সেরা ১০ টি দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর উপায়

উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেসার (Hypertension) বর্তমানে আমাদের মাঝে একটি সাধারণ সমস্যায়প পরিণত হয়েছে। প্রায়ই গুগলে ” দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর উপায়” লিখে সার্চ করতে হচ্ছে অনেককেই। হাই প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ এমন একটি অবস্থা যেখানে রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি থাকে। কিন্তু ভয়ের ব্যাপার এই যে হাইপ্রেসার যদি দীর্ঘদিন ধরে নিয়ন্ত্রণে না রাখা হয়, তবে তা হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি সমস্যা এবং চোখের রোগসহ নানা জটিলতার কারণ হতে পারে।
জ্ঞানী বাবা!”র আজকের আর্টিকেল থেকে আমরা হাই প্রেসার কী? কেন আমাদের হাই প্রেসার হয়? দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর উপায় থকে শুরু করে হাই প্রেসার কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানব। তাহলে চলুন ,শুরু করা যাক!!!
আরও পড়ুনঃ কম্পিউটার ভাইরাস কি? ১০ টি কম্পিউটার ভাইরাসের নাম
সূচিপত্রঃ
হাই প্রেসার কী? হাই প্রেসার এর কারণ
হাই প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ কী?
হাই প্রেসার, যাকে আমরা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় উচ্চ রক্তচাপ (Hypertension) বলে থাকি, এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে রক্ত আপনার ধমনীতে স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি চাপ সৃষ্টি করে। সাধারণত আমাদের রক্তচাপ দুইটি সংখ্যায় প্রকাশ করা হয়—সিস্টোলিক (সর্বোচ্চ মান) এবং ডায়াস্টোলিক (নিম্ন মান)।
- স্বাভাবিক রক্তচাপঃ ১২০/৮০ mm Hg বা এর কম
- উচ্চ রক্তচাপঃ ১৪০/৯০ mm Hg বা এর বেশি হলে উচ্চ রক্তচাপ হিসেবে ধরা হয়।
হাই প্রেসার কেন হয়?
হাই প্রেসার হওয়ার পেছনে অনেক কারণই থাকতে পারে। তবে সাধারণত এটি দুই কারণেই হাই প্রেসার হয়ে থাকে। যথাঃ
- প্রাথমিক হাইপারটেনশন (Primary Hypertension) বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায় না। এই ধরণের হাই প্রেসার বয়স বাড়ার সাথে ধীরে ধীরে তৈরি হয়।
- সেকেন্ডারি হাইপারটেনশন (Secondary Hypertension): এটি অন্য কোনো রোগ বা অবস্থা যেমন কিডনির সমস্যা, হরমোনাল সমস্যা বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইত্যাদি কারণে হয়ে থাকে।

- অতিরিক্ত লবণ খাওয়া: বেশি লবণ খেলে শরীরে অতিরিক্ত সোডিয়াম জমা হয়, যা রক্তনালিকে সংকুচিত করে ফলে প্রেসার বেড়ে যায়।
- অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা: অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতার কারণে হৃদপিণ্ডকে বেশি পরিশ্রম করতে হয়, ফলে স্বাভাবিক ভাবেই রক্তের চাপ বেড়ে যায়।
- মানসিক চাপ ও উদ্বেগ: দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ বা টেনশন প্রেসার বাড়ানোর অন্যতম প্রধান কারণ।
- পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যায়াম না করা: যারা শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয়, তাদের মধ্যে হাই প্রেসারের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।
- ধূমপান ও অ্যালকোহল: নিকোটিন এবং অ্যালকোহল রক্তনালির গঠন নষ্ট করে ফেলে ফলে রক্তচাপ বেড়ে বেড়ে যায়।
- বংশগত কারণ: পরিবারে যদি কারও যদি হাই প্রেসারের সমস্যা থাকে, তবে ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়।
- বয়স: বয়স ৪০-এর পর থেকে উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।
- কিডনি সমস্যা বা হরমোনাল ডিসঅর্ডার: বিশেষ করে থাইরয়েড, কিডনি রোগের কারণে সেকেন্ডারি হাইপারটেনশন হয়ে থাকে।
কাদের হাই প্রেসারের ঝুঁকি বেশি?
- যারা দিনে ৫-৬ ঘণ্টার কম ঘুমান।
- যারা খুব বেশি চিনি বা ফাস্টফুড খান।
- যারা অধিক পরিমাণে কফি বা ক্যাফেইন গ্রহণ করেন।
- যাদের কাজের ধরনে স্ট্রেস বেশি।
- যাদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি।
- যারা সিগারেট বা অ্যালকোহল সেবন করেন।
- যারা শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করেন না।
- নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় হাই প্রেসারের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।
হাই প্রেসারের লক্ষণ ও উপসর্গ
উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেসারকে “নীরব ঘাতক” বলা হয় কেননা বেশিরভাগ সময় হাই প্রেসার কোনো সুস্পষ্ট উপসর্গ ছাড়াই আপনার শরীরের ক্ষতি করে ফেলতে পারে। তবে, যখন রক্তচাপ অনেক বেড়ে যায় তখন কিছু লক্ষণ ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে শুরু করে। এই লক্ষণগুলো সঠিক সময়ে চিনতে না পারলে তা হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক বা কিডনি ফেইলিউরের মতো মারাত্মক বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
নিচে উচ্চ রক্তচাপের সবচেয়ে সাধারণ এবং গুরুত্বপূর্ন উপসর্গগুলো তুলে ধরা হলো:
১. মাথাব্যথা
উচ্চ রক্তচাপের প্রাথমিক উপসর্গ হলো মাথাব্যথা। বিশেষ করে মাথার পিছনের দিকে বা ঘাড়ের গোড়ায় ভারী ধরনের মাথাব্যথা হতে পারে। কখনও কখনও মাথাব্যথা অনেক তীব্র হয়েও ওঠতে পারে।
২. ক্লান্তি ও দুর্বলতা
অনিয়ন্ত্রিত হাই প্রেসার থাকলে শরীরে ক্লান্তি, অবসাদ এবং সব সময় দুর্বল লাগা স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে যেতে পারে। কারণ হাই প্রেসারের কারণে হার্ট বেশি কাজ করতে বাধ্য হইয় ফলে শরীরে অক্সিজেন সরবরাহে সমস্যা দেখা যায়।
৩. বুকে ব্যথা
উচ্চ রক্তচাপের কারণে হৃদপিণ্ডের উপরে চাপ পড়ে, ফলে বুকে অতিরিক্ত একটা চাপ অনুভব হতে পারে। কখনো কখনো বুকে ব্যাথাও হতে পারে। অবস্থা খারাপ হলে এই ব্যাথা হার্ট অ্যাটাকেও রুপ নেয়। তাই এমন হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৪. চোখে ঝাপসা দেখা
অনেক সময় হাই প্রেসার চোখের রেটিনায় (Retina) অতিরিক্ত চাপ তৈরি করে, যা আমাদের দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা করে দেয়। দীর্ঘদিন ধরে প্রেসার নিয়ন্ত্রণে না থাকলে হাই প্রেসার স্থায়ী চোখের সমস্যার কারণও হতে পারে।
৫. ঘন ঘন মাথা ঘোরা
প্রেসার বেড়ে গেলে অনেকেরই মাথা ঘোরানো, ভারসাম্যহীনতার সমস্যা দেখা যায়। উচ্চ রক্তচাপের ফলে মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত রক্ত চলাচলের ব্যাঘাত ঘটে যার ফলেই রোগীর মাথা ঘোরার অনুভূতি সৃশটি হয়।
৬. নিঃশ্বাসের কষ্ট বা হাঁপানি
উচ্চ রক্তচাপ হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। এতে হাঁটাহাঁটি বা স্বাভাবিক কাজের সময়ও নিঃশ্বাসের কষ্ট বা হাঁপানির সমস্যা দেখা দিতে পারে। এটি আবার হৃদরোগের উপসর্গও হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ প্রতিদিন ১ কেজি করে দ্রুত ওজন কমানোর উপায় খুজছেন?
৭. অনিদ্রা বা ঘুমের সমস্যা
অনিয়ন্ত্রিত প্রেসার আপনার ঘুমের ব্যাঘাতও ঘটাতে পারে। অনেক সময় প্রেসার বাড়ার কারণে রাতের বেলা দুশ্চিন্তা ও অনিদ্রা দেখা দিতে পারে।
৮. অনিয়মিত হৃদস্পন্দন
কখনও কখনও হার্টবিট অনেক দ্রুত কিংবা অনেক ধীর হয়ে যেতে পারে। এমন অনিয়মিত হৃদস্পন্দন দীর্ঘমেয়াদে হার্টের বড় ধরনের সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। তাই সময়মতো যথাযথ ব্যবস্থা নিন।
৯. পায়ের গোড়ালি ফুলে যাওয়া
বহুদিন যাবত অনিয়ন্ত্রিত হাই প্রেসার থাকলে পায়ে বা গোড়ালিতে পানি ধরে যেতে পারে। এর কারণ হতে পারে হার্টের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া। তাই সাবধান!
দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর উপায়
যদি হঠাৎ করে রক্তচাপ অনেক বেশি বেড়ে যায়, তাহলে দ্রুতই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। কেননা খুব বেশি প্রেসার বা রক্তচাপ হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক বা অন্যান্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে ফেলতে পারে। নিচে কার্যকরী কিছু দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর উপায় তুলে ধরা হলোঃ
১. বড় বড় শ্বাস নিন
রক্তচাপ হঠাৎ বেড়ে গেলে প্রথমে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করুন। এরপর ধীরে ধীরে কয়েকটি বড় বড় শ্বাস নিন।
- নাক দিয়ে বড় করে শ্বাস নিন এবং মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে ছাড়ুন। এটি ৫-৭ মিনিট ধরে করুন।
- এভাবে শ্এবাস নিলে তা আপনার স্নায়ুতন্ত্রকে স্বাভাবিক করে রক্তচাপ কমিয়ে স্বাভাবিক মাত্রায় আনতে সাহায্য করবে।
২. পানি পান করুন
প্রেসার বেড়ে গেলে দ্রুত ১-২ গ্লাস পানি পান করুন।
- অনেক সময় ডিহাইড্রেশন (শরীরে পানির ঘাটতি) হাই প্রেসার বাড়িয়ে দেয়। তাই পানি পান করুন।
- পানি আপনার শরীরকে হাইড্রেটেড রাখবে ফলে রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক হয়ে রক্তচাপ কমে আসবে।
৩. বসে কিংবা শুয়ে পড়ুন
- হাই প্রেসার অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকলে প্রেসার আরও বেড়ে যেতে পারে।
- তাই দ্রুত চেয়ার বা বিছানায় বসুন বা শুয়ে পড়ুন।
- ঘাড়, কাঁধ ও পিঠের পেশি স্বাভাবিক শিথীল রাখুন এবং চোখ বন্ধ করে নিজেকে রিল্যাক্স করুন।
৪.শরীর ঠাণ্ডা রাখুন
- খুব বেশি গরম বা অস্বস্তিকর পরিবেশে থাকলে প্রেসার আরও বেড়ে যেতে পারে।
- তাই ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ, হাত ও পা ধুয়ে নিন। প্রয়োজনে ঠাণ্ডা জায়গায় চলে যান।
৫. হালকা ব্যায়াম করুন
- যদি সম্ভব হয়, দ্রুত ১০-১৫ মিনিট হালকা হাঁটাহাঁটি বা শরীরচর্চা করুন।
- এভাবে হালকা ব্যায়াম করলে তা আপনার রক্তনালির সংকোচন কমিয়ে রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক করতে সাহায্য করবেবি.দ্র: অতিরিক্ত বেশি প্রেসার থাকলে বা বেশি দুর্বল অনুভব করলে হাঁটাহাঁটি করবেন না।
৬. লবণ থেকে দূরে থাকুন
- যাদের হাই প্রেসার, তাদের লবণ খাওয়া কমিয়ে ফেলা উচিত।
- অতিরিক্ত সোডিয়াম প্রেসার আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
- তাৎক্ষণিক সমাধানে কম সোডিয়ামযুক্ত খাবার খান।
৭. গরম পানিতে পা ডুবিয়ে রাখুন
- ২-৩ লিটার গরম পানি একটি বালতিতে নিন (পানি যেন সহনীয় গরম হয়)।
- ১৫-২০ মিনিট পা ডুবিয়ে রাখুন।
- এতে আপনার পায়ের রক্তনালি প্রসারিত হবে এবং প্রেসার কমে আসবে।
৮. ডার্ক চকলেট বা কলা খান
- ডার্ক চকলেটে থাকা ফ্ল্যাভানয়েড আর কলায় থাকা পটাশিয়াম রক্তনালিকে প্রসারিত করে দ্রুত প্রেসার কমাতে পারে।
- তবে অতিরিক্ত খাবেন না, পরিমিত খান।
৯. যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন করুন
- মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমায়।
- যোগব্যায়ম দীর্ঘমেয়াদে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তবে দ্রুত হাই প্রেসার কমাতে হালকা ব্রিদিং মেডিটেশন খুব কার্যকর হতে পারে।
১০. ওষুধ গ্রহণ করুন (ডাক্তারের পরামর্শে)
- যদি প্রেসার খুব বেশি বেড়ে যায় (যেমন: ১৮০/১১০ mm Hg বা তারও বেশি) তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রেসার কমানোর ওষুধ খেতে হবে।
- প্রেসক্রিপশনে ছাড়া ওষুধ খেতে যাবেন না।
দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর ঘরোয়া উপায়

বাড়িতে থাকা অবস্থায় প্রেসার বেড়ে গেলে হাতের কাছে থাকা কিছু ঘরোয়া উপাদান দিয়েই দ্রুত হাই প্রেসার কমানো সম্ভব। তবে ঘরোয়া এই সমাধানগুলো শুধু তাৎক্ষণিক সমাধান মাত্র তাই হাই প্রেসারের সমস্যা থাকলে দীর্ঘমেয়াদী সমাধানে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
এখানে কিছু কার্যকর ঘরোয়া উপায় উল্লেখ করা হলো:
১. কাঁচা রসুন চিবিয়ে খান
রসুনে আছে অ্যালিসিন নামক উপাদান যা রক্তনালিকে প্রসারিত করে দ্রুত রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
যেভাবে খাবেনঃ
- কাঁচা রসুনের এক বা দুই কোয়া চিবিয়ে খান।
- চাইলে এক গ্লাস পানিতে রসুন থেঁতো করে পান করতে পারেন।
২. লেবু পানি পান করুন
লেবুতে রয়েছে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা দ্রুত রক্তচাপ কমাতে বেশ সহায়ক।
যেভাবে খাবেনঃ
- চাইলে সামান্য মধু যোগ করতে পারেন।
- ১ গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ১টা লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন।
৩. নিয়মিত কলা খান
কলায় রয়েছে প্রচুর পটাশিয়াম যা সোডিয়ামের প্রভাব কমিয়ে প্রেসার দ্রুত স্বাভাবিক করতে সক্ষম।
যেভাবে খাবেনঃ
- দিনে ১-২টা পাকা কলা খেতে পারেন।
৪. নিয়মিত তুলসী পাতা খান
তুলসী পাতায় রয়েছে অ্যান্টি-হাইপারটেনসিভ উপাদান। নিয়মিত যথাযথ নিয়মে তুলসী পাতা (সাথে কিছু মধু মেশানো যেতে পারে) খেলে তা হাই প্রেসার কমাতে বেশ সহায়ক হতে পারে।
যেভাবে খাবেনঃ
- সকালে খালি পেটে ৫-৭টি তুলসী পাতা চিবিয়ে খান।
- চাইলে তুলসী পাতার রসের সাথে ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।
৫. মেথি ভেজানো পানি পান করুন
মেথি রক্তে শর্করা ও প্রেসার কমাতে কার্যকর ফলে তা রক্ত চাপ কমাতে ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
যেভাবে খাবেনঃ
- রাতে এক চামচ মেথি পানিতে ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে সেই মেথি চিবিয়ে খান ও মেথি ভেজানো পানিটা পান করুন।
৬. আমলকী খান
আমলকী ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ যা উচ্চ রক্ত চাপে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
যেভাবে খাবেনঃ
- আমলকীর রস বা গুঁড়া ১ চা চামচ মধুর সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
৭. আদা চা বা আদা পানি পান করুন
আদায় রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা হাই প্রেসার কমাতে সাহায্য করে।
যেভাবে খাবেনঃ
- কুসুম গরম পানিতে আদা কুচি দিয়ে ৫ মিনিট ফুটিয়ে ছেঁকে পান করুন।
৮. তিল বা অলিভ অয়েল ব্যবহার করুন
তিলে রয়েছে সেসামিন যা একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টি-হাইপারটেনসিভ উপাদান। এছাড়া তিল হার্টের জন্যেও উপকারী।
যেভাবে খাবেনঃ
- তিল বা অলিভ অয়েল রান্নায় ব্যবহার করুন।
- তিল ভেজে সরাসরিও খেতে পারেন।
৯. দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার খান
কম চর্বিযুক্ত দুধ ও দই রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তা নিয়মিত খাবারে কম চর্বিযুক্ত দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার রাখার চেষ্টা করুন।
যেভাবে খাবেনঃ
- দিনে একবার কম চর্বিযুক্ত দুধ বা ঘরোয়া দই খান।
১০. হালকা গরম পানিতে স্নান করুন
- দ্রুত প্রেসার কমাতে অনেক সময় গরম পানি দিয়ে গোসল করা বেশ উপকারী হতে পারে।
- এটি শরীর ও মনের চাপ কমিয়ে হাই প্রেসার কমায়।

হাই প্রেসার কমানোর খাবার
হাই ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কিছু নির্দিষ্ট খাবার রয়েছে যা নিয়মিত খেলে রক্তচাপ কমে এবং হার্ট সুস্থ থাকে। নিচে এমন কিছু খাবারের তালিকা ও উপকারিতা তুলে ধরা হলোঃ
১. পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার
পটাশিয়াম সোডিয়ামের ক্ষতিকর প্রভাব কমিয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ্রাখতে সাহায্য করে। পটাশিয়াম রক্তনালিকে প্রসারিত করে রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা কমায়, ফলে প্রেসার স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
পটাশিয়াম আছে যেসব খাবারেঃ
- কলা
- কমলা ও মাল্টা
- আলু ও মিষ্টি আলু
- শাকসবজি (পালং শাক, ঢেঁড়শ)
- টমেটো
- শশা
- ইত্যাদি
২. ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার
ম্যাগনেসিয়াম রক্তনালিকে রিল্যাক্সড
করে রক্তপ্রবাহ সহজ করে হার্টের চাপ কমায় ফলে হাইপারটেনশন বা হাই প্রেসার কমতে শুরু করে।
ম্যাগনেসিয়াম আছে যেসব খাবারেঃ
- বাদাম (আমন্ড, কাজু, আখরোট)
- বীজ (তিল, সূর্যমুখী বীজ)
- শাকসবজি
- ডাল ও মটরশুঁটি
- ব্রাউন রাইস ও ওটস
- ইত্যাদি
৩. আঁশ (ফাইবার) সমৃদ্ধ খাবার
ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার রক্তে কোলেস্টেরল কমিয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
ফাইবার আছে যেসব খাবারেঃ
- ওটস
- বার্লি
- বাদাম ও বীজ
- ব্রাউন ব্রেড ও ব্রাউন রাইস
- সবুজ শাকসবজি
- আপেল ও নাশপাতি
- ইত্যাদি
৪. ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার
ক্যালসিয়াম হার্টের পেশী ও রক্তনালির কাজ স্বাভাবিক রাখে। তাছাড়া ক্যালসিয়াম শরীরের ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স ঠিক রেখে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
ক্যালসিয়াম আছে যেসব খাবারেঃ
- দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার (দই, পনির)
- ব্রোকলি
- বাদাম
- ছোট মাছ (কাঁটাসহ খাওয়া যায় এমন)
- ইত্যাদি
৫. ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার
ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমিয়ে রক্তপ্রবাহ সহজ করে ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাছাড়া ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড হার্টের স্বাস্থ্যের জন্যও খুবই উপকারী।
ওমেগা-৩ আছে যেসব খাবারেঃ
- সামুদ্রিক মাছ (স্যালমন, টুনা, সারডিন)
- চিয়া সিড
- ফ্ল্যাক্স সিড
- আখরোট
- ইত্যাদি
আরও পড়ুনঃ গ্রাফিক্স ডিজাইন কী? কিভাবে আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখবেন?
৬. বিট রুট
বিট রুটে রয়েছে নাইট্রেটস
যা রক্তনালিকে প্রসারিত করে দ্রুত রক্তচাপ কমাতে সহায়ক। এছাড়া তাৎক্ষণিকভাবে হাই প্রেসার কমাতে বিট রুট অত্যন্ত কার্যকরী একটি ফল।
যেভাবে খাবেনঃ
- বিট রুট এর জুস করে পান করুন।
- সালাদে কাঁচা বিট রুট খেতে পারেন।
৭. ডার্ক চকোলেট (কম চিনি যুক্ত)
ডার্ক চকোলেটে রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েডস
যা রক্তনালিকে রিল্যাক্সড করে। এছাড়াও ডার্ক চকোলেট আমাদের স্ট্রেস কমায় এবং প্রেসার স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে।
যেভাবে খাবেনঃ
- দিনে ১-২ টুকরো কম চিনিযুক্ত ডার্ক চকোলেট খেতে পারেন।
৮. রসুন ও আদা
প্রাকৃতিক অ্যান্টি-হাইপারটেনসিভ উপাদান হিসেবে রসুন ও আদা খুবই উপকারী। রসুন ও আদা রক্তপ্রবাহ সহজ এবং দ্রুত প্রেসার কমাতে পারে।
যেভাবে খাবেন:
- রসুন কাঁচা বা রান্নায় তুলনামূলক বেশী ব্যবহার করুন।
- আদা চা বা রান্নায় ব্যবহার করতে পারেন।
৯. টমেটো ও গাজর
টমেটো ও গাজর দুটি সবজিতেই রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও বিটা-ক্যারোটিন
। যা আমাদের রক্তনালিকে সুরক্ষিত করে দেয় এবং প্রেসার কমাতে সহায়তা করে।
যেভাবে খাবেন:
- সালাদ বা জুস হিসেবে খেতে পারেন।
১০. জলপাই এর তেল
জলপাই তেল মনো-স্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ যা হার্ট ও প্রেসারের জন্য উপকারী। জলপাই এর তেল খারাপ কোলেস্টেরল কমায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
যেভাবে খাবেনঃ
- রান্নায় বা সালাদে পরিমাণমত অলিভ অয়েল ব্যবহার করুন।
হাই প্রেসার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত অভ্যাস

১. সুষম ও কম লবণযুক্ত খাবার গ্রহণ
- ড্যাশ (DASH) ডায়েট অনুসরণ করুন: শাকসবজি, ফলমূল, কম চর্বিযুক্ত দুধ, বাদাম, মাছ এবং উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার খান।
- লবণ কমিয়ে দিন: দৈনিক ১ চা চামচ বা তার কম লবণ খাওয়ার চেষ্টা করুন।
- প্রসেসড ফুড এড়িয়ে চলুন: যেমন প্যাকেটজাত স্যুপ, ফাস্ট ফুড, সসেজ বা চিপস। এগুলোতে লবণ ও ট্রান্স ফ্যাট বেশি থাকে।
- পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান: কলা, টমেটো, আলু, কমলা এইসব খাবারে পটাশিয়াম বেশি থাকে আপনার যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে।
২. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
- অতিরিক্ত ওজন হাই প্রেসারের অন্যতম বড় কারণ।
- প্রতি ১ কেজি ওজন কমলে রক্তচাপ গড়ে ১ মিমি হৃস্টলিক (হাই প্রেসার) কমে।
- অতএব, ওজন ঠিক রাখতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি বা ব্যায়াম করুন।
৩. নিয়মিত ব্যায়াম করুন
- কার্ডিওভাসকুলার এক্সারসাইজ যেমন হাঁটা, জগিং, সাঁতার বা সাইকেল চালানোর অভ্যাস করুন।
- শরীরের টোন এবং ব্লাড ফ্লো ঠিক রাখতে হালকা ভারী ব্যায়াম করতে পারেন।
- সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন ৩০-৪০ মিনিট করে ব্যায়াম করুন।
- : স্ট্রেস কমিয়ে প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে যোগব্যায়াম ও মেডিটেশনের পভ্যাস করুন।
৪. ধূমপান ও মাদক এড়িয়ে চলুন
- ধূমপান রক্তনালিকে সংকুচিত করে প্রেসার বাড়িয়ে দেয়। তাই ধূমপানকে আজই পরিত্যাগ করুন।
- অতিরিক্ত কফি বা এনার্জি ড্রিঙ্ক হাই প্রেসারের কারণ হতে পারে। তাই এড়িয়ে চলাই ভালো।
- সকল প্রকার মাদক থেকে বিরত থাকুন।
৫. স্ট্রেস ম্যানেজ করুন
- দিনে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
- ধ্যান, গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস, প্রকৃতির মাঝে সময় কাটানোর চেষ্টা করুন।
- মানসিক চাপ কমান। মানসিক চাপ কমালে প্রেসারও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
৬. পানি পান করুন ও হাইড্রেটেড থাকুন
- দিনে কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।
- শরীর ডিহাইড্রেটেড হলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে।
- চিনি ও সোডিয়ামযুক্ত কোমল পানীয়কে “না” বলুন।
৭. প্রেসার মনিটর করুন
- যদি প্রেসার মাপার মেশিন থাকে তাহলে সপ্তাহে অন্তত ২-৩ বার প্রেসার চেক করুন।
- প্রেসারের রিডিং লিখে রাখুন, যাতে ডাক্তারের সঙ্গে পরবর্তীতে আলোচনা করা যায়।
৮. নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নিন
- প্রেসার বেশি বা কম হলেও নিয়মিত ডাক্তার দেখান।
- ওষুধের সঠিক ডোজ ও চিকিৎসা পরিকল্পনা মেনে চলুন।
- প্রয়োজনে ইসিজি, কিডনি ফাংশন টেস্ট বা ব্লাড টেস্ট করান।
শেষ কথা
আশা করি জ্ঞান বাবা!’র আজকের ব্লগ পস্ট থকে পাঠক জানতে পেরেছেন প্রেসার কী? দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর উপায়, হাই প্রেসার কমানোর ঘরোয়া উপায় ইত্যাদি প্রশ্নের বিস্তারিত উত্তর। যদি জ্ঞানী বাবা!’র আজকের ব্লগটি আপনার কাছে উপকারী ও প্রয়োজনীয় মনে হয়ে থাকে তাহলে অনুরোধ করব আপনার পরিচিতদের সাথে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করুন। আর আপনার আজকের ব্লগটি কেমন লেগেছে তা কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুল্বেন না কিন্তু!!!