২২ ক্যারেট সোনার দাম কত বাংলাদেশে? (2025)

সময় লাগবেঃ 8 min

আমাদের বাংলাদেশে সোনা কেবলএকটা ধাতুই নয়, এটা আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য আর আবেগেরও অংশ বটে। বিয়ের গহনা থেকে শুরু করে উৎসবের উপহার, এমনকি বিনিয়োগ হিসেবেও সোনা যুগ যুগ ধরে বাঙালির জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে। বিশেষ করে বর্তমানে ২২ ক্যারেট সোনার দাম কত?, এই বিষয়টি নিয়ে মানুষের আগ্রহ সবসময়ই তুঙ্গে রয়েছে।

কারণ একটাই, প্রতিদিনই বাজারে সোনার দাম একটু না একটু পরিবর্তন হয়েই থাকে। কেউ গহনা বানাতে চান, কেউ আবার পুরোনো সোনা বিক্রি করতে চান, আবার কেউ ভবিষ্যতের জন্য সোনা কিনে রেখে দিতেও চাইতে পারেন। তাই সবাই প্রায়শই জানতে চায়, আজকে সোনার দাম কত? বিশেষ করে ২২ ক্যারেট সোনার দাম কত?, কারণ এটিই গহনা তৈরির জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হওয়া পরিমাণ!

বুঝতেই পারছেন এতক্ষণে, জ্ঞানী বাবা!‘র আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানব, ২২ ক্যারেট সোনা আসলে কী? ২২ ক্যারেট সোনার দাম কত? তা মানুষ এত বেশি কেন জানতে চান? থেকে শুরুর করে ২২ ক্যারেট সোনার দাম কত? আজকের সর্বশেষ ২২ ক্যারেট সোনার দাম কত?, কেন দাম বাড়ে বা কমে, বিগত কয়েক বছরের দাম ইতিহাস, আর ভবিষ্যতে সোনার দাম কোন দিকে যেতে পারে যাবতীয় সবকিছু! তাহলে চলুন, শুরু করি!

সূচীপত্র দেখুন

২২ ক্যারেট সোনা আসলে কী?

২২ ক্যারেট সোনার দাম

অনেকেই সোনা কিনতে গিয়ে প্রথমেই এই প্রশ্ন করে বসেন, “আচ্ছা, ২২ ক্যারেট সোনা আসলেই বা কী, আর এটা ২৪ ক্যারেট থেকে আলাদা কেন?”
এই জায়গাতেই বেশিরভাগ মানুষ ভুল বোঝেন।

আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের সরকারি ব্যাংক কয়টি ও কী কী?

ক্যারেট মানে কী আসলে?

“ক্যারেট” (Karat) হচ্ছে সোনার বিশুদ্ধতা পরিমাপের একক। ২৪ ক্যারেট মানে ১০০% খাঁটি সোনা। কিন্তু খাঁটি সোনা খুব নরম হয়, তাই এটা দিয়ে গহনা বানানো যায় না। এই কারণে খাঁটি সোনায় কিছু পরিমাণ তামা, রুপা বা জিঙ্ক মিশিয়ে ২২ ক্যারেট সোনা তৈরি করা হয়, যাতে সেটা টেকসই হয়।

এক কথায় বললে,,
👉 ২২ ক্যারেট সোনা = ৯১.৬৭% খাঁটি সোনা + ৮.৩৩% অন্যান্য ধাতু।

২২ ক্যারেট সোনা ২৪ ক্যারেট থেকে কীভাবে আলাদা?

বৈশিষ্ট্য২২ ক্যারেট সোনা২৪ ক্যারেট সোনা
বিশুদ্ধতার হার৯১.৬৭%৯৯.৯% (খাঁটি সোনা)
রঙহালকা উজ্জ্বল হলুদগাঢ় সোনালি
ব্যবহারগহনা তৈরিতেবিনিয়োগ বা সঞ্চয়ে
টেকসইবেশি শক্ত ও টেকসইনরম, সহজে বেঁকে যায়

তাই যারা গহনা কিনতে বা বানাতে চান, তাদের জন্য ২২ ক্যারেট সোনা-ই সবচেয়ে উপযুক্ত, কারণ এতে টেকসই ও সৌন্দর্য দুই-ই থাকে। অন্যদিকে ২৪ ক্যারেট সোনা সাধারণত সংরক্ষণ বা বিনিয়োগের কাজে ব্যবহৃত হয়।

২২ ক্যারেট সোনার দাম কত বাংলাদেশে? (2025)

২২ ক্যারেট সোনার দাম

বাংলাদেশে প্রতিদিনই সোনার দাম নানা কারণে নানান মাত্রায় পরিবর্তন হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দর ওঠানামা, ডলারের রেট, আর স্থানীয় চাহিদা, সব কিছুর ওপর নির্ভর করে প্রতিদিন নতুন দাম ঘোষণা করে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (BAJUS)। তাই কেউ গহনা কিনতে চাইলে বা পুরনো সোনা বিক্রি করতে চাইলে, প্রসবার আগে জানতে চান, আজকের ২২ ক্যারেট সোনার দাম কত বাংলাদেশে?

২০২৫ সালের বর্তমান হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২২ ক্যারেট সোনার দাম নিচের উপাত্তের মতো করে উঠানামা করছে।

সোনার ক্যারেটপ্রতি ভরি দাম (টাকা)প্রতি গ্রাম দাম (টাকা)ব্যবহার
২২ ক্যারেট সোনাপ্রায় ১,৯৩,৮০৯ টাকাপ্রায় ১৬,৬১৬ টাকাগহনা তৈরিতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়
২১ ক্যারেট সোনাপ্রায় ১,৮৫,০০৩ টাকাপ্রায় ১৩,৫৯৫ টাকামাঝারি মানের গহনা
১৮ ক্যারেট সোনাপ্রায় ১,৫৮,৫৭২টাকাপ্রায় ৭,২০০ টাকাহালকা গহনা ও জুয়েলারি ডিজাইন

২০২৫ সালেও এর ব্যতিক্রম নেই। বিশ্ব অর্থনীতি, ডলারের বিনিময় হার, আমদানি নীতি আর আন্তর্জাতিক বাজারের ওঠানামা, সব কিছুই বাংলাদেশের সোনার দামে প্রভাব ফেলে। ফলে প্রতিদিনই ২২ ক্যারেট সোনার দাম বাংলাদেশে নতুন করে আলোচনায় আসে।

আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক অধিকার ৬টি কি কি?

২২ ক্যারেট সোনার দাম বাড়ার বা কমার কারণ কী?

আসলে অন্যান্য দ্রব্যের মতো করে সোনার দাম কখনোই স্থির থাকে না, প্রতিদিনই কোনো না কোনো কারণে ওঠানামা করে। ২০২৫ সালেও এর ব্যতিক্রম নয়। চলুন, এক নজরে দেখে নিই, ২০২৫ সালে বাংলাদেশে ২২ ক্যারেট সোনার দামে ওঠানামার আসল কারণগুলো কী কীঃ

১. আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব

সোনার দাম নির্ভর করে মূলত গ্লোবাল মার্কেটের ওপর। যখন বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়ে, তখন বাংলাদেশের বাজারেও সেটা বাড়ে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০২৫ সালের শুরুতে আন্তর্জাতিক মার্কেটে প্রতি আউন্স সোনার দাম ২০০০ ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ায় স্থানীয় বাজারেও ভরিপ্রতি দাম বেড়ে যায়।
এটাই মূলত্ত২২ ক্যারেট সোনার দাম বাড়ার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম।

২. ডলারের বিনিময় হার

সোনা কেনাবেচা আন্তর্জাতিকভাবে ডলারেই হয়। তাই ডলারের রেট বাড়লে, আমদানি খরচও বেড়ে যায়। ২০২৫ সালে বাংলাদেশে ডলারের দাম বেড়ে ১২০ টাকার কাছাকাছি চলে যাওয়ায় আমদানিকৃত সোনার দামও স্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। ফলে স্থানীয় বাজারে ২২ ক্যারেট সোনার দাম আগের তুলনায় অনেক বেশি হয়ে গেছে।

৩. চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্য

বাংলাদেশে বিয়ে, উৎসব ও বিশেষ মৌসুমে সোনার চাহিদা হঠাৎ বেড়ে যায়। যখন চাহিদা বেড়ে যায় কিন্তু জোগান কম থাকে, তখন দাম স্বাভাবিকভাবেই বাড়ে। এই সময়েই অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় ২ ক্যারেট সোনার দাম বাড়ার কারণ হিসেবে স্থানীয় বাজারের চাপ সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে।

৫. আমদানি শুল্ক ও করনীতির পরিবর্তন

সরকারি শুল্ক, ট্যাক্স বা ভ্যাট বাড়লে সোনার দামে তার প্রভাব সরাসরি পড়ে। ২০২৫ সালের শুরুতে সরকার সোনার আমদানিতে নতুন কিছু শুল্কনীতি প্রবর্তন করেছে ফলে প্রতি ভরি সোনায় গড়ে কয়েকশ টাকা করে বেড়েছে।

আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর রেংক সমূহ জেনে নিন

৬. বিনিয়োগ প্রবণতা ও ব্যাংক রেটের প্রভাব

যখন ব্যাংকের সুদের হার কম থাকে, তখন মানুষ সঞ্চয় থেকে সোনা কিনে রাখে, কারণ সোনা একটি নিরাপদ বিনিয়োগ। আবার, সুদের হার বাড়লে অনেকেই সোনা বিক্রি করে ব্যাংকে টাকা রাখে, তখন দাম কিছুটা কমে। এভাবেই বাজারে ২২ ক্যারেট সোনার দাম বাড়া বা কমা একে অপরের সাথে সম্পর্কিত।

২২ ক্যারেট সোনার দাম ও যাচাই=বাছাই করে কিনুন

বাংলাদেশে সোনা কেনা মানেই বেশ বড় সড় সিদ্ধান্ত। কারণ এটা শুধুই একটা অলংকার না, এটা একটা বিনিয়োগ। তাই একটু অসাবধান হলেই হাজার হাজার টাকা পর্যন্ত ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তাই ক্রেতা হিসেবে যা আপনার সবসময় জানতে হবেঃ

১. নির্ভরযোগ্য দোকান থেকে কিনুন

সবচেয়ে প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, অচেনা বা হুট করেই কোনো দোকান থেকে কখনও সোনা কিনবেন না। সবসময় এমন দোকান থেকে কিনুন যাদের নাম আছে, যেমন BAJUS (বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি) অনুমোদিত জুয়েলার্স। এই দোকানগুলো সাধারণত বিশুদ্ধতা (purity) ও দাম উভয় ক্ষেত্রেই স্বচ্ছ থাকে।

২. সোনার বিশুদ্ধতা যাচাই করে নিন

অনেকে ২২ ক্যারেটের নাম করে ২১ বা ২০ ক্যারেট সোনা বিক্রি করে দেন, এটাই সবচেয়ে বেশি হওয়া প্রতারণা। তাই গহনায় “916” বা “22K” মার্ক আছে কিনা দেখে নিন। যদি না থাকে, তবে দোকান থেকে সোনার বিশুদ্ধতার সার্টিফিকেট (purity certificate) চাইতে হবে।

৩. মেকিং চার্জ সম্পর্কে জানুন

সোনার মূল দামের সাথে দোকানদাররা সাধারণত ৫০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত “মেকিং চার্জ” যোগ করে। অনেক সময় এই চার্জটা ক্রেতাকে না জানিয়ে বেশি রাখা হয়। তাই গহনা কেনার আগে জেনে নিন প্রতি ভরিতে মেকিং চার্জ কত নিচ্ছে, এবং তা রশিদে উল্লেখ আছে কিনা।

৪. কেনা-বেচার নীতিমালা জেনে নিন

অনেক দোকান শুধু নিজেদের বিক্রিত সোনা ফেরত নেয় বা ক্রয় করে, অন্য দোকানেরটা নেয় না। তাই গহনা কেনার আগে দোকানের “বাই-ব্যাক পলিসি” সম্পর্কে জেনে নিন। এটা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ভবিষ্যতে বিক্রি করতে গেলে এইটার ওপরই নির্ভর করবে আপনি কত টাকা ফেরত পাবেন।

৫. রশিদ ও সার্টিফিকেট অবশ্যই রাখুন

এটা অনেকেই অবহেলা করে থাকেন, কিন্তু এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভবিষ্যতে সোনা বিক্রি, এক্সচেঞ্জ বা বীমা করতে গেলে রশিদ ও সার্টিফিকেটই আপনার মালিকানার প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে।

আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পদবী অনুযায়ী বেতন গ্রেড

উপসংহার

২২ ক্যারেট সোনার দাম

সোনার দাম বাড়ুক বা কমুক ,এটি নিঃসন্দেহে একটি ভরসা যুক্ত বিনিয়োগ। পৃথীবীতে যত যাই কিছু ঘটুক না কেন, স্বর্ণের দাম কেবল বেড়ছে, ভবিষ্যতেও বাড়বে। তাই বুঝে শুনে যদি স্বর্ণের উপর বিনিয়োগ করা যায় তা অবশই ভবিষ্যতে আপনাকে লাভের মুখই দেখাবে। কারণ স্বর্ণের উপরেই বিশ্ব অর্থনীতি টিকে আছে, যে দেশের কাছে যত বেশি সোনা সে দেশের মুদ্রার মূল্যবানও ততটা বেশি। তাই কম কম হলেও চেষ্টা করুন, স্বর্ণে বিনিয়োগ করতে।

জ্ঞানী বাবা!’র আজকের আর্টিকেলে আমরা জানলাম, ২২ ক্যারেট সোনা আসলে কী?, সোনার দাম কেন বাড়ে বা কেনই বা কমে? ২২ ক্যারেট সোনার দাম কত? থেকে শুরু করে ২০২৫ সালে ২২ ক্যারেট সোনার দাম এ প্রশ্ন সম্পর্কিত যাবতীয় প্রায় সকল কিছু। আশা করি প্রিয় পাঠক তার সার্চ করা প্রশ্নের যথাযথ উত্তরই পেয়েছেন আজকের এই লেখা থেকে!

সবশেষে, আশা করি জ্ঞানী বাবা!‘র আজকের আর্টিকেলটি আপনার ভাল লেগেছে। কিছুটা হলেও উপকার হয়েছে পাঠকের। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে অনুরোধ থাকবে এই ব্লগ পোস্টটি প্রিয় জনদের সাথে শেয়ার করুন। আর কমেন্ট সেকশনে নিজের মূল্যবান মন্তব্য রেখে যেতে ভুলবেন না কিন্তু! আজকের মতো এখানেই শেষ করছি, দেখা হচ্ছে পরবর্তী কোনো এক লেখায়!

এই আর্টিকেলটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন!

Leave a Comment