আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ অর্থ ও ফজিলত জেনে নিন

আয়াতুল কুরসি পবিত্র কুরআনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আয়াত হলেও আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ কিংবা আয়াতুল কুরসির বাংলা অর্থ ও ফজিলত সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। আয়াতুল কুরসি পবিত্র কুরআনের এমন একটি আয়াত যা একই সাথে ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস ও তাওহিদের (একত্ববাদ) তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাখ্যা দেয় । সাথে সাথে আয়াতুল কুরসিতে আল্লাহর অসীম জ্ঞান, শক্তি ও সার্বভৌমত্বের বিবরণ দেয়া হয়েছে অতি চমৎকার ভাবে। তাই প্রত্যেক মুসলিমকেই আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ সহ ও এর অর্থসহ জানা উচিত।
আয়াতুল কুরসি সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “আয়াতুল কুরসি কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত।” (সহিহ মুসলিম)। জ্ঞানী বাবা!’র আজকের আর্টিকেলে আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ, আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ অর্থ ও ফজিলত, আয়াতুল কুরসি বাংলা অনুবাদ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তো চলুন, শুরু করা যাক!!!
সূচীপত্রঃ
আয়াতুল কুরসি কোন সূরার অংশ?
আয়াতুল কুরসি পবিত্র কুরআনের দ্বিতীয় সূরা সূরাহ আল-বাকারা-এর ২৫৫ নম্বর আয়াত। সূরাহ আল-বাকারা পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে বড় সূরা। সূরা আল-বাকারাতে ইসলামের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিধান, আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব এবং দুনিয়া ও আখিরাত সম্পর্কিত নানা বিষয় বিস্তরভাবে বর্ণিত হয়েছে।
আয়াতুল কুরসি এই সূরার সবচেয়ে মর্যাদামন্ডিত আয়াত। আয়াতুল কুরসি আল্লাহর একত্ব, তাঁর অসীম শক্তি ও জ্ঞানের ব্যাপারে স্পষ্ট ঘোষণা দেয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,
“যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া কোনো কিছু বাধা হবে না।”- (তিরমিজি)
আয়াতুল কুরসি কেন নাজিল হয়েছিলো?
আয়াতুল কুরসি এমন একটি আয়াত, যে আইয়াতে একই সাথে আল্লাহর অসীম ক্ষমতা, জ্ঞান ও সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে সুস্পষ্ট বিবরণ ও বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে। আয়াতুল কুরসি এমন এক সময় নাজিল করা হয়েছিল, যখন মক্কার মুশরেকদের মধ্যে অনেকেই আল্লাহর একত্ববাদ সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলো এবং এবং তাদের এই সন্দেহের অবমোচনের উদ্দেশ্যেই আল্লাহ তায়াল আয়াতুল কুরসি নাযিল করেন। ।
আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ ছবি

আয়াতুল কুরসি আরবি উচ্চারণ
اَللهُ لآ إِلهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ، لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَّلاَ نَوْمٌ، لَهُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْأَرْضِ، مَنْ ذَا الَّذِىْ يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ، يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيْطُوْنَ بِشَيْئٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَآءَ، وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ، وَلاَ يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَ هُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ-
আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ
“আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম। লা তা’খুজুহু সিনাতুওঁ ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিস সামাওয়াতি ওয়া মা ফিল আরদ। মান যা-ল্লাযি ইয়াশফাউ ইন্দাহু ইল্লা বি ইজনিহ। ইয়ালামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়া মা খালফাহুম। ওয়ালা ইউহিতূনা বি শাইয়িম মিন ইলমিহি ইল্লা বিমা শা। ওয়াসিআ কুরসিইহুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ। ওয়া লা ইয়াউদুহু হিফজুহুমা। ওয়া হুয়াল আলিইউল আজিম।”
উল্লেখ্যঃ কুরআনের আয়াতটির উচ্চারণ ভালোভাবে আরবি জানা কারো কাছ থেকে শিখে নেয়া উচিত। বাংলা উচ্চরণ কখনোই পুরোপুরি সঠিক হয় না।
আয়াতুল কুরসি বাংলা অর্থ
“আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সর্বদা প্রতিষ্ঠিত। তাঁকে তন্দ্রা বা নিদ্রা স্পর্শ করতে পারে না। আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সমস্ত কিছুই তাঁর। কে আছে যে, তাঁর অনুমতি ছাড়া সুপারিশ করতে পারে? তিনি জানেন যা তাদের সামনে ও পিছনে আছে। আর তারা তাঁর জ্ঞানের কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না, যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন তা ছাড়া। তাঁর কুরসি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী পর্যন্ত বিস্তৃত, আর সেগুলোর তত্ত্বাবধান তাঁকে মোটেই ক্লান্ত করে না। আর তিনি মহিমান্বিত ও মহান।” (সূরা আল-বাকারা: ২৫৫)
আয়াতুল কুরসির ফজিলত
আয়াতুল কুরসির ফজিলত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) অনেক হাদিস রয়েছে। আয়াতুল কুরসি এমন একটি মহিমান্বিত আয়াত, যা পাঠ করলে শয়তান পর্যন্ত দূরে থাকে। এই আয়াত নিয়মিত পাঠ করলে আল্লাহ তায়ালা আয়াতুল কুরসি পাঠকারীর যাবতীয় বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করেন এবং তার বিশেষ রহমত বর্ষণ করেন।
১. শয়তান থেকে সুরক্ষা
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন যে, তিনি রমজান মাসে সদকার মাল পাহারা দিচ্ছিলেন। তখন এক ব্যক্তি চুরি করতে এলে তিনি তাকে ধরেন। তিনবার এ ঘটনা ঘটে, এবং প্রতিবারই সেই ব্যক্তি মুক্তির জন্য বিভিন্ন অজুহাত দেন। তৃতীয়বারে সে আবু হুরায়রা (রা.)-কে বলল: “যখন তুমি বিছানায় যাবে, তখন আয়াতুল কুরসি পড়বে। তাহলে আল্লাহ তোমার জন্য একজন পাহারাদার নিযুক্ত করবেন, এবং কোনো শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না সকাল পর্যন্ত।” পরবর্তীতে রাসুলুল্লাহ (সা.) আবু হুরায়রা (রা.)-কে জানান যে, সেই ব্যক্তি ছিল শয়তান। (সহিহ বুখারি)
২. জান্নাতে প্রবেশের সুসংবাদ
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি প্রতিটি ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ে, তার জন্য জান্নাত নিশ্চিত।” (নাসাঈ)
৩. বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি
আয়াতুল কুরসি নিয়মিত পড়লে আল্লাহর অশেষ রহমত পাওয়া যায় এবং বিভিন্ন বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আয়াতুল কুরসি শুধু একটি দোয়াই নয়, বরং আয়াতুল কুরসি আল্লাহর ক্ষমতা, আলহর অবিনশ্বরতার প্রমাণ দেয়। তাই এই আয়াতের তাতপর্য অসীম।
কখন আয়াতুল কুরসি পড়া উচিত

রাসূল (সা.) এর হাদিস অনুসারে আয়াতুল কুরসি অত্যন্ত শক্তিশালী ও মহিমান্বিত একটি আয়াত। আয়াতুল কুরসি পড়ার মাধ্যমে বিপদে-আপদে আল্লাহর সাহায্য ও সুরক্ষা পাওয়া যায়। বিভিন্ন হাদিসে আয়াতুল কুরসি পড়ার বিশেষ সময় ও উপকারিতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। নিচে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু আয়াতুল কুরসি পড়ার সময় তুলে ধরলামঃ
- নামাজের পর: প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়া অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। এই সময়টি আল্লাহর বিশেষ রহমত লাভের মূখ্যম সময়।
- রাতে ঘুমানোর আগে: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,যে ব্যক্তি রাতে ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পড়ে শুয়, আল্লাহ তার জন্যে রাতকে নিরাপদ করে দেন। (সহিহ বুখারি)
- বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে: কেউ যদি বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় আয়াতুল কুরসি পড়ে, তাহলে রাস্তায় ঘটতে পারে এমন সকল বিপদ-আপদ থেকে আল্লাহ তাকে রক্ষা করেন।
- বিপদ বা শঙ্কা অনুভব করলে: কোনো ধরনের শঙ্কা বা বিপদ দেখা দিলে আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে তা দূর হয় এবং আল্লাহর সাহায্য পাওয়া যায়।
আরও পড়ুনঃ জেনে নিন যানবাহন ও গাড়িতে উঠার দোয়
আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ মুখস্থ করার সহজ উপায়
আয়াতুল কুরসি মুখস্থ করার জন্য বেশ কিছু সহজ ও কার্যকর পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। নিচে এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি পদ্ধতি তুলে ধরা হলোঃ
- প্রতিদিন কয়েকবার পড়া: কোন কিছু নিয়মিত বারবার পড়লে তা সহজেই মুখস্ত হয়ে যায়। তাই আয়াতুল কুরসি প্রতিদিন বারবার পড়লে সহজেই মুখস্থ করা সম্ভব।
- অডিও শুনে মুখস্থ করা: যারা শুনে মুখস্থ করতে পারেন, তারা বারবার আয়াতুল কুরসির অডিও শুনে এটি খুব দ্রুতই মুখস্থ করে ফেলতে পারবেন।
- নামাজে পাঠ করা: প্রতি নামাজে বা নামাজে মাঝেমধ্যেই আয়াতুল কুরসি পড়ার মাধ্যমে আয়াতুল কুরসি চর্চায় থাকবে ফলে দ্রুত মখস্তও হবে আর ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনাও কমবে।
আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ (টিউটোরিয়াল)
শেষ কথা
আশা করি জ্ঞানী বাবা!’র আজকের আর্টিকেলটি পাঠকের কিছুটা হলেও উপকারে আসবে। একটু হলেও কাজে লাগবে। আজকের ব্লগ থেকে পাঠক জানতে পারলেন আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ, আয়াতুল কুরসি আরবি উচ্চারণ, আয়াতুল কুরসির ফজিলত সহ আয়াতুল কুরসি সম্পর্কে যাবতীয় তথ্যাবলি।
জ্ঞানী বাবা!’র আজকের ব্লগটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অনুরোধ থাকবে , আপনার পরিচিত ও প্রিয়জন্দের সাথে ব্লগটি শেয়ার করুন। আর কমেন্ট করে আমাদের আপনার মতামত জানাতে একদম ভুলবেন না!