই আপনি সহজে ভুল তথ্য ঠিক করতে পারবেন এবং নিশ্চিত হতে পারবেন যে আপনার অনলাইন জন্ম নিবন্ধন যাচাই সঠিক ও আপডেটেড।

আরও পড়ুনঃ রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ কেন শুরু হয়েছিলো?

মোবাইল দিয়ে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করা যাবে কি?

বর্তমানে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশিরভাগ নাগরিক চান যেন মোবাইল থেকেই গুরুত্বপূর্ণ সেবা গ্রহণ করা যায়। আপনি চাইলে খুব সহজেই মোবাইল ফোন ব্যবহার করেও অনলাইন জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে পারেন, ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ ছাড়াও।

কিভাবে যাচাই করবেন?

মোবাইল দিয়ে যাচাই করার জন্য কোনো আলাদা অ্যাপের প্রয়োজন নেই। শুধু একটি ইন্টারনেট সংযোগযুক্ত স্মার্টফোন এবং ব্রাউজার থাকলেই চলবে। নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুনঃ

  1. মোবাইল ব্রাউজার (যেমন: Chrome, Firefox) ওপেন করুন
  2. নিচের লিংকে প্রবেশ করুনঃ
    🔗 https://everify.bdris.gov.bd
  3. সেখানে গিয়ে আপনার ১৭ সংখ্যার জন্ম নিবন্ধন নম্বর এবং জন্মতারিখ দিন
  4. তারপর “যাচাই করুন” বাটনে চাপ দিন

মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই আপনি মোবাইল থেকেই অনলাইন জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে পারবেন।

যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন

  • ওয়েবসাইটটি মোবাইল ফ্রেন্ডলি হলেও, ভালোভাবে দেখতে চাইলে ফোনটি ল্যান্ডস্কেপ মোডে নিন
  • ধীরগতির ইন্টারনেটে লোড হতে সময় লাগতে পারে
  • ক্যাশ বা কুকি সমস্যা হলে ব্রাউজার ক্লিয়ার করে পুনরায় চেষ্টা করুন

অনলাইন যাচাইয়ের সাধারণ সমস্যাগুলো

অনেকেই প্রথমবার অনলাইন জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার সময় কিছু সাধারণ সমস্যার মুখোমুখি হন। এই অংশে আমরা সেই সমস্যাগুলো ও তাদের সম্ভাব্য সমাধানগুলো সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করেছি, যেন আপনি ঝামেলা ছাড়াই আপনার তথ্য যাচাই করতে পারেন।

সমস্যা ১: ওয়েবসাইট লোড না হওয়া

সম্ভাব্য কারণ:

  • ইন্টারনেট সংযোগ দুর্বল
  • সরকারি সার্ভার ডাউন

সমাধান:

  • ইন্টারনেট কানেকশন চেক করুন
  • একটু পরে চেষ্টা করুন
  • ভিন্ন ব্রাউজার ব্যবহার করে দেখুন (যেমন: Chrome, Firefox)

সমস্যা ২: “তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি” মেসেজ আসা

সম্ভাব্য কারণ:

  • ভুল জন্ম নিবন্ধন নম্বর বা জন্মতারিখ
  • ডাটাবেজে তথ্য আপলোড হয়নি এখনো

সমাধান:

  • আবার নম্বর ও তারিখ যাচাই করে সঠিকভাবে দিন
  • যদি নতুন নিবন্ধন হয়ে থাকে, কয়েকদিন পর আবার চেষ্টা করুন
  • সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন/পৌরসভা অফিসে যোগাযোগ করুন

সমস্যা ৩: ভুল তথ্য প্রদর্শন হওয়া

সম্ভাব্য কারণ:

  • রেকর্ডে টাইপিং মিসটেক
  • ডেটা এন্ট্রির সময় ভুল হয়েছে

সমাধান:

  • সংশোধনের জন্য জন্ম নিবন্ধন অফিসে আবেদন করুন
  • অনলাইনে https://bdris.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে সংশোধন ফর্ম পূরণ করুন

আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর রেংক সমূহ জেনে নিন

সমস্যা ৪: মোবাইলে ফরম্যাট ঠিকভাবে না দেখা

সম্ভাব্য কারণ:

  • ওয়েবসাইট পুরোপুরি মোবাইল রেসপনসিভ নয়

সমাধান:

  • মোবাইলটি ল্যান্ডস্কেপ মোডে ব্যবহার করুন
  • প্রয়োজনে ডেস্কটপ মোড অন করুন মোবাইল ব্রাউজারে

এই সাধারণ সমস্যাগুলোর সমাধান জানা থাকলে আপনি আরও দ্রুত ও নিশ্চিতভাবে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে পারবেন এবং যেকোনো বিভ্রান্তি এড়াতে পারবেন।

অনলাইন জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার নিয়ম (টিউটোরিয়াল)

এতক্ষণের আলোচনা শেষেও যাদের অনলাইন জন্ম নিবন্ধন যাচাই করা ব্যাপারটি কঠিন মনে হচ্ছে, তাদের জন্যে নিচে একটি ভিডিও টিউটোরিয়াল তুলে ধরা হলো। টিউটোরিয়াল অনুসরণ করে আপনি সহজেই আপনার অনলাইন জন্ম নিবন্ধন যাচাই করে নিতে পারবেন।

উপসংহার

আজকের দিনে যেখানে সবকিছুই দ্রুতগতিতে ডিজিটাল হচ্ছে, সেখানে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন যাচাই আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় সেবা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জন্ম নিবন্ধনের সঠিকতা নিশ্চিত করা শুধু সরকারি নথি ব্যবস্থার জন্য নয়, ব্যক্তিগত কাজেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র (NID), শিক্ষা ও চাকরির মতো ক্ষেত্রগুলোতে তো জন্ম নিবন্ধন আবশ্যক একটি নথি।

পরিশেষে এতটুকুই বলব, আশা করি জ্ঞানী বাবা!‘র অনলাইন জন্ম নিবন্ধন যাচাই সংক্রান্ত আজকের এই লেখাটি আপনার ভালো লেগেছে। যদি তাই হয়ে থাকে, আজকের এই লেখাটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে , একটু হলেও উপকারে এসে থাকে তবে অনুরোধ করব, সামাজিক মাধ্যমে এই ব্লগটি শেয়ার করুন। আর কমেন্ট সেকশনে আপনার মূল্যবান মতামত রেখে যেতে একদম ভুলবেন না কিন্তু!!!

এই আর্টিকেলটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন!

Leave a Comment