সেরা ৯ টি মোটা হওয়ার উপায় জেনে নিন

বর্তমান সময়ে অধিকাংশ মানুষ ওজন কমানোর পেছনে যতটা মনোযোগ দেন, স্বাস্থ্যকরভাবে ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে ততটাও মনোযোগ দেন না। বিশেষ করে আমরা যাঁরা অতিরিক্ত রোগা বা দুর্বল শরীরের অধিকারী, তাঁদের জন্য স্বাস্থ্যবান ও সজীব চেহারা পেতে মোটা হওয়া এক রকম বাঞ্চনীয়। তবে বাজারে প্রচলিত ও সহজলভ্য কেমিকেলযুক্ত সাপ্লিমেন্ট বা ওজন বাড়ানোর ওষুধ কিন্তু আবার শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই আমাদের সবার প্রাকৃতিকভাবে মোটা হওয়ার উপায় জানা উচিত।
অনেকেই ভাবতে পারেন মোটা হওয়া মানেই শুধু বেশি বেশি খাওয়া-দাওয়া করা বা অলস জীবনযাপন করা, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মোটা হওয়ার উপায় এটি একটি পরিকল্পিত এবং স্বাস্থ্যসম্মত প্রক্রিয়া হওয়া উচিত। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পরিমিত ঘুম, হজম ক্ষমতা এবং মানসিক সুস্থতা সবকিছু মিলিয়েই স্বাস্থ্যকর ওজন বাড়ানো সম্ভব।
এতক্ষণে বুঝে গেছেন নিশ্চয়ই, জ্ঞানী বাবা!‘র আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানবো সেরা ৯ টি প্রাকৃতিক মোটা হওয়ার উপায় নিয়ে, যেগুলো আপনি বাসায় বসেই সহজেই অনুসরণ করতে পারেন এমনকি কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয় ছাড়াই। তাহলে চলুন, শুরু করি!
সূচীপত্রঃ
সেরা ৯ টি মোটা হওয়ার উপায়

১. পুষ্টিকর ও ক্যালোরি-বহুল খাবার খান
স্বাস্থ্যসম্মতভাবে মোটা হতে চাইলে সর্বপ্রথম ও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো পুষ্টিকর এবং ক্যালোরি-বহুল খাবার নিয়মিত ও একইসাথে পরিমিত হারে খাওয়া। অনেকেই ভুল করে থাকেন, শুধু পরিমাণে বেশি খেলেই মোটা হওয়া সম্ভব বলে মনে করেন, কিন্তু বাস্তবে শরীরে পুষ্টির ঘাটতি থাকলে যতই খাবেন না কেন, ওজন বাড়বে না বরং দুর্বলতা আরও বাড়বে। তাই সঠিক খাদ্য নির্বাচনই হলো কার্যকর মোটা হওয়ার উপায় এর প্রথম ধাপ।
কোন ধরনের খাবার খাওয়া উচিত?
- বাদাম ও চিনাবাদাম: স্বাস্থ্যকর চর্বি, প্রোটিন এবং ক্যালোরির দারুণ উৎস। স্ন্যাকস হিসেবে খুবই কার্যকর হতে পারে।
- দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার: যেমন দই, ঘি, ছানা; এগুলো ক্যালোরি ও প্রোটিন উভয়েরই সমৃদ্ধ উৎস।
- ডিম: বিশেষ করে সেদ্ধ বা ভাজি ডিম, শরীরে প্রোটিন যোগায় ও পেশি গঠনে ব্যাপক সহায়ক।
- কলা ও আম: এই ফলগুলো প্রাকৃতিকভাবে আমাদের দেহে ক্যালোরি বাড়ায় ও একই সাথে হজম শক্তিও বাড়ায়।
- ভাত ও আলু: কার্বোহাইড্রেট-সমৃদ্ধ এসব খাবার দ্রুত ক্যালোরি বাড়াতে সাহায্য করে।
এক কথায়, যারা প্রাকৃতিকভাবে স্বাস্থ্যকর ওজন বাড়াতে চান, তাঁদের জন্য পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করাই হলো সবচেয়ে কার্যকর মোটা হওয়ার উপায়। তাই ওজন বাড়াতে চাইলে শুধু খাওয়া নয়?, কী খাচ্ছেন?, কখন খাচ্ছেন? এবং কীভাবে খাচ্ছেন? এই সবগুলো বিষয়ও একইসাথে লক্ষ্য করবেন।
২. পরিমাণে কম কিন্তু বার বার খান

মোটা হওয়ার ক্ষেত্রে শুধু কী খাচ্ছেন, সেটিই গুরুত্বপূর্ণ নয়, কতবার খাচ্ছেন এবং কখন খাচ্ছেন সেটিও কিন্তু সমান গুরুত্ব বহন করে। অনিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস শরীরের বিপাকক্রিয়াকে (metabolism) ব্যাহত করে এবং অনেক সময় শরীর প্রয়োজনীয় ক্যালোরিও গ্রহণ করতে পারে না। তাই নিয়মিত স্ময় করে পরিমাণে কম কিন্তু বারবার খাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর মোটা হওয়ার উপায় হতে পারে।
দিনে কতবার খাবেন?
- দিনে ৩ বেলার প্রধান খাবার ছাড়াও ২ থেকে ৩ বার হালকা ও পুষ্টিকর স্ন্যাকস (জাংক ফুড না আবার) খাওয়া উচিত।
- যেমন: সকালের নাশতা, দুপুরের খাবার, বিকেলের নাশতা, রাতের খাবার ও ঘুমানোর আগে হালকা কিছু খাওয়া।
খাওয়ার সময়সূচি কেমন হতে পারে?
- সকাল ৮টা: পুষ্টিকর নাশতা করুন, (ডিম, দুধ, কলা, পাউরুটি)
- সকাল ১১টা: হালকা স্ন্যাকস (বাদাম, ছোলা, ফল)
- দুপুর ১টা: মূল খাবার (ভাত, ডাল, মাংস/মাছ, সবজি)
- বিকেল ৪টা: দুধ বা ঘরে তৈরি স্মুদি খেতে পারেন
- সন্ধ্যা ৭টা: রাতের খাবার
- রাত ৯টা-১০টার মধ্যে: ঘুমানোর আগে এক গ্লাস দুধ বা কলা
তাই, যারা দ্রুত নয় বরং স্বাস্থ্যকরভাবে ও দীর্ঘস্থায়ীভাবে ওজন বাড়াতে চান, তাঁদের জন্য দিনে একাধিকবার খাওয়া নিশ্চিত করাটাই একটি পরীক্ষিত মোটা হওয়ার উপায়। এতে শরীর ক্রমাগত পুষ্টি পেতে থাকে এবং কিছু ক্যালোরি জমা রাখে, যা ধীরে ধীরে শরীরের ওজন বাড়াতে সহায়তা করে।
আরও পড়ুনঃ সেরা ৯টি ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা
৩. খাবারে প্রোটিনের পরিমাণ বাড়ান

যদি আপনি শুধু চর্বির উপরে নির্ভর করে নয় বরং সুগঠিত, শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যকরভাবে স্বাস্থ্যবান হতে চান, তবে খাদ্যতালিকায় প্রোটিন বাড়ানো এক অত্যন্ত কার্যকর মোটা হওয়ার উপায়। অনেকেই মোটা হওয়ার জন্য শুধু ক্যালোরি গ্রহণের মাত্রা বাড়ান, কিন্তু পর্যাপ্ত প্রোটিন না থাকলে ওজন বাড়লেও তা চর্বিতে রূপান্তরিত হবে, পেশিতে নয়। তাই পেশি বাড়িয়ে মোটা হওয়ার উপায় অনুসন্ধান করলে, প্রোটিনের ভূমিকা অবহেলা করার সুযোগ নেই কিন্তু!
প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবারের তালিকা:
- ডিম: প্রতিদিন ১-২টি সেদ্ধ বা ভাজা ডিম খাওয়া যেতে পারে।
- দুধ ও দই: দুধে প্রোটিন ছাড়াও ক্যালসিয়াম আছে, যা আপনার হাড় মজবুত করে।
- ডাল: মসুর, মুগ, ছোলা – এগুলো উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের চমৎকার উৎস হতে পারে।
- মুরগি ও মাছ: বিশেষ করে দেশি মুরগি বা ইলিশ/রুই জাতীয় মাছ প্রোটিনের পাশাপাশি ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের যোগান দেয়।
- বাদাম ও বীজ: কাজু, আমন্ড, সূর্যমুখী বীজ—প্রোটিন ও চর্বির সমন্বয়।
তাই, যারা শক্তপোক্ত এবং দীর্ঘস্থায়ীভাবে ওজন বাড়াতে চান, তাঁদের জন্য প্রোটিনের পরিমাণ বাড়ানো একটি বৈজ্ঞানিক ও কার্যকর মোটা হওয়ার উপায়, যা শুধু বাহ্যিক ওজনই নয়, বরং শরীরের অভ্যন্তরীণ শক্তিও বাড়িয়ে দিতে পারে।
৪. পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নিশ্চিত করুন

অনেকে মনে করেন মোটা হওয়া মানেই শুধু বেশি খাওয়া আর ব্যায়াম না করে অলস জীবনযাপন করা। কিন্তু বাস্তবে, শরীরের ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে ঘুম ও বিশ্রামও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীর যেমন ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তেমনি বিপাক ক্রিয়াও (metabolism) ব্যাহত হয়, ফলে যতই খাবার খান না কেন, শরীর সেগুলো যথাযথভাবে গ্রহণ করতে পারে না। তাই সুস্থভাবে মোটা হতে চাইলে ঘুম নিশ্চিত করাও একটি কার্যকর মোটা হওয়ার উপায়।
ঘুমের সাথে স্বাস্থ্যের সম্পর্ক
- ঘুমানোর সময় শরীর সবচেয়ে বেশি পুনর্গঠন প্রক্রিয়াযর মধ্যে থাকে। এ সময় শরীরের কোষ মেরামত হয়, পেশি গঠন করে এবং হরমোন নিঃসরণ করে যা আপনার ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
- ঘুমের ঘাটতি কর্টিসল (Cortisol) নামক স্ট্রেস হরমোন বাড়িয়ে দেয় যা স্বাস্থ্যের জন্যে নেতিবাচক ভূমিকা রাখে।
- রাত জাগা ও অতিরিক্ত মানসিক চাপ শরীরের স্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
কত ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন?
- প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিদিন (রাতে) ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম অত্যন্ত জরুরি।
- শিশু বা টিনএজারদের জন্য ৮-১০ ঘণ্টা ঘুমই আদর্শ।
- ঘুমের সময় রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টার মধ্যে হলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
তাই, মোটা হওয়ার ক্ষেত্রে শুধু পেটে খাবার দিলেই চলবে না, মস্তিষ্ক এবং ঘুমও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাই যারা দীর্ঘমেয়াদি এবং প্রাকৃতিকভাবে মোটা হতে চান, তাঁদের অবশ্যই ঘুম এবং বিশ্রামের দিকে নজর দিতে হবে। পর্যাপ্ত ও পরিমিত ঘুম আমাদের কাছে একটি উপেক্ষিত কিন্তু অত্যন্ত কার্যকর একটি মোটা হওয়ার উপায়, যা শরীরকে ভেতর থেকে সুস্থ ও পরিপূর্ণভাবে গঠন করে থাকে।
আরও পড়ুনঃ টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যায় কেন?
৫. হজমক্ষমতা পাচন ক্ষমতা স্বাভাবিক রাখুন
সুস্থভাবে ওজন বাড়াতে চাইলে শুধু খাওয়াই যথেষ্ট নয়, খাবার হজম হচ্ছে কি না, সেটা দেখাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় আমরা নানা ধরনের পুষ্টিকর ও ক্যালোরি-বহুল খাবার খেলেও যদি তা ঠিকভাবে হজম না হয়, তাহলে শরীর সেটি শোষণ করতে পারে না। ফলে ওজন বাড়ার পরিবর্তে হজমজনিত সমস্যা দেখা দেয়। তাই, শক্তিশালী ও কার্যকর হজমশক্তি গড়ে তোলা একটি মৌলিক মোটা হওয়ার উপায় হিসেবি বিবেচিত।
হজম ভালো না হলে কী হয়?
- শরীর খাওয়া খাবারের ক্যালোরি ও পুষ্টি পুরোপুরি শোষণ করতে পারে না।
- বদহজম, গ্যাস, অম্লতা (অ্যাসিডিটি) ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়, যা ওজন বৃদ্ধির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
- দীর্ঘদিনের দুর্বল হজমশক্তি দেহকে আরও দুর্বল করে তোলে।
হজম শক্তি বাড়ানোর প্রাকৃতিক উপায়:
- আদা ও জিরা পানি: খাওয়ার আগে এক কাপ হালকা গরম জিরা পানি বা আদা চা হজমে সাহায্য করে।
- পুদিনা ও তুলসী পাতা: হজমপ্রক্রিয়া উন্নত করে, গ্যাস ও অস্বস্তি কমায়।
- টক দই: উপকারী ব্যাকটেরিয়া সরবরাহ করে, যা অন্ত্রে হজম ও শোষণ ক্ষমতা বাড়ায়।
পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি যদি আপনার হজমশক্তি দুর্বল থাকে, তবে কাঙ্ক্ষিত ওজন বাড়ানো সম্ভব নয়। এজন্য হজমক্ষমতা বাড়ানো এবং পাচনতন্ত্র সুস্থ রাখা একটি কার্যকর মোটা হওয়ার উপায়।
৬. নিয়মিত ব্যায়াম করুন

শুনতে অবাক লাগলেও মোটা হওয়ার জন্য ব্যায়াম করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই মনে করেন যে মোটা হতে হলে ব্যায়াম একেবারেই বন্ধ করতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সঠিক ব্যায়াম শরীরে পেশি গঠনে সাহায্য করে, যা ওজন বাড়ায় শক্তিশালী ও সুগঠিতভাবে, না শুধু চর্বি জমিয়ে। তাই যারা স্বাস্থ্যসম্মতভাবে ওজন বাড়াতে চান, তাদের জন্য ব্যায়াম একটি কার্যকর মোটা হওয়ার উপায়।
ব্যায়াম কেন জরুরি?
- হালকা ওজন তোলা বা ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ করলে পেশি বাড়ে।
- ব্যায়াম হজমক্ষমতা বাড়ায় এবং খাবারের পুষ্টি শরীরে সঠিকভাবে শোষিত হয়।
- নিয়মিত শরীরচর্চা করলে ক্ষুধা বাড়ে, ফলে স্বাভাবিকভাবেই বেশি খাওয়া যায়।
কোন ধরনের ব্যায়াম উপকারী?
- ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ: যেমন স্কোয়াট, লাংজ, পুশ আপ, সিট আপ।
- হালকা ওজন উত্তোলন: ডাম্বেল বা ওয়াটার বটল দিয়ে শুরু করা যেতে পারে।
- যোগব্যায়াম (Yoga): বিশেষ করে সুর্যনমস্কার, ভূজঙ্গাসন হজম ও শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- হালকা হাঁটা বা সাইক্লিং: শরীর সক্রিয় রাখে, metabolism বাড়ায়।
ব্যায়ামের সময় ও নিয়ম:
- প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হালকা ব্যায়াম করুন।
- খাবার খাওয়ার অন্তত ১ ঘণ্টা পরে ব্যায়াম করুন।
- ব্যায়াম শুরু করার আগে ও পরে পানি পান করুন এবং হালকা স্ট্রেচিং করে নিন।
আরও পড়ুনঃ ড্রাগন ফলের ক্ষতিকর দিক কি কি? জেনে নিন
৭. সঠিক মাত্রায় পানি পান করুন
অনেকেই মোটা হওয়ার জন্য শুধু খাবার এবং উচ্চ ক্যালোরি গ্রহণের ওপর গুরুত্ব দেন, কিন্তু পানি পানের গুরুত্ব উপেক্ষা করেন অনেকাংশেই। অথচ, শরীরের প্রতিটি কোষ, পাচনতন্ত্র এবং বিপাকক্রিয়া ঠিকভাবে কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত পানি অপরিহার্য। তাই নিয়মিত এবং পরিমিত হারে পানি পান করাও একটি কার্যকর ও স্বাস্থ্যকর মোটা হওয়ার উপায়।
কেন পানি পান জরুরি?
- হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে, ফলে খাওয়া খাবার সহজে শোষিত হয়।
- পাচনতন্ত্রকে সক্রিয় রাখে, যা ওজন বৃদ্ধির জন্য সহায়ক।
- শরীরের টক্সিন বের করে দেয়, ফলে খাওয়া খাবারের পুষ্টি ঠিকমতো কাজে লাগে।
- পর্যাপ্ত পানি খেলে ক্ষুধাও বাড়ে, যার ফলে ক্যালোরি গ্রহণ স্বাভাবিকভাবে বাড়ানো যায়।
কখন পানি পান করবেন?
- সকালে ঘুম থেকে উঠে ১-২ গ্লাস গরম বা কুসুম গরম পানি।
- প্রতিটি খাবারের ৩০ মিনিট আগে ১ গ্লাস পানি।
- খাওয়ার ৩০ মিনিট পর পানি পান করা হজমে সহায়ক।
- ব্যায়ামের আগে ও পরে পানি পান করুন।
তাই শুধু খাওয়া নয়, বরং পানির সঠিক ব্যবহারও শরীরের ওজন বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যারা প্রাকৃতিকভাবে ও স্বাস্থ্যবানভাবে ওজন বাড়াতে চান, তাঁদের জন্য পরিমিত পানি পান নিশ্চিত করাও কিন্তু একটি কার্যকর মোটা হওয়ার উপায়।
৮. স্ট্রেস ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন
আমাদের স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের পথে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকগুলোর একটি হলো অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা স্ট্রেস। ওজন বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও এটি একটি প্রধান বাধা। গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘ সময় ধরে মানসিক চাপ থাকলে শরীরের হরমোন ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়, বিশেষ করে কর্টিসল হরমোন বেড়ে যায়, যা বিপাকক্রিয়াকে বাড়িয়ে দেয়। তাই, স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর মোটা হওয়ার উপায়।
স্ট্রেস কমানোর প্রাকৃতিক উপায়:
- মেডিটেশন বা ধ্যান: দিনে অন্তত ১০ মিনিট নিরিবিলি পরিবেশে চোখ বন্ধ করে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন।
- নিয়মিত ঘুম: পর্যাপ্ত ও গুণগত ঘুম মানসিক চাপ কমায়।
- যোগব্যায়াম: দেহ-মন দুটোতেই প্রশান্তি আনতে পারে।
- হালকা গান শোনা বা আপনার যেকোন প্রিয় কাজ করুন: মস্তিষ্ককে রিফ্রেশ করবে।
সুতরাং, শারীরিক যত্নের পাশাপাশি মানসিক সুস্থতাও মোটা হওয়ার উপায় এর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। একজন ব্যক্তি যখন মানসিকভাবে চাপমুক্ত থাকেন, তখন শরীর সহজেই স্বাভাবিকভাবে ওজন বাড়াতে সক্ষম হয়। তাই স্ট্রেসমুক্ত জীবনধারা শুধু ভালো স্বাস্থ্যই নয়, কাঙ্ক্ষিত ওজন অর্জনেও সহায়তা করতে পারে।
৯. ধারাবাহিকতা ও ধৈর্য বজায় রাখুন
প্রাকৃতিকভাবে মোটা হওয়ার জন্য সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন চলবে না, বরং ধারাবাহিকভাবে ও ধৈর্য ধরে সেই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই দ্রুত ফলাফল পেতে চাইতে গিয়ে দ্রুত হতাশ হয়ে পড়বেন ও নানান অস্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বাড়াতে যাবেন ফলে হিতে বিপরীত হবে। কিন্তু বাস্তবে, স্বাস্থ্যকরভাবে ওজন বাড়ানো একটি ধৈর্য ও সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। তাই মোটা হওয়ার উপায় সফলভাবে কাজে লাগাতে চাইলে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা জরুরি।
কেন ধৈর্য প্রয়োজন?
- শরীরের মেটাবলিজম, হরমোন এবং পাচন প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়।
- হঠাৎ করেই বেশি খাওয়া বা অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ শরীরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ও অস্বাস্থ্যকর।
- ধীরে ধীরে ক্যালোরি বৃদ্ধি করলে শরীর সেটাকে ভালোভাবে শোষণ করে এবং ওজনও বাড়ায়।
ধারাবাহিকতার গুরুত্ব:
- প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় খাবার খান এবং নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
- ঘুম, পানি পান, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ, সবকিছুতে নিয়মিত থাকা।
- হারবাল ও ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো নিয়ম মেনে নেওয়া।
তাই আমরা যারা ওজন বাড়াতে চাই, তাদের ওজন যথাযথভাবে বাড়ানোর জন্য সঠিক মোটা হওয়ার উপায় গুলো অবলম্বন করে ধৈর্য ধরে সময় দিতে হবে। এক দিনের বা এক সপ্তাহের পরিবর্তে মাসখানেক নিয়মিত চেষ্টা করলে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল সম্ভব। নিজের শরীরকে সময় দিন, এবং সঠিক পদ্ধতির প্রতি অনুগত থাকুন, ধীরে ধীরেই আপনার ওজন বাড়তে শুরু করবে।
উপসংহার
স্বাস্থ্যসম্মত ও প্রাকৃতিকভাবে মোটা হওয়া একটি সময়সাপেক্ষ এবং পরিকল্পিত প্রক্রিয়া। এই আর্টিকেলে আলোচনা করা মোটা হওয়ার উপায় গুলো নিয়মিত অনুসরণ করলে আপনি কেবল শারীরিক ওজনই বাড়াবেন তাই না, বরং সুস্থ ও শক্তিশালী শরীরও গড়ে তুলতে পারবেন। পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, প্রোটিন বাড়ানো, পর্যাপ্ত ঘুম, হজমশক্তি ঠিক রাখা, মানসিক চাপ কমানো ও ধারাবাহিকতা বজায় রাখা, এসব উপায়গুলো মিলে আপনার শরীরকে ভিতর থেকে বেশ ইতিবাচকভাবেই পরিবর্তন করবে।
পরিশেষে এতটুকুই বলব, আশা করি জ্ঞানী বাবা!‘র আজকের এই লেখাটি আপনার ভালো লেগেছে। যদি তাই হয়ে থাকে, আজকের এই লেখাটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে , একটু হলেও উপকারে এসে থাকে তবে অনুরোধ করব, সামাজিক মাধ্যমে এই ব্লগটি শেয়ার করুন। আর কমেন্ট সেকশনে আপনার মূল্যবান মতামত রেখে যেতে একদম ভুলবেন না কিন্তু!!!
তথ্যসূত্র সমূহ